এই পোস্টটি ২০১১ সালে মিশরের প্রতিবাদ বিপ্লব সম্পর্কে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ
মিশরীয় কর্তৃপক্ষ গতকাল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় এবং তারা মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ প্রদান করে, কারণ তারা ধারনা করছিল যে আজও বিক্ষোভ চলবে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবার ঘটনার ফলে এই সমস্ত চ্যানেলগুলো দিয়ে তথ্য প্রদান করা বন্ধ হয়ে যায়। মিশরে যে চারটি মূল প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট প্রদান করে তারা এখন আর কাজ করছে না। কেবল মাত্র শেয়ার বাজারে ইন্টারনেট সেবা চালু রয়েছে। ব্ল্যাকবেরির ইন্টারনেট মাঝে মাঝে কাজ করছে, এবং বেশির ভাগ মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক এখন বন্ধ রয়েছে।
ইন্টারনেট একটিভিস্টরা মিশরীয় নাগরিকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সার্ভিস-এর মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীকে সনাক্ত করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে আগে থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরী। গ্লোবাল ভয়েসেস অ্যাডভোকেসির অতিথি লেখিকা এবং ইএফই একটিভিস্ট এভা গালপেরিন, গ্লোবাল ভয়েসেস-এ তার পোস্টে বলছেন:
এটা বেশ জটিল এক বিষয় যে, মিশরীয় বিক্ষোভকারীরা যখন অনলাইনে যোগাযোগ করতে যাচ্ছে তখন প্রাক সতর্কতা গ্রহণ করছে। বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য সামাজিক প্রচার মাধ্যম যন্ত্রগুলো একটিভিস্টদের এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর প্রদান করেছে, যা মিশরের বাইরেও ভালোভাবে শোনা যাবে, কিন্তু একটিভিস্টদের মনে রাখতে হবে যে তাদেরকে চিহ্নিত করতে এবং আঘাত করার জন্য মিশর সরকার এই একই উপাদান ব্যবহার করতে পারে।
এসব সত্বেও, কয়েকজন লেখক এবং পর্যবেক্ষক তাদের বার্তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য ক্রমাগত ডিজিটাল প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে গেছে। এসব উপাদান বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও একটিভিস্টরা তা বাইরে পাঠানোর উপায় বের করে ফেলেছে।
সারা বিশ্বের জনতা রেডিও, টিভি এবং খবরের কাগজের উপর মনোযোগ প্রদান করছে। মিশরের নাগরিকরা ফোনের মাধ্যমে মিশরের বাইরে অবস্থান করা তাদের সহকর্মী, বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করছে, এরপর উক্ত ব্যক্তিরা তাদের নামে বার্তা প্রদান করছে, অথবা তারা বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করছে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নোরা শালাবির কথা, সে বলছে:
দেশের ভেতরে অবস্থান করা আমার বোনের পক্ষ থেকে আমি টুইট করছি। আজ, কায়রোর কেন্দ্রস্থলে দুইজন ব্যক্তি আগুন ধরানোর জন্য গাড়িতে পেট্রোল ঢালছে। পুলিশ খুব কাজেই দাঁড়িয়ে আছে..#জান২৫
জান২৫ ভয়েস এক নতুন ফিড চালু করেছে, বিশেষ করে ইন্টারনেট বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে। তারা ২৮ জানুয়ারিতে বার্তা পাঠানো শুরু করে এবং দ্রুত ৭০০ অনুসরণকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তাদের ফিড বলছে:
ইন্টারনেট বন্ধ করার পরও আমরা ফোন এবং অন্য মাধ্যম দিয়ে মিশরীয় নাগরিকদের সাথে কথা বলছি। রিয়েল টাইম বা তৎক্ষনাৎ তাদের বাণীগুলোকে টুইট করছি। যোগাযোগ করুন: জান২৫ভয়েস (এ্যাট) জিমেইল.কম (jan25voices(at)gmail.com)
তারা প্রতিটি টুইটারের উৎসের নাম প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। এক গতানুগতিক পোস্ট:
লাইভ বা সরাসরি পাওয়া ফোনের মাধ্যমে: সুয়েজ থেকে পাঠানো এক অসমর্থিত সংবাদ, এতে জানা যাচ্ছে, একটি পুলিশ স্টেশনে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে (হামলার উদ্দেশ্য)।#জান২৫,#জান২৮,#ইজিপ্ট।
অনেকে আল জাজিরা ইংলিশ টিভি চ্যানেল সাইটের ছবি থেকে ফিড প্রদান করছে। যেটি সরাসরি এই সব ঘটনাবলির দৃশ্য তুলে ধরছিল। যদি মিশরে সেই সব ছবি পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে না বা অনেক সময় সেগুলো একেবারে উধাও হয়ে যাচ্ছে। সিএনএন, মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ভিডিও স্ট্রিমিং করছে বা দেখাচ্ছে। নীচে আল জাজিরা টেলিভিশনের একটি স্ক্রিনশট।
আল জাজিরা টিভিতে সংবাদ প্রদান করছে যে প্রচার মাধ্যমে বন্ধ করে দেবার প্রচেষ্টা চলছে এবং তাদের সংবাদ এবং একই সাথ আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করা হয়েছে যে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম এবং সাংবাদিকরা অন্য সব মাধ্যমের সাথে অনলাইনে যুক্ত হবার চেষ্টা করে যাচ্ছে, এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসে এসব ব্যবহার করছে।
কোন এক ভাবে মিশরীয় নাগরিকরা ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনকে সংবাদ প্রচারের একটি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ২০০৯ সালে ইরানী বিক্ষোভকারীদের ঠিক বিপরীত। এই ঘটনার ক্ষেত্রে, গণপ্রচার মাধ্যম ঠিক মতই কাজ করে যাচ্ছে, অন্তত মিশরের বাইরে দর্শকদের জন্য, কিন্তু নেটওয়ার্ক প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন বেশ কয়েকবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সব উপাদান বন্ধ করে দেবার ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও, মিশরীয় সমাজের যোগাযোগের প্রকৃতির ধরন লোকজনকে সেই স্থানের সাথে যুক্ত করেছে, যেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে এই ধরনের যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব। রাস্তার বিক্ষোভকারীরা এখন তাদের মুহূর্ত গুলোকে তুলে ধরতে পারবে।