মায়ানমার (বার্মা): কারেনদের দুর্দশা


লুকিযে থাকা কারেন জনগোষ্ঠীর চিত্র। ছবি বার্মা মেটার নাও-এর , অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

বার্মায় সামরিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কারেনরা দেশটির সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে । সেখানে কোন সেনার উপস্থিতি কারেনদের তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় লুকাতে বাধ্য করার জন্য যথেষ্ট, পালানোর সময় তারা তাদের পিঠে সামান্য সামগ্রী নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়। বার্মা মেটার নাও আমাদের সামনে কয়েকটি ভিডিও তুলে ধরছে যা কারেন জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথা বলছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে কারেন জনগোষ্ঠীর একটা বড় ভূমিকা ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুজন প্রবীণ যোদ্ধা, যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছে এবং কি ভাবে এই জয় তাদের জন্য কোন কিছু বয়ে আনেনি, তা জানাচ্ছে:

এই সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্রে, ৯০ বছর বয়েসে উপনীত হওয়া প্রবীণ দুই যোদ্ধা, তাদের গল্প বলছে এবং কি ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাদের জন্য এক রক্তাক্ত সংঘর্ষের সূত্রপাত করে, যার মধ্যে দিয়ে তাদের সম্প্রদায় পদ্ধতিগতভাবে এবং নির্মমভাবে বিগত ৬১ বছর ধরে বার্মার সামরিক বাহিনীর হাতে ধ্বংস হচ্ছে, সেটি জানাচ্ছে।


এই এলাকায় সামরিক বাহিনীর অভিযান কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন এবং তার সামরিক শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির কারণে পরিচালিত হয়। তবে সরকার এখানে ফোর কাট পলিসি ( চারটি জিনিস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা) নামক নীতি গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে এলাকায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাহায্য করবে এমন সবকিছু তারা ধ্বংস করে ফেলে। যার মধ্যে রয়েছে খাবার, তথ্য, ভবিষ্যৎ-এর জন্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়োগ, এবং সম্পদসমূহ, যার মানে হচ্ছে গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যেতে হয়। কারেন গ্রামবাসীরা সেনাদের হাত থেকে পালানোর জন্য সবসময় স্বাভাবিক চেষ্টা করে থাকে। তাদের শিবিরগুলো জঙ্গলের মাঝখানে অবস্থিত, যেখানে তাদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভবনা বেশ কম। যদিও তাদের স্বাস্থ্য, বিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং খাবারের অভাব রয়েছে, তারপরেও তারা এসব ছাড়াই টিকে থাকার চেষ্টা করে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তাদের গ্রামের মধ্যে থাকার কোন উপায় নেই

উত্তর কারেন রাজ্যের গ্রামগুলোকে প্রায়শই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। সেগুলো পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশে দেওয়া হয়। এর মধ্যে থাকে ক্লিনিক, স্কুল, মন্দির বা গির্জা। সাধারণত বার্মার সেনাবাহিনী বসতিগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যদি কোন গ্রামবাসী সেখানে থেকে যায় তাহলে, তার বয়স না দেখে বা সে ছেলে না মেয়ে তা বিবেচনা না করে, তার উপর গুলি বর্ষণ করে। তারা সংরক্ষিত ওষুধ এবং খাবার ধ্বংস করার জন্য খোঁজ করতে থাকে। এর সাথে তারা মাটির জিনিস, বাসন-কোসন, কম্বল, এবং স্কুলের জিনিসপত্র ধ্বংস করতে থাকে। তারা মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার পুরোপুরি উপেক্ষা করে। এটি সৈনিককে একটি বসতি মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার ক্ষমতা প্রদান করে। এইসব সৈনিকের অনেকে একেবারে বর্ণবাদী এবং ধর্ষকামী। অত্যাচার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের তথ্য প্রতি মাসেই পাওয়া যায়। যার মধ্যে খুব সামান্য স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ হয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যার খবর পাওয়াই যায় না, দায়িত্বশীলতা অথবা যোগাযোগের অভাবের কারণে এই ঘটনা ঘটে।

কেবল মাত্র কারেনদের উপর এই সমস্ত আক্রমণ চালানো হয় না, বার্মার বেশির ভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একই ধরনের সমস্যাকে মোকাবেলা করে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী বিভিন্ন বিদ্রোহী দলগুলোকে দমন করার জন্য তাদের উপর হামলা চালিয়ে থাকে:

যদি একবার সেখানকার বিদ্রোহীদের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে বার্মার সামরিক বাহিনী সেখানে এসে হাজির হয় এবং জোর করে গ্রামবাসীদের নতুন স্থানে গিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসতি গড়তে বাধ্য করে। সেখানে তাদের যাতায়াতের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হয় এবং প্রায়শই তাদের বিনা পয়সায় জোর করে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ্য করা হয়।

এদিকে যদি বিদ্রোহীদের শক্তির কারণে যে সমস্ত এলাকা দখল করা সম্ভব হয় না, সে সমস্ত এলাকাগুলোয় সব সময় বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করে রাখা হয়। নিয়মিত ভাবে সেখানকার ক্ষেত, বসতি এবং বাজারের উপর দুর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে নিয়মিত গ্রামবাসীর উপর গোলাবর্ষণ করা এবং প্রধান ভ্রমণপথ গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রায়শই বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধন করা হয় না এবং তারা সরকারি কোন সুবিধা পায় না।

এই সমস্ত ঘটনা যাতে প্রচারিত হয় তার জন্য কিছু চেষ্টা করা হয়েছে: এখানে এই ভিডিওর কিছু অংশ সংগ্রহ করেছে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইমপ্যাক্ট নাও, ওরফে উইন নামের প্রতিষ্ঠান। এটি এমন একটি সংস্থা, যারা কারেন সম্প্রদায়ের লোকেরা যাতে তারা আরো দক্ষতার সাথে তাদের ঘটনাগুলো সম্বন্ধে রিপোর্ট করতে পারে, সে জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। তাদের প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতা, ক্যামেরা চালানো, ভিডিও এডিটিং এবং নিজেদের স্বপক্ষে কথা বলার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা:

উইন এই এলাকায় লোকদের নিয়ে কাজ করেছে। তাদের লক্ষ্য সেখান এক বিশেষ চিত্রগ্রহণ পরিকল্পনার উন্নয়ন করা, যাতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানকার জনগনের লুকিয়ে থাকা জীবনের বিস্তারিত তথ্য ধারণা করা যায়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সৃষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি সংঘের জন্য বিস্তারিত ঘটনাবলি সংগ্রহের জন্য, আমরা অসংখ্য সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .