মালয়েশিয়া: সুউচ্চ ভবনকে না বলা

যখন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ২০১১ সালের বাজেট ঘোষণার সময় ১০০ তলা ভবন ওয়ারিসান মারদেকা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা উন্মোচন করেন, তখন থেকে মালয়েশীয় নাগরিকরা এই ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছে।

বেশীর ভাগ মালয়েশীয় নাগরিক এই ভাবনার বিরুদ্ধে, কারণ তারা বিশ্বাস করে এটি মালয়েশিয়ার কোন কাজে আসবে না। এটা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবন হবে না, আর ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় এ রকম আকাশ ছোঁয়া ভবন রয়েছে- এগুলো হচ্ছে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এবং কুয়ালালামপুর টাওয়ার।

৫ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের (প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য অনেক মালয়েশিয়ান নাগরিক ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আই অ্যাম মালয়েশিয়ান, রিজেক্ট ১০০ স্টোরি মেগা টাওয়ার (আমি একজন মালয়েশিয়ান, যে ১০০ তলা বিশাল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করছি) পাতা। ২০০,০০০ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী এই পাতাটিকে পছন্দ করেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে পাতাটি এই পরিমাণ সমর্থক জোগাড় করতে সমর্থ হয়। এমনকি এই প্রকল্পের বিরোধীতা করার জন্য একটি ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে।

তবে সরকারের অবস্থান হচ্ছে যে এই প্রকল্পটি দেশের অর্থনীতির জন্য সুবিধা বয়ে আনবে এবং এতে দেশটিতে অনেক চাকুরির সৃষ্টি হবে, যার মধ্যে দিয়ে দেশের নাগরিকরা লাভবান হবে।

আদ্রিয়ান নগ একজন মালয়েশিয়ান, তিনি লোয়ারবুরোকে লিখেছেন যে এর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা অন্য কোথাও খরচ করা ভালো।

৫ বিলিয়ন রিঙ্গিতের মাধ্যমে সাধিত হওয়া এই উন্নয়ন ব্যয়, অন্য কোথাও খরচ হতে পারে এবং আসলে তাই হওয়া উচিত, যেমন শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা প্রদানে, দারিদ্রের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এবং বিশেষত জীবন যাত্রার মান সহজ করার জন্য উন্নত মানের পরিবহণ ব্যবস্থার আয়োজন করা এবং ওরাং আসলি বা মালয়েশিয়ার আদিবাসীদের জন্য, শারিরীক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের জন্য।

অন্য ক্ষেত্রেও তা হতে পারে:

*দারিদ্র বিমোচন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আশ্রয়, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ এবং অন্য ধরনের সাহায্যের মাধ্যমে অতীব দরিদ্রের সাহায্য করা।

* স্কুলের অবকাঠামোর মান উন্নয়ন এবং গ্রামাঞ্চলের স্কুলের ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় বই সরবরাহ করে তাদের শিক্ষায় প্রবেশের অধিকার বৃদ্ধি করা।

* ডে কেয়ার ( চাকুরীরত বাবা মার শিশুদের যত্ন নেওয়ার কেন্দ্র) এবং ডায়ালাইসিস সেন্টারের (কিডনি রোগীর জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্বলিত কেন্দ্র) মান উন্নয়ন এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নতুন যন্ত্রপাতি বসানো এবং সুবিধা প্রদান করা।

* চাকরীর বাজারের প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ এবং সফলতা লাভের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের ক্ষমতা বাড়ানো, একই সাথে তাদের গতিশীলতার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ।

* বৃদ্ধদের জন্য ঘর নির্মাণের মাধ্যমে বৃদ্ধদের সাহায্য করা

* প্রধান সব বড় বড় মফঃস্বল এবং শহরগুলোতে যাতায়াত সমস্যার সমাধান করে সেগুলোকে অনেক বেশী বাসযোগ্য করা।

যেহেতু আমি মালয়েশিয়ান রাকায়াত বা জনতার কাছে ১০০ তলা ভবন নির্মাণের বিষয়টিকে সমর্থন করা বা এর বিরোধীতা করার আবেদন জানাচ্ছি। এই সুউচ্চ ভবন ছাড়াই আমি এক গর্বিত মালয়েশিয়ার নাগরিক হিসেবে নিজেকে বিবেচনা করি।

বিশাল সংখ্যক মালয়েশিয়ান আদ্রিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করছে। তবে সকল মালয়েশিয়ান ভবন নির্মাণের বিপক্ষে নয়, পুবালান খানিকটা কম সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টিকে বিচার করছে:

আমার কাছে এটা পিএনবির (পারমোদালান নাশিওনাল বেরহাদ বা পিএনবি-মালয়েশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থ লগ্নীকারক প্রতিষ্ঠান) টাকা এবং জমি। যতক্ষণ সরকার নিশ্চিত করছে যে তারা এর জামিনদার হিসেবে পালিয়ে যাবে না, ততক্ষণ বিষয়টি ঠিক রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এটা একটা উন্নয়ন প্রকল্প, তাহলে এক্ষেত্রে যথাযথ গবেষণা এবং প্রভাব যাচাই করা দরকার। এভাবেই জনতা জানবে কি ভাবে এই প্রকল্প এখানকার চারপাশের পরিবেশকে ভালো/খারাপ করার উপর প্রভাব রাখবে। তারা পরামর্শ প্রদান করতে পারে, কি ভাবে উক্ত ভবনের উন্নয়নের সাথে এলাকার চারপাশে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:

যদি আমাকে বেছে নেবার কোন সুযোগ প্রদান করা হয়, তাহলে আমি চাইব এই প্রকল্পটি কুয়ালালামপুর শহরের কেন্দ্র থেকে যেন দুরে সরিয়ে নেওয়া হয়, এর কারণ হচ্ছে এটা আরো অনেক উন্নয়নের সৃষ্টি করতে পারে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সেপাং, হুলু সেলানগার, কুয়ালা লাঙ্গাট (ওহ, সবগুলো ভর্তি এলাকা! এই মূর্হূর্তে কোথাও যাওয়া যায়, এমন কোন এলাকা নেই) অথবা নেগেরি সেমবিলান-এ একটা সুউচ্চ ভবন বসানো যেতে পারে। এটা ভীড় কমাবে, দ্বিতীয় ও আঞ্চলিক শিল্প কারখানার বিস্তার ঘটাব এবং আরো অনেক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে। যে সমস্ত এলাকাগুলোর কথা উল্লেখ করা হল তা তুলনামূলক ভাবে বিমান বন্দর এবং শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছে, কাজেই তা ভাড়াটেদের আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে তেমন কোন বড় সমস্যা নয়।

জনপ্রিয় ব্লগার অহিরউদ্দিন আটন, এক আলোচনার কথা আবার জানাচ্ছে, যা তিনি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে লাভ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন:

এখন প্রস্তাবিত ১০০ তলা ভবনের ক্ষেত্রে, আমি যতদুর বুঝতে পারি, এ ব্যাপারে একটা বিষয়ে সমস্যা রয়েছে-তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী তার ২০১১ সালের বাজেটে এটা ঘোষণা করেছে। কাজেই আনেক লোক ভাবতে শুরু করেছে যে দাতুক সেরি নাজিব রাজাক এই চমৎকার ভবন নির্মাণের জন্য লোকজনের উপর আরো কর আরোপ করতে যাচ্ছে। আসলে ঘটনা এমনটা নয়। পিএনবি দেরীতে হলেও এই ধারণা দুর করার জন্য এগিয়ে এসেছে। তারা ব্যাখ্যা করছে যে ওয়ারিসান মারদেকা তাদের নিজস্ব অর্থ ব্যয়ে তৈরি হওয়া প্রকল্প ইত্যাদি। কিন্তু ততক্ষণে প্রস্তাবিত ভবনটি মালয়েশিয়ার রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে।

নাজিব কোন নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেনি। পিএনবি ১০০ তলা ভবন নির্মাণের ব্যাপারে গত বছর সংবাদপত্রে এক বিবৃতি প্রদান করেছিল। সে সময় এই বিষয়ে কোন হৈ-চৈ শোনা যায়নি। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী এটিকে বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করল-কিন্তু তারপরে বিষয়টি যেন বিস্ফোরিত হল! আমি বলতে চাচ্ছি সম্ভবত, ভবন নির্মাণের বিষয়টিকে বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করা উচিত হয়নি, না করলে যা ঘটত, তা হত এক বিচিত্র ঘটনা- এই সুউচ্চ ভবনটি হত তার এক “অতি প্রভাব সৃষ্টিকারী’ প্রকল্প।

সকল কিছুর সাথে জনতার অর্থ জড়িত। কাজেই আমি সেই যুক্তিকে খণ্ডন করতে চাই না (যে সরকার করদাতাদের অর্থ নষ্ট করছ)। আপনারা কি সাইয়্যেদ আকবর আলির ব্লগ পাঠ করেননি? সরকারের নিজের কোন অর্থ নেই। এটাই ১ নাম্বার নিয়ম। এমন কোন বিষয় নেই যেখানে সরকার নিজস্ব কোন অর্থ থাকতে পারে। সরকারের কাছে থাকা সকল অর্থই করদাতাদের অর্থ। এমন কি যে সমস্ত রাষ্ট্রে আয়কর গ্রহণ করা হয় না, সে সব দেশের সরকারের অর্থও জনতার। সেই টাকা সে দেশের জনগণের টাকা।

আমার কাছে, এর বিরোধিতার কারণ একেবারে রাজনৈতিক। অতীতে উত্তর-দক্ষিণ যে মহাসড়ক নির্মাণ (নর্থ-সাউথ হাইওয়ে), এখন ওয়ারিসান মারদেকা নির্মাণ নিয়ে বিরোধিতা। এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে সে সময় আমাদের কাছে ব্লগ ছিল না, ফেসবুক ছিল না, এমনকি তখন আমাদের ঘরে কোন কম্পিউটার ছিল। এবং ইন্টারনেট সম্বন্ধে; সরকার/টেলিকম মালয়েশিয়ার বিশাল ১০-বিলিয়নের বেশি অর্থ রিঙ্গিত ব্যয়ে গ্রহণ করা ব্রডব্যান্ড প্রকল্প সম্বন্ধে কি বলা যায়? আমরা সকলেই অবকাঠামোর সুফল উপভোগ করছি এবং আমরা নিঃসন্দেহে ডা: মাহাথিরের প্রদান করা উন্মুক্ত অবস্থা এবং হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুত নীতি থেকে লাভবান হয়েছি।

এবং আমরা প্রতিবাদকেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখব, আমি এখানে বোঝাতে চাইছি, সরকার অবশ্যই বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখবে। এই সমস্ত লোকেরা কি দেখতে চায়? অনেকে বলছে আমাদের অনেক বেশি হাসপাতাল এবং ডাক্তার, স্কুল এবং শিক্ষক প্রয়োজন। এ সব বিষয়ের দিকে তাকান। এক্ষেত্রে অন্তত লোকজন কথা বলছে এবং তাদের কি কি প্রয়োজন সে ব্যাপারে জানাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .