পাকিস্তান: মরিয়া হয়ে ওঠার কার্ড

পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমান তাসির বন্যার্তদের মধ্যে ওয়াতান কার্ড বিতরণ করছেন। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী সালমান তাসির। সিসি বাই-এনসি-এসএ।

পাকিস্তানের বন্যার্তদের জন্য সংগৃহীত চাঁদার অর্থ নয়ছয় হবার গল্প সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল এখানেই শেষ নয়, ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া এবং অন্য কাজে এই অর্থ ব্যয় করার বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ রকমই এক বিতর্কিত প্রকল্প হচ্ছে “ওয়াতান কার্ড” [যার আক্ষরিক অর্থ জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা দেশের পরিচয়পত্র) নামক কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় ভিসা পরিচালিত ইলেকট্রনিক ডেবিট কার্ড ছাড়া হয়েছে এবং তা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আপাত এর ব্যবহার মনে হয় খুব সহজ, কিন্তু আদতে তা অনেক জটিল এবং কঠিন।

কেবল ব্যবহার নয়, এই কার্ড কারো নামে প্রদান করার কাজটিও বেশ ঝামেলার। পাক টি হাউজ-এর তাহা কেহার লিখেছে:

অক্টোবর মাসে, ওয়াতান কার্ড সরবরাহ করাকে ঘিরে নানাবিধ বিতর্ক দেখা দেয়। একটি ওয়াতান কার্ড পাওয়া খুব কঠিন। এই কার্ড পাওয়ার জন্য জনতা উন্মত্ত হয়ে উঠে, যার ফলে পুলিশরা চরম পন্থা গ্রহন করতে বাধ্য হয়। এ রকম এক কার্ড বিতরণের ঘটনায় দক্ষিণ পাঞ্জাবের শেহের সুলতান নামক এলাকায় পুলিশ লাঠি চার্জ করলে তার আঘাতে একজন মানুষ মারা যায়। এই ঘটনা এ রকম কঠোর এক কাজের উদাহরণ বাড়িয়েছে মাত্র।

এবং পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করার জন্য, ওয়াতান কার্ড বিক্রির সংবাদ প্রকাশ হয়, যেমনটা পাক স্পেকটেটর ব্লগের তাজিন জানাচ্ছেন:

নাদ্রার এক সূত্র জানাচ্ছে, খুব সতর্কতার সাথে ওয়াতান কার্ডের টাকা উত্তোলনের হিসেব পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে বেশ কিছু ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, এই সমস্ত কার্ড দিয়ে বড় বড় শহরগুলোর এটিএম মেশিন থেকে টাকা তোলা হয়েছে, এই কার্ডগুলো যাদের নামে প্রদান করা হয়েছে, সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যে সব জেলায় বাস করে, সেখান থেকে এইসব শহর অনেক দুর।

এই সূত্র জানাচ্ছে যে বিশাল সংখ্যায় ওয়াতান কার্ড বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এবং সরকার এই বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য এক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে। এ রকম সংবাদ রয়েছে যে রাহিমইয়ার খান, মুজাফফরগড়, জ্যাকোবাবাদ এবং সিন্ধু প্রদেশের অন্য জেলায় অনেকেই ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ রুপিতে বিক্রি করে দিয়েছে।

এছাড়াও, সামাজিক প্রচার মাধ্যমে এ রকম সংবাদ এবং গুঞ্জন রয়েছে যে, প্রাদেশিক সরকারের লোকজন নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই সমস্ত ওয়াতান কার্ড আটকে রেখেছে। মারভি সিরমেদ একজন লেখক, যিনি এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন:

আমি কয়েকজন পবিত্র উপস্থাপক/সাংবাদিককে এই বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি কেন পাঞ্জাবের ওয়াতন কার্ড বিতরণ বন্ধ করার চেষ্টা করছে, যেমনটা তারা বিআইএসপির আবেদনপত্রের বেলায় করেছিল?

দৃশ্যত মনে হচ্ছে বন্যার্তদের জন্য যে সমস্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা কোন না কোন ভাবে স্টেকহোল্ডারদের (অর্থ বিনিয়োগকারী বা এ রকম প্রতিষ্ঠান) সুবিধা প্রদান করার জন্য করা হচ্ছে। যদি আমরা ভিসা নামক কোম্পানীর দ্বারা পরিচালিত এই কার্ডের কথা বিবেচনা করি, সে ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এটিএম মেশিনের জন্য তৈরি করা ওয়াতান কার্ড বন্যার্তদের প্রদান করা হচ্ছে, যাদের এটিএম মেশিন ব্যবহারের তেমন কোন সুযোগ নেই। এটা কি কোন ভালো চিন্তা, আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে ব্যবস্থাপনায় যারা ছিল, তারা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।

এর সবচেয়ে খারাপ দিকটি হচ্ছে, বন্যার্তদের মধ্যে মরিয়া ভাব এতটা তীব্র যে, তারা খাবার এবং ত্রাণ সামগ্রীর জন্য যে কোন কিছু করতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .