দক্ষিণ সুদানের ভোটাররা এক গণভোটে অংশ নিতে যাচ্ছে যে গণভোট সম্ভবত আফ্রিকার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রটিকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলতে যাচ্ছে। যদি সুদান দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায়, তাহলে আফ্রিকা মহাদেশে রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ থেকে ৫৪ টিতে পরিণত হবে। এই গণভোট খার্তুমের কেন্দ্রীয় সরকার এবং সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মি/মুভমেন্টের মধ্যে ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত নেইভাষা চুক্তি অনুসারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই গণভোট সংক্রান্ত সম্প্রতি যে সব ব্লগ পোস্ট হয়েছে, সে সব নিয়ে আমাদের এই আলোচনা।
সুদানের খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবার সময় সুদানের জন্য নির্মিত আফ্রিকার উচ্চ পর্যায়ের পরিষদ (হাই লেভেল ইমপ্লিমেনটেশন প্যানেল ফর সুদান বা এইউএইচআইপি)-এর চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি থাবো এমবেকি বলেন, যদি সুদান বিভক্ত হয়ে যায়, তাহলে তা “আফ্রিকান দক্ষিন” আর “আরব উত্তর” এই পরিচয়ে বিভক্ত যেন না হয়, এবং উত্তর সুদান কোন ভাবে দক্ষিণ সুদানের চেয়ে কোন অংশে কম” আফ্রিকান” নয়:
এই প্রেক্ষাপটে আমরা এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে চাই যে যদি সুদান আলাদা হয়ে যায়, তাহলে তা “আফ্রিকার” দক্ষিণ এবং”আরব” উত্তর হিসেবে যেন বিভক্ত না হয়, তা অবশ্যই দুটি ভিন্ন ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আলাদা হয়ে যাবার ব্যাপারে, নানা জাতির, নানা ধর্মের আফ্রিকার একটি দেশ সুদান, দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হবে, উত্তর এবং দক্ষিণ, দুটি আলাদা রাষ্ট্র, যে দুটি দেশই সমভাবে আফ্রিকার অংশ, এবং যে দুটি রাষ্ট্রের উভয়ই প্রয়োজনের খাতিরে ভিন্নতাকে গ্রহণ করবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ধরে রাখবে যে উত্তর সুদান, দক্ষিণ সুদানের চেয়ে কোন অংশে কম আফ্রিকার নয়। আর ইসলাম আফ্রিকার একটি ধর্ম। যেমন সুদানের আরব এবং মাগরেব অঞ্চল নামে পরিচিত এলাকার লোকজন আফ্রিকার জনগণ। আফ্রিকার একজন হিসেবে এই মহাদেশের ক্ষেত্রে আমরা আরব এবং মুসলিম সভ্যতার দ্বারা আফ্রিকার অর্জনে গৌরবান্বিত, যাকে আমরা আমাদের ঐতিহ্যের এক সমন্বিত অংশ হিসেবে বিবেচনা করি।
দক্ষিণ সুদান থেকে পাসকাল লাডো সংবাদ প্রদান করছে। সে বলছে যে, ভোটারদের সংঘবদ্ধ করার জন্য সঙ্গীত এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে:
দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর অনেক শিল্পী এবং ঐতিহ্যবাহী নাচের নৃত্যশিল্পীরা আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হবার জন্য একসাথে মিলে প্রচারণা চালাচ্ছে। গণভোটের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী থাকতে সঙ্গীত ভোটারদের ভোট দানে উৎসাহিত করার জন্য সঙ্গীতের ব্যবহার করা হচ্ছে।
সুদান৩৬৫ নামক ওয়েবসাইট তার সংবাদ বিভাগ থেকে সুদান সম্পর্কে বিস্তারিত প্যাকেজ পোস্ট করেছে। এই সব তথ্যের মধ্যে রয়েছে:
*গণভোট সংক্রান্ত মূল তথ্য
*মূল পরিসংখ্যান
*মূল সব ফ্লাশ পয়েন্ট/গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
*গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সব ব্যক্তিত্বরা
*মূল পর্যবেক্ষক মিশন
মায়াঙ্ক বুবাল দেখছেন যে; “গণভোটের আশার মধ্যে রাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে এক ভয় তৈরি হচ্ছে”:
দক্ষিণ সুদান যখন দ্রুত এক গণভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে তারা উত্তরের সঙ্গে থাকবে নাকি এক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তখন প্রস্তাবিত উত্তর-দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এটি চলতে থাকে ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম দুটি ধাপ, যা হচ্ছে একটি বাস্তবতা পরীক্ষা করে দেখা যে অস্থিতিশীল একক একটি রাষ্ট্র বাড়তে থাকা হুমকি মোকাবেলা করতে সক্ষম কিনা, যৌক্তিক ভাবে দক্ষিণের কৌশলগত এলাকার ক্ষেত্রে।
সাউথ সুদান ইনফো লিঙ্কসের ডেভিড উইডজিংটন গণভোট সংক্রান্ত এক ভিডিওর লিঙ্ক যুক্ত করেছে এবং কেনিয়ার প্রাক গণভোট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে লিখেছেন:
অলআফ্রিকায় পোস্ট করা সুদান ট্রিবিউনের এক প্রবন্ধের তথ্য অনুসারে, এই গণভোটের জন্য মোট ৩.৯ মিলিয়ন লোক ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করিয়েছে। দক্ষিণ সুদান গণভোট বিষয়ক সংস্থা (সাউথ সুদান রেফারেন্ডাম কমিশন বা এসএসআরসি) কয়েকদিন আগে এই সংখ্যা প্রকাশ করেছে, তারা নিবন্ধনকৃত ভোটের সংখ্যা ভাগ করেছে। দক্ষিণের ভোটার:৩.৭ মিলিয়ন, উত্তরে ভোটার রয়েছে:১১৬,০০০ জন এবং প্রবাসী ভোটার সংখ্যা ৬০,০০০ জন। এই সব প্রবাসী ভোটাররা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মিশর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। সম্প্রতি পরিচালিত এক আদামশুমারী অনুসারে দক্ষিণ সুদানের অধিবাসীর সংখ্যা ৮ মিলিয়ন। গণভোটকে বৈধ করার জন্য শতকরা ৬০ শতাংশ ভোটারের ভোটে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
যেহেতু আমি দক্ষিণ সুদানের ঘটনাবলির উপর নজর রাখছিলাম এবং সময়নুসারে আমার শিরোনামের সাথে প্রবন্ধ যুক্ত করছিলাম, সেই কারণে লোকজন ক্রমাগত আমাকে সুদান সম্বন্ধে মৌলিক কিছু প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। নীচে আমি কিছু ভিডিওর লিঙ্ক যুক্ত করেছি, যা সম্প্রতি অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে। তারা অবশ্যই এর ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপট সরবরাহ করতে পারে তাদের জন্য, যারা এই বিষয়ে আরো জানতে চায়, যে ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশ্বাস করে হচ্ছে দক্ষিণ সুদানবাসীরা আফ্রিকায় এক নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।
সুদান ভোট প্রতিদিন দক্ষিণ সুদানে বাস করা লোকদের সাক্ষাৎকার উপস্থাপন করেছে, যারা গণভোট নিয়ে তাদের আশা এবং শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে। এখানে এ রকমই একজন হেলেন কিলা ওয়াঙ্গোর সাক্ষাৎকার রয়েছে, এক প্রবীণা যার ভাবনায় ভবিষ্যৎ প্রজ্ঞাময় এবং তার হৃদয়ে শান্তির বসত।
এই পডকাস্টে মারভিস বিরুঙ্গী প্রতিরোধ আন্দোলন আনইয়া নাইয়ার সামরিক শাখার স্থপতি ৭৯ বছর বয়স্ক জোসেফ লাগুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, যিনি স্বাধীনতার জন্য যে লম্বা যাত্রা, তার কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে অবশেষে গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত হতে যাচ্ছে।
কেনিয়ার টিভি গণভোটের বিষয়ে সংবাদ প্রদান করছে, যা ওমবুইয়ের ভাষা এক লোক দেখানো বিষয় মাত্র:
যখন বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স এবং অন্যরা সংবাদ প্রদান করবে, তখন কে কেনিয়ার সাংবাদিকদের রোদে পোড়া এবং ঘামে ঝরা উত্তপ্ত দিনে দক্ষিণ সুদানের উপর পাঠানো সংবাদ দেখতে আগ্রহী হবে? বিশাল পরিমাণে সংবাদিক পাঠানো কি স্বল্প ব্যয় সম্ভব? এর মানে কি কেনিয়া ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত নেইভাষা অনুষ্ঠিত কম্প্রিহেনসিভ পিস এগ্রিমেন্ট বা সিপিএ-এর ব্যাপারে বেশী আগ্রহ প্রদর্শন করছে না, এটা কি এক নম্বর সংবাদ হবার যোগ্য? এটা ঠিক যে কেনিয়া সবচেয়ে বেশী সুদানি উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু তারা কি সংখ্যায় কেনিয়ার নাগরিকদের ছাড়িয়ে গেছে, কিংবা এই ঘটনা কি স্থানীয় সংবাদের চেয়ে গুরুত্ব বহন করে?
আমি বিশ্বাস করি যে এই ঘটনাটি এক গভীর বিষয়কে ব্যাখ্যা করে। আমি অনুভব করি যে প্রচার মাধ্যমের মালিকরা তাদের কর্পোরেট ক্ষেত্রকে আরো বিস্তৃত করছে কেনিয়ার সাংবাদিকদের এক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে পাঠিয়ে দিয়ে, যে বিষয়ের উপর কেনিয়ার নাগরিকরা মোটে আগ্রহী নয়। কেনিয়ার নাগরিকরা যা জানতে চায়, তা হচ্ছে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল এবং সেটি কি অবাধ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে কিনা। এই বিষয়টি কি একজন বা দুজন সাংবাদিক মিলে করতে পারে না? কি ভাবে আপনারা দর্শক না হারিয়ে ব্যবসা বাড়াচ্ছেন।
বানকালেল এর সাথে দ্বিমত পোষণ করছে:
আমি এই ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করছি যে, তারা কেবল লোক দেখানো কাজ করছে। বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার ঘটনা নিয়ে কোন আফ্রিকার সাংবাদিকরা সংবাদ প্রদান করেনি, যা বেদনাদায়ক। এবং এখনো সেই ঘটনা চলছেই- আমরা আইভরি কোস্ট, শাদ, সেনেগালের সংবাদ পাই সিএনএন এবং আল জাজিরার মাধ্যমে। এখানে আমাদের নিজেদের এই অঞ্চলে একটি সংবাদ মানবিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে প্রচণ্ড গুরুত্বের দাবিদার এবং আপনাদের এলাকা সহ যে কোন সংবাদ প্রচার মাধ্যমের, সংবাদ গ্রহণের জন্য সেখানে যাওয়া উচিত।
বেন উপরের বক্তব্যের সাথে একই মত পোষণ করেন:
আমি বিশ্বাস করি যে সুদানের গণভোট এই অঞ্চলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং একই সাথে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বের দাবি রাখে এবং তা একই ভাবে কেনিয়ার প্রচার মাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বটে। এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহের উপর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ানোর জন্য এটা একটা সুযোগ এবং সুদানের মত একটা জায়গা থেকে শুরু করার চেয়ে আর ভালো সুযোগ কবে আসতে পারে।
আমরা যেন ভুলে না যাই যে, কেনিয়ার অনেক নাগরিক সুদানে বিনিয়োগ করেছে এবং তারা সেখানে কি ঘটে তা দেখার জন্য গভীর মনোযোগের সাথে অপেক্ষা করছে, যার ফলে কেনিয়ার প্রচার মাধ্যমের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ, সেখানে সাংবাদিক পাঠিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার।
সুদানের নাগরিক সমাজের এক স্বাধীন উদ্যোগ হচ্ছে সুদান ভোট মনিটর, এটি স্বাধীনভাবে গণভোটের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং এ সম্বন্ধে সংবাদ প্রদান করবে। তারা উশাহিদি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এ কাজটি করবে:
কি বিষয়ে সংবাদ প্রদান করতে হবে? আমরা সকল কিছু শুনতে চাই: ভালো এবং মন্দ উভয় সংবাদ। আমরা গণভোট সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা সবাইকে জানাতে চাই এবং ঘটনা সেই দিকে যাচ্ছে। এই মূহূর্তে, যেমন আপনি আমাদের জানাতে পারে গণভোটের প্রস্তুতি আসলে কেমন হচ্ছ। সকল কিছু কি ঠিকমত হচ্ছে? জনগণের অনভূতি কেমন? আপনি আমাদের মূল পাতায় প্রবেশ করে বিভিন্ন সংবাদ বিভাগের উপর চোখ বুলাতে পারেন। যখনই আমরা-এসএমএস, ইমেইল বা অনলাইনের মাধ্যমে কোন সংবাদ পাবার সাথে সাথে- আমরা সেই সব সংবাদ, বিভাগ অনুসারে সাজিয়ে ফেলি। কি ভাবে সংবাদ প্রদান করতে হবে? এখন থেকে, আপনি অনলাইনে এখানে সংবাদ পাঠাতে পারেন বা ইমেইল করতে পারেন।
রিপোর্টস@সুদানভোটমনিটর.কম। দয়া করে নিশ্চিত করেন, আপনার সংবাদটি যে স্থান থেকে পাঠাচ্ছেন, তার নাম এর সাথে যুক্ত করছেন। শীঘ্রই আমরা একটা ফোন নাম্বার প্রকাশ করব, যাতে আপনি এসএমএসের মাধ্যমে সংবাদ প্রদান করতে পারবেন।
জিনা মুর সংবাদ প্রদান করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডিসিতে অবস্থিত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ নামক প্রতিষ্ঠান ১০ জানুয়ারী , ২০১০ তারিখ সোমবার-এ, সুদানের গণভোট পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।