- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বলিভিয়া কোকা পাতা চিবানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, বলিভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, আইন, আদিবাসী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি

জাতিসংঘ ২০১০ বিশ্ব মাদক সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছ বলিভিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোকা উৎপাদনকারী দেশ। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের যে সব কর্মী মাদক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজে (ডিয়া বা ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রয়েছে, তাদের শীঘ্রই এই দেশটিতে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। দি ল্যাটিন আমেরিকানিস্ট ব্লগ [1]:

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ প্রচেষ্টার ষড়যন্ত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর, ২০০৮ সালে মোরালেস সে দেশে অবস্থান করতে থাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ এজেন্সির লোকজনকে বলিভিয়া থেকে বের করে দেয়। বিশ্বজুড়ে কোকা চিবানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে মোরালেসের অবস্থান নেওয়ার কারণে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং বলিভিয়ার সরকারে মধ্যে টানা-পোড়েন সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস [2], দেশটির রাষ্ট্রপতি হবার আগে লড়াকু এক কোকা চাষী ছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত জোরালো ভাবে কোকা চাষ এবং তা চিবানোর পক্ষে।

[3]

বলিভিয়ার কোকা বাজার। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ওরিয়ানামোদোর (সিসি বাই-এনসি-এসএস ২.০)

কোকা বীজ চিবুলে, তা হালকা এক উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং উচ্চতা জনিত অসুস্থতায় কোকা পাতা চিবানোর বিষয়টি আন্দেজে ব্যাপক ভাবে প্রচলিত। কোকা পাতা চিবানো বা তা চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করার আন্দিজের আদিবাসীদের এক ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ [4]। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) এক গবেষণা [5](এই গবেষণার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু ট্রানজিশনাল ইনিস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে এই গবেষণার খানিকটা অংশ পাওয়া যাবে) বলা হয় যে, কোকা পাতা চিবানোর ফলে তা শরীরে কোন ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে না; তার বদলে আন্দিজের আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, এবং সামাজিক কার্যক্রমে কোকা পাতা ব্যবহার করে ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। ব্লগিং বাই বজ একটা সারাংশ [6] তৈরি করেছে।

কোকা পাতা চিবানো বন্ধ করা, চা হিসেবে পান করা বা তা বহন করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। কোকা পাতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি এ অঞ্চলের সংগঠিত প্রান্তিক অপরাধ অথবা মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোন সহায়তা করবে না। কোকা পাতা চিবানো জন স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, এমনকি তা বৈধ করা হলেও, বিষয়টি জন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে না।

বলিভিয়া এবং পেরুর কোকা পাতা বিষয়ক জাতি সংঘের তদন্ত কমিটির এক প্রশ্নবোধক এবং বিস্তারিত নিন্দা সূচক তদন্তের (১৯৪৯), এর প্রেক্ষাপটে ১৯৬১ সালে জাতি সংঘের এক একক অধিবেশনে মাদক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আদেশে, ২৫ বছরের মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া কোকা পাতার গাছ ধ্বংস করার বিষয়ে এক চুক্তি কার্যকর করা শুর হয়। জাতিসংঘের এই নিষেধাজ্ঞার যাতে সমাপ্তি ঘটে, বলিভিয়া আবার সে ব্যাপারে তার কণ্ঠ তুলে ধরে।

বলিভিয়ার এই অনুরোধ যাতে পালিত না হয় যুক্তরাষ্ট্র তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আরো উল্লেখ করেছে, এই আইনের এক সংশোধনের ফলে দেখা যাচ্ছে যে মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বলিভিয়ার সহযোগিতার অভাব দেখা যাচ্ছে। বলিভিয়ার নাগরিকরা এক শোভাযাত্রা বের করেছে যার নাম “চিউ-ইনস” (এখানে চিউ ইন নামক শোভাযাত্রার স্লাইড শো দেখতে পাবেন যা আন্দিয়ান ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের [7]সৌজন্যে পাওয়া)। সরকারের সমর্থনে তারা এই আইনের এক সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে। হেমিসফিয়ারিক ব্রিফ এর সাথে যোগ করেছে [8]:

কোকালেরো এবং শাসক মাস (এমএএস) দলের নেতা লিওনিলডা জুরিতা, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের চিন্তার বাইরের অবস্থান বলে উল্লেখ করেছেন। “বিভিন্ন দেশ আমাদের সমর্থন দিচ্ছে যাতে আমরা এর বিরুদ্ধে (কোকা চিবানোর ক্ষেত্রে) যে আইনগত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা উঠিয়ে ফেলতে পারি; একমাত্র যে দেশটি আমাদের বিরোধিতা করছে, সেটি হল যুক্তরাষ্ট্র,” জুরিতা এএফপিকে এই কথাগুলো বলেন।

এখানে ভাবনার বিষয় এটি যে, যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ অবৈধ মাদক প্রবেশ করে, কি করলে তার পরিমাণ কমে আসবে। চিবিয়ে খাওয়া কোকা পাতার চাষ বন্ধ করলে কি তা এই ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মেক্সিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে পরিচালিত “প্লান কলম্বিয়া” নামক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলছে, কিন্তু এর সমালোচকেরা একে একটি ব্যর্থ [9] পরিকল্পনা বলে অভিহিত করে। বড় বড় মাদক পাচারকারী দল বা কার্টেলদের কর্মকান্ড পরিচালনা বন্ধের জন্য তারা এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলার কৌশল গ্রহণ করে, কিন্তু দ্রুত ছোট ছোট দলগুলো সেই জায়গা পুরণ করে ফেলে, যাদের খুঁজে বের করা,পর্যবেক্ষণে রাখা, এবং ধ্বংস করে খুবই কঠিন। এই বিষয়টি বলিভিয়ায় আন্তরিকতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছে। এ ফ্রান্সিকান এ্যব্রোড [10] নামক ব্লগে স্টিফেন এন.ডিউইট. জানাচ্ছে:

আমি যে সময় ভাষা শিক্ষা স্কুলে কাজ করতাম, সে সময় স্কুলের একদল ছাত্র বলিভিয়ার এক বড় আকারের কোকা চাষের এলাকা পরিদর্শন করতে যায় এবং তারা সেখানে মাদক প্রতিরোধ নীতি নিয়ে কথা বলে। তারা আমাদের জানায় যে, উক্ত এলাকার বেশির ভাগ মাদক তৈরি বিষয়টি সেখানকার গুটিকয়েক পরিবারের হাতে। সেখানে সামান্য কয়েকটি পরিবার আছে, যারা অল্প কিছু অপরিশোধিত কোকার মালিক, যেগুলোকে রপ্তানি করার জন্য কলম্বিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয় [অসুস্থ্য], এবং পরে এটিকে কোকেনে রুপান্তরিত করার জন্য অন্য কোন স্থানে পাঠানো হয়। এই দলের লোকেরা তুলনামূলক ভাবে সস্তা এবং বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যাতে তারা সহজেই চলাফেরা করতে পারে, অথবা যদি তাদের আস্তানা আবিষ্কার হয়ে পড়ে তাহলে যেন সেগুলোকে সহজেই সেখানে ফেলে যেতে পারে। এই সমস্ত দলগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। যখন আপনি একজনকে গ্রেফতার করবেন অথবা একটা দলকে ধ্বংস করে ফেলবেন, তখনই আরো দশটা দল সেই স্থান দখল করার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।

এই সংশোধনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টিতে কিছুটা সংশয় রয়েছে-ব্লগিং বাই বজ [6]লিখেছে:

এই বিষয়ে সহজ এক জয়ের নীতি গ্রহণ করা এবং বলিভিয়াকে এই সংশোধনী পাস করতে দেবার বদলে, ওবামা প্রশাসন এমন এক অকার্যকর এবং কার্যত অর্থহীন নীতি গ্রহণ করছে, যা ৫০ বছর আগে লেখা হয়েছে এবং সেটিকে রক্ষার জন্য তারা তাদের রাজনৈতিক পুঁজিকে নষ্ট করছে।

কোকা থেকে পাওয়া অর্থ সংস্কৃতিক ভাবে সংবেদনশীল এবং আদিবাসী জনতার অধিকারের জন্য সাহায্যকারী। তবে এখনো, আরো কিছু বিষয় যেমন রয়েছে, যেমন মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই এই বিষয়ের সাথে যুক্ত। যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং বলিভিয়া বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছে, এ ক্ষেত্রে এক বিবেচনা যোগ্য ভাবনা হয়ত উভয়ের ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য ছাড় দেবার মত জায়গায় তৈরি করতে পারে।