প্যালেস্টাইন: সামাজিক মিডিয়া দিয়ে বার্তা পাঠানো

সবাই পাথর ছুঁড়তে পারেন না এই বইটি (শিকড় আর পরিচয়ের খোঁজে থাকা) আরজান এল ফাসেদ নামে একজন ডাচ ফিলিস্তিনি লেখকের যিনি ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদার একজন সহ- প্রতিষ্ঠাতা আর । গত বছর এল ফাসেদ শিরোনামে আসেন ফিলিস্তিনি শরনার্থী শিবিরের এক রাস্তা তার টুইটার অ্যাকাউন্টের নামে করে, আর তিনি একটি অনলাইন প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত আছেন যেখানে লোকে পশ্চিম তীরের দেয়ালে তাদের বার্তা স্প্রে পেইন্টের অনুরোধ করতে পারবেন। গ্লোবাল ভয়েসেস এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে সাহায্যের জন্য সামাজিক মিডিয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন

আরজান এল ফাসেদ
আপনি নিজের বর্ণনা দেন মানবাধিকার প্রচারণা আর সামাজিক মিডিয়ার পরিকল্পনাকারী হিসাবে। আপনি কি মনে করেন প্যালেস্টাইনের পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে সামাজিক মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে?

৯০ এর দশকে ইন্টারনেটের উত্থানের সাথে সাথে, আমি সব সময়ে অনুভব করেছি যে মানুষের কণ্ঠ পৌঁছানোর হাতিয়ার হিসাবে ইন্টারনেট ভূমিকা পালন করবে, বিশেষ করে যারা সেনা ঘেরা এলাকায় যারা থাকে তাদের জন্য। আরো বলতে গেলে, প্রধান ধারার মিডিয়ায় চলতে থাকা বিভিন্ন সংঘাত নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ প্রায় শোনা যায় না। আফগানিস্তান, সোমালিয়া বা প্যালেস্টাইনে, বেশীরভাগ লোক, সাধারণ নারী পুরুষকে প্রায় শোনা হয়না। যাদের শোনা যায় তারা রাজনৈতিক আর কিছু নিজেকে বিশেষজ্ঞ বলা লোক যারা মানুষকে নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠ প্রায় শোনা যায়না। যেমন আপনার আমার মতো মানুষ। সামাজিক মিডিয়া প্যালেস্টাইনের সাধারণ নারী পুরুষের সাথে পশ্চিমের সাধারণ নারী পুরুষের সংযোগ ঘটায়।

এক বছর আগে [পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে] আস্কার শরণার্থী শিবিরের একটি সড়কের নাম আপনার টুইটার অ্যাকাউন্টের নামে রেখে সংবাদে আসেন। আপনি কেন আপনার নামের বদলে টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম ব্যবহার করেছিলেন?

ওই সময়ে মার্কেটিং এর একদল বিশেষজ্ঞ আস্কারে ভ্রমণ করছিলেন আর ক্যাম্পের একটি তরুণদের সেন্টার মেরামত করাতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তারা যখন ক্যাম্পের চারিদিকে হাঁটছিলেন, তারা লক্ষ্য করেন যে ক্যাম্পের একটা বিশেষত্ব হলো যে রাস্তার কোন নাম নেই। পশ্চিমে, আপনি সুপরিচিত হবেন অথবা আর বেঁচে থাকবেন না, যদি কোন সড়কের নাম নিজের নামে করতে চান তো। টুইটার আর ফেসবুকের যুগে মানুষ পরিচিতি চায়। আমার টুইটার অ্যাকাউন্টের নামে রাস্তার নামকরণ করে আমি ক্যাম্পের এই সাধারণ ধারণা জানাতে পারি যেখানে অনেক রাস্তার কোন নাম নেই পশ্চিমের মানুষের কাছে যারা সামাজিক মিডিয়ার বিশাল অগ্রগতি দেখছেন, যারা দৈনিক এইসব নতুন উন্নয়ন দেখেছেন আর যারা শিরোনাম লক্ষ্য করেছেন ‘টুইটার অ্যাকাউন্টের নামে নামকরণ করা প্রথম সড়ক’। সাধারণ নাম যদি দেয়া হতো তাহলে তারা এটি লক্ষ্য করতো না।

এটা কি সত্যি যে এর ফলে আপনার আকাউন্ট নেদারল্যান্ডে খুব জনপ্রিয়?

হ্যাঁ, অবশ্যই আর তাই আমি প্রথম ডাচ টুইটার অ্যাকাউন্ট যা বিশ্বের ১০০০ সব থেকে বেশী প্রচারিত টুইটার অ্যাকাউন্টের তালিকায় এসেছি আর প্রথম টুইটারের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য ব্যবহারকারীর তালিকায়, বারাক ওবামা আর কোল্ডপ্লে এর সাথে।

@arjanelfassed সড়ক আস্কার শরণার্থী শিবিরে

আস্কার শরণার্থী শিবিরে @arjanelfassed সড়ক (ছবি আরজান এর সৌজন্যে)

আর একটা প্রকল্পের সাথে আপনি সংযুক্ত তা হলো সেন্ড আ মেসেজ, যাতে মানুষ পশ্চিম তীরের দেয়ালে বার্তা স্প্রে পেইন্ট করার জন্য অনুরোধ করেন। এই প্রকল্প কি করে তৈরি হলো?

২০০৪ সালের বসন্তে আমার ভালো এক বন্ধু, জাস্টিন ভ্যান ওয়েল গাজা আর ফিলিস্তিনের অন্যান্য অংশে যান। তিনি বিস্মিত হন যা তিনি জানতেন না বা জানতে চাননি এগুলো সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে। ডাচ উন্নয়ন সংস্থা আর ডাচ বিজ্ঞাপন সংস্থার একজন বন্ধুর সাহায্যে তিনি তরুণ ফিলিস্তিনিদের জন্যে তিনটা কর্মশালার আয়োজন করেন। লক্ষ্য ছিল কার্যকর, নতুন যোগাযোগের ধারণা তৈরি, যা কাজে লাগাতে বেশী খরচ পড়বে না। প্রথম প্রকল্প ‘সেন্ড আ মেসেজ’ সম্ভব করে তুলছে দেয়ালে নিজস্ব, স্প্রে পেইন্ট একটা বার্তা দেয়ালে রাখার। এ পর্যন্ত ১৪০০ এর বেশী বার্তা দেয়া হয়েছে।

Send A Message

স্প্রে পেইন্ট করা হচ্ছে একটি বার্তা (ছবি সেন্ড আ মেসেজ এর সৌজন্যে)

এ পর্যন্ত কি ধরনের সারা পেয়েছেন, আর কিছু বার্তার উদাহরণ কি দিতে পারেন?

এই প্রকল্পকে টাইমস ম্যাগাজিন ‘সব থেকে প্রভাবশালী গ্রাফিটি চিত্রকর্ম’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রধান ধারার মিডিয়ার মাধ্যমে, এই প্রকল্প দেয়ালের ওই দিকে আটকে পড়া ফিলিস্তিনির প্রতি বার্তা, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৫০,০০০,০০০ জনের কাছে পৌঁছেছে। একটি গল্প আমরা সব সময়ে মনে রাখব: নেদারল্যান্ডের ক্যাস্পার ইন্দোনেশিয়াতে তার মধুচন্দ্রিমায় আছেন। তিনি তার স্ত্রীর পাশে বসেছেন, যাকে দেয়ালে একটা বার্তা লিখে তিনি জানিয়েছেন, আর তারা একটি আর্ন্তজাতিক সংবাদ চ্যানেল দেখছেন। এই চ্যানেল সেন্ড আ মেসেজ এর উপরে কিছু দেখাচ্ছে আর ক্যামেরা ক্যাস্পারের দেয়ালে লেখা বিবাহ প্রস্তাবের উপরে এসে থামে।

Send A Message

দেয়ালে একটি বার্তা (ছবি সেন্ড আ মেসেজ এর সৌজন্যে)

আপনার অন্য কোন প্রচেষ্টা কি আসছে?

হ্যাঁ, ডাচ- ইজরায়েলি চলচ্চিত্র নির্মাতা বেনি ব্রুনারের সাথে, ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি বই নিয়ে একটি ক্রসমিডিয়া প্রকল্প যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ১৯৪৮ এর যুদ্ধের সময়ে লুটে নেয়া হয়। লুট হওয়া বই এর গল্প এই প্রকল্পের কেন্দ্রে কেবল নেই, যা ঘটেছে তা নিয়ে একটা তথ্য চিত্র নির্মিত হবে, কিন্তু এটা অনলাইনে আরো বড় প্রচেষ্টার শুরু করার ক্ষেত্র: আমরা ১৯৪৮ সালের সংস্কৃতিকে ধ্বংসের সুযোগ আর গভীরতা জানাতে চাই। আসলে আমরা চাচ্ছি এইসব লুট হওয়া ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ভার্চুয়ালি আবার ফিরিয়ে আনতে।

বিশাল বই লুট এখানে টুইটারে দেখা যাবে। পশ্চিম তীরের দেয়ালে পহেলা অক্টোবর পর্যন্ত আপনি বার্তা পাঠাতে পারবেন, বিস্তারিত এখানে দেখুন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .