বিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা পদ্ধতি কি উঠিয়ে দেয়া উচিৎ?

কয়েকমাস আগে, মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ইউপিএসআর (প্রাথমিক বিদ্যালয় মূল্যায়ন পরীক্ষা) এবং পিএমআর (শিক্ষার নিম্নতর সনদ) পদ্ধতি বাতিলের মাধ্যমে বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষানির্ভর পদ্ধতি পরিবর্তিত করে বিদ্যালয় ভিত্তিক যাচাই ব্যবস্থার প্রচলন করার সম্ভাব্যতা ঘোষণা করেছেন।

উভয় পরীক্ষা ব্যবস্থার সুফল যাচাই ও পরীক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে যে সরকার ইউপিএসআর পরীক্ষা বজায় রাখবে এবং পিএমআর পরীক্ষা বিদ্যালয়-ভিত্তিক যাচাই ব্যবস্থায় পরিবর্তিত করবে। যাই হোক, মুহিউদ্দীন বলেছেন এ পরিবর্তন খুব শীঘ্রই হচ্ছে না::

তিনি বলেন “আমরা ভাবছি যে সত্যিকার অর্থে এইরকম বড়সড় পরিবর্তন ঘটাতে ছয় বছর সময় লাগবে কারন এর সাথে পাঠ্যপুস্তক এবং পাঠ্যসূচী সম্পর্ক যুক্ত এবং একই সাথে শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন যাতে করে তারা খুব বেশী পরীক্ষা-নির্ভর না থাকে,” এর সাথে আরও তিনি যুক্ত করে বলেন বিদ্যালয়-ভিত্তিক যাচাই ব্যবস্থা পাইলট প্রকল্প হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে ৫৫০টি বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে।”

ক্লোন এর ব্লগ সরকারী এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে:

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে প্রথমত আমি বলব এটা একটা ভাল সংবাদ। ছাত্রছাত্রীরা শুধু মাত্র পরীক্ষার নিমিত্তে পড়াশুনা করার এবং প্রতি মাসে টিউশিন ফির জন্য শত শত রিংগিত (মালয়েশিয়ান মুদ্রা) ব্যয় করার জন্য বোঝা হয়ে থাকবে না! যদিও আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তের ফলাফল সম্পর্কে জানিনা কিন্তু আমি আশা করি এটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের গুনগত মান এর কোন কমতি ঘটাবে না। প্রকৃতপক্ষে, এখন আমরা যে পদ্ধতিতে পড়ছি এটা পুরোপুরিভাবে কেবল পরীক্ষা পাসের জন্য নয় বরং এটার উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন। যে বিষয় আমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে না সে বিষয় পড়ার দরকার কি?

রয় স্ট্যান্সের বক্তব্য ভিন্ন মত তুলে ধরে:

আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে মালয়েশিয়ার ছাত্রছাত্রীদের জীবনে পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় থাকায় তা তাদের ভবিষ্যত জীবনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে সহায়তা করে। আমাদের অধিকাংশের ভোটের কোন প্রয়োজন নেই কারন পরীক্ষা ব্যবস্থা আবশ্যিকভাবেই আমাদের দেশের জন্য একটা বড় দায়িত্ব পালন করে থাকে। পুরো দেশে পরীক্ষা ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা একটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অগ্রসর।

মালয়েশিয়া এডুকেশন এমন একটি ব্লগ যা মালয়েশিয়ার সরকারী এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন এই উভয় প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান ধারণা এবং মতামত তুলে ধরে, এই ব্লগটি আলোচ্য বিষয়ে তাদের ধ্যান ধারণা প্রকাশ করে লিখেছে:

জনৈক ব্যক্তি বলেন…আমি বিশ্বাস করি মালয়েশিয়ার শিশুরা পৃথিবীতে আমাদের অংশের অন্যান্য সমতুল্য শিশুদের সমান প্রতিভাবান। তাই, দয়া করে তাদের কম পড়তে বাধ্য করে নষ্ট হতে দিও না। তাছাড়া ভবিষ্যতে যখন তারা বড় হবে এবং আমাদের যে সকল ছাত্রছাত্রী পন্ডিত ব্যক্তি হয়ে গড়ে উঠবে তারা উন্নত বিশ্বের পন্ডিত ব্যক্তিদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না।

ব্লগিং এর প্রতি অনুরক্ত একজন বলেন…শিশুরা নানামুখী উপহার, প্রতিভা এবং পছন্দ অপছন্দে সমৃদ্ধ থাকে। আমি মনে করি না পিএমআর কিংবা ইউপিএসআর শিশুদের জন্য খারাপ কিছু। পিতামাতার প্রত্যাশাই সর্বদা কোমলমতি শিশুদের কাঁধে বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দেয়। শিক্ষাগ্রহণ সর্বদা আনন্দময় হওয়া উচিৎ, এটা হওয়া উচিৎ অনুসন্ধিৎসু, এটা কোন বোঝা বা লজ্জার কিছু হওয়া উচিৎ নয়।

আইফা বলেছে…পরীক্ষা কখনই বন্ধ করা উচিৎ নয় বরং তার পরিবর্তে কেনো কর্তৃপক্ষ তারা একসাথে বসে এটাকে পুন:সংশোধন কিংবা উন্নততর করে না। আমি যা পর্যবেক্ষণ করেছি তা হলো বিদ্যালয়ে শিশুরা আজকাল অনেক বেশী রোবোটের মত হয়ে গেছে এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য আর মোটেও জ্ঞানার্জন নয় বরং সরাসরি এ গ্রেড পাওয়া। এ গ্রেড পাওয়া যে কোন খারাপ বিষয় আমি তা বলছি না কিন্তু তারা তো কেবল বাচ্চা মাত্র। মাতাপিতা, সমাজ এবং রাজনীতিবীদ এসব শিশুদের উপর সফলতা আনয়নের জন্য অত্যাধিক প্রত্যাশা করে।

মালয়েশিয়ার টুইটার ব্যবহারকারীরাও এই বিষয়ের উপর মাত্র ১৪০ শব্দের ভেতরে কিছু বলার সুযোগ ছাড়েনি:

@ইকাচান @ecachan: আমি শিক্ষামন্ত্রী হব এবং পিএমআর ও ইউপিএসআর ব্যবস্থা বজায় রাখা সুনিশ্চিত করব।

@ব্রিটক্সী #পিএমআর আর নয়? কৌতুক। একজন ছাত্র হওয়া সত্বেও আমি পিএমআর পরীক্ষায় বসতে রাজি। কিংবা এছাড়া, এসপিএম বছর ছাড়া ইউপিএসআর হতে সকলেই ঢিলেমি অবস্থায় থাকে।

@মনমোহনজিৎ : সরকার ইউপিএসআর এবং পিএমআর উঠিয়ে দিতে চাইছে, ভাল সিদ্ধান্ত। এটা সময়ের ব্যাপার এখন।

@ডনভনফং @DonovanFoong: এখন শুধু একটিই কারণ বাকী পিএমআর আর ইউপিএসআর বন্ধ করার জন্য! হুম!

@ক্যাটুডরেলিম : কেনো উঠে যাচ্ছে? বজায় রাখো! হুম!

@সুবাহরিন : হ্যাঁ সরকার ইউপিএসআর বজায় রাখছে কিন্তু এটাকে আরও কঠিন করতে যাচ্ছে। পি্এমআর বিদ্যালয় ভিত্তিক পরীক্ষার দ্বারা পরিবর্তিত হচ্ছে।

@ ফারভিণ : কি মজা..শিশুদের জন্য কম চাপ!

@জান্নাতেসল : বিদ্যালয় ভিত্তিক যাচাই ব্যবস্থা বনাম একটি সিজিল [সনদ]। আমি কখনই কর্মক্ষেত্রে দরখাস্তের জন্য প্রথমটি ব্যবহার করতে পারব না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .