উজবেকিস্তান: পরবর্তী বিপ্লবের তালিকায় কোন রাষ্ট্র?

যখন মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশসমূহে গণজাগরণ শুরু হয়েছে এবং তা পরবর্তীতে এক বিপ্লবে রুপান্তরিত হচ্ছে, অনেকে তখন এই প্রশ্নের উপর গুরুত্ব প্রদান করছে যে, এর পরে কোন রাষ্ট্র? কোন দেশ, অথবা এমনকি কোন অঞ্চলে এই বিদ্রোহের তরঙ্গের সৃষ্টি হবে, আদৌও যদি তা সংঘটিত হয়।

গত মাসে, এ্যালেন মাতিচ- যিনি দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন লেখক, তিনি সামনে যে সমস্ত রাষ্ট্রে এ রকম গণজাগরণের সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি এবং তা প্রকাশ করেছেন [ইংরেজী ভাষায়]। এই তালিকা তিনটি সমমান সম্পন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে তৈরি; এগুলো হচ্ছে সামাজিক বৈষম্য; বিদ্রোহের সম্ভাবনা; এবং সেই পরিমাণ খাবার যা একটি ঘরের মোট ব্যয় নির্ধারণ করে।

এ্যালেনের মতে, মিশর আলজেরিয়া, লিবিয়া সহ উজবেকিস্তান এই তালিকায় সেরা ২০-এর মধ্যে রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে উজবেকিস্তান (যার সূচক ৭৬.৪) এই তালিকার ১৫ তম স্থানে রয়েছে। যেখানে লিবিয়ার (যার সূচক ৭৬.৯) অবস্থান ১৩ তম। এই বিষয়টি অনলাইন প্রচার মাধ্যম এবং ব্লগস্ফেয়ারে অজস্র প্রবন্ধের জন্ম দিয়েছে।

Uzbekistan President Islam Karimov. Image by Helene C. Stikkel for US Department of Defense, in public domain.

উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইসলাম কারিমভ। ছবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য হেলেন সি. স্টিকেলের তোলা, পাবলিক ডোমেইন থেকে নেওয়া।

উজনিউজ.নেট (এই ওয়েবসাইটটি উজবেকিস্তানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং উজবেক নাগরিকরা সার্ভিসেসের মাধ্যমে এটিতে প্রবেশ করেছে) -এর এক পোস্টে সোবিত মন্তব্য করেছে [রুশ ভাষায়]:

উজবেকিস্তানে একটি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটা সম্ভব, কিন্তু কোন বিপ্লব নয়। ইসলাম কারিমভ [উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি] ক্রমশই বৃদ্ধ হচ্ছেন। নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক বাহিনী অথবা মিরজিয়েভ [প্রধান মন্ত্রী] এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিতে পারে। এবং তারপরেও, এক স্বৈরশাসক উজবেকিস্তান শাসন করবে।

সেখানে অন্য কিছু মন্তব্য রয়েছে [রুশ ভাষায়]:

স্টিগ:

আমার কোন ধারনা নেই, কে আসলে উজবেকিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে পরিস্থিতি কেবল মাত্র একদিনের জন্য পরিস্থিতিকে পাল্টাবে (!)।

রুস্তম

আমাদের অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে, উজবেকিস্তানে কোন অভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংঘটিত হবে না। এখনো দেশটিতে কোন স্থায়ি সরকার নেই, যেখানে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে

এশিয়ার সমাজগুলোতে স্থায়িত্বের মূল ভিত্তি হচ্ছে শক্তিশালি বিরোধীদের প্রলুব্ধ করতে থাকা এবং দুর্বল বিরোধীদের ধ্বংস করতে থাকা। এ রকম একটা বাস্তবতার ক্ষেত্রে বিপ্লব আসলে অর্থহীন। অন্য কথায়, কেন একজন তার শক্তি বিপ্লবের পেছনে ব্যয় করবে, যদি দুই জনে একত্রে কাজ করা সম্ভব হয়? ঘটনাক্রমে, কোন কিছুর জন্য লড়াই করার চেয়ে তা কেনা অনেক সহজ।

তবে, উজবেক সরকার সর্বশেষ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা তারা করেছে দেশটির নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার লক্ষ্যে। তারা প্রদর্শন করছে যে কর্তৃপক্ষ অনুভব করছে যে উজবেকিস্তান এক গণজাগরণের বিপদ রয়েছে। কাজে, উজনিউজ.কম সংবাদ প্রদান করেছে যে [রুশ ভাষায় ] উজবেক এজেন্সি ফর কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন (উজএসিআই) মোবাইল ফোন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এবং ইন্টারনেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষের প্রথম অনুরোধে তাদের গ্রাহকদের লাইন কেটে দিতে। এখন থেকে মোবাইল ফোন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এবং আইএসপি কোম্পানিগুলোকে যে কোন সন্দেহজনক উপাদান যুক্ত গণ এসএমএসের বিষয়ে সংবাদ প্রদান করতে হবে এবং একই সাথে সেই ব্যবহারকারীকে ওয়েব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে, যদি রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা তাদের এই কাজ করতে বলে। এদিকে উজএসিআই এই তথ্য স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করেনি। উজবেকিস্তানের বড় বড় যে সব আইএসপি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন;শারক টেলিকম, সরকোর টেলকিম এবং টিপিএস- তারা বলছে যে, তাদের কাছে এ রকম কোন নির্দেশনা আসেনি।

ব্লগার গ্রেজি গুনার এই সকল কর্মকাণ্ডকে সম্ভব্য গণজাগরণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা গ্রহণের এক পরিমাপক হিসেবে দেখছে। কিন্তু সে বিশ্বাস করে না যে উজবেকিস্তানে বিপ্লব ঘটা সম্ভব। সে লিখেছে [রুশ ভাষায়]:

মধ্য এশিয়ার জনতা দীর্ঘ সময় সোভিয়েত শাসনে বসবাস করেছে এবং তারা শরিয়া আইনের বিষয়ে ভুলে গেছে। এখানে কোন ইসলামি মৌলবাদী সংগঠন নেই-যা আরব অঞ্চলের বিপ্লব সমূহের পেছনে প্রধান অস্র ছিল। তার ফলে পশ্চিম যতই উভয়ের মধ্যে মিল থাকার কথা বলছে, আদতে এখানে বিপ্লবের আশা করা হচ্ছে না।

এই সংবাদের কথা উল্লেখ করে, আবদিলফজল, সিআইএস ইনিস্টিউটিরে ডেপুটি ডিরেক্টর ভ্লাদিমির ঝারিখিনের উদ্ধৃতি দিয়েছে, যে বলছে [ইংরেজী ভাষায়]:

[…]গণ মাধ্যমের ভূমিকাকে অতিরঞ্জিত করে দেখার কোন মানে নেই। যদি বিপ্লব অনিবার্য হয়ে থাকে, তাহলে তা যে কোন ভাবেই ঘটবে।

যদিও এখানে ইসলামী মৌলবাদ সংগঠন নেই এবং গণ মাধ্যমের তেমন একটা বড় ভূমিকা নেই, তারপরেও যে কেউ দেখতে পারে, মেনা নামে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে উজবেকিস্তানের রাজনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে অনেক মিল দেখতে পাওয়া যায়। স্বৈরশাসন, দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতি, রাজনৈতিক ভাবে স্বজনপ্রীতি মূলক মতবাদ গ্রহণ করা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব হচ্ছে এ রকম কয়েকটি বিষয়, কিন্তু এগুলোই কেবলমাত্র উদাহরণ নয়।

তবে নিহত হবার ভয়ে উজবেক নাগরিকরা আরো স্বাধীনতার দাবি জানাতে সাহস পায় না। এর ফলে অনলাইনের এক জরিপ প্রদর্শন করছে [রুশ ভাষায়] যে, ৮৫ শতাংশ নাগরিক নিশ্চিত যে তারা যদি রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য বের হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি তাদের উপর গুলি করার নির্দেশ প্রদান করবে। এই নিশ্চয়তার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায় ২০০৫ সালের আন্দিজান গণহত্যার মধ্যে দিয়ে [ইংরেজী ভাষায়] যখন রাষ্ট্রপতি কারিমভ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করার আদেশ দেন- শান্তিপূর্ণ যে মিছিলে নারী ও শিশুরাও অর্ন্তভুক্ত ছিল।

ব্যবহারকারী ‘মনে করে [রুশ ভাষায়], যদি উজবেকিস্তানে বিপ্লব সংঘটিত হয়, তাহলে তা নাগরিকের জীবনে তেমন একটা পরিবর্তন বয়ে আনবে না:

আজ সকলের জীবনে বিপ্লব আনয়ন করা প্রয়োজন- এটা হতে হবে শিক্ষা, পেশা এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের বিপ্লব আর কেবল তখনই কেউ একজন লম্বা সময়ের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে। এবং যে সামাজিক অভ্যূত্থানের সাথে অশিক্ষিত গণ মানুষ যুক্ত থাকে, সে সব অভ্যুত্থান সমস্যার সমাধান করতে পারে না। কোন ক্রাচ কোন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পরে না, যদি না সে ব্যক্তি নিজে দাঁড়াতে এবং এগিয়ে চায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .