- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কানাডা: আদিবাসী নারীদের অন্তর্ধান

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, কানাডা, আদিবাসী, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, রাজনীতি, লিঙ্গ ও নারী
[1]

এবছর ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখে ১৯তম বার্ষিক হারিয়ে যাওয়া নারীদের জন্যে মিছিল

প্রতি বছর ৩০শে আগস্ট গায়েব হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য আর্ন্তজাতিক দিবস [2] হিসাবে পালিত হয়। এ বছর কানাডা থেকে সংবাদ [3] এসেছে যে প্রায় ৬০০ জন উপজাতি নারী হারিয়ে গেছেন [4] গত তিন দশকে যা কানাডার ব্লগ জগতেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন যে কানাডার কর্তৃপক্ষ এদের খোঁজার ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে বেশীরভাগ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এমনও সন্দেহ করা হচ্ছে যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের [5] শিকার কেউ কেউ হতে পারেন।

বর্ণবাদী একটি সিস্টেম?

আমেরিকান ব্লগার কেরা লোভেল অবাক হয়েছেন [6] কানাডার উপজাতি নারীর গায়েব হওয়ার এই উচ্চ হার সম্পর্কে জানতে পেরে:

সবাই কানাডাকে ভালোবাসে, তাই নাকি? কানাডা সম্পর্কে আমেরিকার কেউ বেশী কিছু বলতে পারেন না এটা ছাড়া যে: এখানে দুটি অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিউবেকে ফ্রেঞ্চ বলে, আর এই দেশ তাদের বরফের সুরা, আইস হকি আর সিরাপের জন্য পরিচিত। আর মাইকেল মুর এখান থেকে এসেছেন।

কিন্তু তাদের অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে কতটুকু জানে? নিশ্চিত থাকেন যে কানাডায় জাতিগত, শ্রেণীগত, লিঙ্গীয় ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আপনি কখনো কানাডার কথা শোনেন না বা শুনতে চান না, তাই ওখানে সবকিছুই দারুণ হওয়ার কথা। ঠিক?

আমি সম্প্রতি রেসিয়ালিসাস [7] এ পোস্ট করা র‍্যাবল সংবাদ প্রতিবেদন [8] থেকে জানতে পেরেছি যে গত ২৫ বছর ধরে কানাডাতে হারিয়ে যাওয়া বা গায়েব হয়ে যাওয়া উপজাতি নারীর সংখ্যা প্রায় ৬০০ জনে দাড়িয়েছে, আর এর অর্ধেক অন্তর্ধান হয়েছে ২০০০ সালের পর থেকে। এইসব হত্যাকান্ডের রহস্যের অর্ধেকের বেশী এখনো সমাধান হয়নি। কি ভয়ঙ্কর!

আদিবাসী আমেরিকান পত্রিকা ইন্ডিয়ান কান্ট্রি টুডে চার পর্বের একটি সিরিজ প্রকাশ করছে গায়েব হয়ে যাওয়া নারীদের ব্যাপারে। গত ২৫শে আগস্ট প্রকাশিত ৪র্থ পর্বে কানাডার উপজাতিদের প্রতি সরকারের নীতির কথা আলোচনা করা হয়েছে [9] বিশেষ করে তাদের গায়েব হওয়ার ব্যাপারে সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে। পোস্টের মন্তব্যের স্থানে এন ওয়াই ইন্ডিয়ান গার্ল লিখেছেন:

সিস্টেমকে দোষ দিতে হবে। কানাডা, আমেরিকা ইত্যাদি দেশের উপজাতিদের মনে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই সিস্টেমের ধারণা মানসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে কোন ব্যক্তিগত মূল্য নেই, জোর করে সমাজে মেশার চেষ্টা, জোর করে বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়া ইত্যাদি অনুভব হয় তাদের মনে। ঠিক যেভাবে দাসদের মধ্যে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হতো, একই জিনিষ সকল আদিবাসীর সাথে করা হয়েছিল। যখন আপনার মানুষকে তাদের ভূমির জন্য বিদেশী কেউ হত্যা করে আর তার পরে সেই জাতির চিন্তা আর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে তাদের বাধ্য করা হয়, এটি আপনাকে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে ফেলে আর ফলে অত্যাচারীর সুযোগ হয় আপনাকে বিজিত করার আর ফলে আপনাকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়। এইসব লোকদের কেউ জিজ্ঞেস করে নি যে তাদের সাথে কি হচ্ছে। আর একবার যখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা ভাঙ্গা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাদের উপরে দোষ দেয়া উচিৎ নয় যারা চাননি তাদের সাথে এমন হোক, তাদের দোষ দেন যারা তাদের সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়ে এমন জীবন ধারণে বাধ্য করিয়েছেন যা তাদের না। আমার পূর্বপুরুষেরা দাস আর আদিবাসী আমেরিকান, তাই আমি দুই দিকই দেখি। গল্পটির জন্য ধন্যবাদ।

মিডিয়ার ভূমিকা

ব্লগার প্যাট্রিসিয়া সিটিজেন শিফটের জন্য লেখেন। তিনি নারীদের প্রতি অত্যাচার নিয়ে মন্ট্রিয়ালের এক ওয়ার্কশপ নিয়ে রিপোর্ট করেছেন [10], আর তাদের গায়েব হওয়ার ব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন:

কানাডাতে হারিয়ে যাওয়া নারীর প্রায় ৫২০টি কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। রবার্টসন বলেছেন যে ভয়ের ব্যাপার হলো যে মিডিয়া আর পুলিশ এই ব্যাপারটি স্বীকার করতে চাননা। “আদিবাসী পরিবার জানেন না কার কাছে যেতে হবে।” রবার্টসন ২০০৬ সালে কুইবেক থেকে গায়েব হওয়া ৩ জন উপজাতীয় তরুণীর ভয়ঙ্কর উদাহরণ দিয়েছেন। একই সময়ে চিড়িয়াখানা থেকে সিংহের একটি বাচ্চা হারিয়ে যায়। এটার অনেক প্রচার হয় কিন্তু নারীদের কথাটা না। পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে চায়নি কারণ রিজার্ভ ফেডারেল শাসনের মধ্যে পড়ে আর এই তরুণীরা রিজার্ভে বাস করছিলেন। এই গল্পের দু:খজনক সমাপ্তি ঘটে যখন খানাওয়াকের টিফানি মরিসনের মৃতদেহ পাওয়া যায় এই গ্রীষ্মে মার্সিয়ের সেতুর কাছে।

ত্রিশা বাপ্তি শি লাভস ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছেন আর জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন [11] কানাডার উপজাতি নারীদের কষ্টের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়ার ব্যপারে:

গত সপ্তাহে আমার ফেসবুক ফিড দুটি জিনিষের লাগাতার স্ট্রীমে পরিণত হয়েছে: একজন সাদা, ৩০ বছর বয়সী, লম্বা (খুব লম্বা আসলে) লোকের যার জুতার সাইজ ১৬। টাইলার নামে এই ব্যক্তি পাহাড়ে চড়ার জন্যে বের হয়ে যায় দুই সপ্তাহ আগে তারপর থেকে তার ব্যাপারে কিছু শোনা যায়নি [12]। টাইলার খুব ভাল মানুষ। আমাদের অনেকের বন্ধু তিনি, তিনি একজন অভিজ্ঞ হাইকার আর আমি আশা করি তাকে দ্রুত পাওয়া যাবে…

…সত্যি বলতে কানাডা ব্যাপী শত শত হারিয়ে যাওয়া মানুষ আছে-বেশীরভাগ উপজাতীয় নারী। এই দুই গল্পতে পার্থক্য হলো যে টাইলারের জন্য অনেক খরচ করা হচ্ছে। আসলে টাইলারের জন্য অর্থ সংগ্রহের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে, কিন্তু আমার বোনদের খোঁজার জন্য কিছু করা হচ্ছে না। উপজাতি নারী একশন নেটওয়ার্কের (আওয়ান) সদস্য লরা হল্যান্ডের কথা অনুসারে: “আমার বোন, আমার নিখুঁত বোনদের নিখুঁত শিকার বা সাক্ষী হিসাবে ধরা হয়নি ভ্যাঙ্কুভারের আইনজীবী বা পুলিশের জন্য।” আর এখানেই সমস্যার মূল নিহিত। বোঝেন যে এটা কঠিন ব্যাপার। বোঝেন যে আমি চাই যাতে টাইলারকে পাওয়া যায়। আমি প্রার্থনা করি যাতে সে নিরাপদ থাকে। তাকে খোঁজার জন্য আমি চাই হেলিকপ্টার, ইনফ্রারেড ক্যামেরা, উদ্ধারকারী দল সব যেন ব্যবহার করা হয়।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে সমাজ একই কাজ কেন করছে না হারিয়ে যাওয়া নারীদের জন্য? কেন ‘অস্থায়ী জীবনধারণ’ ‘আসক্তির ব্যাপার’ ‘গৃহহীন’ আর যৌনকর্মী নারীর’ কথা বলে তাদের আমরা ত্যাগ করি? কেন সমাজে তাদের এক ঘরে করে রাখাটাকেই পুঁজি করে আমরা সব কিছু দিয়ে তাদের খুঁজি না। ঈশ্বরের ইচ্ছা দিয়ে? তিনি কি দলছুট একটা ভেঁড়াকে খুজে বের করেননি? যিশুর কথা, ভালোবাসা কি এর মধ্যে পড়ে না?

ছবি তুলেছেন নোফিউচারফেইস [13] এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স এট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক লাইসেন্সের সৌজন্যে [14]