লিসেন টু দ্যা ব্যান্ড (নিষিদ্ধদের শুনুন) হচ্ছে একটি গানের সিডি যা একত্র করেছে সেই সব শিল্পীদের যারা নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের গান সেন্সর করা হয়েছে বা তাদের গানের জন্যে জেলে যেতে হয়েছে। এটি আফগানিস্তান, আইভরি কোস্ট, ইরান, ইজরায়েল, লেবানন, পাকিস্তান. সুদান, তুরস্ক, উইঘুরস্তান এবং জিম্বাবুয়ের শিল্পীদের গান পরিবেশন করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ফ্রিমিউজ, যা সঙ্গীতের প্রচারের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে থাকে, এবং দিয়াহ, একজন পাকিস্তানী-নরওয়েজিয়ান সঙ্গীতশিল্পী, যিনি সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নেবার পর অনেক বছর অত্যাচার নিপীড়নের ভেতর দিয়ে যাবার পর সঙ্গীতজ্ঞদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করায় ব্রতী হয়েছেন।
এরা বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে এই সিডি সম্পর্কে এবং প্রতিটি সঙ্গীত শিল্পীর জীবনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্যে। এদের ওয়েবসাইটে প্রতিজন সংগীতজ্ঞের জীবনী রয়েছে। এই অ্যালবামের টুইটার অ্যাকাউন্টে শিরোনামটির মাহাত্ম্য বোঝা যায়। তারা সঙ্গীতশিল্পীদের আসন্ন শুনানী সম্পর্কে পোস্ট করে, কনসার্টের সময় কোন কোন শিল্পীর উপর হামলার ব্যাপারটি তুলে ধরে এবং একজন সঙ্গীতজ্ঞকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফেসবুকে তারা সাম্প্রতিক খবরগুলো দেয় এবং সমর্থকদের কাছ থেকে সহায়তা পায়, এবং ইউটিউবে তারা অ্যালবামের প্রতিটি শিল্পীর গানেরই অংশবিশেষ পোস্ট করেছে।
যেমন ধরুন ফরহাদ দারিয়া, যিনি সপ্তাহখানেক আগে কাবুলে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে আফগান মহিলাদের একটি কনসার্টে অংশ নেন। কনসার্ট শেষ হবার সাথে সাথে পার্কিং লটে একটি বোমা ফাটে এবং ১৩জন মানুষ আহত হয়:
২০০১ সালে তালিবানদের পতনের পরে লক্ষ লক্ষ আফগানদের জন্যে ফরহাদ দারিয়া সঙ্গীতের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে উৎখাত পর্যন্ত তালিবানরা আফগানিস্তানে সঙ্গীত, চলচ্চিত্র ও টিভি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এর পরবর্তী সময়ে রেডিওতে প্রথম দিকে যার কণ্ঠ শোনা যেত তিনি হচ্ছেন ফরহাদ, যা উনিশশো আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আফগানিস্তানের আধুনিক সঙ্গীতের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি নাম। তালিবানদের শাসনের সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, কিন্তু তার সমর্থকরা তাকে ভোলেনি।
মাহসা ভাদাত ইরান থেকে এসেছেন। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সঙ্গীতশিল্পীদের প্রতি বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। যেহেতু নারী শিল্পীদের একটি চুক্তিতে সই করতে হত যে তারা দেশের ভেতর উন্মুক্ত কোন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন না, তাই তারা শুধু বিদেশে সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারত। দু:খের বিষয় সে সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি হয় নি:
আজকে ইরানে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারেন কিন্তু উন্মুক্ত কোন সঙ্গীতানুষ্ঠানে পুরুষ ও মহিলা দর্শকদের মাঝে পরিবেশন করতে পারেন না। তারা শুধু মেয়ে দর্শকদের কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যেগুলোর কয়েকটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজন করে থাকে। তবে নারীশিল্পীরা পুরুষ শিল্পীদের সাথে কোরাসে গান করতে পারেন। মাসা ভাদাত শুধুমাত্র মহিলা দর্শকদের কাছে সঙ্গীত পরিবেশন করতে অস্বীকৃতি জানান। সেজন্যে এখন তিনি শুধু ইরানের বাইরেই সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারেন।
ক্যামেরুনের লাপিরো দে এমবাঙ্গা বর্তমানে জেলে আছেন কারন তার “কোষ্ঠকাঠিন্যে ভরা সংবিধান” নামক গানটি বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যবহার হওয়া শুরু করলে তার বিরুদ্ধে যুবাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়:
দেশব্যাপী ধর্মঘট এবং ব্যাপক প্রতিবাদের সময় লাপিরো তার “কোষ্ঠকাঠিন্যে ভরা সংবিধান” গানটি রচনা করেন। এই গানে তিনি বর্ণনা করেন যে দেশের রাষ্ট্রপতি পল বিয়া সম্পর্কে বলেছেন যে “তিনি একটি চক্রের ফাঁদে পরেছেন যারা তাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়, যদিও তিনি ক্লান্ত”। এই গান বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশের বেসরকারী সঙ্গীত হয়ে দাড়ায় এবং লাপিরোকে যুবাদের মধ্য অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং ২৮ কোটি সিএফএ ফ্রান্ক (৬৪০,০০০ মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয় রায়টের ক্ষতিপূরণে।
জিম্বাবুয়ে থেকে এসেছেন চিওনশিও মারাইরে:
যদিও রাষ্ট্রপতি রবার্ট মুগাবের ভূমি সংস্কারের সমর্থন করেন চিওনশিও মারাইরে, তিনি সরকারের অক্ষমতা, ব্যাপক দুর্নীতি আর দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব এর জন্যে সমালোচনা শুরু করেন। ২০০৭ সালে পুলিশ কর্তৃক অশোভন জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আপনি এইসব শিল্পীদের গল্প আরও পড়তে পারেন এবং তাদের কিছু সঙ্গীত শুনতে পারেন Listentothebanned.com (লিসেনটুদ্যাব্যান্ড.কম) সাইটে।