- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাইল্যান্ড: প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে তিনি এক ব্রিটিশ নাগরিক

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি

যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিশিত ভিজাজিভার সংসদের এক অধিবেশনে স্বীকার করেছেন তিনি এখনো তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি [1]

““… আমার থাই নাগরিকত্ব আছে কিনা আপনারা তা জানতে উৎসুক নন, কিন্তু “আপনারা জানতে উৎসুক আমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আছে কিনা, আমি তার সরাসরি জবাব দেব”। “আপনারা জিজ্ঞেস করেছেন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো আমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছি কিনা, আমি স্বীকার করছি আমি আমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ত্যাগ করিনি, কারণ আমি আইনগতভাবে বুঝি যে, নাগরিকত্বের আইন নিয়ে কোন জটিলতা তৈরি হলে অবশ্যই থাই আইন ব্যবহৃত হবে”।

“আমার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও আমি নিজেকে একজন থাই মনে করি। ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করলেও আমার ইচ্ছে ছিল থাইল্যান্ডে ফিরে এসে কাজ শুরু করা ও এখানেই বসবাস করা। দেশের জন্যে কাজ করা। এছাড়া আমি অন্যকিছু চিন্তা করিনি।

Thai Prime Minister Abhisit Vejajjiva. Image in public domain, from Wikimedia Commons. [2]

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিশিত ভিজাজিভা। পাবলিক ডোমেইনে উইকিমিডিয়া কমন্সের ছবি।

(অনুবাদ [3] সরবরাহ করেছেন ব্লগার ব্যাংকক পণ্ডিত))

২০০৮ সালে অভিশিত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি এখনো ব্রিটিশ নাগরিক- এই স্বীকারোক্তি তাকে সংসদ সদস্য পদের অনুপযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেনা। কারণ তার পিতামাতা থাই নাগরিক হওয়ায় তিনি আইনগতভাবে সরকারী পদের যোগ্য।

প্রথমে বিরোধীদল অভিশিতের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি) দাঁড় করানো। থাইল্যান্ডে এখনো আইসিসির আইনটিতে অনুস্বাক্ষর করেনি, কিন্তু যুক্তরাজ্য তা করেছে।

অভিশিত গতবছর ব্যাংককে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের [4] সহিংস ভাবে ছত্রভঙ্গ করতে সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলে, সে সময় কয়েক ডজন লোক হতাহত হয়।
টনি অন থাইল্যান্ড আলোকপাত করেছেন, কেন অভিশিত তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব স্বীকারে নিমরাজি [5]:

নিজে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় কেউ যে নিজ নাগরিকত্ব অস্বীকার করতে পারে, সেটা আমার কাছে পাগলামি মনে হয়। যতদূর আমি জানি, আপনি চাইলেও তা বৈধভাবে করতে পারার ব্রিটিশ কোন আইন নেই। আর আপনি তা করতে চাইবেনই বা কেন?

মার্ক এ. ভিজাজিভা ব্রিটিশ কিনা এ নিয়ে সমস্ত বিতর্কই অর্থহীন। তার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতেই পারে, তাতে দোষের কি আছে।

যে কারণে তিনি নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক না বলার চেষ্টা করছেন, তা হচ্ছে, প্রথমতঃ তিনি চিন্তিত, পাছে কোন থাই আইনে কোন বিদেশী রাজনীতিতে থাকতে পারবে না, এমন বিধানে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। বরং তিনি বেশী চিন্তিত এই কারণে থাইল্যান্ড থেকে বের হলে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গ্রেফতার হতে পারেন। এর সবই হতে পারে, যদি তার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ সফল হয়। আর আমরা সবাই জানি মার্ক দায়িত্ব নিতে অপছন্দ করেন।

বিতাড়িত থাই নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার আইনজীবী রবার্ট আমস্টার্ডাম [6] অভিশিতের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মামলা করেছেন:

প্রথমতঃ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সম্পুর্ণ দায়মুক্তি দেয়ার থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের ইতিহাস আর এই অতি সাম্প্রতিক ঘটনাটিকে ধুয়ে-মুছে ফেলার চলমান অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে থাই সেনানায়ক এবং রাজনীতিবিদদের বিচারের মুখোমুখি করতে আইসিসিই এখন প্রধান ভরসার স্থল। দ্বিতীয়তঃ থাই মিডিয়া সত্য প্রকাশে অনাগ্রহ, কোন প্রকার তদন্তমূলক সাংবাদিকতার প্রতি তাদের অনীহা আর (ইংরেজিভাষী পত্রিকার ক্ষেত্রে) শাসকগোষ্ঠীর দায়মুক্তির পক্ষে অত্যুৎসাহের কারণে সরকারের মিথ্যার জবাব এবং এর “সমঝোতা”-এর অন্তঃসারশূন্য প্রতিশ্রুতির মুখোশ খুলে দিতে প্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরী।

টেস্টি থাইল্যান্ড বিশ্বাস করেন থাইল্যাণ্ড থেকে পালিয়ে যেতে [7] অভিশিত ভবিষ্যৎ-এ তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ব্যবহার করতে পারেন:

বিষয়টির ভেতরকার সত্য হল, তিনি তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছাড়তে চান না কারণ, শেষ পর্যন্ত যদি এমন কিছু থাইল্যান্ডের ঘটে, যাতে তাকে থাকসিনের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়, তাহলে যেন থাকসিনের মতো তাকে যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে না বলতে পারে এবং যেন তার ব্রিটিশ নাগরিক হিসাবে সেখানে অবস্থানের অধিকার থাকে।

দি নেশন পত্রিকার এক লেখায় তুলসাথি তাপতিম [8] জানান, তিনি বিশ্বাস করেন নাগরিকত্বের বিষয়টি অভিশিতকে সারাক্ষণ তাড়া করে ফিরবে:

বৃহস্পতিবার অভিশিত সংসদকে যা বলেছে তা রেকর্ড করা আছে। আমরা কি ধরে নিতে পারি ভুল তথ্য দিয়ে বা মিথ্যা কথা বলে ধরা পড়লে কি হবে তিনি ভালই জানেন? নাগরিকত্বের বিষয়টি তার জন্যে নতুন একটি পরীক্ষা।

কয়েকদিন আগে বিরোধীদল অভিশিত তার নাগরিকত্ব ব্যবহার করেছেন কিনা তা নিরীক্ষা করে দেখতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন [9]। সংসদে অভিশিতের স্বীকারোক্তির ভিডিওচিত্রটি অনলাইনে [10] পাওয়া যাচ্ছে (ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১১)।