সুদান: উচ্চমানের প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কোন বিকল্প নয়

(হলিউড তারকা) জর্জ ক্লুনি একটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছেন স্যাটেলাইট সেন্টিনেল নামে, যা স্যাটেলাইট ছবির বিশ্লেষণ আর গুগুলের ম্যাপ মার্কার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে উত্তর আর দক্ষিণ সুদানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনাকে থামানোর জন্য। এই প্রকল্প গণরোষ ও বিবাদ থামানোর একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে:

রুয়ান্ডাতে আমাদের দেরী হয়ে গিয়েছিল। কঙ্গোতে আমাদের দেরি হয়ে গিয়েছিল। দার্ফুরে আমাদের দেরী হয়ে গিয়েছিল। সুদানে এখন অপেক্ষার কোন সময় নেই। উত্তর আর দক্ষিণ সুদানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে থামানোর জন্য আমাদের ম্যাপিং পদ্ধতি স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ আর মাঠ পর্যায়ের খবর একত্র করবে গুগুলের ম্যাপ মেকার প্রযুক্তি দিয়ে।

দক্ষিণ সুদান একটি গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে যে ০৯ জানুয়ারী ২০১১ তারিখে যে তারা সুদানের অংশ হিসাবে থাকবে কিনা।

ভূতপূর্ব ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ কেয়ার্ন ক্রস তার ব্লগে এই প্রকল্পের একটি সমালোচনা লিখেছেন এই বিতর্ক করে যে উচ্চ প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কোন বিকল্প হতে পারে না। তিনি বলেছেন, ”নীতিগতভাবে এটা ভালো চিন্তা আর এর উদ্দেশ্য অবশ্যই বাধা দেয়ার মতো না। কিন্তু আমার মনে দুটি প্রশ্ন এসেছে।“:

প্রথমত: বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে উত্তর আর দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ সেনা সদস্যদের বিশাল চালনা বা ট্যাঙ্ক গঠন সীমান্ত বরাবর ঘটাবে না বা সুদানি আমর্ড ফোর্স (এসএফ) সীমান্ত এলাকাতে তেলের খনিতে আক্রমণ চালাবে না- সেনা কার্যক্রম যা অবশ্য স্যাটেলাইট দিয়ে বোঝা যাবে। সুদানের বিরোধ আসলে রুপ নিতে পারে বিচ্ছিন্ন স্থানীয় বিরোধে যেখানে মিলিশিয়ারা সম্ভবত খার্তুম সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতে পারে (যেমন দারফুরে জাঞ্জাউইদ)। আর একটা সম্ভাবনা হচ্ছে স্থানীয় গোত্রের ভিতরের সমস্যা যা ঘনীভূত হয় সরকারের উস্কানির কারনে আর অস্ত্রের জোগানের কারনে যার মধ্যে ভারী অস্ত্র আছে।

তার দ্বিতীয় চিন্তা হচ্ছে যে এই প্রকল্প মহাকাশের দামী প্রযুক্তির উপর নির্ভর আর সাধারণ মানূষকে অবহেলা করছে:

আমার দ্বিতীয় চিন্তার বিষয় হচ্ছে যে, এই প্রযুক্তি এসময়কার অন্যগুলির মতো, এটা প্রচার করছে ‘উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর’, দামী আর বলা বাহুল্য- চটকদার সমাধান যা ফ্যাশন বিহীন ও বর্তমানে সহজলভ্য প্রযুক্তির বাইরে এবং যা স্থানীয় মানুষ এর মত সম্পদকে উপেক্ষা করে।

তিনি তর্ক করেছেন যে গণভোটের তারিখ যতো এগিয়ে আসছে, সব থেকে কাজের প্রযুক্তি হতে পারে সুদান ভোট মনিটর যা উশাহিদি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে:

দক্ষিণ সুদান তাদের স্বায়ত্বশাসন জন্য যতো ০৯ জানুয়ারীর গণভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , আসছে সপ্তাহগুলোতে আরো বেশী কার্যকর প্রযুক্তির প্লাটফর্ম হিসাবে এটাকে দেখা হতে পারে, সুদান ভোট মনিটরের পিছনের ধারনা হলো যে মানুষ কেন্দ্রীয় একটা নম্বরে টেক্সট বার্তা পাঠাবে সংঘর্ষ, নির্বাচন কেন্দ্রের সমস্যা ইত্যাদি জানিয়ে।

সুদান ভোট মনিটর একটা পাইলট প্রকল্প যা সুদান গবেষণা ও নীতি ইন্সটিটিউট (এসআইআরপি) এবং ‘উন্নয়নের জন্য আসমা সোসাইটি ‘ কর্তৃক পরিচালিত, যার সাথে আছে অন্যান্য সুদানি নাগরিক সমাজ সংস্থা আর এটা সমর্থন করে ইমোক্সা.অর্গ আর উশাহিদি.কম (প্রযুক্তিগত পার্টনার)। এই ব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য আর যোগাযোগ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে স্বাধীনভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা আর নির্বাচনের প্রক্রিয়া আর ফলাফল সম্পর্কে রিপোর্ট করা।

উশাহিদি (সোয়াহিলি ভাষায় সাক্ষ্য বা সাক্ষী) গঠিত হয় ২০০৭ সালে কেনিয়ার বির্তকিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে চাক্ষুস দেখা মারামারির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য যা ইমেইল আর টেক্সট বার্তার মাধ্যমে পাঠানো হয় আর গুগুল ম্যাপের উপরে স্থাপন করা হয়। ৩ জানুয়ারী ২০১১ থেকে সুদান ভোট মনিটর নাগরিক সমাজ সংস্থা, মিডিয়া আর ব্যক্তির পাঠানো গণভোটের উপরে আসল রিপোর্ট পোস্ট করা শুরু করবে।

যদিও সুদান ভোট মনিটর একটা প্রযুক্তিগত সমাধান ব্যবহার করে,

এটা নির্ভর করে মোবাইল ফোনের বহুল ব্যবহৃত মৌলিক প্রযুক্তির উপরে। সবার উপরে, এটা স্থানীয় মানুষের জ্ঞান আর দর্শনের উপরে বিশ্বাস রাখে। অবশ্যই তারা সব থেকে ভালো বিচারক যারা বুঝতে পারবেন যে সমস্যা হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে কিনা।

তিনি বলছেন যে এখন উচিত মানুষকে কাজে জড়ানো যারা সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আর যারা সব থেকে বেশী তথ্য জানেন:

আমি আগেও যে তর্ক করেছি, এটা সামান্য একটি ব্যাপার হয়ে থাকে যে জাতিসংঘের আলোচনায়, যেমন নিরাপত্তা পরিষদে, প্রায় এই ঘটনা ঘটে থাকে যে স্থানীয় মানুষরা অনুপস্থিত থাকেন, অনিমন্ত্রিত। এই সকল উচ্চ পর্যায়ের অফিসে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে এমন মানুষ সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তারা সব থেকে তথ্য ও জেনে থাকেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যখন দার্ফুরের কথা চিন্তা করেন, তখন টেবিলে দার্ফুরের কোন প্রতিনিধি থাকেন না। এটা দু:খজনকভাবে এই ধরনের প্রায় সকল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, কারন জাতিসংঘ সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান হিসাবে কোন ‘রাষ্ট্র বহির্ভূত অংঙ্গ'কে বরদাশ্ত করবে না, যদিও তারা পিড়ীত মানুষের আইনগত প্রতিনিধি হন, যেমন সাধারণ সুদানি।

তিনি শেষ করেছেন বলে যে আমাদের কেবলমাত্র স্থানীয় কণ্ঠ শোনা প্রয়োজন:

স্থানীয় মানুষেরা অবশ্যই সব থেকে জ্ঞানী আর যে কোন সংঘাত আর তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকির যে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো জানা। আমাদের কেবল তাদের কথা শোনা প্রয়োজন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .