আরব বিশ্ব: অন্যের অনুকরণে একই ভাবে স্বেচ্ছায় জীবন ত্যাগের ঘটনাকে উৎসাহ প্রদান করা উচিত নয়

তিউনিসিয়ার নাগরিক মোহম্মেদ বোয়াজিজি বেকারত্বের প্রতিবাদে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে যে প্রতিবাদের সূচনা করছিল, এক মাসেরও কম সময়ে সেই আন্দোলন দেশটির শাসক জিনে আলি আবিদিনের ২৩ বছরের শাসনের পতন ঘটায়। এর পর থেকে মৌরিতানিয়া, আলজেরিয়া ও মিশরে বেকারত্ব, জীবনযাত্রার ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রায় ১০ জন নাগরিক স্বেচ্ছায় প্রাণত্যাগ করে।

ইউটিউব ব্যবহারকারী মোহসেমেদখাত্তাব ২০০৪, এই ভিডিওর মাধ্যমে মিশরের একটি ঘটনা তুলে ধরেন:

“এ অঞ্চলের নেট নাগরিকরা এ ধরনের ঘটনার চর্চা, সমাজে শিকড় গেড়ে বাসার আগেই বন্ধ হয়ে হওয়া উচিত বলে মনে করেন”।

@টাটন ব্যাখ্যা করেন:

@ওয়েডড্যাডি উল্লেখ করেন যে “স্বেচ্ছায় আত্মহনন” কোন বিশেষ রীতি হওয়া উচিত নয়। এটা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন সাধনের জন্য এক বেদনাদায়ক পদক্ষেপ।#সিদিবোউজিদ

সৌদি লেখক তুর্কি আল দাখিল তরুণ সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন :

يا شباب العرب لا تظنوا ان إحراق أجسادكم سيكون مخرجا من الأزمات بالضرورة. بعض حكامنا العرب يفكر ان يصرف جالون بنزين لكل شاب عربي ليرتاح منا!
প্রিয় আরব তরুণেরা, কখনোই ভাববেন না যে, নিজেকে আগুনে পোড়ালে তা সঙ্কট মোচন করবে। আমাদের কিছু কিছু আরব শাসক, পুড়তে চাইলে, প্রতিটি তরুণের জন্য গ্যালন পরিমাণ তেল নিয়ে প্রস্তুত আছে।

কাতারের মোহাম্মদ বিন হামাদ বিস্মিত:

মানুষ কখন জীবন ধারণকে অসহনীয় ভেবে মৃত্যুকে পরিত্রাণ মনে করে?

তিনি আরো বলেন:

…জীবন কি এতই দুর্বিষহ, যে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিজেকে আগুনের কাছে আত্মসমর্পণ করা প্রয়োজন? কি কারণে জীবন এত অর্থহীন মনে হয়?

তিউনিশিয়া থেকে সৌ হাম্মামেট এর সাথে যোগ করেন :

নিঃসন্দেহে, আত্মহত্যা হারাম (ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ)। এটা এক লজ্জার বিষয় যে, এই কাজটিকে এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিশর থেকে মাশহাহেদ একই আবেগে সাড়া প্রদান করছে:

حرق النفس أمر مفزع ولا ينبغي الفرح به تحت أي ظرف، لكن نعت اللي بينتحر احتجاجاً على الذل والفقر والبطالة بالكافر هو أقذر شئ ممكن أي حد يعمله
নিজেকে হত্যা করা জঘন্য এক ব্যাপার এবং কোন অবস্থায় এই ধরনের ঘটনাকে উদযাপন করা উচিত নয়। আশমান, দারিদ্রতা, এবং বেকারত্বের প্রতিবাদে যারা আত্মহত্যা করে তারা নাস্তিক ব্যক্তি, এটা যে কারো করা, সবচেয়ে জঘন্য এক কাজ।

তিউনিশিয়ায় ফিরে আসা যাক। নোমাডলাইফের ডোডি জি, মিশরীয় এক নাগরিকের একই ভাবে আত্মহত্যা করার ঘটনা সম্বন্ধে ব্লগ করছে এবং জানাচ্ছে যে:

যেহেতু তিউনিশিয়া নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় এক গণ জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে, তার মানে এই নয় যে, মিশরেও একই ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হবে। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে মিশরে ধারাবাহিকভাবে গণ জাগরনের জোয়ার তৈরি হয়েছে এবং মনে হচ্ছে সেখানে কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে ফেসবুকে এক সংগঠন তৈরি করা হয়েছে ২৫ জানুয়ারি তারিখের (পুলিশ দিবস) বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য এবং প্রায় ৫০,০০০ লোক সেখানে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আহ্বান জানানো প্রায় ৭০,০০০ এর মত নাগরিক, এখনো এই বিক্ষোভে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

এই পোস্টের ফলাফল বিচার করে লেখা পরবর্তী পোস্টে সে মন্তব্য করছে:

দামিট, আপনি একটি ঘটনাকে অনুসরণ করে সব জায়গায় আগুন ছড়াতে পারেন না, নিজেকে পোড়ানো বন্ধ করুন।

আবার টুইটারে ফিরে আসা যাক, সৌদি নাগরিক ফুয়াদ আল ফারহান বলছে যে, যখন তার বন্ধুরা তাকে অনুরোধ করে খোঁচাতে শুরু করেছে, তখন থেকে তিনি নতুন বন্ধু অনুসন্ধান করা শুরু করেছেন:

مجموعة من الأصدقاء الخبثاء تواطؤا على إرسال رسائل جوال لي خلال 24 ساعة يطالبوني بإحراق نفسي عشان البلد #Looking4NewFriends
আমার একদল বদমাইশ বন্ধু আমাকে গত ২৪ ঘন্টা ধরে এই অনুরোধ জানিয়ে মোবাইল ফোনে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে, আমি যেন দেশের স্বার্থে নিজেকে জ্বালিয়ে দেই।

মিশরীয় আনাজে পরামর্শ প্রদান করছে যে, সাধারণ মানুষের বদলে রাজনীতিবিদেরা নিজেদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিক। তিনি টুইট করেছেন:

أنا شايف انه فعلا لو ايمن ونور وحسن نافعة وعبد الحليم قنديل ولعوا في نفسهم عند مجلس الشعب.. الثورة هتقوم
আমি যদি দেখি যে, আইমান. নুর, হাসান নাফেয়া এবং আবদুল্লাহ কুয়ান্দেল সংসদ ভবনের সামনে নিজেদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, তাহলেই বিপ্লব শুরু হয়ে যাবে।

তার স্বদেশী মিশরীয় মোসাব আহমাদ এর সাথে যোগ করছে:

كل واحد بيحب مصر يبعت جواب لقصر الرئاسة فيه عود كبريت وورقة مكتوب فيها “يا تحرقني يا ترحل” #Egypt
যে সমস্ত জনতা মিশরকে ভালোবাসে, তারা সকলেই একটি বার্তা সহ একটি করে ম্যাচের কাঠি মিশরের রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে পাঠিয়ে দেবে; বার্তাটি হবে “হয় আপনি আমাকে পুড়িয়ে মারুন, অথবা দেশ ত্যাগ করুন”।

আত্ম-ত্যাগের বিষয়ে, আরো জানতে চাইলে আরো পড়ুন

টাইম: নিজেকে বলিদানের এক বিস্তারিত ইতিহাস (এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ সেল্ফ ইমোলেশন)

ফরেন পলিসি: কোন এক লক্ষ্যে আত্মহত্যা (সুইসাইড ফর এ কজ)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .