মারিও বালোতেল্লি কি ঘানার নাকি ইতালির নাগরিক? অনলাইনে এই প্রশ্নটি নিয়ে এক তীব্র বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। মারিও বারওয়াহ বালোতেল্লি আক্রমণ ভাগের এক ফুটবল খেলোয়াড় যিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটি নামক ক্লাবে খেলে থাকেন। বালোতেল্লি ইতালিতে বাস করা ঘানার এক অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। ছোটবেলায় অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে পড়ায় তাকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে দিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে ইতালির এক পরিবার তাকে দত্তক নেয়। ২০০৮ সালে সে ইতালির নাগরিকে পরিণত হয়।
ঘানার জাতীয় ফুটবল দলে বালোতেল্লি এই বলে যোগ দিতে অস্বীকার করে যে, ইতালির জাতীয় দলে ফুটবল খেলা তার আজীবনের স্বপ্ন। ২০০৭ সালে প্রথম ঘানার জাতীয় দলে তাকে খেলার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
আসুন আমরা দেখি এই বিষয়ে ব্লগার এবং পাঠকদের মতামত কি। আমরা শুরু করব আবেনা সেরওয়ার লেখা দিয়ে, যে প্রশ্ন করেছে, তরুণ মারিও বালোতেল্লি কি ঘানা-ডেনিয়ার্স ক্লাবের অংশ? ভদ্রমহিলা এই পোস্ট শুরু করেছে মারিওর কঠোরভাবে তাকানো সেই উত্তেজক চেহারার বর্ণনার মধ্যে দিয়ে”:
বালোতেল্লি ..ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে ক্ষোভের মধ্যে দিয়ে তাকানোর জন্য অতি পরিচিত। বাস্তবতা হচ্ছে, সে এতটা আকর্ষণীয় যে যদি আপনি তাকে দেখেন, তাহলে আপনি ধারণা করতে পারেন কারো চেহারার সাথে তার অনেক মিল :
১) ওই ট্রোট্রোর (ঘানার এক ধরনের যান) সহযাত্রী, যে গত সপ্তাহে আপনাকে যাবার পথে ঠিক যে পরিমাণ খুচরা পয়সা আপনি পাবেন, তা দিতে অস্বীকার করেছে।
২) কুমাসির এডুম মার্কেট নামক বাজারটিতে যে ব্যক্তি ডিভিডি বিক্রি করে ব্যক্তি, যে কিনা আপনাকে স্টিভেন সেগালের সব ছবির ডিভিডি কিনতে উৎসাহিত করে।
৩) এক অতি আধুনিক তরুণ যে আক্রার বড় দোকানে (মল) বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ায়।
এরপর তিনি প্রশ্ন করেছেন:
একজন যে কিনা দেখতে একেবারে ঘানাবাসীর মত কি ভাবে তার এক অতি অপরিচিত ইতালিয়ান নাম হতে পারে? সে কি ঘানা-ডেনিয়ার্স ক্লাবের সদস্য, যার এক প্রবল ব্যক্তিত্ব রয়েছে, যেমন প্রাক্তন কুস্তিগীর কোফি কিংস্টোন, যে কিনা এক সময় জ্যামাইকার নাগরিক ছিল, বর্তমানে যার ঠিকানা ঘানা?
কৌতুহল জনক বিষয় হচ্ছে, ঘানা ফুটবল ফেডারেশন সবসময় তাকে ব্লাক স্টার নামে পরিচিত ঘানার জাতীয় দলে খেলার আহ্বান জানিয়ে আসছে। যদিও অনেক ইতালির নাগরিকদের কাছে আজুরি নামে পরিচিত ইতালির জাতীয় দলে বালোতেল্লির খেলার ব্যাপারে আপত্তি করছে, তারপরেও পিতৃভূমির হয়ে নয়, সব সময় ইতালির জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নে মারিও অনঢ় থেকেছে।
আবেনার পোস্টে মন্তব্য করার সময় মাইক বলছে যে, মারিও আসলে ঘানার নাগরিক নয়। যদিও মারিওর শরীরে আসলে ঘানার রক্ত, কিন্তু তাতেও সে ঘানার নাগরিক হয়ে উঠতে পারে না:
এই সহজ বাস্তবতা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে কারো পিতৃপুরুষ ঘানার হলেই সে ঘানার নাগরিক হয়ে যেতে পারে না। একই ভাবে আমি দাসদের উত্তরপুরুষের ক্ষেত্রে আফ্রিকান আমেরিকান শব্দটি ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক। আমি আমার ভাতিজিদের ঘানার নাগরিক বলতে পারি না। ঘানার সংস্কৃতিতে অনেক বিষয় রয়েছ যে সমস্ত বিষয়ে এই দলে থাকা মানুষদের কোন অভিজ্ঞতা নেই বা কোনদিন ছিল না এবং যে সমস্ত বিষয় আমাকে ঘানার একজন করে তোলে তা আমার অভিজ্ঞতা ও দেশটির সাথে আমার জড়িয়ে থাকা।
সম্প্রতি আমি আমি আমার ভাতিজা এবং ভাতিজিদের ইউটিউব ভিডিওতে ঘানার জাতীয় সঙ্গীত এবং পুরোনো সময়ের কিছু গান বাজিয়ে শোনালাম-তারা এগুলো বুঝল না, বা যে জগতের সাথে তাদের যুক্ত করার চেষ্টা করলাম, তার কোন প্রশংসা করল না, আদতে এই জগতকে তারা একেবারে বোঝে না। মারিও কি তার এক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছে, যার সাথে সে পরিষ্কারভাবে সম্পৃক্ত নয়? না এবং আমি তার বিরুদ্ধে এটি ধরে রাখবে না। যে উত্তরাধিকারীর সে অংশ, তা কি সে অস্বীকার করছে না? তার মা ও ভাইদের সাথে তোলা ১০ বছর বয়সের ছবির মধ্যে দিয়ে যদি বিচার করি,–যা তার নিজস্ব অবস্থান বর্ণনার একেবারে বিপরীত- আমি তা কল্পনা করে নেব, লম্বা সময় ধরে এবং সম্ভবত পরিত্যাগ করার মত বিষয় (অন্য সব বিষয়ের মত) সম্বন্ধে সে এক ভুল তথ্য পেয়েছে, যত সে বড় হতে থাকবে, ততই তাকে বিষয়টি যাচাই করে নিতে হবে, কিন্তু সে ঘানার একজন নয়।
মাইকের সাথে সানকোফা একমত: সে বলছে, আমি আসলে মনে করি, যখন থেকে মারিও নিজেকে ইতালিয়ান হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকে ঘানাবাসীর তার উপর আর কোন দাবি রইল না:
এখানে আমি মাইকের সাথে একমত। আমি মনে করি যখন সে নিজেকে ইতালিয় হিসেবে দাবী করে, তখন থেকে তার প্রতি ঘানাবাসীদের আর দাবী নেই। সে পরিষ্কারভাবে নিজেকে ইতালিয়ান হিসেবে বিবেচনা করছে, তাহলে আমি তার ক্ষেত্রে অন্য কি আর ভাবব? সে কখনো ঘানায় বাস করেনি। সম্ভবত সে কোনদিন ঘানায় আসেনি এবং সে ঘানার সংস্কৃতিকে বুঝতে পারে না। তাকে সেই একদল মানুষের মাঝে ছেড়ে দাও, যারা সম্ভবত কখনোই তাকে সত্যিকারের ইতালির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করবে না। আসলে সত্যিকার অর্থে আমি তার জন্য বেদনা অনুভব করি। মিশ্র এক জাতিগত পরিচয়, অনেক সময় বিপজ্জনক নিঃসঙ্গতার সৃষ্টি করতে পারে।
আরেকজন পাঠক নিজেকে দি আদার মাইক ডিসএগ্রি নামে পরিচয় দিচ্ছে। সে বলছে: যে জাতীয়তা সে বেছে নিক না কেন, তাকে সবসময় জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার পূর্বপুরুষদের আদিবাস কোথায় ছিল?
আরেকজন পাঠক নিজেকে আদার মাইক ডিসএগ্রি নামে পরিচয় দিচ্ছে। সে বলছে: যে জাতীয়তা সে বেছে নিক না কেন, তাকে সবসময় জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার পূর্বপুরুষদের আদিবাস কোথায় ছিল?
সে নিশ্চিতভাবে ঘানা-ডেনিয়ার্স-এর তালিকায় তার জায়গা করে নিতে সক্ষম। যদিও আমি ফুটবলের খুব বড় ভক্ত নই, তাই আমি সহজেই তাকে সেগালের ভিডিও বিক্রি করা ব্যক্তি হিসেবে ভুল করতাম। সেটা হত বেশ মজার আবেনা। তাকে হিপলাইফ নামক ঘানার সঙ্গীত জগতের এক গায়ক ক্যাষ্ট্রোর মত দেখায় (যখন সে হালকা পাতলা ছিল)।
যে কোন জাতীয়তা বেছে নেবার মত সে স্বাধীন এবং এটার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু শীঘ্রই সে বাস্তবতা আবিষ্কার করবে, সবসময় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার পূর্ব পুরুষদের আদিবাস কোথায় ছিল? টন টন পাস্তা খাওয়া, ইতালীয় ভাষায় কথা বলার মধ্য দিয়ে সে তার আসল পিতৃপরিচয় লুকাতে পারবে না।
@ মাইক: অনেক সময় আমাদের এটা মেনে নিতে হবে…
অনেক সময়? সত্যিকার অর্থে?
অন্য কোন সময়।
গিফটি সমর্থন করছে দি আদার মাইকের অবস্থানকে:
আমি “আদার মাইকের” সাথে পুরোপুরি একমত। মারিওকে সব সময় জিজ্ঞেস করা হবে তার পূর্বপুরুষের কোথা থেকে এসেছিল… ম্যান, মনে হচ্ছে সে আসলে পিছিয়ে যাচ্ছে…বর্তমানে আফ্রিকান-আমেরিকানরা তাদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অর্থ প্রদান করছে, এটা জানার জন্য যে তারা পশ্চিম আফ্রিকার কোন দেশ থেকে এসেছে এবং তারা দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছে। (যেমন গ্রে এ্যানাটমি নামক ছবির অন্যতম অভিনেতা ইসাইয়াহ ওয়াশিংটন সিয়ারা লিয়নের দ্বৈত নাগরিক) ..এবং মারিও ঠিক অন্যদিকে যাচ্ছে। আপনি হয়ত আপনার নাম পরিবর্তন করতে পারেন..টন টন পাস্তা খেতে পারেন.., নিখুঁত ইতালী ভাষায় কথা বলতে পারেন..তারপরেও আপনি একজন আফ্রিকান..সবচেয়ে ভালো এটা স্বীকার করে নেওয়া।
তার এই মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে আবেনা সেরওয়া এই বলে উপসংহার টেনেছেন…এটা কি কি বিস্ময়কর নয় কি ভাবে কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং পুরো ঘানার পরিচয়কে ধারণ করেছে এবং দৃশ্যত যা সে কিছুদিনের জন্য? কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং জার্মানীতে জন্ম নেওয়া ঘানার একজন ফুটবলার। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপে সে ঘানার হয়ে খেলে, যেখানে তার সৎ ভাই জেরোম আগাইয়ানিম বোয়াটাং জার্মানীর হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নেয়।
ঘানার ব্লগার নানা সারপং-ও মারিওকে নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছে: বালক বারওয়াহ যে পুরুষ বালোতেল্লিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সে মারিওকে একটা ঝামেলাপূর্ণ শিশু হিসেবে দেখছে, যে কিনা নিজেকে বুঝতে অসমর্থ।
যখন আমি এই ফুটবলারের দিকে তাকাই। আমি দেখি এক ঝামেলাপূর্ণ শিশু যে নিজেকে বুঝতে পারছে না।
বালোতেল্লির সাথে মারিও এটাকে “আসলে আর কি খারাপ করতে পারে, আমি মনে করি, সে মনে করছে যে তার মনস্তাত্ত্বিক দুর্দশা থেকে রক্ষা পাবার জন্য সেরা কাজটি হচ্ছে পিতামাতার কাছ থেকে দুরে সরে যাওয়া এবং নিজের “কালো” চেহারার পরিচয় থেকে পালিয়ে থাকা। অবশ্যই তার সাহায্যের প্রয়োজন, এমন এক সাহায্যের প্রয়োজন যা তার সাদা ইতালিয় বাবামা প্রদান করতে পারে না। যদি তারা করতে পারত –এবং তারা সত্যিকার ভাবে তাদের সঠিক চিন্তার মধ্যে থাকত- তাহলে তারা মারিও পিতা বারওয়াহকে এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিত, যেখানে মারিওকে ইতালির নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। অন্তত জনাব বারওয়াহর দৃষ্টিতে। বালোতেল্লি এক সতর্ক প্রচেষ্টা তৈরি করছিল, যাত মারিওকে ফেরত না দিতে হয় এবং তারা এ জন্য মারিওর লালন পালন করার সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল (দরিদ্র বারওয়াহ, ধনী ইতালিয়ান বালোতেল্লির সাথে পেরে ওঠেনি)।
নানার এক সূত্র মতে, মারিও ঘানার ফুটবল সংস্থাকে বলেছিল যে সে এর আগে কখনো এই দেশের নাম শোনেনি:
ঘানার ফুটবল সংস্থা (জিএফএ) এক পর্যায়ে মারিওকে ঘানার হয়ে ফুটবল খেলার জন্য আহ্বান জানায়। বালকটি জিএফএ (ঘানা ফুটবল সংস্থাকে) এই বলে অপমান করে যে, সে কখনোই এই দেশটির নাম শোনেনি, যদিও সে ইন্টার মিলান ক্লাবে ঘানার মধ্যমাঠের খেলোয়াড় সুলে মন্তারির সাথে ফুটবল খেলেছে। এই বিষয়ে আমার মন্তব্য এই যে, যদিও মারিও প্রতিভাবান খেলোয়াড়, কিন্তু ঘানার এই ধরনের চুনোপুঁটির প্রয়োজন নেই। অবশ্যই এই ব্যাপারে তার দিক থেকে তার কিছু বলার আছে- যেমনটা সে বলেছে যে তার পিতামাতা তাকে হাসপাতালেই পরিত্যাগ করে, কিন্তু মারিওর এই রকম দুর্বল মানসিকতার বাইরে বাস করা উচিত।
সে এই বলে তার পোস্টের উপসংহার টেনেছে যে মারিওর কাহিনী খুব সাধারণ..ইউরোপ, আমেরিকা, এমনকি ঘানায় বাস করা অনেক দরিদ্র আফ্রিকাবাসীর কোন একজনের গল্প।
এটি ইউরোপ আমেরিকা অথবা ঘানায় বাস করা অনেক দরিদ্র আফ্রিকাবাসীর একটি বেদনাদায়ক গল্প। এটা বারওযাহ নামক ব্যক্তির এক বিশাল ভুল এবং সে অবশ্যই তাদের সন্তান (যে কিনা বাস্তবিক পক্ষে তাদের নয়),যে তাদের জীবনকে এই অবস্থায় রেখে গেছে, চিরদিনের জন্য।