চীন: একজন বিজ্ঞজন লিউ জিয়াবো

গত ৮ই অক্টোবর ২০১০ তারিখে লিউ জিয়াবো নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বেইজিং ভিত্তিক একজন বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক, রাজনৈতিক কলামলেখক এবং কর্মী। ১৯৮০ সালের দিকে সাহিত্য এবং দর্শনের উপর প্রশিক্ষণের পর সেই সময় তার তীব্র মূল্যায়ন এবং উদীয়মান খ্যাতির কারনে চীনা সাহিত্য জগতে ‘ছুপা রুস্তম’ নামে আখ্যায়িত হতেন। চীনা সমাজ বিজ্ঞান একাডেমি এর অধ্যাপক জু ইয়ুজু লিউকে শান্তি পুরষ্কার দেয়ার বিষয়ে তার খোলা চিঠিতে ১৯৮০ এর দশকের লিউ জিয়াবোকে তুলে ধরেছেন নিম্নলিখিতভাবে:

লিউকে এই পুরষ্কারের জন্য এই সময় বাছাই করা হয়েছে যে কারনে তা কেবল তার লেখার তীক্ষ্ণতা কিংবা তার তীব্র মূল্যায়ন এর জন্যই শুধু নয় বরং তার চিন্তা চেতনার স্বতঃস্ফূর্ততা এবং চীনের মূলধারার আদর্শ ও বিধানের বিষয়ে তার সমালোচনা অন্যান্য বিজ্ঞজনের চেয়ে কতটা বেশি প্রভাবিত করতে পারে তা বিবেচনা করেও।

প্রথমত ২০ বছর টেনে দেখলে দেখা যাবে, সেখানে লিউ এর চিন্তা ও ধ্যান-ধারনার এক বিপুল সঞ্চালন ঘটেছে। ইভান ওসনস, যে শেষবারের মত ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে লিউ এর সাথে দেখা করেছিল, সে লিউকে নিউ ইয়র্কারে (৮ই অক্টোবর ২০১০) ব্যাখ্যা করেছে এইভাবে:

লিউ সর্বদাই ছিলেন চীনের বিজ্ঞ শ্রেণীর ক্ল্যাসিক ধাঁচের একজন -গ্রেহাউন্ডের মত ঝুঁকে থাকা, দূরদর্শী, খেয়ালি ব্যঙ্গ বোধ সম্পন্ন-কিন্তু ডিসেম্বরের এই দিন তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী শীর্ণকায় দেখাচ্ছিল: তার কোমরের বেল্ট দেখে মনে হচ্ছিল তা তার কোমরে যেন দুই চক্রে প্যাঁচিয়ে আছে, এবং তার শীতের কোট পড়ে যাচ্ছিল। পাশ্চাত্যে সমাদৃত কতেক চীনা পন্ডিতের মত তিনি কোন সুযোগসুবিধার সুঘ্রাণ গ্রহন করতে পারেননি: তার কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নিয়োগ ছিলনা, ছিলনা কোন নিশ্চিত সচেতনতা যা তাকে নিউইয়র্ক কিংবা বার্লিনের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে পারে ছিলনা কোন চাকচিক্য। এমন কিসে কোন হঠকারি দলের প্রতিভূ ও ছিলনা। তার পরিবর্তে তিনি প্রযুক্তিগত এবং ধীরস্থির উচ্চারণে আঘাত হেনেছেন কারন তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন কেনো তিনি একটা খোলা চিঠির সহলেখক ছিলেন সেই গ্রীষ্মে যেখানে চীনা নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান করা হয়েছে জনগনের অধিকারের প্রতি বেশী যত্নবান হওয়ার জন্য। তিনি এটা ব্যাখ্যা করেছেন সংহিসতা ছাড়াই বরং তার দায়িত্ব হিসাবে।

লিউ এর জন্য ১৯৮৯ সালটি ছিল পরিবর্তনের। চীনের প্রাক-গণতন্ত্র আন্দোলনের একটি ভূমিকা পালনের জন্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার পদটি তিনি ছেড়ে দেন। এই ভূমিকার জন্য তাকে দুই বছর জেল খাটতে হয়। রাজনৈতিক এই নাড়াচাড়া লিউ এর বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটায়। চায়না ইন প্রোস্পেকটিভ নামক একটি ওয়েবসাইটে পুনঃ প্রকাশিত একটি রচনায় একজন চীনা পন্ডিত চেঙ জিং হোঙ, লিউ এর আবেগপ্রবণ থেকে বাস্তবধর্মী তে আদর্শগতভাবে রূপান্তরের কথা বর্ণনা করেছেন, যে পরিবর্তনকে আরেকটু অন্যভাবে বললে বলতে হয় ঔদ্ধত্য থেকে মানবতায় রূপান্তর:

如果说80年代在刘晓波的眼里,是文化传统或者一种比较超验的东西在压抑人性、人欲和自我,那么今天则是国家和政治体制这些更加直接或者容易被经验证实的因素在压抑个人。因此,对像不一样了,关怀仍然没有变。我想这大概也是把前后两个刘晓波联系在一起的线索。

লিউ জিয়াবোর দৃষ্টিতে, যদি ১৯৮০ সালের দিকে ব্যক্তি এবং মানবীয় গুণাবলীর উপর দমন নীতির কারন ছিল সাংস্কৃতিক এবং অতি প্রাকৃতিক, কিন্তু আজকের দমন নীতির পেছনে রয়েছে বাস্তবিক কারন যেমন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এই কারনে, যদিও নিশানা পরিবর্তন হয়ে গেছে, তার সহানুভূতি ও মানবতা পরিবর্তন হয়নি। এবং এটাই দুই রকম লিউ জিয়াবোকে একত্রিত করেছে।

পরিবর্তন ঘটে যাওয়া বছরের পর লিউ এর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ এবং দর্শনের বাইরে তার সমালোচনার সুযোগ কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেটা তাকে চীনের অন্যান্য বিজ্ঞজন হতে কিভাবে পৃথক করে তুলেছিল সে সম্পর্কে চেঙ আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে:

他不同于大陆自由主义知识份子的其他代表人物,如秦晖、刘军宁、何清涟、徐友渔、朱学勤等人,他们原来是什么方面的专家,现在仍然是那个方面的专家,在知识和训练上也许会有很大的扩展和延伸,但没有经历过那样的全面转型。凡是学界中人,都会了解这种转型的艰难。你可以偶尔对跨专业的问题发表一点意见,但很难成为那个方面的内行。就对每一个专业问题发表意见的深度和广度来说,刘晓波在他所涉猎的每一个领域里当然起不到上述专家的作用,但他对每一个领域中和现实关系最密切的关键问题却始终保持着敏感,而且对这些敏感问题之间的关联有宏观的把握。因此他的写作不但起到学界和一般读者之间的桥梁作用,而且也成为人们了解大陆自由主义思想发展和社会演变之间关系的一条途径。

লিউ জিয়াবো চীনের অন্যান্য মুক্তচিন্তা কামী বিজ্ঞজন যেমন জিন হুই, লিউ জুনিং, হি জিংলিয়ান, জু ইয়ুজু এবং ঝু জুজিং এর থেকে ভিন্ন। তারা তাদের মূল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়েই থেকেছেন। যদিও তারা তাদের জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ প্রসারিত করেছেন তথাপি লিউ এর মত অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি মাত্রই জানেন এই বিস্তৃতি ঘটানো কঠিন। তুমি হয়তো কখনও কখনও তোমার ক্ষেত্রের বাইরে মতামত প্রকাশ করতে পার কিন্তু সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা। লিউ জিয়াবোর মন্তব্যের বিস্তৃতি ও গভীরতা বিচার বিশ্লেষণ করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি সকল ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে উন্নিত হন নি। তবে, তিনি প্রতি ক্ষেত্রের মূল উপজীব্য বিষয় এবং সমাজের বাস্তবতার সাথে সেটার সম্পর্ক সম্পর্কে অবহিত এবং তিনি মূল বিষয়গুলোর মধ্যেকার সম্পর্কেও একটা বাস্তব চিত্র ধারন করতে সক্ষম। সে কারনে, তার লেখা কেবলমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক পাঠকের সাথে সাধারণ পাঠকের যোগসূত্রই ঘটায় না বরং তার লেখা এমন একটি মাধ্যমে পরিণত হয় যার ভেতর থেকে জনগণ চীনের সামজিক পরিবর্তন এবং স্বাধীনতার উত্থান সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।

বেইজিং স্প্রিং এর প্রধান সম্পাদক হু পিং তার সাম্প্রতিক এক কলামে পুনরায় লিউ এর লেখা ও যোগাযোগের বিস্তৃতির উপর মন্তব্য করে চায়না হিউম্যান রাইটস বাইইউকলি তে লিখেছেন:

晓波也是中国异议运动的主要组织者。多年以来,中国的异议群体发表了大量的公开信、抗议信、呼吁书以及纲领和宣言,其中相当一部分是晓波起草、发起或组织的。这不但是因为他思想敏锐,笔头快,而且也因为他声望高,人脉广泛。晓波交游广阔,国内的海外的,华人洋人,体制内体制外,老年中年青年,学术界文化界法律界新闻界,民运人士维权人士独立作家,很多人都愿意和他打交道,愿意和他合作。虽然说对晓波不满者也不乏其人,但平心而论,在异议阵营中的头面人物里,又有几个-如果有的话-比晓波拥有更多的人脉呢?

চীনের অনৈক্য আন্দোলনের মূল পথিকৃৎ হলেন জিয়াবো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রকাশিত খোলা চিঠি, প্রতিবাদী পত্র, আবেদন এবং ঘোষণাপত্রের একটা বড় অংশই জিয়াবো কর্তৃক সূচনা ও খসড়া হয়েছে। এটা কেবল তার চিন্তার তীক্ষ্ণতা ও ক্ষিপ্রতার জন্যই নয় বরং তার সুনাম এবং পরিচিতির বিস্তৃতির জন্যও হয়েছে। চীনে হোক কিংবা চীনের বাইরে, চীনা হোক কিংবা বিদেশী, সরকারী কিংবা বেসরকারী, যুবক কিংবা বৃদ্ধ, এ্যাকাডেমিক, সাংস্কৃতিক, আইনী সংস্থা কিংবা তথ্য মাধ্যম, আন্দোলনকর্মী কিংবা লেখক সকলেই লিউ জিয়াবোর সাথে বন্ধুত্ব কিংবা সহযোগীতা করতে ইচ্ছুক। যদিও কেউ কেউ লিউ এর উপর বিতৃষ্ণাও দেখিয়েছে, অনৈক্য সমাজের ভেতরেই যদি কেউ থেকে থাকে, সে কি লিউ এর পরিচিতির বিস্তৃতির সাথে মিলতে পারবে?

লিউ জিয়াবোর লেখা কিংবা তার উপর লেখা বই বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করা কঠিন। কারন হু পিং তার কলামে এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, সে এবং তার আরও কিছু বন্ধু লিউ জিয়াবোর লেখার নির্বাচিত অংশ নিয়ে একটি বই সম্পাদনা শেষ করার প্রায় দার প্রান্তে। তারপরও, পাঠককে বইটির ইংরেজী ও জার্মান সংস্করণের জন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বইটি সম্পাদনা করা কেনো এত কঠিন সে বিষয়ে হু পিং এভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে:

我对晓波的著述非常熟悉,按说选起来应该不费力气;然而一旦着手编选,才发现这项工作很不好做。第一,晓波的著述太多,11本书,近千篇或长或短的文章,要从这么多著述中选出二、三十万字的一部文集,如何取舍就是个大问题。第二,晓波写文章,总是面对中国读者,尤其是大陆的读者。由于文化差异,更由于语境的差异,外国人读他的文章是不是能读明白,能准确领会,挑选哪些文章更合适,也是一个很麻烦的问题。再有,对晓波这样的人物,一般读者不但对他的思想观点感兴趣,而且也会对他的生活经历感兴趣。然而晓波虽写过几百万文字,却没写过自传,也缺少别人给他写的传记。这不能不是个 缺憾。

যেহেতু আমি লিউ জিয়বোর লেখার সাথে খুবই পরিচিত সেহেতু বই সম্পাদনা করা আমার জন্য সহজ কাজ। অথচ কাজ শুরু করার মুহূর্তেই আমার কাছে তা কঠিন মনে হয়েছে। প্রথমত, জিয়াবোর লেখার সংখ্যা অনেক- ১১ টি বই, সাথে রয়েছে হাজারখানেক আর্টিকেল। এই বিপুল সম্ভার থেকে ২০০-৩০০ হাজার শব্দ বাছাই করা এবং সেগুলোকে একটি বই আকারে সংগ্রহ করা বেশ কঠিন কাজ। দ্বিতীয়ত:, জিয়াবোর সব লেখাই চীনা পাঠকের উদ্দেশ্য করে লেখা, বিশেষ করে যারা মূল ভূখণ্ডের। সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পার্থক্যের কারনে আর্টিকেল বাছাই কাজটির জন্য বিদেশীদের বোধগম্যতা এবং ভাষান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করতে হচ্ছে। তার উপর, সাধারণ পাঠকরা কেবলমাত্র লিউ জিয়াবোর চিন্তাচেতনার প্রতিই নয়, একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার জীবনাভিজ্ঞতার প্রতিও তারা আগ্রহী। আমাদেও দুর্ভাগ্য এই যে জিয়াবো লক্ষ লক্ষ শব্দ লিখলেও নিজের সম্পর্কে সেখানে কিছু লেখা নেই। অন্যর দ্বারা লেখাও তার কোন জীবনী আমাদের কাছে নেই। আমাদের কিছু করার নেই তবুও স্বীকার করতেই হয় এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .