মালয়েশিয়া: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিতর্কিত বই নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে

ম্যাজিক রিভারের ব্লগ হতে সংগৃহিত ছবি

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কিম কিউকের লেখা “দ্যা মার্চ টু পুত্রজায়া-মালয়েশিয়ার নতুন যুগ এখন হাতের মুঠোয়” নামের বইটি ছাপাখানা ও প্রকাশনা বিধি ১৯৮৪ এর অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে কারন এটা জনগনের ঘৃণা ও রাগ উস্কিয়ে দিতে পারে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যা মালয়েশিয়ান ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলেছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সেক্রেটারী জেনারেল মাহমুদ আদম বলেছেন বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারন এতে অন্যান্যদের সাথে জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও ভিত্তিহীন অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও যুক্ত করে বলেছেন যে “ছাপা, আমদানী, প্রকাশ, পুনর্মুদ্রণ, বিক্রি, সরবরাহ অথবা বিক্রির প্রস্তাব অথবা এই বই সংরক্ষণ আইনের অধীনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

এরপরই কিম কিউকে অগ্রাহ্য করে একটা প্রেস ব্ক্তব্য দিয়ে বলেছে বইটি জনসাধারণের জন্য উপযুক্ত নয়।

আমার পুরো বই জুড়ে, সংবিধান রক্ষা করা এবং সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকার কথাই সকলের প্রতি আমার একমাত্র আবেদন। এমনকি বেশ রাজনৈতিক বক্তব্যময় অধ্যায় ১৫৩ তে আমি কেবল সংবিধানের প্রশংসাই করেছি, যে অধ্যায়টি ইচ্ছাকৃত ও অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে এটি সব ধরনের জাতিগত বৈষম্যের কথা রয়েছে যে কারনে মতদ্বন্দের উদ্ভব ঘটেছে।

আমার বইয়ের যে কোন অংশ থেকে যে কোন সমালোচনা কিংবা মুক্ত বক্তব্যকে আমি স্বাগতম জানাই, কারন সততার সাথে নিরুৎসাহিতকরন জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

আমার বইয়ের উপর মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞার জন্য আমি আমার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য যথাযথ আইনী উপাত্ত সহকারে আমার অধিকার সংরক্ষণ করি।

বর্তমানে, ব্লগারগণ কর্তৃক ব্লগজগৎ প্রভাবিত যারা গতকাল তৈরী করা একটি ওয়েবসাইটে একটি লিংক দিচ্ছে যেখান থেকে বইটি নামানো ও পড়া যাবে। অনেকে লিংকটি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য টুইটার ও ব্যবহার করছে। সুয়ারাম নামে মালয়েশিয়ার একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের ব্লগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার সমালোচনা করে একটি বক্তব্য পেশ করেছে।

জনগনকে অসম্মান করে শাসক সরকারের সমালোচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অযৌক্তিক এবং আত্মরক্ষামূলক থেকেছে যেখানে ক্ষমতার সমালোচনা করা কার্যকর গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বটে।

সুয়ারাম বিশ্বাস করে ধারনার বিস্তৃতি রোধ ঠেকানোর জন্য কোন পুস্তকই নিষিদ্ধ করা উচিৎ নয় এবং এর ফলে জনগনের সেগুলো অনুসন্ধান ও গ্রহনের জন্য স্বাধীন থাকা উচিৎ।

আরও একবার, আইনের ব্যবহার যথেচ্ছা হয়েছে এবং সামাজিক শৃংখলা রক্ষার পরিবর্তে এটা কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য এটা রাষ্ট্রের একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।

উইনিভার্সাল ডিক্লারেশন ও হিউম্যান রাইট (ইউডিএইচআর) এর অধ্যায় (১৯) এবং ফেডারেল সংবিধানের অধ্যায় (১০) দুটির প্রতি সরকারের সম্মান দেখানো উচিৎ যাতে স্পষ্ট বিবৃতি হয়েছে, প্রত্যেকের স্বাধীন মতামত প্রদান ও প্রকাশের অধিকার রয়েছে; এই অধিকারে কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত প্রদানের এবং যে কোন তথ্য মাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান, গ্রহণ এবং প্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে এবং তা কোনরূপ বাধা বিপত্তি ছাড়াই।

হর্ণবিল আনলিশড নামে অন্য একটি ব্লগও মনে করে এই নিষিদ্ধকরণ অনৈতিক হয়েছে।

এমন একটি দেশ যেখানের অধিবাসীরা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তথ্য প্রাপ্ত হয় এবং অন্য কিছু জানতে পারেনা – সে দেশ অবশ্যই একটি পশ্চাৎ ধাবমান দেশ এবং সে দেশ এই তথ্য ও বিশ্বায়নের যুগে অবশ্যই হেরে যেতে বাধ্য।

যদি আমরা বিশ্বের দিকে তাকাই, সেই সব দেশ যারা ধারাবাহিকভাবে ভালোর দিকে থাকে এবং এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অর্জনের জন্য প্রশংসিত হয় সে সব সেই ধরনের সমাজ যেখানে তথ্য মাধ্যম মুক্ত থাকে। এর কারন ধারণাগুলোর মুক্ত প্রবাহ যা মনের শক্তি এবং যা সম্পূর্ণ গড়ে উঠতে পারে। এবং এটা মনের সেই গুন যা একটি সমাজের উন্নতি ও অবনতির হার নির্ণয় করে দেয়।

প্রকৃত পুনর্গঠন মানে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দূর্নীতি রোধ এবং খারাপ মূল্যবোধকে ভালোর দ্বারা প্রতিস্থাপন। এবং পর্যবেক্ষক তথা সৃজনশীল ধারনা সমূহের ধারক ও প্রাথমিক বাহক হিসেবে একটা মুক্ত তথ্য মাধ্যম এর সুযোগ প্রদান করার মাধ্যমে তখন সেটা অর্জনের সবচেয়ে ভালো উপায় কি হতে পারে? যদি না অবশ্যই প্রচলিত দূর্নীতি ও ক্ষয়ের সুবিধাজনক অবস্থার পরিত্যাগ করার রাজনৈতিক ইচ্ছার অনুপস্থিতি ঘটে।

মালয়েশিয়া এমন একটি দেশ যেখানে কঠিন তথ্য নিয়ন্ত্রন আইন প্রচলিত, এবং ২০০৯ সালের উইদাউট বর্ডার প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স এর প্রতিবেদনে ১৩১তম হয়েছে মালয়েশিয়া।

বইটির কয়েক লাইন এখানেপাওয়া যেতে পারে।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .