গত সপ্তাহে প্রথমবারের মত মায়ানমারের নতুন জাতীয় পতাকা উন্মোচিত হল। সরকারপন্থী এক প্রচার মাধ্যম অনুসারে স্টেটস পিস এন্ড ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল অফিস (রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং উন্নয়ন পরিষদ)-এ এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, এবং প্রধানমন্ত্রী উ থিন সিয়েন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীন প্রচার মাধ্যম গ্রুপ দি ইরাওয়াদ্দি নতুন পতাকা সম্বন্ধে আরো অনেক তথ্য জানাচ্ছে।
২০০৮ সালের সংবিধান অনুসারে নতুন জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়েছে। পতাকায় হলুদ, সবুজ এবং লালের পটভূমির মাঝে একটি তারা বসানো হয়েছে।
সরকারি ভাবে পতাকা নামানোর সময়, সরকারের একদল কর্মকর্তা, যার কিনা মঙ্গলবারে জন্মগ্রহণ করেছে তারা পতাকা নামিয়ে ফেলবে, সে সময় সেই সমস্ত কমকর্তারা নতুন পতাকা উঠাবে যারা, বুধবারে জন্মগ্রহণ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুযায়ী পোশাক কারখানাগুলো এক মিলিয়ন (১০ লক্ষ) পতাকা তৈরি করেছে।
পতাকার সবুজ রং শান্তি, হলুদ ঐক্য এবং লাল রং বীরত্বপূর্ণ সাহসের প্রতীক। নতুন পতাকার সাথে মায়ানমারের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে এখন দেশটিকে রিপাবলিক অফ দি ইউনিয়ন অফ মায়ানমার নামে জানা যাবে। এর আগে দেশটির নাম ছিল ইউনিয়ন অফ মায়ানমার।
এই সব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মায়ানমারের নেট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া কি? ডন_১০৯ নতুন নতুন পতাকাটিকে পছন্দ করছেন না।
এইমাত্র সংবাদ পেলাম যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা পরিবর্তিত হয়েছে। এবং আমি এখানে তা দেখতে পেলাম। এক্ষেত্রে আমি জোর গলায় বলতে চাই: নতুন পতাকাটি আমি পছন্দ করিনি!!!
যখন আমি এই পতাকাটিকে দেখি, তখন আমি কোন ধরনের স্বদেশ প্রেম অনুভব করি না। যদি নতুন পতাকার তারাটি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে তার রঙ লিথুনিয়ার জাতীয় পতাকার মত, যদিও উভয়ের রঙের তারতম্য ভিন্ন।
কেবল আমি একাই এ রকমটা অনুভব করি না। অনেকেই এতে ক্ষুব্ধ। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটা একটা অপমান।
“মনে হচ্ছে এটা একটা পেশাদার নয় এমন কারো হাতে তৈরি বাজে জিনিস, যা মাইক্রোসফট পেইন্ট থেকে বের হয়ে এসেছে” এটা আমার নয়: আমার এক বন্ধুর ভাষ্য।
এই সেই পুরোনো পতাকা। এখানে নীল শান্তি এবং স্থায়িত্বের প্রতীক, লাল সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক। এখানে যে ১৪ টি তারা রয়েছে তা এদেশের ১৪ টি প্রদেশ এবং বিভাগের প্রতীক। এখানে যে চক্র রয়েছে, তা দেশটির কর্ম শক্তির প্রতীক, আর ধানের শীষ দেশের কৃষকদের কথা বলছে। আমি সেই পুরোনো পতাকাটিকে পছন্দ করি এবং যতই তারা জাতীয় পতাকা বদল করুক না কেন, এটা সবসময় আমার কাছে আমার দেশের জাতীয় পতাকা হয়ে থাকবে।
ভদ্রমহিলার ব্লগে এই বিষয়ে একটা কৌতুহলজনক আলোচনা রয়েছে।
আউলহাম: এখানে হলুদ রঙ শোয়েকে উপস্থাপন করছে (লেখকের ভাষ্য: থান শোয়ে মায়ানমারের শাসক), পতাকায় যে সবুজ রঙ রয়েছে সেটির মানে টাকা এবং আর এখানে উপস্থিত লাল রঙ জনতার রক্ত।
ইআই_এনজেল: কি এক বিচিত্র বিষয়!! তারা এটিকে বদলাতে পারে না। ভাইসব, আমি এই পতাকাটিকে ঘৃণা করি। এটিকে দেখতে অনেকটা ইথিওপিয়া বা ঘানার পতাকার মত। কাজেই দেশটির নামও রিপাবলিক অফ মায়ানমার থেকে বদলে (রিপাবলিক অফ দি ইউনিয়ন অফ মায়ানমার) করা হয়েছে? আমি মনে করি ৭টি পদক্ষেপের সবগুলো গ্রহণ এবং সংসদ ডাকার পরই কেবল তা পরিবর্তন করা উচিত।
ডন_১০৯: @ক্যাফেএনগোসমাই – এটাকে দেখতে আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশের জাতীয় পতাকার মত লাগছে। এর আগের যে পতাকাটি ছিল সেটি দেখতে কেবল তাইওয়ানের জাতীয় পতাকার মত লাগত। এখন এটা দেখতে তিন থেকে চারটি দেশের জাতীয় পতাকার মত লাগছে: এটি ঘানা, ইথিওপিয়া, লিথুনিয়া, ইত্যাদি দেশের জাতীয় পতাকার মত।
আউলহাম: চৌর্যবৃত্তিতে এরা বেশ ভাল, যার মধ্যে অন্যের পতাকা নকল করার মত বিষয় রয়েছে। মনে হয় এ রকম একটা পতাকা বানানোর উৎসাহ, দেশের কর্তা ব্যক্তির কোন এক নাতির কাছ থেকে এসেছে, যে কিনা তার রঙ পেন্সিলের রঙ পরীক্ষা করছিল। কেবল এক ভাবনা মাত্র।
এত দ্রুত পতাকার উন্মোচন নিয়ে এখানে মন্তব্যকারীদের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই একই আবেগ বিরোধী দলীয় লোকেরাও প্রদর্শন করছে। অনেকের মতে নভেম্বরের ৭ তারিখের সংসদ নির্বাচনের পরই পতাকা উন্মোচন করা উচিত ছিল। মায়ানমারের বিরোধী দল সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য দেশটির সামরিক শাসকদের দায়ী করেছে। ডেমোক্রেটিক ভয়েস অফ বার্মার মিন লিউইন এ ব্যাপারে এখানে আরো তথ্য যোগ করেছেন।
বিরোধী রাজনীতিবিদদের মতে, ২০০৮ এর সংবিধান অনুসারে তৈরি বার্মার আইন, নতুন কোন পতাকা উত্তোলনের আগেই কার্যকর হতে হবে। আর তা অবশ্যই বিতর্কিত ৭ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে হতে পারবে না।
ইয়ু ইয়ু ডিন, মায়ানমারের আরেক এক ব্লগার, তিনি এই নতুন জাতীয় পতাকা নিয়ে হতাশ।
সকল পুরোনো পতাকাকে পুড়িয়ে ফেলা হবে। আমার ধারণা সরকার এতটাই আমেরিকা বিরোধী যে, এমনকি একই রঙ থাকার কারণে, সরকারের সমাজবাদী চিন্তা থাকা সত্ত্বে তা কাজ করছে না।
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা ভোট দেব। এই ভোট হবে আমাদের কয়েকজনের জন্য জীবনের প্রথম ভোট। দুই বছর আগে কোলকাতার দূতাবাসে আমি নতুন সংবিধানের জন্য ভোট দিয়েছিলাম। সে সময় আমার বয়স ছিল ২০ বছর। আমি মূলত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বড় হয়েছি।
নির্বাচনে কে জিতবে? অবশ্যই সরকার। এখন সকলেই সাধারণ নাগরিক- সম্রাটদের গায়ে এখন নতুন পোশাক, হাতে তাদের নতুন পতাকা। তারা দেশটিকে তাদের হাতে রাখবে, একভাবে না পারলে, অন্যভাবে রাখবে। বাকী বিশ্বের সাথে দেশের লোকজন কি বলে, কি করে অথবা কি ভাবে, তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না। আমি এখানে কি লিখছি অথবা আপনি কি মন্তব্য করছেন, কি টুইট করছেন অথবা কাকে আপনি তা জানাচ্ছেন, এটা তাদের জন্য কোন বিষয় নয়।
দি ইরাওয়াদ্দির মন্তব্য বিভাগে নতুন পতাকা নিয়ে আলোচনা চলছেই।
ইয়ারজার: থান শুয়ের মাথায় আর কোন নতুন চিন্তা খেলছে না।
নতুন পতাকাটিকে শান রাজ্যের পতাকার মত লাগছে। শান রাজ্যের পতাকায় আঁকা সাদা বৃত্তের বদলে এই পতাকায় তারা রয়েছে।
কি লজ্জা, থান শুয়ে অন্য এক পতাকার নকল করেছে।ট্রেভ: আমি নতুন পতাকাটিকে পছন্দ করেছি: এখন উৎসব শুরু করার সময়!
সামরিক জান্তার এক দারুণ চাতুরিপূর্ণ চাল। যদি দেশে কখনো পর্যটনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তা টি শার্টে তা দারুণ মানাবে। কে উদাসী রাস্তাফারিয়ানের (খ্রীষ্টীয় নয় এমন ধর্মমতের অনুসারী, মূলত ইথিওপিয়ার রাজকে প্রভু মানে) প্রতি রাগান্বিত হতে পারে?
কিন্তু দি ইরাওয়াদ্দি কি তাকে পরিচয় প্রদান করতে যাচ্ছে? অথবা বার্মা কি তার পতাকা পুনরুদ্ধার করতে পারবে, যেখানে তার লড়াই টিকে থাকা, ইতিহাসের পথে?ইনড্রে: আমি দুঃখিত, কিন্তু কেন সরকার লিথুনিয়ার জাতীয় পতাকাকে গ্রহণ করল (হলুদ, সবুজ এবং লাল) এবং এটিকে বেশ উৎসাহের সাথে ভিয়েতনামের পতাকার সাথে মিলিয়েছে (কেন্দ্রে তারকা চিহ্ন)?
চিনডিসট: এই পাতাকাটি মোটেও আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না।। একটি তারা ?? এই বিশাল সাদা তারাটি, একই সাথে সব রঙের মাঝে একমাত্র তারা, যা মায়ানামারের টাটমাডাও নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর প্রতীক। এই তারা কেবলমাত্র সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করে।