দক্ষিণ কোরীয় নেট-নাগরিকেরা (নেটিজেন) মৃত অভিনেত্রী জা-ইওন জাংয়ের স্মৃতি নিয়ে আলোচনায় মত্ত, যেখানে পেশার কারণে সে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ২৬ বছর বয়েসী এই অভিনেত্রী মার্চ ২০০৯-এ আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ৫০টি চিঠি রেখে যান, যার মধ্যে ৩১ জন ব্যক্তির নাম রয়েছে, যারা তাকে যৌন নিপীড়ন ও অপব্যবহার করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কয়েক শত পৃষ্ঠার এই চিঠিগুলোতে বলা হয়েছে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্যে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অথবা এই শিল্পের ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তিকে শুধুমাত্র খুশী করার জন্যে তাকে ‘যৌন সেবা’ প্রদানে বাধ্য করা হতো। চিঠিগুলোতে চারজন কর্পোরেশনের নির্বাহী, দুইজন অর্থলগ্নিকারী শিল্পের নির্বাহী, দুইজন পত্রিকা প্রধান, ছয়জন বিনোদন ব্যবস্থাপনা এজেন্সির প্রতিনিধি, সাতজন টেলিভিশন প্রযোজক এবং আটজন চলচ্চিত্র পরিচালকসহ আরো অনেকের প্রকৃত নাম উল্লেখ করা আছে।
জাং-এর অঘোষিত তালিকা অনলাইন ও টুইটারে কয়েকদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে, টুইটে ইতোমধ্যে পুলিশ এবং মিডিয়াকে তথ্য-প্রমাণাদি প্রকাশ করার আহ্বান জানানো।
সাহায্যের আকুল আবেদন
দুই বছরেরও বেশী সময় আগে জনগণ, জাং-এর তথ্য-প্রমাণাদির অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি জনগণের মাঝ ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও, পুলিশ মামলাটি বাতিল করেছিল, গ্রাহ্য প্রমাণের অভাবে এবং তার চিঠির বিশ্বাসযোগ্যতাকে সন্দেহ করে।
যদিও তার সাহায্যের আকুল আবেদন ধীরে ধীরে জনগণের মন থেকে মুছে গিয়েছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি অন্যতম সম্প্রচার সংস্থা এসবিএস (সিউল ব্রডকাস্টিং স্টেশন)-এর তৈরী প্রামাণ্যচিত্রে বিশেষজ্ঞরা জাংয়ের চিঠিগুলোর অকাট্য প্রমাণে নিশ্চিত করেছে।
মনে করা হচ্ছে, তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে তিনি চিঠিগুলো তার ম্যানেজার মি:ইয়ু কাছে রেখে দিয়েছিলেন।
জাং লিখেছেন তার চিঠিতে উল্লেখিত কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের সাথে দেখা করানোর জন্যে তাকে একশবারেরও বেশী সে সব স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও তিনি জানান, অভিনয়ে ইচ্ছুক আরো অনেক তরুণীরাও প্রায়ই তার সাথে সেখানে যেত ।
দক্ষিণ কোরিয়ার কুকিনিউজ চিঠিগুলো থেকে কয়েকটি অনুচ্ছেদ [কোরিয়ান] প্রকাশ করেছে, যেখানে জাং বর্ণনা করেছেন কীভাবে তিনি প্রতারিত, নিপীড়িত এবং অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন।
এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার সবার প্রিয়তমা বা সুইটহার্ট বলে পরিচিত চোই জিন-শিলসহ আরো তিনজন নারী অভিনয়শিল্পী জাংয়ের ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করেছে- শেষ পর্যন্ত এটা প্রকাশিত হওয়ার পর জাংয়ের ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রধানের প্রতি জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে।
““৩১ শয়তান”
দক্ষিণ কোরীয়রা টুইপস, তালিকার ৩১ ব্যক্তিকে “৩১ শয়তান” উল্লেখ করে পুলিশকে পুনরায় আরো ভালভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। টুইটার ব্যবহারকারী জো-ইয়াং হন (@ব্লুড্রাগন১৩৭৬) বলেছেন:
@QuoVadisKorea 악마31명 이름을 밝히고 악마31명도 법에 처벌을 받고 사건을 은폐하고 축소한 것이 있다면 관련 경찰도 엄중히 처벌 해야 합니다 고위층 성매매은 범죄가 안되고 평범한 시민이 성매매하는것은 범죄라고 하는 처벌하는 경찰 처벌하라
৬ মার্চ ২০১১, টুইটার ব্যবহারকারী ডোয়া (@ডোয়াক্স) পুনঃ টুইটের মাধ্যমে মামলাটির আরো অধিক তদন্ত দাবি করে, একটি অনলাইন দরখাস্ত তৈরীতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। দরখাস্তটি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বেশী মানুষ প্রবেশ করা গণ ওয়েব ফোরাম দাউম আগোরাতে পোস্ট করা হয়েছে, যাতে প্রথম দুদিনে ৮০০জন স্বাক্ষর করেছে:
모두 서명하세요. 온라인 서명이 안되면 오프 서명이라도 합시다 RT @sunykwon: RT @jjicksa: 고 장자연의 한을 풀어줍시다!! 아고라에서 재수사요청 청원 서명을 받고 있습니다.! http://t.co/ADUt2gu 무한 RT부탁합니다!
অরেক জন টুইটার @গিভেনজয় টুইট করেছেন [কোরিয়ান]:
장자연 리스트 명단을 공개를 요구하는 트위터리안의 반응을 포스팅 하였습니다.http://j.mp/fLLrUM[링크된 글에 게제된 내용] 박상민(@miniwangja): 고 장자연씨에게 성접대를 받은 더러운 자들의 명단이 공개되어야합니다.31명의 그들은 사회의 구성원이 아닙니다.더러운 힘을 자신의 쾌락을 위해 사용한죄 분명하게 물어야 합니다.명단공개 릴레이 RT요청합니다.
টুইটার ব্যবহারকারী @সোশাল হলিক একই ধরনের বার্তা পুনরায় টুইট করে এর কারণ দর্শান:
이런 인간들을 처벌 안하면 반복됨[…]
জনরোষ
পুলিশ মামলাটি গোপন করার চেষ্টা করতে পারে এই সন্দেহ, ইতোমধ্যে উত্তপ্ত জনরোষের মাঝে অগ্নি সংযোগ করেছে। জাংয়ের প্রাক্তন ম্যানেজার, বর্তমানে একটি বিনোদন এজেন্সির প্রধান মিঃ ইউ প্রথমে জাংয়ের চিঠিগুলো পুলিশের কাছে উপস্থাপন করলে, তারা তার মানসিক সমস্যা আছে দাবি করে এই সব প্রমাণ উপেক্ষা করে।
টুইটার ব্যবহারকারী জে এইচ. লিম (@নার্সিম্যান) দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষের সতর্ক কারীদের অসম্মান করা সম্পর্কে টুইটারে বলেছেন [কোরিয়ান]:
RT @hcshin: 김용철 변호사가 이건희 비리를 폭로했을 때 삼성의 첫 반응은 “그는 정신병자다”라는 거였다./// 장자연 제보자에 대해 경찰은 “정신병 치료받는 사람”이라고 했는데 알고보니 그 정신병이란게 우울증이었다.
জাংয়ের তালিকা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হবে বলে মনে হয় না। অনেক নেট নাগরিকরা তালিকাটির পুরো ও সংশোধন ছাড়া প্রকাশ অসম্ভব বলে মনে করেন, কারণ এতে মানহানির মামলা হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তদন্ত কাজ ব্যহত হতে পারে।
টুইটার ব্যবহারকারী মোজিতো (@মোজিতো০) পুনরায় টুইট [কোরিয়ান] করেছেন:
RT @newspresso: S뉴스는 필적 감정을 마쳤다고 보도. 그런데 문서의 진위 가지고 날 샐지도 모르겠음.
সতর্ক নেট ব্যবহারকারীরা ঘটনাটির সময়ের ব্যপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। দুবছর আগে জাংয়ের তালিকাটি আলোর মুখ দেখলে, এটিকে শোবিজের একটি গুজবের মতো হালকা বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
টুইটার ব্যবহারকারী ইয়ো ওন স্যাং (@৯হিরো) জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সেলিব্রিটি স্ক্যান্ডাল-এর (তারকাদের জীবন যাপনে আসা দুর্নামের) ওপর নির্মিত কোরিয়ান চলচ্চিত্র ‘আনফেয়ার ট্রেডিং’-এর উদাহরণ টেনেছেন:
영화 ‘부당거래'가 생각나네요..거기선 연예인마약건을 터뜨려 무마시키면 된다고 그랬었죠[…].RT @_nu: […]2년이나 지나서 누가 왜 공개하는지 궁금치않다. 유명인 섹스 동영상이 나올 시기고, 상황이다.
এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য করা হয়ছে কি না, এ রকম কিছু ভাবার চেয়ে বড় কথা, বেশীর ভাগ জনগণ এই বিষয়টি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শাসকশ্রেণীর অল্পবয়সী নারীদের এ রকম অন্যান্য নিপীড়ন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী মনে করে।