আমরা আরবরা কি বর্ণবাদী চরিত্রের অধিকারী? এটা বলা খুবই কঠিন। কেউ হয়ত যুক্তি প্রদান করতে পারে যে, আমাদের ধর্ম বর্ণবাদের বিপক্ষে এবং এখনকার জনগণ কারো গায়ের রঙের কারণে তাকে আলাদা করে না। তবে অন্যদিকে, আমাদের সামাজিক জীবনে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় রয়েছে, যা হয়ত প্রমাণ করে যে, হ্যাঁ, আমরা বর্ণবাদী। প্রায়শ, কালো মানুষদের নিয়ে রসিকতা করার বিষয়টি আমাদের সমাজে খুব সাধারণে এক ঘটনা [আরবী ভাষায়]। চলচ্চিত্রে, এমনকি, কখনো আমরা যাকে লজেন্স বা চকোলেট-বলি সেই ক্যান্ডিকে, আমরা তার রঙের কারণে “ক্রীতদাসের মাথা” বলে অভিহিত করে থাকি।
আরব বিশ্বে এক ধরনের মার্শম্যালো চকোলেট- (মার্শম্যালো চকোলেট; সাধারণত, চিনির সিরাপ, ভুট্টা দিয়ে তৈরি মিষ্টির উপর চকোলেটের প্রলেপ দেওয়া খাবার) পাওয়া যায়। জর্ডানের ব্লগার রোবা-আল আসি, আরব বিশ্বে এই চকোলেটের এর নামকরণের বিষয়টি সম্বন্ধে লিখেছে।
আমি জানি যে বিশ্বে ‘স্লেভ” নামক ইংরেজী শব্দ যার অর্থ “ক্রীতদাস”’ তা বিশ্বের অন্য ভাষায় যে অর্থ তৈরি করে, আরব ভাষায়ও সেই একই অর্থ তৈরি করে, তারপরেও আমি বিস্মিত না হয়ে পারি না, যখন মার্শম্যালো চকোলেটের আক্ষরিক নাম “ ক্রীতদাসের মাথা” রাখা হয়। .
মনে হচ্ছে ক্যান্ডি প্রস্তুতকারী কোম্পানীর মালিকদের অনুভূতিও রোবার মত। হুসাইন ওহেব তার ব্লগে ঘানদোউর সম্বন্ধে লিখেছে, যে এই ক্যান্ডি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একজন। সে তার এই পণ্যের নাম পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“ক্রীতদাসের মাথা” নামের আরেক চকোলেটের নতুন নামকরণ করা হয়েছে সাম্বো। ছবি রোবা আল-আসির ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এট্রিবিউশন ননকর্মাশিয়াল-শেয়ারএলাইক ২.০ জেনেরিক (সিসি বাই-এনসি-এসএ ২.০) অনুসারে ব্যবহার করা হয়েছে।
একই ধরনের ক্যান্ডির আরেক প্রস্তুতকারক কোম্পানী, তার পণ্যের নাম পাল্টে ফেলেছে। কিন্তু রোবা আল-আসিসের কাছে নতুন নাম এবং মোড়ককে আরো বেশী বর্ণবাদী বলে মনে হয়েছে।
আমি জানি যে আরবদের কাছে বর্ণবাদ খুব সামান্য এক বিষয়, কিন্তু তারপরেও এই সময়ে এবং বাস্তবতায় কি তা সঠিক কাজ? সংবেদনশীল ভাবনা ছাড়াও, আমি মনে করি এটি শিশুদের জন্য এক বিপজ্জনক ভূল বার্তা প্রদান করছে, যারা এই মজাদার চকোলেটের স্বাদ গ্রহণ করছে।
আমি বলছি.. বর্তমানে যে নাম রাখা হয়েছে, সেটি রাখুন, কিন্তু এর ভেতরে যে বর্ণবাদী উপাদান রয়েছে তা দুর করুন।
লেবাননের ব্লগার ফারফাহিন্নে আমাদের সাংবাদিক “খালেদ সাগাইয়ার” এক কাহিনী তুলে ধরছে। খালেদ লিখেছে, তারা এক নিগ্রো মহিলার কাছ থেকে খেলনা এবং টি-শার্ট কিনত, যার মধ্যে “ডিজনীর বিভিন্ন কার্টুন” এবং “দি স্মার্ফ” নামক কার্টুন চরিত্রের ছবি আঁকা থাকত। এই ভদ্রমহিলাকে তারা “ক্রীতদাসী” বলে ডাকত।
وكانت «العبدة» تحبّنا أيضاً. تنظر إلينا، نحن الذين لم نبلغ العاشرة بعد، وتقول: «هيدول زبوناتي». لم أشعر وقتها بأنّ ثمّة ما هو خاطئ في تسميتي لصاحبة الدكان. كنت أدعوها «العبدة» بحبّ واحترام كاملين. لكن، حين أتذكّر ذلك الآن، أشعر بخجل عميق.
আরব বিশ্বের এই বর্ণবাদী আচরণকে কমিয়ে আনা খুব কঠিন। এই অঞ্চলের প্রায় সব জায়গায় নিজ জনগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে উপহাস করা অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। মিশরে নাগরিকরা সেই সব লোকজনদের নিয়ে উপহাস করে যারা আপার ইজিপ্ট নামে পরিচিত “সী’ইদ” নামক এলাকা থেকে আসে। লেবানন এবং সিরিয়ায় যারা “হোমস” নামক এলাকা থেকে আসে, তাদের নিয়ে ঠাট্টা তামাসা করা স্বাভাবিক এক ঘটনা। আর মরোক্কোর কিছু ধর্মীয় নেতা ইয়েননাইয়ের/আমাজিঘ নববর্ষ পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই সব ধর্মীয় নেতারা কেবল নববর্ষ পালনের বিরুদ্ধে নয়, এমনকি তারা বারবেত/তামাজিঘাত ভাষা ব্যবহারের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং তারা বারবার জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছ, যেন তারা এই সব কাজের মধ্যে দিয়ে ইজরায়েল এবং ইহুদিবাদকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে [আরবী ভাষায়]। অনেক সময় তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে ভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিয়ে পরিহাস করে, যেমন এখানে বেশ কিছু মিশরীয় ছবিতে ইয়েমেনি বা ফিলিপাইনসের নাগরিকদের নিয়ে উপহাস করা হয়েছে [আরবী ভাষায়]।