- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত: রক্ষাবন্ধন উদযাপন

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, নাগরিক মাধ্যম, শিল্প ও সংস্কৃতি

গত ২৪শে আগষ্ট ২০১০ ভারত রক্ষাবন্ধন [1] উদযাপন করে যা ভাইবোনের মধ্যে সম্প্রীতি পালনের একটি উৎসব।

মুম্বাইকার.কম [2] ব্লগের লেখক নেহা কাপুর গ্রোভার এই আনন্দঘন ও মঙ্গলজনক আয়োজনের উপাত্ত একত্রিত করেছেন। তিনি লিখেছেন: [3]

রক্ষা বন্ধন উৎসবে ভাইবোনের মধ্যকার স্বর্গীয় সম্পর্ক উদযাপন করা হয়। রাখী নামেও পরিচিত এই রক্ষা বন্ধন প্রতি বছর শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিন পালন করা হয়। বোনেরা তাদের ভাইদের হাতের কব্জিতে সুন্দর সুন্দর পবিত্র সূতা বেঁধে দেয় যা ‘নিরাপত্তা ও রক্ষা বন্ধন’ চিহ্ন হিসেবে প্রকাশিত। তারা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনা করে এবং ভাইয়েরা বোনদের রক্ষা করা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ঐ দিন পরিবারের সকলে একত্রে মিলিত হয়, বিশেষ খাবার দাবারের ও পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা হয় এবং সকলে মিলে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠে।

[4]

রাখী বাঁধা হচ্ছে

ফ্লিকার [5] হতে নেয়া চিত্র, তুলেছেন যুগেশ কুমার জয়সাল [4], সিসি বাই এনসি-এসএ [6] লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত।

টুইটারে ঐ অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত বোনেরা কৌতুহল উদ্দীপক অনুভূতি প্রকাশ করেছে:

পারিশনা: [7]- আমার সব ভাইদের হাতে রাখী [8] বাঁধা ও তাদের সাথে সময় কাটানোর বিষয়টি খুবই মধুর।
আনিকা ফরএভার: [9]- খুবই চমকপ্রদ একটা রাখী ছিল……..আমার ভাইকে ভালবাসি!!!!

রাখী বাঁধার এই কৃষ্টি কেবল রক্তের সম্পর্কের ভাই বা পুরুষ মামাতো বা চাচাতো ভাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অমৃতা পুরী এই বিষয়ে বলেন: [10]

এই বন্ধন রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যেই আবদ্ধ নয়- যে কোন মেয়ে রাখী বাঁধার জন্য যে কোন ছেলেকে তার ভাই হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এই কৃষ্টি কেবলমাত্র ভালবাসার বন্ধনকেই সুদৃঢ় করে না, বরং পরিবারের সীমানাও বর্ধিত করে।

কোন নিকট বন্ধু বা প্রতিবেশীর কব্জিতে রাখী বাঁধা হলে তা একটা সুমধুর সামাজিক জীবনেরই প্রতিফলন ঘটায়। এটা কোন মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি তার নিজ পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে পুরো পৃথিবী (বসুধা) কে একটি একক পৃথিবী হিসেবে ভাবার মত প্রসারিত করে তোলে।

রাখী বাঁধার জন্য যেহেতু যেকোন পুরুষকে ভ্রাতা হিসেবে ‘গ্রহণ’ [1] করা যায়, সেহেতু মেয়েরা যার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়তে ইচ্ছুক নয় তাকে তা জানিয়ে দেয়ার জন্য এই আচার অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করে থাকে। উৎসবের এই দিকটি এবং যুবকদের হৃদয়ে যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে অনেক টুইটার বার্তায় [11] জানা যাচ্ছে:

ইমেজেস [12]- ব্যস্ত একটা দিন ছিল…এবং বেঁচে গেছি.. কোন মেয়ে আমাকে রাখী বাঁধেনি।
আআরু৪ [13]-@ইমেজেস [14]- হাহাহা…কোন একটা খেলা দেখতে ব্যস্ত হতাম বিদ্যালয়ের রাখী হতে পলায়নের জন্য।
ভরত বানসাল [15]- বিদ্যালয়ের দিনের কথা মনে পড়ে যখন রাখীর একদিন আগে পরে বিদ্যালয়ে যেতে শালার ভয়ই পেতাম। পাগল ছিলাম।
স্ট্রেন্জটাইমস৮৭ [16]-@নুয়েন্স [17]…আশা করি যে মেয়েকে তুমি পছন্দ কর সে তোমাকে ভাইয়া বলবে না।
কার্তিক সিমেন্স [18]- …ধন্যবাদ ঈশ্বর, বিগত ২ বছরে আইআইআইটিবি তে যারা আমাকে ভাইয়া বলে ডাকে তারা ছাড়া অন্য কেউ রাখী বাঁধেনি।
লুক৬৭৪ [19]- গতকাল ছিল রক্ষাবন্ধন দিবস…….!! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমার বোন ছাড়া কেউ আমার হাতে রাখী বাঁধেনি।
জিঅনটিউই [20]- আমি ঠিক #রক্ষাবন্ধন [21] পছন্দ করি না। … তুমি কখনও জান না কোন মেয়ে কখন এসে #রাখী [22] বাঁধবে…যদি তাকে পছন্দ কর তবে কি হবে??

যে সকল বোনদের ভাই (ভাইরা) অনেক দূরে বসবাস করে তারা এই অনুষ্ঠান উদযাপন না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, এভনি টুইট করেছে:

এভনি [23]- ভিন্ন ভিন্ন দেশে বসবাস খুব একটা সুবিধার নয়…আমার ভাইকে মিস করি…১০ বছর হয়ে গেছে এই দিনে তার হাতে রাখী বাঁধতে পারিনা।

[24]

চিত্র ফ্লিকার [5] হতে, ব্যবহারকারী ভিসি-ওয়াসি [24], সিসি বাই এনসি-এসএ [25] লাইসেন্স এর ‌আওতায় ব্যবহৃত।

যা হোক, অন্যরা দেখিয়েছে সামাজিক মাধ্যম এর সুবিধার কারনে দুরে বসবাসকারী ভ্রাতার জন্য অনুষ্ঠানের সংস্পর্শে আসাটা আজ আর কোন সমস্যাই নয়। হয়তো তুমি সশরীরে তোমার ভাইয়ের কব্জিতে রাখী বাঁধতে সক্ষম নও কিন্তু ই-কার্ড বা ভার্চুয়াল রাখী পাঠিয়েও কোনরকমে এই অপূর্ণতা পূরণ করা অবশ্যই সম্ভব। ওয়াট ব্লগ.কম [26] এর আনিস সদানন্দ এই ধরনের কিছু সম্ভাব্যতার কথা উল্লেখ করেছে:

এখন, ক্যাডবিউরি ভার্চুয়াল রাখী [27] নামে ফেসবুকে একটি নুতন অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে যা সহোদর ভাই বোনদের একে অপরের কাছে রাখী ও উপহার পাঠাতে দেয়। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কেবল মাত্র ভার্চুয়াল রাখিই নয় ভার্চুয়াল উপহারও পাঠাতে পারবে যার মধ্যে ক্যাডবিউরির চকলেট বক্সও রয়েছে…অন্যান্য আরও ওয়েবসাইট রয়েছে যা তোমাকে তোমার ভালবাসার মানুষের কাছে শুভেচ্ছা পাঠানোর সুযোগ করে দেয় যেমন রাখীগ্রিটিংস.কম [28] এবং ১২৩গ্রিটিংস.কম [29]। এমনকি ১২৩গ্রিটিংস তোমাকে ইন্টারঅ্যাকটিভ রক্ষাবন্ধন কার্ড [30] ও পাঠানোর সুযোগ দেয়।

অন্যান্য নেটব্যবহারকারীরাও সামজিক মাধ্যমগুলো তাদের যেভাবে প্রথাগত রীতি তে অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেয় সেভাবেও টুইট করে থাকে।

দ্যা হিউমেরাস [31]- সেটা অনেক ভাল- আমেরিকাতে থাকা কাজিন আমাকে রাখী কার্ড পাঠিয়েছে এবং স্কাইপিতে শুভ কামনা জানানোর ইচ্ছা পোষন করেছে।
নেইলএনমুকেশ [32] আমার বোনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাখী বন্ধন হয়েছে।
মাধু টুইমি [33]-@সামানরোকার [34] আমি কাউকে সত্যিকারের রাখী বেঁধে দেইনি : ((((( কিন্তু অনেককেই কার্ড এবং ভার্চুয়াল রাখী পাঠিয়েছি))))))

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দৃঢ়চেতা লেখক দেখিয়েছেন যে একজন বড় বোন হিসেবে সে তার ছোট ভাইবোনদের জন্য দাঁড়ানোর গুরু দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছিল এবং সে কারনে সে রাখীর অধিকার অর্জন করেছিল। সে লিখেছেঃ [35]

দুই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম বড়…চাচাত ও মামাত সকল ভাইবোনের মধ্যে যেহেতু আমি ছিলাম বড় তাই আমি মনে করেছিলাম ছোট কাজিনদের জন্য দাঁড়ানো এবং তাদের জীবন যুদ্ধে সামিল হওয়া আমার দায়িত্ব ছিল। তাই তারা যদি বিদ্যালয়ে কোন সমস্যায় পড়ত, আমি আনন্দের সাথে সমাধান খুঁজে দিতাম। যদি কোন নিচ মনের মেয়ে আমার বোনদের কোন সমস্যা সৃষ্টি করত, আমি সোজা সেই মেয়েদের কাছে যেতাম এবং তাদের বুঝিয়ে সমাধান করতাম। এবং তারপর , আমি ভাবতাম, আমি বলতে গেলে ‘রক্ষা’ এরই ব্যবস্থা করলাম, তাহলে কেন আমার কাজিনরা আমাকে রাখী বাঁধবে না? কেন কেবল ভাইরাই একা এই সম্মানের অধিকারী হবে? আমার মা ও এই তত্ত্ব গ্রহণ করল। সেই দিন থেকে, আমি এবং আমার বোনেরা একে অপরকে রাখী বাঁধি।

তাহলে কি রাখী বন্ধনের ধারনা সময়ের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে? আজকের দিনকালের ও যুগের সাথে কি এটা সঙ্গতি পূর্ণ? উভয় দিকের বিবেচনায় তা অবশ্যই , এমনই অনুভব করেন দৃঢ়চেতা এ লেখক এবং সে আরও ব্যক্ত করছে: [35]

…এখন, রাখীর মানেই হলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা। এখন এ উৎসবের মানে হলো ছোট ভাইবোনদের কে লাই দেয়া। এবং প্রতিশ্রুতিও পরিবর্তন হয়েছে। আমার বোন একজন স্বাধীন, বুদ্ধিমতি নারী যে নিজে সব কিছু নিয়ে অন্য দেশে, অন্য কৃষ্টির মাঝে বসবাস করে। তার আমার নিকট রক্ষার প্রত্যাশা নেই। কিন্তু আমি তাকে সে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। যখন তার অনেক কথা বলার প্রয়োজন হবে, আমি সেখানে থাকব। যখন তার রাগের বহি:প্রকাশ ঘটবে , আমি সেখানে থাকব। যখন তার অনেক খরচের দরকার পড়বে, আমি তাকে আমার ক্রেডিট কার্ড দেবো। যদি তার উপদেশের দরকার হয়, আমি তার জন্য যতদূর সম্ভব করব এবং তাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেব। যদি তার আরামের প্রয়োজন হয়, আমি তার জন্য নারিকেল কেক তৈরী করব। যদি তার একটু আড়মোড়ার প্রয়োজন হয়, আমি তার পশ্চাতে লাথি দিয়ে দেবো। যদি তার উৎসাহের প্রয়োজন হয়, আমি সেই হাত হব যা তাকে সামনে ঠেলে দেবে। এবং এমন কোন দিন যখন তার হাসির কোন খোরাক থাকবে না, আমি তার জন্য সেই মজার বড় বোন হব এবং আমি তার গালে টোল দেখার জন্য সব কিছুই করব।

রাখী/রক্ষাবন্ধন এর প্রতিশ্রুতি দীর্ঘজীবী হোক। এই বন্ধন যেন কখনও না ভাঙ্গে।