- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দক্ষিণ কোরিয়া: ৩০ মিনিটে পিৎজা পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় মৃত্যু ঘটায়, তা নিয়ে সমালোচনা

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, যুবা, শ্রম

ডোমিনোস পিৎজা [1] নামক পিৎজা তৈরিকারক কোম্পানীর জনপ্রিয় মার্কেটিং কৌশল ৩০ মিনিটে পিৎজা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি পালন করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েকজন তরুণ সরবরাহ কর্মীর মৃত্যু পর এই প্রক্রিয়া প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পেশা ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পরিষদ (এফওইসি) এবং তরুণ পরিষদ (দি ইয়াং ইউনিয়ন) সহ আরো কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে ডোমিনোস পিৎজার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কোম্পানির “৩০ মিনিটে” পিৎজা সরবরাহের ব্যবস্থাটি বাতিলের জন্যে চাপ সৃষ্টি করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

South Koreans are discovering the hidden cost of their takeaway pizzas. Image in public domain via Wikimedia. [2]

দক্ষিণ কোরীয়রা তাদের কেনা পিৎজার জন্য আসলে কত মূল্য প্রদান করতে হয় তার খরচ বের করছে । উইকিমিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিক ডোমেইনের চিত্র।

ডিসেম্বর ২০১০-এ একটি অর্ডার সরবরাহ করতে গিয়ে ২৪ বছর বয়সী এক খণ্ডকালীন সরবরাহকারীর গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে [3] [কোরিয় ভাষায়] বিষয়টি গণমাধ্যমের ব্যপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুধু গত বছরেই একই কোম্পানির আরো তিন জন একই ধরনের দুর্ঘটনায় ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে।

কোরীয় কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব অনুসারে বছরে সাত হাজারেরও বেশী ডেলিভারী সংক্রান্ত মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। সেলিব্রিটি লেখক, বিখ্যাত অভিনেতা এবং কয়েকজন শিক্ষাবিদসহ কয়েক হাজার মানুষ এই “৩০ মিনিট” নামক ব্যবস্থাটির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; এটি সরবরাহকারীদের দ্রুত ও বিপজ্জনকভাবে মোটর সাইকেল চালাতে বাধ্য করে, কারণ এই “৩০ মিনিট” সময়সীমার মধ্যে সরবরাহ করা না করতে পারলে তাদের জরিমানা বা সরবরাহকৃত পিজার মূল্য পরিশোধে বাধ্য করা হয়।

আদতে ১৯৭৩ সালে ডোমিনোস পিৎজা নামক কোম্পানী যুক্তরাষ্ট্রে এই “৩০ মিনিটে নিশ্চিত“ পিৎজা সরবরাহ ব্যবস্থাটি চালু করে [4]। কিন্তু নীতিটির কারণে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর ফলে কয়েকটি মামলার ঘটনা ঘটে। যার কারণে এই পদ্ধতি শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়।

কাজের ক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশ

দেরীতে পিৎজা সরবরাহের অভিযোগ পেলে বড় বড় পিৎজা ব্র্যান্ডগুলো ক্রেতাকে আরেকটি নতুন পিৎজা বা অর্থমূল্যে ছাড় দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ডোমিনোসের ক্রেতা পিৎজার আদেশ দেবার পর নির্দিষ্ট ৩০ মিনিট পার হয়ে গেলে, পিৎজা প্রতি ২,০০০ ওন (প্রায় ২ ডলার) মূল্য ছাড় পায়। যদি পিৎজা সররাহ করতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে, ক্রেতাকে বিনামূল্যে একটি পিৎজা বা আরেকটি পদ প্রদান করা হয়।

এফওইসি-এর শিক্ষানবীশ গবেষক গ্লোরিয়া গু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট ফেসবুকে “৩০ মিনিট”-এর জন্যে নিবেদিত পাতায় [5] লিখেছেন, “একজন নিরপরাধ মানুষকে খুন করার জন্যে ১৫ মিনিটই যথেষ্ট“। ধারণা করা হয়, একটি পিৎজা বানাতে গড়ে ১৫ মিনিট সময় লাগে।

তিনি আরো বেশী মানুষকে এই সামাজিক প্রতিবাদে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছেন:

30분 배달제라는 청년노동자의 삶이 아직까지 자신의 일이 아니라며 외면하는 사람들도 많이 있을 것입니다. 기업의 경제논리 때문에 어쩔 수 없다고 치부해버리거나 폐지할 이유가 없다고 하는 사람도 있을 것입니다. 그렇지만 그 사람들의 관심까지 모아, 더 이상 무고한 희생이 일어나지 않도록, 모든 노동자들이 생명의 위협을 받지 않고 안전한 환경에서 일할 수 있도록 끝까지 함께해주십시오.

“৩০ মিনিট” নামক সরবরাহ ব্যবস্থায় কাজ করা তরুণ কর্মীদের জীবনের কোন মূল্য নেই। অনেকেই নিজেদের এ রকমটা বুঝিয়ে বিষয়টিকে পাশ কাটাতে চাইতে পারেন। আবার অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতিটিকে কোম্পানীর আকর্ষণী চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। এর ফলে একে অবশ্যম্ভাবী এক সামাজিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করে, একে বাদ না দেয়ার পক্ষে যুক্তি প্রদান করতে পারেন। কিন্তু নিরাপরাধ এসব মানুষের চলমান জীবন উৎসর্গ থামাতে হলে, আমাদের এ ধরনের মানুষেরও সমর্থন দরকার। যতক্ষণ না আমাদের সমস্ত শ্রমিকের জন্যে জীবনের ঝুঁকি না নিতে হয়, এমন নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দয়া করে আমাদের সাথে থাকুন।

তার লেখাটির নীচে এরকম অনেক মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছে:

권용진 [6] 신호를 위반하고 배달하는 이들을 안좋은 시선으로 바라보았었는데… 그게 아니군요. 참 안타까운 일입니다.

Dam Juck [7] 항상 빨리 안온다고 불평만 했었는데 이글을 보니 참 바보같은 짓을 했었군요.

কওন ইয়ং-জিন: ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙ্গে যারা [খাদ্য] সরবরাহ করে তাদের প্রতি আমার একটা খারাপ দৃষ্টিভঙ্গী ছিল। কিন্তু আমার এই ভাবনাটা [তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী] সঠিক ছিল না। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

ড্যাম জাক: সরবরাহ যথেষ্ট তাড়াতাড়ি নয়, বলে আমি সবসময় অভিযোগ করতাম। কিন্তু এসব [ফেসবুকের] লেখা পড়ে এখন বুঝতে পেরেছি যে, আমি মূর্খের মত আচরণ করেছি।

কোরীয় নেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনে ডুয়াম আগোরা নামক ওয়েবসাইটে একটি দরখাস্ত প্রদান করেছে [8]। ইতোমধ্যে ১,০০০ জন্য ব্যক্তি এই দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছে। এই দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জনতার ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার জন্যেই এই “৩০ মিনিট“ নামক ব্যবস্থাটি বন্ধ করা দরকার।

30분 배달제로 아르바이트 하는 청소년들이 안따갑게 배달사고로 목숨을 잃고있다. 영리를 목적으로 지나친 업체경쟁으로 목숨을 요구하는 부도덕한 상술이다. 과연. 알바생의 목숨을 요구해야 할 만큼 부도덕한 사회가 되었단 말인가?![…]또한 운전자 입장에서도 30분 배달제 인해 언제 배달원들이 목숨걸고 튀어나올지 몰라 불안한 상황이다. 한편 선진국에서 이런 영업행태가 적발되면 사법당국에서 살인미수죄로 처벌한다.

পিৎজা ব্যান্ডগুলোর “৩০ মিনিটের” কম সময়ে সরবরাহ নীতি‘র কারণে তরুণ খণ্ডকালীন কর্মীরা দ্রুত সরবরাহ সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় জীবন হারাচ্ছে। নিজেদের মাঝে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখে মুনাফার উদ্দেশ্যে কোম্পানিগুলোর এধরনের মার্কেটিং কৌশল অনৈতিক। [এবং এর মানে হল] মানুষের জীবন এখন মুনাফার কাছে জিম্মি। আমাদের সমাজ কি এতটাই অবিবেচক হয়ে পড়েছে যে, আমরা তরুণ খণ্ডকালীন কর্মীদের জীবন দাবি করছি [আরো মুনাফা লাভের জন্য]?! […] সরবরাহকারী কর্মীরা এইভাবে “৩০ মিনিটে” পিৎজা পৌঁছে দেবার পাগলের মত মোটর সাইকেল চালায় বলে অন্য গাড়ির চালকেরা তাদের ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করে না। কোন কোন উন্নত দেশে এধরনের ব্যবস্থাপনা সনাক্ত করার সাথে সাথে, সেই দেশের বিচার ব্যবস্থায় এগুলোকে খুনের অপচেষ্টা হিসাবে শাস্তি প্রদান করা হয়।

ব্লগার বলিন৩ [9] জানিয়েছেন, কোরীয় ‘পাল্লি-পাল্লি‘ (আরো দ্রুত, আরো গতিশীল) নামক কর্পোরেট সংস্কৃতি থেকেই হয়ত এধরনের সরবরাহ নীতির উদ্ভব ঘটেছে। দ্রুত এবং গুণগত ফলাফল লাভই যার একমাত্র লক্ষ্য:

얼마전에 등록금을 벌기 위해 피자 배달을 하던 한 대학생의 오토바이 사고 후 사망사고를 뉴스로 전해들었던 기억이 있습니다. 그냥 그랫나보다 좀 천천히 다니지…그랬죠.동네에서 폭력질주하는 오토바이들에 아이들이 몇 번 놀라서 대수롭지도 측은하지도 않게 넘겼나 봅니다. 그런데…그 질주에 이면에는 배달원들이 어쩔 수 없었던 불가항력적인 부분이 있었네요. 오늘날 대한민국이 있는데 한 몫을 했던 ‘빨리빨리'문화는 긍적적이고 하지만…그것이 우리도 모르는 사이에 고객만족이라는 이름을 달고 누군가에게 위압적이고 위험을 줄 수 있다는 생각을 가져봅니다.

বেশী দিন আগের কথা নয়, আমি এক পিৎজা সরবরাহকারী কর্মীর মৃত্যুসংবাদ শুনেছি। সে কলেজে পড়ার জন্যে একটি পিৎজা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমার [প্রথম] প্রতিক্রিয়াটি ছিল, “ভাল কথা, এরকমটি হতেই পারে। তার ধীরে চালানো উচিৎ ছিল।“ তার প্রতি আমার সমান্য সহানুভূতি জেগেছিল। তাছাড়া আমাদের এলাকায় [সরবরাহকারী কর্মীরা] বিপজ্জনক ভাবে বাইক চালনা বলে আমার বাচ্চারা প্রায়ই ভয় পেত। তাই আমি এই দুর্ঘটনার ঘটনাটিকে তেমন পাত্তাই দেইনি। কিন্তু […] এখন আমি এর পেছনে একটা অপ্রতিরোধ্য শক্তি [দেরীতে সরবরাহ করার কারণে অর্থদণ্ড] আবিষ্কার করেছি। যদিও আমি স্বীকার করি যে কোরীয় জাতির উন্নয়নের পেছনে এই ‘পাল্লি-পাল্লি‘ কর্পোরেট সংস্কৃতির অবদান আছে, তবে বর্তমানে এটা ক্রেতা সন্তুষ্টির অজুহাতে ব্যক্তির ক্ষতিসাধন করার মত নির্যাতনের একটা নীতিতে পরিণত হয়েছে।