মালয়েশিয়া: স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় বর্ণবাদী হামলা

২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক এক মালয়েশিয়া ( ১মালয়েশিয়া) নামক এক ঐক্যের ধারণা নিয়ে হাজির হন, প্রচার মাধ্যম যে বিষয়টিকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে।

ব্লগার আউটসাইদ দি বক্স একটি সংবাদের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন, যা কিনা এক মালয়েশিয়া ধারণাটিকে ব্যাখ্যা করে:

কুয়ালালামপুর, এপ্রিল ১৫ (বেরনামা)- মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি নাজিব তুন রাজাক বলেন মালয়েশিয়াকে অবশ্য তাদের জাতিগত ক্ষুদ্র মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন মালয়েশিয়াবাসীরা অবশ্যই “এক মালয়েশিয়া” নামক ধারণার মধ্য দিয়ে এক হয়ে দাঁড়াবে, চিন্তা এবং কাজ করবে।

আসুন আমরা জাতিগত দর্পন ভেঙ্গে বের হয়ে আসি যেমনটা আমরা অনেক বছর ধরে করে আসছি। এছাড়া এটা ‘এক মালয়েশিয়ার’ প্রকৃত অর্থ।

আমরা অবশ্যই একে অন্যকে শ্রদ্ধা করব, সহ্য করব এবং একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব এবং বিভিন্ন জাতী গোষ্ঠীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করব। বুধবার তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন।

তবে এই ধারণা চালু হবার পর, অনেকে এর সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে যারা বিশ্বাস করেন যে বর্ণবাদী উত্তেজনা এখনো দেশটিতে টিকে রয়েছে। ব্লগার কেলভিন চিউ আরেকজন ব্লগারের এক ঘটনা জানাচ্ছে:

আমি এক মালয়েশিয়া নামক ধারণার কথা শুনেছিলাম, কিন্তু আমি মনে করি আমাদের এক হতে বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা ইতোমধ্যে এতটি পথ পেরিয়ে এসেছি যে আমাদের হৃদয়ে এবং আত্মায় বিষয়টি গেঁথে গেছে যে আমরা এক।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখনো এখানে আপনি জাতিগত বৈষম্য এবং মেরুকরণ দেখতে পাবেন। এখনো এই স্বাজাত্য-অভিমানী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রয়েছে যে মালয়রা এখানকার কর্তৃত্বশালী গোষ্ঠী এবং তাদের অধিকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আর যারা মালয়ী নয়, তারা এদেশে বহিরাগত নাগরিক।

তবে তারপরেও, ৩০শে আগস্ট ২০১০ তারিখে, ঠিক মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা দিবসের সন্ধায়, এই দৃষ্টিভঙ্গিটি আরো শক্তিশালী হয়, যখন একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সে ঘটনায় বেশ কয়েকজন কিশোরের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী হামালার অভিযোগ তৈরি হয় :

যখন আমরা তাদের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম, হঠাৎ তাদের একজন ঘুরে দাঁড়াল এবং লাফিয়ে উঠে আমার বন্ধুর গায়ে লাথি মারল (অসুস্থ মানসিকতা)। সে এই ঘটনায় যে মজা পেল, তাই দেখে তার অন্য বন্ধুরা আমার সাথে একই আচরণ করতে শুরু করল। এটা এমন হঠাৎ করে শুরু হল যে সে মুহূর্তে আমি একটা কথাই ভাবলাম, “আমরা আদতে তাদের কি এমন ক্ষতি করলাম”?

আরো কিছু উড়ন্ত লাথি এবং আঘাত শরীরে পড়ার আগে আমরা উভয়ে কিছুক্ষণের জন্য হাঁটু গেড়ে বসলাম। এমনকি যদিও আমাদের উভয়ের কাঁধে ট্রাইপড বাঁধা ছিল, তারপরেও আমরা এই আঘাতে এতটাই বিস্মিত ছিলাম যে এই ঘটনায় কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারিনি। ঘটনাক্রমে একটা ঘুষি ঠিক আমার কপালে এসে লাগল এবং ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করল। এটি দেখে তারা থামল এবং হাঁটতে শুরু করল। হেঁটে হেঁটেই তারা চলে গেল। গোল্লায় যাক। তারা এমনকি দৌড়ে পালিয়ে যাবার মত ভয় পায়নি, বরঞ্চ হেঁটে চলে গেল। যেন তার খেলায় জয় করেছে বা এ রকম কিছু। আমি সর্বশেষ যে বিষয়টি মনে করতে পারি তা হচ্ছে তাদের একজনের বলা একটি বাক্য “ মালয়ে তোমার নিজের ঘরে ফিরে যাও”।

এদিকে মনে হচ্ছে যে এক মালয়েশিয়া নামক ধারণাটি খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারছে না। ব্লগার কোহ কেই পেঙ এই বিষয়টির গুরুত্ব পরিমাপ করছে:

এক মালয়েশিয়ার ধারণা সত্যিকার অর্থে স্থাপনের ক্ষেত্রে যে জিনিসটির অভার রয়েছে তা হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যেমন জাতী বা ধর্ম উপেক্ষা করে সকল মালয়েশীয়দের প্রতি ঐক্য, সহ-অবস্থান, সততা, সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার এবং যৌথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ।

এই ধারণাকে সফল করার জন্য , জাতীয় সরকার (বিএন-বারিসান নাসিওনাল ) সরকারকে অবশ্য কোন জাতী শ্রেষ্ঠ এই খেলা খেলতে হবে না। যদি কোন বিশেষ জাতি অনেক বেশি শ্রেষ্ঠ বা অন্যদের চেয়ে সুবিধা পায়, তা হলে এক মালয়েশিয়ার আত্মাধীন এক ভগ্ন ধারণায় পরিণত হয়ে থাকবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .