সুদান: দক্ষিণ সুদান আফ্রিকার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে

দক্ষিণ সুদান আনুষ্ঠানিক ভাবে আফ্রিকার নবীন জাতিতে পরিণত হল। দক্ষিণ সুদানের নাগরিকরা উত্তর উত্তর সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট প্রদান করার পর, দেশটি নবীন রাষ্ট্রে পরিণত হল। সোমবারে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই গণভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যাচ্ছে যে দক্ষিণের শতকরা ৯৮.৮৩ শতাংশ ভোটার উত্তর থেকে আলাদা হয়ে যাবার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এটি গণভোটের ফলাফলের উপর আসা প্রতিক্রিয়ার একটি সংগৃহীত আলোচনা মূলক প্রবন্ধ।

দক্ষিণ সুদানের মুক্তিযোদ্ধা গর্ডন মুয়ারতাত মায়েন মাবোরের দুই সন্তান যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা বিষয়ক গণভোটে ভোট দেবার সময়, তার পিতার ছবি হাতে ধরে আছে। ছবির কপিরাইট ©  ডেমোটিক্স-এর (০৯/০১/২০)

দক্ষিণ সুদানের মুক্তিযোদ্ধা গর্ডন মুয়ারতাত মায়েন মাবোরের দুই সন্তান যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা বিষয়ক গণভোটে ভোট দেবার সময়, তার পিতার ছবি হাতে ধরে আছে। ছবির কপিরাইট © ডেমোটিক্স-এর (০৯/০১/২০) ।

পাসকাল লাডো একটি পডকাস্ট (অডিও বা ভিডিও ফাইলের সংবাদ সমষ্টি) পোস্ট করেছে । যখন দক্ষিণ সুদানের গণভোট কমিশন জুবায় আনুষ্ঠানিকভাবে গণভোটের উপর আসা প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে, পডকাস্টে ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ধরা পড়েছে।

রোববারে জুবায় ড: জন গারাং সমাধি কেন্দ্রে দক্ষিণ সুদানের জনগোষ্ঠী বিশাল এক জনসভায় উপস্থিত হয়, গণভোট সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ফলাফল উদযাপন করার জন্য। এই ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পুরো দক্ষিণ সুদান জুড়ে, সুদান থেকে আলাদা হয়ে যাবার পক্ষে প্রায় একচ্ছত্র রায় প্রদান করা হয়েছে। এই বর্ণিল অনুষ্ঠানটি গান গেয়ে, নেচে, শিঙ্গা বাজিয়ে, এবং ঢাকের আওয়াজ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পালন করা হয়। দক্ষিণ সুদানের গণভোট সংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান এবং তার সহকারী এই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। জনতার প্রচণ্ড করতালির আওয়াজে একে স্বাগত জানায়।

আসা’দ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেছে:

দক্ষিণ সুদানকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যত দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান করল, আর তারা ফিলিস্তিনের প্রতি যে আচরণ করছে, তার তুলনা করছি:

লাও হাক বলছ যে দক্ষিণ সুদানকে তার উত্তরের প্রতিবেশীর উপর নির্ভর করে থাকতে হবে :

এখনো, দক্ষিণ সুদানকে তার উত্তরের প্রতিবেশীর উপর নির্ভর করে থাকতে হবে। কারণ দক্ষিণ সুদানের বেশির ভাগ তেলক্ষেত্রগুলোর পাইপ লাইন উত্তরের উপর দিয়ে গেছে, এই দেশটির নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য তেলের সরবারহ সঠিকভাবে বজায় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।

কি ভাবে দক্ষিণ সুদান বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে?:

সুদান অথবা প্রাক্তন সুদান নামক রাষ্ট্রে: আমাদের অজস্র রাজনীতিবীদ রয়েছে…কিন্তু তাদের পরিণত মানসিকতা খুব কমই দৃশ্যমান হয়.. কেউ একজন বলেছিল…একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে…কোন কর্মকাণ্ড নয়..!!

আমি কোন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করাকে বোঝাচ্ছি না, কিন্তু বেল সিনড্রোম (শারিরীক এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে মার্টিন বেলের প্রদান করা তত্ত্ব) বলছে যে কেবল মাত্র ২ শতাংশ (যে কোন পরিস্থিতিতে) ব্যক্তি পুরো চিত্রটি দেখতে সক্ষম হবে। আপনাকে সকল শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, উজ্জ্বলতার সাথে সহজভাবে যদি পথ চলতে চান, ভূয়া অথবা অস্বাভাবিক আগ্রহ ব্যাতিরকে…

“দারফুর সংক্রান্ত” জ্ঞান যাদের রয়েছে, যদি আপনি তাদের কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন…
ঠিক আছে.. ওই সব চমৎকারভাবে বলা কথার বাইরে এসে আসল তথ্যের মুখোমুখি হই… প্রায় ৮০ শতাংশ নিরক্ষর, ০.৫ শতাংশ স্নাতক, ০ শতাংশ অবকাঠামো, ৫০ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা। ৯৯ শতাংশ আদিবাসী মানসিকতা। এটি আইএফডিএস (ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল ডাটা সার্ভিস) অথবা পিপিপিএস (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) এর জন্য প্রদান করা তথ্য নয়, এ সব কেবল জাতিসংঘ/সরকারি সাহায্যের জন্য প্রদান করা তথ্য।

যতক্ষণ না আপনি সরকারের ক্ষেত্রে আপনার বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছেন (যেমনটা সিঙ্গাপুর করেছে) ক্ষমতা বাড়ানো (যেমন বলকান রাষ্ট্রগুলো করেছে), সুশাসনের উপর দৃষ্টি দেওয়া (যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা তা করেছে).. দক্ষিণ সুদান বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে না..! তারা লোভী এবং সতর্ক..

কিজি আদতে দক্ষিণ সুদানের প্রতি অনেক ঈর্ষান্বিত :

আমার এক ভালো বন্ধু বলছে যে, উত্তর সুদানিরা দক্ষিণ সুদানের গণভোটের মত ক্ষমতা অর্জনের প্রেক্ষাপটে হতাশ। তারা ঈর্ষান্বিত, কারণ দক্ষিণের নাগরিকদের ভোট দেবার স্বাধীনতা রয়েছে এবং প্রত্যেক সুদানির ভোট একটা ভিন্নতা তৈরি করেছ, আমাদের এখানে কিছুই নেই।

হ্যাঁ, আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমি ঈর্ষান্বিত। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভোটের জন্য আমি আমার নাম নিবন্ধন করেছিলাম, কিন্তু আমার পছন্দের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং আমি বিস্মিত যে, প্রথম পর্যায়ে কি আমার কণ্ঠস্বর কোন ভিন্নতা গড়ে দিতে পারবে কিনা।

সুদানিজ অপটিমিস্ট দক্ষিণ সুদানিদের জন্য খুশি কিন্তু….

যদিও আমি দক্ষিণ সুদানের জন্য আনন্দিত এই কারণে যে, অবশেষে তারা ক্রমাগত উত্তরের অধীনস্থতার মাঝেও স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। তবে, আমি সত্যিকার অর্থে বেদনার্ত, এই কারণে যে আমরা আমাদের সুদানের সংস্কৃতির এক প্রাণ চঞ্চল অংশকে হারিয়েছি। সম্ভবত পরবর্তীতে রাজনৈতিক পাগলামিতে ভরা বিষয়গুলো না দেখার কারণে, যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে, সেটি হচ্ছে গতকাল বিচ্ছিন্ন হবার আনুষ্ঠানিক ঘোষনার সময় সেন্ট ফ্রান্সিসের প্রার্থনা পাঠ করা, সম্ভবত এর কারণ বিগত কয়েক মাসে আমি কখনোই শান্তিপূর্ণ একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করিনি, কিন্তু দৃশ্যত মনে হচ্ছিল সকল রাজনৈতিক সংবাদের মধ্যে সঙ্কটের সুর রয়েছে, এবং যেই মুহূর্তে আমি প্রার্থনার সুর শুনলাম, আমার মনে হল মানবতা কথা বলছে, কোন রাজনীতি নয়.. আমি নিঃসন্দেহে তা পছন্দ করি।

লোডিং মোরিস সংবাদ প্রদান করছে যে উত্তর এবং দক্ষিণ সুদান নাগরিকত্বের মর্যাদা বিষয়ক জটিলতার সমাধান করেছে:

মন্ত্রীর সূত্রানুযায়ী, দক্ষিণ সুদানের আধা স্বায়ত্তশাসিত সরকার (গভর্মেন্ট অফ সাউদার্ন সুদান বা জিওএসএস) এবং সুদানের জাতীয় সরকার একমত হয়েছে যে, দক্ষিণের যে সমস্ত নাগরিক উত্তরের অংশ হতে চায় তার সে অঞ্চলের নাগরিক হতে পারবে, এবং একই ভাবে উত্তর সুদানে থাকা কোন নাগরিক যদি দক্ষিণের নাগরিক হতে ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে তাদের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। “আমরা একমত হয়েছি যে দক্ষিণ সুদানে বাস করা উত্তর সুদানের নাগরিক এবং উত্তরে বাস করা দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দাদের একই রকম অধিকার থাকবে এবং ভোটের ফলাফলের পর যদি তারা নাগরিকত্ব পেতে চায়, তাহলে তাদের স্ব স্ব এলাকার নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .