এই পোস্টটি লিবিয়ার গণজাগরণ ২০১১-এর উপর তৈরি করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ
কয়েক সপ্তাহ ধরে লিবিয়ার সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির জুলুমবাজ বাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে সংঘাতে লিপ্ত, তারা সারা সপ্তাহ ধরে এদের মারাত্মক আক্রমণের শিকার। স্রোতের মতো সাধারণ জনতার ঢেউ তিউনিশিয়া ও মিশর সীমান্তের ওপারে পালিয়ে গিয়েছে। সেখানে জরুরী ত্রাণ সরবরাহের জন্যে ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে।
লিবিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগের বেশী নাগরিক অভিবাসী জনগণ। ধারণা করা হয় এদের মধ্যে ৭০,০০০ হাজার নাগরিক, বসতিস্থাপনকারী ফিলিস্তিনী শরণার্থী।
তাদের বেশীর ভাগই ফিলিস্তিনে ফেরৎ যেতে পারবে না, কারণ ইজরায়েল “নীরব দেশান্তর নীতির“(কোয়াইয়েট ডিপোর্টেশন পলিসি) মাধ্যমে তাদের পরিচয়পত্র তথা মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ডিসেম্বর ১৯৯৫ থেকে মার্চ ১৯৯৯ এর মধ্যে ইজরায়েল তাদের নীতি সম্পর্কে আগাম কোন ঘোষণা ছাড়াই জেরুজালেমের সীমানার বাইরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনী অধিবাসীদের বসবাসের অধিকার কেড়ে নিতে শুরু করে।
সীমান্ত শরণার্থী
বিগত সপ্তাহগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশী অভিবাসী নাগরিক তিউনিশিয়ার সীমান্তে পালিয়ে গিয়েছে, যাদের প্রত্যেককে, তাদের নিজ নিজ দূতাবাস খালি করে এসেছে।
ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ লিবিয়ায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনী সম্প্রদায়কে লিবিয়া থেকে নিয়ে আনার বিষয়টির সমন্বয় করার চেষ্টা করেছে। ইজরায়েল “মানবিক বিষয়” হিসেবে অধিকৃত এলাকায় ৩০০ জনকে প্রবেশের অনুমতির প্রস্তাব দিয়েছে।
ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের প্রথম দলটিকে নিয়ে আসা শুরু হয়, গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীতে যোগদানে অস্বীকার করায় তার ভাড়াটে সেনাদের হাতে মিসুরাতা এলাকায় ৪৩ জন ফিলিস্তিনী ছাত্র আটকের খবর প্রকাশের পর। ফেব্রুয়ারী ২০১১ পর্যন্ত মোট ১০৪ জন ফিলিস্তিনী ছাত্র লিবিয়া ত্যাগ করেছে।
১ মার্চ, ২০১১, ফিলিস্তিনী দূতাবাস, লিবিয়া বসবাসকারী নাগরিকদের জানায় যে, মিশরীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাদের মিশরে নিরাপদ আশ্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের সীমিত ক্ষমতার কারণে অন্যান্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের সরানোর ক্ষেত্রে বেশী অসুবিধার অভিযোগ করেছে।
তবে, ফিলিস্তিনিদের প্রথম দলটি মিশর সীমান্তের সালুম ক্রসিং সীমান্ত এলাকায়, পৌঁছালে সেখানে তাদের প্রবেশ করার অধিকার প্রদান করতে অস্বীকার করা হয়। মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটার-এ ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন:
@আবু_৩আলি [ইয়েমেন] সালুম থেকে এক বন্ধু : মিশর, ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার অস্বীকার করে ৭০ জনকে জন শুন্য ছোট্ট একটি গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিছু বিষয় কখনোই বদলায় না।
@এল_দীব [[মিশর] সকল নাগরিকদের লিবিয়া অতিক্রম করে মিশরে যেতে দেয়া হল, ফিলিস্তিনিদের ছাড়া! এটা দুর্ভাগ্যজনক! সেনাবাহিনী ৭০ জন ফিলিস্তিনকে বাসে চড়তে বলা হয়। মনে হচ্ছিল বাসগুলো রাফা সীমান্ত অতিক্রম করে গাজা ভূখণ্ডে যাবে। বাসগুলো তাদের লিবিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল!
@আলতাহাউই [মিশর] #মিশরে বসবাসের বৈধ অনুমতি না থাকায় গত সপ্তাহে ৪২ জন ফিলিস্তিনকে সালুম বন্দর থেকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
মিশরে প্রবেশ করার অধিকার প্রদান করতে অস্বীকার
গত ৭ মার্চ, সোমবার থেকে প্রায় ১,৫০০ ফিলিস্তিনী সীমান্ত অতিক্রম করে মিশরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু মিশরীয় সেনাবাহিনীকে ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের সেখানে ঢুকতে না দেয়ার পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া আছে [আরবী ভাষায়]। যে সকল ফিলিস্তিনী বাড়ি ফেরার জন্যে সীমান্তে এসেছিল, তারা লিবীয় শহর বেনগাজি ও তবরুকে ফিরে গিয়েছে।
মঙ্গলবার ৮ মার্চ, ২০১১ তারিখে যখন শত শত ফিলিস্তিনকে বাড়ি ফিরতে দেয়া হচ্ছিল না, তখন সালুমে ১৫ জন ফিলিস্তিনী সীমান্তের নিকটবর্তী গ্রামটিতে তাদের আশ্রয় দেয়া পরিবারগুলোর বাড়িতে অবস্থান করে সীমান্ত পার হবার দাবি করে যাচ্ছিল।
সংবাদে প্রকাশ যে, জাতীয় পরিচয়পত্র বিহীন অথবা মিশরে বৈধ বসবাসের অনুমতি ছাড়া কোন ফিলিস্তিনকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ এমনকি কাগজপত্র-বিহীন এশীয় শ্রমিকেরাও [আরবী ভাষায়] দেশটিতে ঢুকতে পেরেছে। এই পরিস্থিতিতে গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন:
ইবতিহাল মিসুরাতাতে আমার চাচা অবস্থান করছে। তার কাছে কোন পরিচয়পত্র নেই। সাধারণ পরিস্থিতিতেও তিনি মিশরে যেতে পারেন না। এখন এটা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। সাধারণতঃ পরিচয়পত্র বিহীন ফিলিস্তিনিদের গাজায় প্রবেশের অনুমতি নেই। আমার মনে হয় মিশরীয় কর্তৃপক্ষ সেই সব নিয়মই মেনে চলছে। মিশরের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতির কারণে অবশ্যই তারা ফিলিস্তিনিদের একপ্রকার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা জরুরী পরিস্থিতির পরোয়া করছে না।
ইব্রাহিম এসব ফিলিস্তিনিদের কোন পরিচয়পত্র নেই। অন্যান্য শরণার্থীদের একটা দেশ আছে, আবাসভূমি আছে, যা তাদের বাড়ি ফিরে যাবার কথা চিন্তা করায়। ফিলিস্তিনিদের তো তা নেই। মিশরে ঢুকলেও, তারা গাজা বা পশ্চিম তীর, কোথাও যেতে পারবে না। মিশর তাদের দায়িত্ব নিতে চায় না। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, পূর্ব লিবিয়ার ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি নয়, বরং পশ্চিম তীরে তাদের অবস্থা। আমরা জানিনা, আদৌ তারা তিউনিশিয়ার সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে কিনা।
কতজন ফিলিস্তিনি তিউনিশিয়ার সীমান্তে পৌঁছেছে, তার কোন তাজা সংবাদ নেই। তিউনিশিয়ার দূতাবাস থেকে একটা ফিলিস্তিনী ত্রাণ বহর তিউনিশিয়া-লিবিয়ার সীমান্তে উদ্ভূত মানবিক পরিস্থিতিতে সাহায্য করার জন্যে রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যে সকল ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় থেকে যেতে হবে, তাদের যেখানে যেখানে সম্ভব, থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে:
@লিবিয়ানসরিভোল্ট: ত্রিপোলিতে আমাদের খামারের শেষপ্রান্তে একটা ঘরে একজন ফিলিস্তিনী বাস করে থাকে, আমরা তার ভাড়া নেই না।
হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে
আপরুটেড প্যালেস্টিনিয়ানস নামের একটি ব্লগ লেবাননে বসবাসকারী ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের পক্ষ থেকে যারা সেখানকার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে লিবিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের লিবিয়া ত্যাগের সুযোগ দেয়ার জন্যে লেবানন-ফিলিস্তিনের একটা সমন্বিত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
আমরা হারিয়ে গিয়েছি, কারণ কেউ আমাদের পরোয়া করে না বা সংবাদ নেয় না।
আমরা ফিলিস্তিনিরা লেবাননের গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে ৩৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে লিবিয়ায় আমাদের ভাইদের সাথে বসবাস করছি, বিয়ে-শাদী করেছি এবং কাজও করছি। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারীর বিপ্লব ও ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির পর থেকে, আমরা দেশটির বিভিন্ন বন্দর দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু অপর্যাপ্ত ভ্রমণ-নথির অভাবে আমাদের সেই অনুমতি মেলেনি। আমরা এখন আটকে পড়ে আছি, আমাদের জিনিসপত্র বিক্রি করে খাচ্ছি। আমাদের কোন কাজ বা আশ্রয় নেই। আমরা জানি না কি করবো আর কোথায় যাব?
পরিস্থিতিটি দ্রুতই জটিল হচ্ছে। সর্বশেষ সংবাদ অনুসারে গাদ্দাফির অনুগত সৈনিকেরা তিউনিশিয়ায় পলায়নরত প্রায় ৩০,০০০ অভিবাসী শ্রমিককে আটকে দিয়েছে।
প্রান্তিক সীমায় পৌঁছানো একটি দেশে অবরুদ্ধ এ সকল শরণার্থীদের ভাগ্যের ওপর দৃষ্টি প্রদান করা জরুরী।
এই পোস্টটি লিবিয়ার গণজাগরণ ২০১১-এর উপর তৈরি করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ