ভারত: কাশ্মীর অচল হচ্ছে? নাকি সমঝোতা সম্ভব?

কাশ্মীরে প্রতিবাদ। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী কাশ্মিরিডিব্বারের সৌজন্যে

কাশ্মীরে প্রতিবাদ। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী কাশ্মিরিডিব্বারের সৌজন্যে। সিসি বাই-এনসি-এনডি

সাম্প্রতিককালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর এলাকায় ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের পরে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার জেগে উঠেছে আর ভারতীয় এমপিদের একটা দল পাঠিয়েছে আলোচনার জন্য। ৪০ জনের শক্তিশালী তথ্য অনুসন্ধানকারী দলের নেত্বত্বে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আর এর মধ্যে ভারতীয় সকল রাজনৈতিক দলের সাংসদ আছেন। আজকে (২০শে সেপ্টেম্বর, ২০১০) তারা কাশ্মীরে তাদের দুই দিনব্যাপী কার্যক্রম শুরু করেছেন লাগাতার সান্ধ্য আইনের মধ্যে আর অবশেষে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সাথে আলোচনায় বসতে সক্ষম হয়েছেন, যারা প্রথমে তাদের সাথে দেখা করতে রাজি হচ্ছিলেন না।

ভারতীয় ব্লগ জগত অবশেষে কাশ্মীর বিষয়ে সরব হয়ে উঠেছে। তারা গভীরতার সাথে বিষয়টা চিন্তা করেছে আর শান্তি ও সমঝোতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করছে। ভারতীয় রাজনৈতিক ব্লগ সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো লিপিবদ্ধ করেছে:

কেন্দ্রীয় সরকার (ও) মনে হচ্ছে একেবারেই অক্ষম কার্যকর কিছু করার ব্যাপারে, যেহেতু তারা জানে না কার সাথে আলোচনা করতে হবে, আর তারা (মুখ্য মন্ত্রী) ওমর আব্দুল্লাহকে হঠাৎ বাদ দিতে পারেন না যেহেতু খুব বেশী বিকল্প নেই।

ওয়ার্ডস ফ্রম সলিচিউড ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করেছেন:

প্রধানমন্ত্রী হালকাভাবে একটা বার্তা পাঠিয়েছেন যে কেন্দ্র রাজী আছে রাজ্যে স্বশাসনের ব্যাপারে ‘চিন্তা’ করতে ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো এই ব্যাপারে একমত হন’ খুব ভালো করে জেনে যে সেরকম কিছুই আদতে বাস্তবায়িত হবে না যেহেতু প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এর বিরুদ্ধে রয়েছে।

বিবিসি কাশ্মীরিদের কিছু প্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধ করেছে যারা কাশ্মিরে ‘বেআইনি আর নিষ্ঠুর ভারতীয় শাসন’ সম্পর্কে তাদের ভীতি, চিন্তা আর সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের ক্ষোভও বেশ পরিষ্কার।

তবে, প্রবীন সাংবাদিক এম জে আকবর মূখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহর বর্তমান অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেছেন যখন তিনি ভারতীয় সেনা আর আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (ইএফএসপিএ)এর সমালোচনা মুখর:

কোন পাপের জন্য? বর্তমান সংঘর্ষের সময়ের একটিও মৃত্যু সেনাবাহিনীর গুলিতে ঘটেনি। এইসব গুলি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ আর সিআরপিএফ এর বন্দুক থেকে এসেছে। কেন সবাই এই তথ্যকে নিরবে চাপা দিতে চেয়েছে আর সেনাদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে চেয়েছে?

কেন ভারতীয় সেনারা এক মাত্র লক্ষ্য তাদের জন্য যারা ভারতকে ভাঙ্গতে চায়? উত্তরে কোন জটিলতা নেই। রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী ভারতের ভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে না। অথচ ভারতীয় সেনা পারে। তাই বিছিন্নতাবাদী আর ইসলামাবাদে তাদের মদদকারীদের স্বার্থেই ভারতীয় সেনা আর ভারতীয় রাজ্যের মধ্যে বিরোধ উস্কে দেয়া হয়।

ইতোমধ্যে কাশ্মীরগ্লোবাল সাধারণ কাশ্মীরিদের আবেগের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে:

একটি পাথর ছুঁড়লে একটি বুলেট পাবেন। এমন হওয়ার কথা না। কিন্তু কাশ্মীরে এমনি। ১০০ জনের প্রাণ যাওয়ার পরে, কোন থামা নেই এই গরম ধাতু দ্বারা কাশ্মীরিদের গরম রক্তকে ঠান্ডা করা থেকে। আর কতো বাবাকে তাদের বাচ্চাদের কবর দিতে হবে? আর কতো মাকে পাথরের মতো মুখ করে বাকি জীবন বাঁচতে হবে?

দেশীক্রিটিক্স ব্লগে সোমিক রাহা কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিকে নতুন আলোকে দেখেন:

কাশ্মিরী তরুণ আর তাদের নেতাদের থামাতে, তাদের মুক্ত আবহাওয়ার আর্জির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এবং তাদের চাপ না দিয়ে বিমল বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এই চাপ না দেয়া অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার দিকে যাবে কি না তা পরিষ্কার না, কিন্তু এই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে চাপ স্বাধীনতা লাভের সব সুযোগকে রহিত করবে। ভারতের চাপ প্রদানকে কিভাবে সঠিক বলা যায়? আসলেই কি এটি নিরাপত্তার হুমকিমূলক পরিস্থিতি?

পাজামাস মিডিয়াতে অপর্না পান্ডে সমঝোতা, শান্তি আর একীভূতকরণের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন:

ভারতীয় হিসাবে, আমরা আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্রের ব্যাপারে গর্ব করি। প্রধানমন্ত্রী নেহরু থেকে শুরু করে, আমাদের নেতারা সব সময়ে জোর দিয়েছেন যে কাশ্মীর ভারতের অংশ- আর কাশ্মীরিরা ভারতীয় হতে চান এই কারনেই। আমাদের স্বাধীনতার ৬৪ তম বার্ষিকীতে, খুব বেশী দেরি হওয়ার আগে আমাদের চেষ্টা করা উচিত কাশ্মীরের প্রতি আমাদের নীতিতে এইসব মতবাদ গ্রহন করা।

“ভারতীয় সরকারের সাথে সাথে জনগনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুরু করা উচিত কাশ্মীর সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা ঠিক করার জন্য,” মনে করিয়ে দিয়েছে প্রাগম্যাটিক ইউফোনি

ওয়ার্ডস ফ্রম সলিচিউড আশাবাদী যে সকল দলীয় প্রতিনিধি দলের আর ব্লগারের প্রচেষ্টা এই বার্তা কাশ্মীরিদের কাছে পৌঁছাবে:

আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই যে এই প্রচেষ্টা প্রায় বন্ধ হওয়া একটা দরজা খুলতে সাহায্য করবে আর টিকে থাকা রাজনৈতিক কথোপকথনের পরিবেশ তৈরি করবে রাষ্ট্রের সকল স্তরের সাথে। আমাদের হৃদয়ের ভিতর থেকে আমরা আমাদের সমবেদনা জানাতে চাই সেই সব পরিবারের প্রতি যারা সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের আপনজনদের হারিয়েছেন আর আমাদের কাশ্মীরি ভাই বোনদের প্রতি একাত্মতা জানাচ্ছি। তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তাদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য। [..]

আমরা আপনাদের জানাতে চাই যে আমরা আসলেই চিন্তা করি আপনাদের নিয়ে। আমরা ভারতের রাজনৈতিক শ্রেণীর কাছে আবেদন রাখতে চাই পূর্বে করা সকল ভুলগুলো বিবেচনা করে দেখতে আর সেগুলো শুধরে নিতে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .