ভারত: শাড়ী সন্ত্রাসীদের কোন পোশাক নয়

ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে স্মারক প্রদান করছেন। ছবি লরেন্স জ্যাকসনের। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে। পাবলিক ডোমেন থেকে নেওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন-এভারস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরপত্তা যাচাই লাইন থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্করকে আলাদা করা হয় এবং তাকে ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএস) নামক নিরাপত্তা কর্মীর মাধ্যমে প্যাট-ডাউন (পোশাক পরিহিত অবস্থায় অস্ত্রের সন্ধানে শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে তল্লাশী চালানো) নামের এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীর তল্লাশী করা হয়। ৪ ডিসেম্বর ২০১০, তারিখে শঙ্কর বাল্টিমোরের উদ্দেশ্য যাত্রা করার কথা ছিল, সেখানকার মিসিসিপি স্টেটস ইউনিভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্য তিনি রওনা করেন, এবং যদিও তিনি তখনো বিমান বন্দরের মেটাল ডিটেকটর দিকে যাত্রা শুরু করেন নি, এমন সময় তাকে শাড়ী পরে থাকার কারণে অন্য যাত্রীদের থেকে আলাদা করা হয়। শাড়ী ভারতীয় নারীদের জাতীয় পোশাক। তিনি তার কূটনৈতিক মর্যাদার কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু তা অন্য যাত্রীদের সামনে তার প্রতি বিরূপ আচরণ করাকে বন্ধ করেনি। গত সেপ্টম্বর মীরা শঙ্করকে শিকাগো বিমান বন্দরে একই ধরনের প্যাট-ডাউন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এই ঘটনা দ্রুত ভারতে দ্রুত এক প্রতিবাদের ঝড় তোলে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে ঘটনা ঘটল, তা সাধারণ কূটনীতির জন্য ভালো হল না। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস.এম কৃষ্ণা পুনরাবৃত্তি করেন যে, এই ধরনের আচরণ ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় বিরোধী দিল বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সমানে এক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের দাবী ছিল এই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেন ভারতের কাছে ক্ষমা চায়। এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ যত প্রকাশ পাচ্ছে ব্লগস্ফেয়ারে তত গুঞ্জন বাড়ছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার জন্য রাষ্ট্রদুতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে, সংবাদে প্রাপ্ত সূত্রানুসারে, টিএসএ তাদের কর্মকে এই কারণে সঠিক বলে উল্লেখ করে, যে কূটনীতিবিদেরা এই ধরনের তল্লাশী থেকে অব্যহতি পেতে পারেন না এবং “টিএসএ-এর নিরাপত্তা নীতি এবং প্রক্রিয়ার মধ্যে রাষ্ট্রদূত শঙ্করকে তল্লাশী করা হয়”। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সব যাত্রীকে টিএসএ-এর প্যাট- ডাউন নামক তল্লাশী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না, কেবল মাত্র যে সমস্ত যাত্রীর আগমনে মেটাল ডিটেকটর সঙ্কেত তৈরি করে, তবে সেই যাত্রীকে এক বিশেষ দৃশ্যমান যন্ত্রের যাচাইয়ের মাধ্যমে যেতে হয়। এবং মিজ.শঙ্কর (মিজ; জনাব বা মি:-এর ইংরেজী স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ;) ধাতব যাচাই পরীক্ষণ যন্ত্রের সামনে কোন রকম সঙ্কেত তৈরি করা ছাড়াই পার হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের আরো বিশদ অনুসন্ধানের নীতি ঘোষনা করে যে, এ ধরনের যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তার অবশ্যই যৌক্তিক কোন সন্দেহ থাকতে হবে, অথবা আগেই পাওয়া কোন তথ্যে এ ধরনের অনুসন্ধান করে যদি হুমকির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানা যায় অথবা কোন নিষিদ্ধ কোন বস্তু ব্যক্তির শরীরে রয়েছে, তাহলে কর্মকর্তারা কোন ব্যক্তিকে এ ভাবে তল্লাশী করতে পার। আরো নিবিড় তল্লাশি চালানোর জন্য, অনেকের ক্ষেত্রে আরো বড় মাপের বাস্তবতা অথবা আদালতের আদেশ থাকতে হবে ।

দৃশ্যত এই ঘটনায় রাষ্ট্রদূত অপমানিত বোধ করেন, কারণ প্রকাশ্যে এক স্বচ্ছ কক্ষের মধ্যে এই তল্লাশী চালানো হয়। সেপিয়া মিউটিনি-তে পাভানি লিখেছে:

এই বিমান বন্দরে নতুন ধরনের শরীর যাচাই করার যন্ত্র বা স্ক্যানার ছিল না, কাজেই রাষ্ট্রদূতের জন্য আর অন্য কোন বিশেষ সুযোগ ছিল না। কাজেই বাইরে থেকে দেখা যায় এমন এক কক্ষ তার কাছে মোটেও গোপনীয় বলে মনে হয় না, বিশেষ করে যিনি গোপনীয়ভাবে তল্লাশী চালানোর জন্য অনুরোধ জানান। সাধারণভাবে এক শাড়ি পড়ে থাকার ফলে যদি পুরো শরীরে প্যাট-ডাউন প্রক্রিয়া তল্লাশী চালানো হয়, তাহলে অবশ্যই তা গোপনীয় ভাবে করা উচিত, যেমনটা বলা যায়, যে কেউ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যাতে প্রকাশ না পায় সে ভাবে তল্লাশী চালানোর অনুরোধ জানাতে পারে।

বিবেক উপরের পোস্টের উপর মন্তব্য করেছে:

কোন সংবাদেই এই একটি ঘটনার উল্লেখ নেই যে যে টিএসএ-এর কর্মকর্তা আনা ডুসাশ তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্রিস (আমরা কেবল এই ভদ্রমহিলার নামের প্রথম অংশটাই জানতে পরেছি) বাঁধা দেবার আগে, মীরা শঙ্করের শাড়ী খুলে ফেলার চেষ্টা করেন।

এই ঘটনা শাড়ীকে উপেক্ষা করার এক দৃশ্য প্রদর্শন করে। শাড়ী দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের নারীদের পোশাক, এই অঞ্চল সহ সারা বিশ্বের অনেক দেশের লক্ষ লক্ষ নারী এই পোশাক পরে থাকে। এনওয়াইডেইলিনিউজ.কমের এক মন্তব্য প্রদর্শন করছে যে কতজন আমেরিকান শাড়ীকে অনুভব করে থাকে:

এক সন্ত্রাসীর পোশাক পরুন এবং আপনি আশা করবেন, আপনার দেহে তল্লাশী চালানো হবে। ভালো কাজ করেছ হে টিএসএ-এর কর্মকর্তার। .

বাহাই বিস্মিত:

যদি আমেরিকার কোন কর্মকর্তা (সিনেটর, রাষ্ট্রদূত..) যদি ভারতে একই ধরনের ঘটনার বিষয় হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা কি ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে?

রান্ডম থটসের রাজিব মন্তব্য করেছেন:

এই বিষয়ে ঘ্যানঘ্যান না করে, আমরা, ভারতীয়দের তাদের নিরাপত্তা পদ্ধতি থেকে কিছু শেখার রয়েছে এবং আমাদের পরিবেশে সকলকে এক কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশির বিষয়ে পরিণত করারও দরকার রয়েছে। আমাদের দেশের নিরাপত্তা খাতিরে আমরা অন্যদের মন্তব্য নিয়ে ভাবব না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .