- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সুদান: দক্ষিণ সুদানের গণভোটের দিন গণনা শুরু

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, সুদান, আইন, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, রাজনীতি

৯ জানুয়ারী, ২০১০ তারিখে দক্ষিণ সুদানে এক গণভোট [1] অনুষ্ঠিত হবে। এই গণভোটের বিষয় তারা সুদানের সাথে থাকবে কি না। ঘটনা প্রবাহে মনে হচ্ছে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশটি দুইটি অংশে বিভক্ত হতে যাচ্ছে। এই গণভোট নিয়ে যে সমস্ত পোস্ট লেখা হয়েছে সেগুলোর আলোচনা এখানে তুলে ধরা হল।

ম্যাজি ফিক সংবাদ প্রদান করছে [2] যে, ১১৬,০০০ জন দক্ষিণ সুদান বাসী অক্টোবরের মধ্যে উত্তর সুদান ত্যাগ করেছে:

১১৬, ০০০ (এবং এই সংখ্যা বেড়েই চলছে*) জন দক্ষিণ সুদানবাসী অক্টোবরের শেষে উত্তর সুদান ছেড়ে চলে গিয়েছে। এখন দক্ষিণের গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যখন আর এক সপ্তাহ বাকী, তখন গণহারে লোকজন দ্রুত দক্ষিণের রাজধানী শহরে এসে জমা হচ্ছে। পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তারা তাড়াহুড়ো করে এখানে এসে উপস্থিত হচ্ছে।

[3]

ফিরে আসা লোকজনদের জন্য তৈরি আওয়েল শিবিরে নারী এবং শিশুরা পানি নেবার জন্য ভীড় করেছে। ছবি ম্যাজিয়ে ফিকের সৌজন্যে পাওয়া।


কেন উত্তরে বাস করতে থাকা বিশাল সংখ্যক দক্ষিণ সুদানি দক্ষিণে ফিরে যাচ্ছে? [2]:

কেন উত্তরে বাস করতে থাকা অনেক দক্ষিণ সুদানবাসী অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সত্ত্বেও আবার দক্ষিণে ফিরে যাচ্ছে? কারণ তারা শঙ্কিত যে গণভোটের পর উত্তর সুদানে তাদের অধিকার আর সুরক্ষিত থাকবে না।

মাগদি এল গিজোউলি, সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর বাসির দেশটির স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে জাতীর উদ্দেশ্য যে বক্তৃতা প্রদান করেছে তার বিশ্লেষণ করেছে। তিনি বলছেন [4] “বশিরের সাংবিধানিক ফর্মুলা অনুসারে দক্ষিণকে তার নিজস্ব ভাগ্য বেছে নেবার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে, এটি জাতীর অসুখ ভালো করার জন্য ব্যবহার করা পুস্তিকার সর্বশেষ লাইন”

তার এই অবস্থান থেকে রাষ্ট্রপতি বসির এই দিনে তিনটি বিষয়ে ভাষণ প্রদান করেন, ঝুলে থাকা দক্ষিণ সুদানের সাথে বিভক্তি, দারফুরের সংঘর্ষ এবং দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিয়ে খার্তুমে রাজনৈতিক পুনঃ বিন্যাসের ব্যাপারে বিরোধী দলের দাবী নিয়ে। দক্ষিণের ব্যাপারে , শান্তিপূর্ণ সমাধান বনাম যুদ্ধের মাধ্যমে একতার মধ্যে; বসির সাহসের সাথে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান করার উদ্যেগ নিয়েছে। দক্ষিণ সুদানকে তার নিজের মত করে ভাগ্য গড়ে নেবার সুযোগ প্রদান করার বিষয়টি বসিরের সাংবিধানিক ফর্মুলার অংশ “জাতীর উপশম লাভ করার জন্য প্রস্তুত করা বইয়ের শেষ বাক্য”, যেখানে তার শাসনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শান্তি স্থাপন বজায় রাখা, নিশ্চিত ভাবে বলা যায় তা দেশটির সত্যিকারের স্বাধীনতাকে ধরে রাখার শক্ত মাধ্যম।

ইয়াবু আনেটের মতে, সুদান থেকে যদি দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যায়, তাহলে বিতর্কিত আবেইয়ে অঞ্চল নিত্য পণ্যের অভাব দেখা দেবে [5]। কারন এখানকার বেশির ভাগ পণ্য উত্তর সুদান থেকে আসে:

আবেইয়ে অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ভীষণ উদ্বিগ্ন- তারা মনে করছে যে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক মন্দা বয়ে আনতে পারে। চোল মায়েন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “যদি আবেইয়েকে দক্ষিণের সাথে জুড়ে দেয়া হয়, তাহলে তার প্রভাব সীমান্ত বাণিজ্যের উপর পড়বে। যদি সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তারপরেও প্রতিদিনের বাজার সামগ্রীর জন্য পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত যেতে পারি।

জুবার বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য এই গণভোট এক শঙ্কার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে [6]:

উগান্ডার এক ব্যবসায়ী বিরুঙ্গিমারি যিনি জুবা মার্কেটের সব্জি ব্যবসায়ী, তার ক্ষেত্রে এই গণভোট এক উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন “ আমরা এই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, এবং গণভোটের পর যদি কোন রকম সহিংসতা না ঘটে, তাহলেই আমরা ফিরে আসব”।

জুবার হাজার হাজার ব্যবসায়ীর মধ্যে মারি একজন, যাদের অনেকে প্রতিবেশী দেশ থেকে এখানে এসেছে। এই গণভোট সবার জন্য কি বয়ে আনে, তা নিয়ে তারা চিন্তিত। ইতোমধ্যে আমদানী পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে শঙ্কিত যে গণভোট সংক্রান্ত সহিংস ঘটনা ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে এবং হয়ত মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করতে পারে।
জুবার কোনইয়ো কোনইয়ো এবং জেবেল মার্কেটের অনেক বিদেশী ব্যবসায়ী বলছেন যে, তারা বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি যাবেন এবং গণভোট সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ড সমাপ্ত হবার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই তারা এখানে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন।

সাউথ সুদান ইনফো ২০১০ সালের সুদানের শিরোনামের উপর এক সময় সূচি [7]তৈরি করেছে [8]:

দক্ষিণ সুদান কি আফ্রিকার সবচেয়ে নবীন স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে নাকি করবে না, নিজস্ব ভোটে এই বিষয়টি নির্ধারণ করার সময় রয়েছে আর মাত্র ৯ দিন। গত বছরটি ছিল এক বিশেষ বছর। গত বছরটি ছিল ছয় বছর ধরে অন্তবর্তীকালীন ক্ষমতা পরিচালনাকারী সিপিএ-এর শাসনকালের শেষ বছর, যে ঘটনাটি এলাকাটিকে ৯ জানুয়ারী,২০১১ সালের এই গণভোটের দিকে পরিচালিত করে।

[9]

জুবার সব জায়গায় নীল এই ব্যান্ড দেখা যাচ্ছে, ছবি মিসহ্যাপ এবং মেহ্যাপের সৌজন্যে।

মিসহ্যাপ এবং মেহ্যাপ পর্যবেক্ষণ করেছে [10], যে কোন কিছুর জন্য ভোট প্রদান করা হবে, কিন্তু অনেক দক্ষিণ সুদানি ভোটার হয়ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকে গ্রহণ করবে না।

যখন আমরা গণভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন দক্ষিণ সুদানে অনেক অশুভ লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ক্রমেই এটা পরিষ্কার হয়ে এসেছে, যে কোন কিছুর জন্য সবাই ভোট দেবে, তবে অনেক দক্ষিণ সুদানি দক্ষিণের এই ভাবে আলাদা হয়ে যাওয়াকে মেনে নেবে না। এর নিশ্চয়তা কোথায়, কারণ গত চার দশ ধরে এখানে যুদ্ধ চলছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ সুদানের ভেতরে অনেক মানুষ বিষয়টিকে সত্যিকারের আত্মনিয়ন্ত্রণের সুযোগের বদলে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার এক এক উপায় হিসেবে দেখে।

দক্ষিণ সুদানের গণভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতির উপর তৈরি করা ম্যাজি ফিকের উপস্থাপনাটি দেখুন [11]:

দক্ষিণ সুদানের রাজধানীতে গণভোট সংক্রান্ত যতগুলো সাইনেজ রয়েছে তা অবশ্যই খেয়াল করার মত। দক্ষিণ সুদানের গণভোট পরিষদ ৮ জানুয়ারী নিবন্ধিত সকল ভোটারকে ভোট দেবার জন্য অনুরোধ করেছে। তবে এখানকার বেশির ভাগ পোস্টার এবং বিলবোর্ড একটি বার্তাকে বহন করছে, আর তা হচ্ছে সামনে আলাদা হয়ে যাবার বিষয়টি ঘটবে। এই সব চিহ্ন, যা নাগরিক সমাজ বা সিভিল সোসাইটি গ্রুপের সৌজন্যে পাওয়া, তা দক্ষিণ সুদানের পতাকাকে তুলে ধরছে এবং এখানে একটি খোলা হাত দেথা যাচ্ছে, যা গণভোট প্রদানের দিন ব্যালট পেপারে দেখা যাবে।

যারা প্রার্থনায় বিশ্বাস করে তারা স্কট এবং মেগ রাম্বোর সাথে এক প্রার্থনায় যোগ দিন [12]:

আপনি কি আমাদের সাথে প্রার্থনায় যোগদান করবেন, যে আমরা প্রার্থনা করতে যাচ্ছি:
*উত্তর এবং দক্ষিণ সুদানের মধ্যে যেন শান্তি বাজায় থাকে, এবং একই সাথে যেন বিভিন্ন আদিবাসী দলগুলোর মধ্যে শান্তি বজায় থাকে।
* বিতর্কিত এলাকা নিয়ে সমস্যা যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাধান হয়; সেই সীমান্ত এলাকা এবং বাসিন্দাদের জন্য।
* সহজ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ এক গণভোটের জন্য
* যেন সুদানের চার্চ সব সময় শান্তির স্বপক্ষের এক সাক্ষী এবং মিত্র হিসেবে কাজ করে যায়।
* উত্তর এবং দক্ষিণের মাঝে, সরকার এবং বিদ্রোহীদের মাঝে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুদানের জনগণ এবং ঈশ্বরের মাঝে যেন মিত্রতা বজায় থাকে।
.