- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে: যাদুকরী নায়ক নাকি খলনায়ক

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, বাক স্বাধীনতা

উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে তার দেশ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের কারো কাছে নায়ক, আবার কাছে খলনায়ক। দেশে এবং বিদেশের অনেকেই উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতারা মাথা কেটে ফেলতে চাইছে, অন্যদিকে অন্যরা তাকে জনতার চোখে একজন বিজয়ী বীর হিসেবে দেখছে।

স্থানীয় ব্লগাররা কেবলগেটে যে সমস্ত বিষয়ের কথা ফাঁস করে দিয়েছে তার উপর মনোযোগ প্রদান করার বদলে এর নৈতিকতা এবং কার্যকর প্রশাসনের ব্যাপারে এর প্রভাবের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

ক্লাব ট্রুপ্পোস নামক গ্রুপ ব্লগের দুজন লেখক এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিতর্কের উপর লেখা পোস্ট করেছে। কেন পারিশ নামক লেখক এই উন্মোচনের ঘটনাকে উদ্দেশ্য পুরণ করার বদলে কাজে বিঘ্ন ঘটার বিষয় এবং বিচার করার যোগ্য নয় এমনভাবে দিক দিয়ে দেখছে।

সম্প্রতি উইকিলিকসের উন্মোচনের ঘটনায় ফোওআই-(ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন বা তথ্য স্বাধীনতা) বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পিটার টিমমিনসের [1]সাথে আমি খুব বেশী একমত হতে পারি না। আমার জানা নেই অ্যাসাঞ্জে একজন ধর্ষক কি না, কিন্তু তিনি এক দশক তা তার বেশী সময় ধরে জনতার মাঝে একটা আওয়াজ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এই উন্মোচনের ঘটনা এখন পর্যন্ত নির্দেশ করে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন দেশ সামান্য বা গণ কোন অবৈধ কাজ করেনি। কাজে তাদের এই সব উন্মোচনের ব্যাপারে জনতার বৈধ কোন আগ্রহ নেই।
ধারবাহিক চিন্তা এবং নালিশ করা [2]

একই ক্লাব ট্রুপ্পো ব্লগের ব্লগার পল ফ্রিজটার, অ্যাসাঞ্জের কল্যাণের ব্যাপারে চিন্তিত এবং আশা করছেন যে এই উন্মোচনের ঘটনা সবাইকে আরো জবাবদিহিতা প্রদান করার দিকে ঠেলে দেবে।

ঠিক আছে, তারা আবার কাজটি করতে সমর্থ হয়েছে। কুইন্সল্যান্ডের ছেলে-জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে এবং তার উল্লসিত সাংবাদিক এবং প্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা আহাম্মকের দল আরো একবার সংবেদনশীল তথ্যে ইন্টারনেট ভাসিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সরকারকে বিব্রত করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তারা হাজার হাজার কূটনৈতিক নথিপত্রের উপাদান প্রকাশ করে এই কাণ্ড ঘটায়।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে শীঘ্রই ধরা হবে। যদি ইন্টারপোল তা করতে না পারে, যারা তার উপর এক গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করার কাছাকাছি চলে যাবে, এরপর আসবে অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীরা যারা দেখতে চাইবে যে সে কি কোন আইন ভঙ্গ করেছে কিনা, অথবা অন্য কোন পশ্চিমা সরকার একই ভাবে বের করার চেষ্টা করবে সে কোন আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা। একবার যদি তাকে ধরা হয়, আমি মনে করি তাহলে তাকে বাকি জীবন আদালতে কাটাতে হবে।

আমি বলতে পারি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে ভবিষ্যৎ-এ আজীবন জেলের ভাত খেতে যাচ্ছে, যদি না, তাকে আশ্রয় দিতে রাজি আছে, এমন কোন রাষ্ট্র সে খুঁজে না পায়। উইকিলিকসকে উন্মুক্ততার আদর্শ এবং সরকারকে দায়িত্বশীল করার ক্ষেত্রে লেগে থাকার জন্য প্রশংসা পেতে পারে। কিন্তু এখনো তারা সত্যিকারের খারাপ জিনিসের উপাদান আক্রমণমূলক ভাবে আলাদা করেনি। সম্ভবত সেগুলোকে আগামীতে দেখা যাবে। আমি সুনিশ্চিত ভাবে এ ব্যাপারে আশাবাদি।
উইকিলিকসের যাত্রার শেষ কোথায়? [3]

কেটি বারনেট, স্ক্যাপটিকাল লইয়ার নামক ব্লগে লিগাল ইগল হিসেবে ব্লগ করেন। তিনি এর আইনগত দিকটি দেখেছেন এবং এরপর তিনি জুলিয়ানের কাজের গুরুত্ব পরিমাপ করেছেন।

আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে উইকিলিকসের ব্যাপারে আমি দ্বিধান্বিত যে অ্যাসাঞ্জে বিরুদ্ধে কোন নেয়া অভিযোগ দাঁড় করা যায় কি না।

…একজনের অবশ্যই সতর্কতার সাথে তথ্যের স্বাধীনতার সাথে অন্য আগ্রহের বিষয়গুলো মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া সবসময় ভালো কাজ না। এবং এটা খুব স্বাভাবিক যে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জনতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। (এটা এমনকি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে: এটাকে বলে কৌশল)
উইকিলিকস এবং তথ্য স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাহসী এক বিশ্ব [4]

থিঙ্কিং আউট লাউডের লরেঞ্জ মনে করেন যে এই নথি প্রকাশের ঘটনা অ্যাসাঞ্জের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে এবং এগুলোকে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ড্যানিয়েল এলসবার্গ কর্তৃক পেন্টাগনের নথিপত্র ফাঁস করে দেয়ার সাথে এর তুলনা করেছেন।

উইকিলিকস নথি কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্য ভালোভাবে বিপদ ডেকে এনেছে। যা অনেক লজ্জাজনক ঘটনা এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির নোংরা বিষয়কে তুলে এনেছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এবং তার কাজ নিয়ে কেউ একজন কি ভাবল তা ভাবার চেয়ে, কূটনৈতিক বিশ্বে আসলে কি উন্মোচিত হল তা জানা এবং সঠিক ভাবে জানা অনেক বেশী যুক্তিপূর্ণ ।
পেন্টাগনের কাগজপত্রে কি লেখা রয়েছে [5]

পোস্ট পারসোনাল রিফ্লেকশন এবং সেই পোস্টের উপর আসা মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে প্রাক্তন এক সরকারি কর্মচারি জিম বেলশ অন্য মন্তব্যকারীদের সাথে যোগ দিয়েছেন এই যুক্তিতে যে, সুশাসন প্রক্রিয়ায় এসব বিষয়, সরকারের উপর প্রভাব ফেলবে, যারা অনেক বেশি সেবা প্রদান করবে এবং ব্যক্তিগত জায়গায় কম খোলামেলা হবে।

আমার মতে উইকিলিকসের সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় বিপদটি শায়িত রয়েছে সরকারের প্রতিউত্তর করার মধ্যে দিয়ে। আমি আশা করব যে অন্য সব বিষয়ের মধ্যে, তথ্য পাবার উপর অধিকারের পরিমাণ কমিয়ে আনা, ঝুঁকি বাড়ানো এবং তাদের শাস্তি প্রদান করা, যারা সব প্রকাশ করে তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে; এবং এসব বিষয় সরকার কর্ম পদ্ধতির মধ্যে জটিলতা বাড়িয়ে তোলে, যা ইতোমধ্যে তার কার্যকারিতার প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে।

যা ঘটেছে তাতে কোন সরকার একে উপেক্ষা করতে পারে না। অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের সরকার এই ফাঁস হবার ঘটনাকে মোকাবেলা করতে পুরো এক বিশেষ দল নিয়োগ করেছে । আমেরিকার অবস্থা আরো বেশি জটিল এবং বিপজ্জনক।
মি: অ্যাসাঞ্জে অহমিকা [6]

ক্রিকিই নামক ব্লগে লিউক মিলার এমন একটি লেখা পোস্ট করেছেন, যা অপ্রকাশিত অস্ট্রেলীয় নথিতে কি প্রকাশ হতে পারে সে সম্বন্ধে। তার ধারণা, ইজরায়েলের ব্যাপারে আমাদের সরকারের মনোভাব তার কারণে কিছু বিষয় খানিকটা প্যাঁচানো রূপ ধারণ করেছে:

..কয়েক দিনের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার অগ্রহণযোগ্য কোন চুক্তির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবার বিষয়টি হয়ত দেশটির বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রচেষ্টাকে ডুবিয়ে দিতে পারে, এছাড়া এই আয়োজনের দাবিদার হবার জন্য মধ্য প্রাচ্যের থেকে এখনো একটি ভোটের প্রয়োজন, যে ভোটাভুটি আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে।

এখানে বিস্ময়ের কিছু নেই যে অস্ট্রেলীয় সরকার হাবুডবু খাচ্ছ।
ক্যানবেরা ক্যাবেলস: পরবর্তী উইকিলিকস অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের আয়োজন প্রচেষ্টাকে ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে? [7]

যেহেতু অস্ট্রেলিয়া ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের লড়াইয়ে একটি মাত্র ভোট পেয়েছে, সে ক্ষেত্রে মন্তব্যে যেমনটা বলা হয়েছে, সেই হিসেবে এই পরাজয়ের জন্য একে সহজেই দায়ী করা যায়।

এন্টোনি লোয়েনস্টেইন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একজন অতি পরিচিত ব্লগার। এবিসির আনলিশড নামক ব্লগে তিনি মূল ধরার প্রচার মাধ্যমের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন:

অ্যাসাঞ্জে যে কিন গতানুগতিক মূল ধারার প্রচার মাধ্যমের খেলায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছে, মনে হচ্ছে তার প্রতি অনেক বেশী সন্দেহ মূলক মনোভাব পোষণ করা হচ্ছে। যেন সে এক বহিরাগত, যে কিনা সব বিশেষ তথ্যের অধিকারী। সে তার অবসর সময়ের বেশীর ভাগ বছরই প্রচার মাধ্যমের ভেতরের বৈপরিত্যের বিষয় নিয়ে গবেষনা করে কাটায়নি। এবং তিনি তার অবসর সময়ের বেশির ভাগ অংশ রাজনৈতিক কর্মী, সম্পাদক এবং ভেতরের লোকদের সাথে মেলামেশা করে কাটায়নি।

… একজন সত্যিকার সাংবাদিকের কাজ অফিসের বা সরকারের চাওয়াকে কৌশলে সংবাদে প্রবেশ না করানো, তার বদলে সেই সঠিকভাবে সেই সংবাদের ব্যাপারে তদন্ত করা, যেগুলোর বিষয়ে সরকারের আগ্রহ রয়েছে।
উইকিলিকসের ব্যাপারে প্রচার মাধ্যমের খুঁটি কোথায়? [8]

দি পাঞ্চ-এ, হেলেন ইয়াং ডিজিটাল সময়ে কোন তথ্য লুকিয়ে রাখা যে কত কঠিন সে বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করছেন:

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উইকিলিকস বিপর্যয় হয়ত তার সৈনিকদের চেয়ে কূটনীতিবিদদের কাজের কারণে ঘটেছে, কিন্তু কেবেলগেট এবং আফগান ও ইরাক যুদ্ধের দিনলিপি তথ্যে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার বিষয় তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্কটের কারণে ঘটেছে।
উইকিলিকস সকল গোপনীয়তার শেষ নয় [9]

পাবলিক অপিনিয়ন-এ গ্রে সোয়ের থম্পসন প্রচার মাধ্যমের ভূমিকার ব্যাপারে লোয়েনস্টাইন এর শঙ্কার প্রতিধ্বনি করেছেন, যাকে এখনো দ্বাররক্ষক-এর ভূমিকায় দেখা হচ্ছে।

উইকিলিকস এর জমা রাখা তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে কৌতুহলজনক বিষয়টি ( জমা হয়ে থাকা আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধের তথ্য এবং এর সাথে সব কূটনৈতিক তথ্য) হচ্ছে ইন্টারনেট যুগে অভিজাত সংবাদ সংগঠন- যেমন, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, এবং ডের স্পেইজে, ইত্যাদি- সেই সমস্ত সংবাদ গ্রহণ করছে, যা তাদের নিজস্ব সাংবাদিকদের করা তদন্তে প্রকাশিত হয়নি, বরঞ্চ অন্যদের, যেমন উইকিলিকস দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।

… আন্তর্জাতিক সিমানা পেরিয়ে প্রধান প্রধান সব প্রচার মাধ্যমের সাথে আমরা যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করেছি, উভয়ে একমত হয়ে যে কোন লেখার উপাদান প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এবং কি ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা উচিত তার ব্যাপারে। এটা নতুন ধরনের এক বৈশ্বিক অনুসন্ধান মূলক সাংবাদিকতা।
উইকিলিকস: দূতাবাসের নথির সংগ্রহশালা [10]

অস্ট্রেলিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো অথবা খারাপ কোন কিছু এখনো ঘটেনি, তবে তা ঘটতে পারে, যদি না সরকার চিরদিনের জন্য জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে চুপ করিয়ে দিতে পারে।