কয়েকদিন আগে করাচীতে যে বোমা বিস্ফোরণে ১৯ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছিল, তাতে ১,০০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহারের সংবাদে পাকিস্তানীরা প্রচণ্ড রকম বিস্মিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই পাকিস্তানী তালেবানরা প্রাণঘাতী এই বোমা করাচির কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত এই বিপজ্জনক (রেড জোন) এলাকায় বয়ে আনে। এই বোমা হামলার লক্ষ্য ছিল, সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বসেন তার সন্নিকটস্থ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ভবন সমূহ। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীর অফিস শহরের দক্ষিণে শেরাটন হোটেলের বিপরীতে অবস্থিত।
আহত ১১৫ জন ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন বড় মাপের জঙ্গি রয়েছে যাদের সিআইডি ভবনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তাদের গোপনীয় এক স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ডন নিউজের এক উন্মুক্ত সংবাদে এস. রাজা হাসান এক প্রত্যক্ষদর্শীর দেখা ঘটনার বর্ণনা করছেন:
এই বিস্ফোরণের ফলে ১৫ ফুট গভীর এবং ৩০ ফুট চওড়া এক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দৃশ্যত দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলছে এমন শব্দ শোনার ফলে নিরাপত্তার জন্য আমি অফিসের ভেতরে প্রবেশ করি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত এমনটা চলছিল, সে সময় ছোট ছোট কিছু বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছিল, তারপরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
এই বিস্ফোরক দ্রব্যের দ্বারা যে ধ্বংস সাধন হয়েছিল তা ছিল ভয়াবহ। এটা ভবনগুলোকে কাঁপিয়ে দেয়, জানলার কাঁচ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তার প্রতি জনতার যে ধারণা তা ধ্বংস করে ফেলে। বেদনাদায়ক ঘটনা হচ্ছে পাকিস্তানে এসব বিষয় এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং পাকিস্তানীরা এই ধরনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
দোহা ভিত্তিক সংবাদদাতা ইমরান খান আল জাজিরা ব্লগে লিখেছেন:
“এই দৃশ্য ছিল ভয়াবহ, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে খুঁড়িয়ে চলা পাকিস্তান প্রায় ভেঙ্গে পড়ার দাঁড় প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। কেবল তার জনগণের অসাধারণভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসাই দেশটিকে রক্ষা করতে পারে।
স্বাভাবিক অবস্থার ধারণা গ্রহণযোগ্যতাকে পাল্টে দিচ্ছে। এখন সবাই গ্রহণ করে নিচ্ছে যে বোমাবাজি দেশটির প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের একটি অংশ”।
চুপ: চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান এর কালসুম এখানে তার এক ব্যক্তিগত চিন্তা যোগ করেছে, যেটা নিয়মিত সংবাদে আমরা যা শুনি তার বাইরে এক ভাবনা ভাবতে বাধ্য করছে:
‘আবার, যদি সিআইডি গতকাল উপরের সারির জঙ্গিদের গ্রেফতার পরিচালনা করে থাকে, তাহলে আমাদের ভাবার রয়েছে যে এক সুরক্ষিত এলাকায় এই ধরনের আক্রমণের জন্য যে সমস্ত জিনিস সরবরাহ করা হয়েছে সে বিষয়ে, যদি তা ওই সমস্ত গ্রেফতারের কারণে হয়ে থাকে, সেটি বিবেচনা করলে তা এক বেশ বিস্তৃত হামলা। যার ফলে, এই হামলা যদি ওই সমস্ত গ্রেফতারের কারণে হয়ে থাকে এবং/অথবা তার আগেই পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে, অথবা সেক্ষেত্রে তালেবানরা এই সব বিস্ফোরক সরবরাহের জন্য সরাসরি দায়ী নয়, কিন্তু তা বিভিন্ন দলের উপর নির্ভর করে থাকে.., এই সব ঘটনা ঘটিয়ে যাবার জন্য যাদের গ্রামাঞ্চলে আরো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে’।
করাচির স্থানীয় জনতা যে স্বাভাবিকতা প্রদর্শন করেছে, তা বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য। সম্প্রতি সময়ে তারা বিভিন্ন দলের মধ্য যুদ্ধ এবং লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে খুনের মত ঘটনার হাত থেকে নিজের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং তারা তাদের জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করছে যেন এটা অন্য আর সব দিনের মত একটি দিন।