- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ফিলিপাইনস: প্রাক্তন সেনা প্রধানের আত্মহত্যার ঘটনায় নেট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইনস, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি

[1]

ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে

এটি ছিল এমন এক খবর, যা গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করে দেয়। ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ফিলিপাইনের প্রাক্তন সেনা প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা, জ্বালানী ও স্থানীয় সরকাররের কেবিনেট সচিব, এঞ্জেলো রেইয়েস আত্মহত্যা করে। তার প্রিয় মায়ের কবরের ঠিক পাশেই তিনি আত্মহত্যা করেন। অনেকেই ধারণা করছে, সেনাবাহিনীর দুর্নীতির ব্যাপারে সিনেটের তদন্তের ফলে তার উপর যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি হয়, তার কারনেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে যে রেইয়েস এই দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
যখন রেইয়েসের এই বিয়োগান্তক মৃত্যুতে তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবেরা শোক প্রকাশ করছে। এদিকে দেশটির সরকার ও এর সেনাবাহিনীর পদ্ধতিগত ধারাবাহিক দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এসবের অর্থ অর্থ খুঁজে পেতে এবং এই বিষয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে।

ক্রেজি মমস ওয়ার্ল্ড ব্লগে মেরী জানিয়েছেন কি ভাবে রেইয়েসের আত্মহত্যা তার ওপর প্রভাব ফেলেছে [2]। নিজে এক সরকারী কর্মচারী হওয়ার কারণে তিনি রেইয়েসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত না করে পারেননি। তিনি যুক্তি প্রদান করেছেন, কোন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকেরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করার অধিকার আছে:

আমি আর কী বলতে পারি? আমরা এখনো জানিনা, তিনি চুরির সাথে জড়িত ছিলেন কি না। এ রকমটা ভাবা খুব সহজ যে, তিনি হয়ত বিশাল পরিমাণ সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন । হয়ত নিয়েছিলেন, হয়ত নেননি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এর মধ্যে কিছুটা হলেও সত্যি রয়েছে। কিন্তু, ! আমরা যেন মনে না করি, সরকারের লোক বলেই তিনি এটা করেছিলেন! এটাই আমাকে ভেতর ভেতরে পোড়ায়। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করি যে সরকারের বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতিবাজ লোক আছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির বিচার করার সময়, “যেহেতু সে সরকারি কর্মচারি, তাহলে তো দুর্নীতি করবে“ এ রকম শব্দের ব্যবহার অন্যায়।

এন্ড্রু পুয়া, প্রাক্তন এএফপি (ফিলিপাইনস আর্মড ফোর্স) সেনাপ্রধানের আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন [3]:

এখন খবরগুলোতে আপনি অনেক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাবেন। এটাই স্বাভাবিক মনে হয়। আমরা আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে বেশী বা কম চিন্তা করছি। হয়ত তিনি ধরা পড়তে চাননি। হয়ত তিনি লজ্জিত (যদিও সরকারী দফতরে এক দশকেরও বেশী কাজ করার পরও খরচের ব্যাপারে তিনি লজ্জিত হননি, যদি অভিযোগগুলো সত্যিই হয়ে থাকে)। হয়ত তিনি দোষ স্বীকার করে নেয়ার চেয়ে তার পরিবারকে বেশিই ভালবাসতেন। আমাদের সময়ে এগুলো পাপের মূল। যেভাবেই হোক এই পাপগুলোকে জনগণ বুঝতে পেরেছে এবং পরিবারটিকে দুষেছে। দুর্নীতির অভিযোগ যদি সঠিক প্রমাণিত হয়, তাহলে পরোক্ষভাবে তারা তো লাভবান হয়েছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধ হয়ে থাকা, কোন অজুহাত হতে পারে না। আমি নিশ্চিত তারা জানতেন, যদি অভিযোগ সত্যি হয়। সেজন্যে কার্যত: আমরা শেষ হয়ে গিয়েছি, তাদের মানুষ হতে না পারার কারণে। হয়ত তাকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, অথবা কারো প্রতি তার কৃতজ্ঞতার ঋণ ছিল, যা দুর্নীতিগ্রস্ত অন্যান্য সুবিধাভোগীরা ভোগ করেছে। তাই তদন্ত কার্য বন্ধ করা উচিত ছিল। হয়ত সত্যিকার অর্থে তিনি এই দুর্নীতির অংশ ছিলেন না। আমাদের সেই প্রমাণ বা প্রমাণের সহানুভূতিশীল বিকল্পও হয়তো কালিমালিপ্ত। এক্ষেত্রে রেইয়েসের ভয়ের কোন কারণ ছিল না। হয়ত তিনি আরো অন্য কিছুকে ভয় পাচ্ছিলেন, আরো ভেতরের কোন কলঙ্কজনক বিষয়। শেষ পর্যন্ত, আমরা জানি না, আসলে কি ঘটেছিল।

প্যাট্রিসিও ম্যাংগুবাত সেই পথকে আবার চিহ্নিত করেছেন, যে পথ রেইয়েসকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। অন্য অনেক মহান সেনানায়ক যে পথে খুব কমই হেঁটেছেন [4]:

বিশ্ব হয়তো এঞ্জেলো রেইয়েসকে ভিন্ন চোখে দেখত, যদি তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর শান্তিপূর্ণভাবে অবসরের পথ বেছে নিতেন। তিনি হয়ত রাজনৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন ও কলঙ্কহীন রাষ্ট্রনায়কের জীবন যাপন করতেন।

তারপরও সর্বকালের খারাপ ও অজনপ্রিয় প্রশাসনের সাথে নিজেকে জড়িত রাখার কারণে, রেইয়েসের কাছে এই প্রশাসনের অসংখ্য শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। তার জন্য একমাত্র যে পথ খোলা ছিল, তা হচ্ছে সেই পৃথিবীর জন্য রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া যেটাকে তিনি পরিপূর্ণভাবে বোঝেন না, আর যেখানকার মূল্যবোধ ভিন্ন, তার থেকে আলাদা।

তিনি নিজের হূদপিণ্ডে গুলি চালিয়েছিলেন। এ থেকে মনে হয় রেইয়েস তার জীবনে নেয়া কিছু সিদ্ধান্তের জন্যে হয়ত অনুতপ্ত ছিলেন। তার পরিবার জানিয়েছে, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে থেকে তিনি সবসময় বিমর্ষ হয়ে থাকতেন। রেইয়েস এমন এক প্রশাসনের অংশ ছিলেন যা অতীত এবং বর্তমান অনেকের কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য বলে বিবেচিত হয়, সে সময় এই ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক ছিল। যারা অনেক শত্রু তৈরি করেছে। যখন তিনি মিন্দানাওয়ের সেই সব বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে তারা কিসের জন্য লড়াই করছে। তাদেরই অংশ ছিলেন, তখন থেকেই এটা কাম্য ছিল। রেয়েস মিন্দানাও-এ, যেসব বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন, তারা কি চায়, তিনি তা জানতেন। অবসরের পর রেয়েস যে পৃথিবী বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ছিলেন অজানা শত্রুর ছায়ায় চারিদিক থেকে বন্দী, এক পশুর মত।

রেইয়েস সম্ভবত: পৃথিবীকে বলতে চেয়েছিলেন, তিনি সেই লোক নন যাকে প্রতিটি ব্যক্তি ঘৃণা করে। এ কারণে যে তিনি ভিন্ন এক ব্যক্তি। হ্যাঁ, সম্ভবত তিনি, তার চারপাশের অন্যায়কারীদের অন্যায়ের কোনই প্রতিবাদ না করে, তার চোখ-কান বন্ধ করে পাপ করেছিলেন। রেইয়েস একটা দুর্নীতিগ্রস্ত ও খারাপ ব্যবস্থার অংশ ছিলেন। তার পাপ হল, তিনি সংশোধনের জন্যে কোন চেষ্ট ধরনের না করেই দুর্নীতি সহ্য করে গেছেন।

বেয়ান (বাগং আলইয়ানসাং মাকাবায়াইয়ান, নিউ প্যাট্রিয়কটিক এলায়েন্স নামক রাজনৈতিক দল) নামক দলের মহাসচিব রেনাতো এম. রেইয়েস বিশ্বাস করেন যে এঞ্জেলো রেইয়েসের মৃত্যুকে, দূর্নীতির বিরুদ্ধ তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা উচিত [5]। কারণ এএফপির দুর্নীতিতে সেনা প্রধানের মত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

কংগ্রেস পরিচালিত তদন্তের চুড়ান্ত পর্যায়ে এঞ্জেলো রেইয়েসের মৃত্যু, এএফপির দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার সবচেয়ে জোরালো কারণ। যখন প্রায় সবকিছু উন্মোচিত হয়ে এসেছে, এরকম একটা সময়ে এই বিয়োগান্তক ঘটনাটি ঘটেছে বলেই, আমাদের এই তদন্ত চালিয়ে যাওয়া আর প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা দাবির প্রয়োজনকে যৌক্তিক করে তুলেছে। যেসব কর্মকর্তারা এসব দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন তাদের মনে করা উচিৎ যে, তারাও নিজেরাও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নয়। এদের মধ্যে প্রাক্তন সেনা প্রধানও অর্ন্তভুক্ত।