বাংলাদেশে দূর্নীতি ব্যাপক। ২০০৯ সালে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৩৯ তম স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি আছে, তবে ভূমি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তার প্রভাব সব থেকে বেশী। দেশটির ধীর, খারাপ মানের ও বেঠিক ভূমি সংশ্লিষ্ট সেবার জন্য দুর্নীতিকে মূলত দায়ী করা হয়েছে।
ঘুষ আর অন্যান্য অসামঞ্জস্য চলে আসছে, কারণ এ দেশে একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। প্রশাসনে যাদের ভূমির রেকর্ড তৈরি আর রাখার দায়িত্ব রয়েছে তারা প্রায় ইচ্ছা করে ভুল রেকর্ড তৈরি করেন, আর ভূমির মালিকরা তখন বাধ্য হন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে এই রেকর্ড ঠিক করতে। কর্মকর্তা আর সার্ভেয়ার প্রায়শই ভূমি দস্যুদের সাথে আঁতাত করে থাকে, অনেক ঘটনা আছে যেখানে মানুষ কর্মকর্তাদের আর/বা সার্ভেয়ারদের ঘুষ দিয়ে তাদের নামে বেআইনিভাবে ভূমির মালিকানার রেকর্ড পরিবর্তন করেছেন, আর এর ফলে আসল মালিকরা দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ২০০৬ সালে (বাংলাদেশী মুদ্রায়) ৮৩ বিলিয়ন টাকা ঘুষ দেয়া হয় ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের জন্য যেমন রেজিস্ট্রি করা বা রেকর্ড পরিবর্তন।
বাংলাদেশে বিচারের অপেক্ষায় আছে ভূমি সংশ্লিষ্ট ৩.২ মিলিয়নের বেশী মামলা। এবং এই বিশাল সংখ্যার মধ্যে সেই সব বঞ্চিত নেই যারা আদালতে যেতে পারেন না পয়সার অভাবের জন্যে। ভূমির সমস্যা থেকে প্রায়শই সংঘর্ষ আর অপরাধমূলক কাজের জন্ম হয়। বলা হয় যে বর্তমানকালের ৮০ শতাংশ অপরাধ ভূমির সমস্যার কারনে হয়।
এইসব জুয়াচুরি আর দূর্নীতির সমস্যার প্রতিকারের জন্য বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে ভূমি রেকর্ড আর ভূমি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডিজিটাল করার জন্যে যাতে এই ক্ষেত্রে কিছুটা স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা আসে আর বেপরোয়া দূর্নীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে ঢাকা শহরের জন্য একটি ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে আর চার লাখেরও বেশী তথ্য ইতিমধ্যেই যোগ করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীঘ্রই উদ্বোধন করবেন। অন্যান্য কাজ, তা সরকারি বা বেসরকারী হোক, গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ১০টি স্থানীয় আইটি কোম্পানির সমষ্টি টেরা টেক লিমিটেড, একটি ডিজিটাল ম্যাপিং আর ভুমি কর ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে সরকার সম্মতি দিয়েছে। ডিপার্টমেন্ট আশা করে যে এইসব উদ্যোগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সঠিক দিকে পদক্ষেপ হবে আর বাংলাদেশে আরো কার্যকর ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করবে।
তবে চিন্তা করা হচ্ছে এই সেক্টরে আগের প্রচেষ্টার সীমিত সাফল্যের ব্যাপারটি, যা ভিন্ন ধারণায় স্থানীয়করণ করে বাস্তবায়িত করা হয়েছিল। তাই এই স্বীকারোক্তি আর বোধ জাগ্রত হচ্ছে যে – বাস্তবতা হচ্ছে এককভাবে এইসব প্রচেষ্টা খুব বেশী উপকার করতে পারে না, সম্মিলিত একটি পরিকল্পনা করতে হবে সরকারী- ব্যক্তিগত পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায়। সাম্প্রতিককালে ভূমির ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে কথোপকথনে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী কান্ট্রি ডাইরেক্টর জনাব কে.এ.এম. মোরশেদ একটা লেখা উপস্থাপন করেছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব: ভূমি’ শিরোনামে যেটা সঠিক ডাটাবেসের গুরুত্বের কথা জোর দিয়েছে যা নিশ্চিত করা যাবে সঠিক সার্ভে, ডিজিটাল ভূমি নিরিক্ষা ব্যবস্থা (সেটা আসলে জিআইএস নির্ভর মানচিত্র), ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থা আর সাম্প্রতিক ডিজিটাল ভূমি তথ্যব্যবস্থার মাধ্যমে যা ভোটার/ জাতীয় আইডি ডাটাবেসের সাথে একত্র হবে। এই পদক্ষেপগুলো সহজ যোগযোগ, খোঁজা আর যাচাই এর ব্যবস্থা আর ডিজিটাল ভূমি কর ট্রাকিং আর ব্যবস্থাপনার সিস্টেম তৈরি করে দেবে।
বাংলাদেশে বিজয় বাংলা সফ্টওয়ার আর কিবোর্ডের স্বত্ত্বাধিকারী মুস্তাফা জব্বার তার ব্লগিমেট ব্লগে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা নামে একটি লেখায় জানিয়েছেন যে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কেবলমাত্র ভূমি রেকর্ডকে ডিজিটাল করাই যথেষ্ট না। তার কথা অনুসারে, ভূমি সংশ্লিষ্ট আইন আর সেবা প্রদানের বর্তমান ব্যবস্থার সম্পূর্ন নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রযোজন, যেহেতু বর্তমান ব্যবস্থা অনেকটাই প্রাচীন। জনাব জব্বার জানিয়েছেন যে নতুন, স্বয়ংক্রিয় ভূমি তথ্য ব্যবস্থা সম্মিলিত একটা বিষয় হওয়া উচিত যাতে কেউ এই ডাটাবেস খুঁজলে ভূমি সংক্রান্ত সকল তথ্য একবারে পেতে পারে: মালিকানা, রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন, স্থানান্তর, বিরোধ, মামলা, ভূমি মানচিত্র, প্রদেয় আর বাকি থাকা কর, ভূমি সংক্রান্ত উইল আর অন্যন্য আইনি দলিলপত্র। এছাড়া তিনি মনে করেন এইসব তথ্য যথেষ্ট না। মানুষের কাছে এর প্রবেশাধিকার থাকবে সহজ, ব্যবহারকারির জন্য উপযোগী উপায়ে, কেবলমাত্র ইন্টারনেটে না, টেলিফোনের মাধ্যমেও। তার কথা অনুসারে, যেভাবে একজন গ্রাহক তার বাসা থেকে টেলিফোন বিল জানতে পারে পরষ্পর প্রতিক্রিয়াশীল কণ্ঠ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি দ্বারা, এমনি সহজ হওয়া উচিত ব্যক্তির ভূমি সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া।
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে তথ্য প্রযুক্তির কার্যকরভাবে ব্যবহার নিয়ে অনেক আশা আছে যে এটি এই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আধুনিকতা, ব্যবহার উপযোগিতা, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা আনবে।