বুলগেরিয়া: আরব এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা মূলক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া

মার্টিন কারবোভস্কির অনুষ্ঠানে কথা বলছেন মিলেনা ইরশাদ এবং ডানপন্থী নেতা ভোলেন সিদেরোভ।

কাপকা সিদেরোভা বুলগেরিয়ার এক অতি রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী নেতার স্ত্রী। তিনি গতকাল এক জনপ্রিয় টক শোতে [বুলগেরিয়া ভাষায়] আরব নারীদের সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করেন। এই অনুষ্ঠান তার স্বামী ভোলেন সিদেরোভ উপস্থিতি ছিলেন, যিনি বুলগেরিয়ার “এ্যাটাক” দলের নেতা। এই দলটি, বুলগেরিয়ার সংখ্যালঘু জাতির বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা প্রয়োগ এবং বুলগেরিয়ার তুর্কী ও জিপসি বা যাযাবর জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রক্ষণশীল অবস্থান গ্রহণের জন্য সুপরিচিত। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিলেনা ইরশাদ নামের বুলগেরিয়ার এক মুসলমান নারী।

কাপকা সিদেরোভার মন্তব্য এক ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং তা বর্ণবাদ এবং সংকীর্ণতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।

মিলেনা ইরশাদ তার ফেসবুকের পাতায় যা লিখেছে [বুলগেরিয় ভাষায়] এখানে তা তুলে দেওয়া হল:

সিদেরোভা বলেন সেখানে [শ্যম্প-ইলিজেএ,-প্যারিসের বিশেষ রাস্তা] আরব রমণীরা রাত ২ থেকে ৩ টার সময় পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায়, তারা পতিতাদের মত পোশাক পড়ে, তারা শ্যানেল নামক সুগন্ধী গায়ে মাখে এবং এ রকম আরো অনেক জিনিষ গায়ে মাখে। আমি বিস্মিত এ কারণে যে মিসেস. সিদেরোভা মধ্য রাতে সেখানে কি করতে গিয়েছিলেন এবং কিভাবে তিনি নিশ্চিত হলেন যে সেখানে ঘুরে বেড়ানো রমণীরা আরব থেকে আগত।

নীচে বুলগেরিয়ার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আরো কিছু প্রতিক্রিয়া পোস্ট করা হল।

কামেলিয়া শোপোভা-খালাইয়ফ:

কি বিচিত্র ভাবনা…এবং এই দাবির সপক্ষে যেন আরব বিশ্বের উপর এক গবেষণা করা হয়েছে, একটি মেয়েও হিজাব বা মাথার চুল কাপড় দিয়ে ঢাকতে চায় না। তারা বিভিন্ন ধরনের ঘোমটার মধ্যে কখনোই পার্থক্য করে না, তারা তা করে কি? আমি জানি না কোথা থেকে তিনি এমন ধারণা পেলেন?যথারীতি, এক অর্থহীন বিষয়ে প্রচণ্ড ভুল ধারণা।

সেভেৎলেনা নিকোলেভা জর্জিয়েভা-চারুয়র:

এই বিষয়ে রাগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না.. তারা হয়ত শ্যম্প ইলিজেএ-এ হাঁটতে যায়, মুখে নানা ধরনের প্রসাধনী এবং গায়ে শ্যানেল নামক সুগন্ধী মাখে, কিন্তু এটি অসম্ভব যে তারা বাজে পোশাক পরে সেখানে যায়।

মিগলেনা দিমিত্রোভা:

ছোটবেলা থেকে লোকজন বর্ণবাদী ভাবনার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠে। কাপকা নিজেই তার এক উদাহরণ; তার পুত্রও তাই। আমার সন্দেহ রয়েছে যে এ ধরণের বর্ণবাদ এবং সংকীর্ণতার কোন শেষ আদৌও আমরা দেখতে পাব কিনা।

কামেলিয়া শোপোভা-খালাইয়ফ:

তার স্বামী এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে নতুন কিছু সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হবে। কাজেই এর মধ্যে সত্য রয়েছে কি না তা কে দেখতে যায়, এই ধরনের অনুষ্ঠান চলতেই থাকবে…

সেভজিন ইউসুভ:

সে প্রকাশ্যে আমাদের স্ত্রীদের বেশ্যা বলে অভিহিত করেছে, এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়!!![…]

রুসলান খালেদ ট্রাড:

কোন সন্দেহ নেই, তারা এখানে প্রতিক্রিয়ার আশা করছে। তারা আমাদের বলবে যে আমরা পশ্চাৎপদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল। অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি, কারণ এটা একটা অপমান। যেন আমরা যথেষ্ট পরিমাণ তাদের স্লোগান শুনতে পাচ্ছি না। আমরা কি একটা দল তৈরি করবে, যে দলকে “প্রিয় কাপকা, আমাদের নারীরা পতিতা নয়” বলে অভিহিত করা হবে? এই কি সেই বাণী, যা বলার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ? ভণ্ডামি এবং নির্বুদ্ধিতা!

ফাইমা ওথমান:

হে ঈশ্বর, পতিতাদের সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য সর্বশেষ ব্যক্তিটি হচ্ছে কাপকা। যে সমস্ত ঠগেরা তার স্বামীকে সমর্থন করে, তারা ইতোমধ্যে বুলগেরিয়ায় আমার সন্তানের উপর যথেষ্ট মানসিক চাপ তৈরি করেছে, এবং সে কেবল আরবে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। এটাই রাজনীতি, আমি ধারণা করি, এসব কিছুই কেবল ভোটের জন্য।

ভানিয়া কোস্টাদিনোভা:

আমি কখনোই মিসেস. সিদেরোভাকে পছন্দ করতে পারি নি, কিন্তু আমি কখনোই ধারণা করতে পারি যে তিনি এতটা গোঁড়া। আমি বিস্মিত যে সে এতটা সাদামাটা মানুষে পরিণত হবে।

বুলগেরিয়ার যে সমস্ত মেয়েরা আরব নাগরিককে বিয়ে করেছে তাদের ফেসবুকের পাতায় নীচের বিবৃতিটি পোস্ট করা হয়েছে [বুলগেরিয় ভাষায়]:

[…]মার্টিন কারবোভস্কির টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সিদেরোভা পরিবার সে সময় যে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছে, আমরা তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা অনুভব করছি ইসলামি সংস্কৃতিতে অবগুণ্ঠনের বিষয়টি অনেক ফুলিয়ে এবং ইসলামিক পরিচ্ছদে যে বিভিন্ন ধরনের অবগুণ্ঠন রয়েছে সে সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান ছাড়াই এখানে আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়টি অতি দ্রুত জাতিগত বিষয়ে গতানুগতিক এবং ইসলামিক মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে যে পূর্ব ধারণা গড়া হয়ে থাকে, সে রকম এক আলোচনায় পরিণত হয়। আমরা মনে করি যে সহানুভূতি পাবার জন্য আমাদের সংখ্যালঘুত্বকে একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক না, অথবা সন্ত্রাসবাদ নিছকই এক ইসলামিক উপাদান, সুকৌশলে এমন ধারণা দেওয়ায় ঠিক নয়। সিদেরোভের মত আমরাও বুলগেরিয়ার নাগরিক, আমরা আমাদের দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারে আগ্রহী, এবং আমরা চাই যেন আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যেতে না হয়।[…]

মিসেস সিদেরোভার বিবৃতিতে আমরা পাই যে মুসলমান মেয়েরা ভণ্ড, তারা নিয়ম লঙ্ঘনের প্রতীক হিসেবে হিজাব পরে বা মাথায় কাপড় দেয়, যে সমস্ত মেয়েরা আরব পুরুষকে বিয়ে করবে তারা কখনোই তাদের সন্তানদের দেখার সুযোগ পাবে না, এবং যারা অন্য কোন উপায়ে নয়, জোর করে ইসলামকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তারা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। তিনি মন্তব্য করেছেন যে মুসলিম মেয়েদের গায়ে ঘামের দুর্গন্ধ থাকে এবং তারা অমার্জিত পোশাক পরে, যাকে কেবল অনুপযোগী চরিত্র চিত্রণ বলা যেতে পারে।[…]

[/caption]

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .