বিশ্ব: ছবির মাধ্যমে শান্তি প্রসার

সম্প্রতি, একদল তরুণ উদ্যোক্তা এবং আলোকচিত্রশিল্পী ছবির মাধ্যমে মানবতা, সুনাম এবং ইতিবাচকতা বিস্তারের পরিকল্পনা করেছেন। গত ১৬ই আগষ্ট তাদের প্রকল্প, ভাষান্তরিত ‘ইন্টারন্যাশনাল গিল্ড অফ ভিসুয়াল পিস মেকারস’ সক্রিয় হল অনলাইন মাধ্যমে। তাদের নতুন প্রকাশিত ওয়েবসাইট অনুসারে, সংক্ষেপে আইজিভিপি হল একটি সংগঠন যারা আপাতদৃষ্টিতে একান্তভাবে নিয়োজিত ছবির মাধ্যমে “সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতির সৌন্দর্য এবং মর্যাদা প্রদর্শন করে ব্যবহার জীর্ণ চিন্তাধারা ভেঙে ফেলতে”। বিশ্বের পৃথক অথচ সমতুল্য সংস্কৃতির জীবনের কাহিনী বর্ণনা করে এমন ছবি, ছবির গ্যালারিছবিতে গল্প প্রকাশ করতে আইজিভিপি সদস্যদের উৎসাহিত করা হয়।

তাদের আগষ্ট ২০১০-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী:

যখন দূরদর্শন, ইউটিউব এবং সংবাদমাধ্যম গুলি হিংসা ও ঘৃণার ছবিতে প্লাবিত, তখন একদল প্রখ্যাত মানবহিতৈষী এবং সাংস্কৃতিক চিত্রশিল্পী তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইন্টারন্যাশনাল গিল্ড অফ ভিসুয়াল পিসমেকারস (আইজিভিপি)-র মাধ্যমে সৌহার্দ্য আনতে সচেষ্ট […]

আইজিভিপি-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি, মারিও মাত্তেই, বর্তমানে তুরস্কে বসবাসকারী একজন স্বাধীন চিত্রশিল্পী, সদয় চিত্তে সম্মত হওয়া ছোট্ট সাক্ষাৎকারে আইজিভিপি-র নির্যাস সম্পর্কে বিশদে জানালেন:

গ্লোবালভয়েসেস এর পক্ষ থেকে ডানিকা রাদিসিচ: ছবির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোন যায়গায় যে মানুষই, তা দেখিয়ে পূর্বসংস্কার ভেঙে ফেলা, যেকোন পরিস্থিতিতেই এটি একটি সহজ অথচ চমৎকার ধারণা। কোথা থেকে এই পরিকল্পনা এলো এবং কিভাবে এটি বিকশিত হল?

মারিও মাত্তেই্: প্রথমত, ধন্যবাদ জানাই ডানিকা, এই সাক্ষাতকারের সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং তা প্রকাশ করার এই অসাধারণ মঞ্চ ব্যবহার করার জন্য।

ইন্টারন্যাশনাল গিল্ড অফ ভিসুয়াল পিসমেকারস (আইজিভিপি) এভাবে শুরু হয়: আমার বন্ধু এবং আইজিভিপি-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা, জিম মুলিন্স, ৯/১১-র কয়েক বছর পর উপলব্ধি করেন যে শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখার ফলে তিনি প্রায় মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছেন। অবশ্য তিনি কিছু শব্দ পড়েছেন তা স্বীকার করেন। ছবিগুলো ছিল ‘প্রমাণ'। ঐক্ষিক শান্তি স্থাপনের পরিকল্পনার বীজ হিসাবে সর্বদা গণ্য করা হবে তাঁর এই বিনম্র উপলব্ধিকেই যে, এটি একদমই ভালো নয়! প্রমাণ হল দুটি ইমারতে উড়োজাহাজ ধাক্কা মেরেছে। বাকীটা জটিল এবং দুরূহ, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার আগে গবেষণা এবং সুবিবেচনা প্রয়োজন।

অ্যারিজোনায় আমাদের সকলকে জিম এই গল্পটি শুনিয়েছিলেন এবং ঐক্ষিক শান্তি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইমেইল এর মাধ্যমে জিম, আমি, ম্যাট ব্র্যান্ডন, নিকোল গিবসন, ডেভিড দুশেমিন, সহ-প্রতিষ্ঠাতা লোগান ম্যাকাডামস এবং জন মাচাডো এবং আরো অনেকের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। আমরা দৃশ্যের মাধ্যমে সৌহার্দ্য প্রসারের ভিত্তি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করি, কিভাবে বার্তা বিনিময় করা হবে এবং প্রসার করা হবে এবং আমাদের ‘ক্রস-প্রমোশনাল ওয়েবসাইট’ কেমন দেখতে হবে ইত্যাদি আলোচনা করি। আমরা আমাদের আপ্তবাক্য অনুসরণ করলাম: “..বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও মর্যাদা প্রদর্শন করে শান্তিস্থাপন এবং পূর্বসংস্কার ভেঙে ফেলায় একান্তভাবে নিয়োজিত।

জুলাই ২০০৯ থেকে আগষ্ট ২০১০ অবধি আমরা একসাথে বসে পরিকল্পনা ও নকশা তৈরী করেছি, সঙ্ঘের বাকী সদস্যদের নিয়োগ করেছি এবং আমাদের পরিকল্পনা, ব্যবসা, আন্দোলন এবং ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। জিম পিস ক্যাটালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল আরম্ভ করলেন। সঙ্ঘের পরিবর্তে আমরা আজকের পরিস্থিতিতে আসতে পারতাম না, কারণ মডেল ও সমর্থকরা তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছেন।

জিভি: ইতিহাসের সর্বাংশে ছবির প্রভাব পরিষ্কার, ম্যাগনাম-এর চে এবং হেমিংওয়ে নামক ছবিগুলি থেকে শুরু করে বসনিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, গুয়ান্তানামো উপসাগর, চীন-এর যুদ্ধ এবং এমনকি ভিয়েতনাম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর ছবি তারই প্রমাণ। মানুষ সর্বদা নেতিবাচক ছবি লক্ষ্য করে এবং মনে রাখে কেন? কিভাবে আমরা ইতিবাচক ছবির মাধ্যমে অধিকতর প্রভাব ফেলতে সাহায্য করব?

এম.এম: আমরা নেতিবাচক ছবি লক্ষ্য করি কারণ সম্ভবত তা আমাদের আঘাত করে। দৃষ্টি নির্ভর সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন এবং আমাদের নিজস্ব দায়িত্ব, যেখানে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যস্ত, আমরা গড়পড়তা জিনিসের বাইরের জিনিস লক্ষ্য করি। যুদ্ধের ছবি বা ঘৃণার ছবি এবং ‘পার্থক্য’ নিঃসন্দেহে এই প্রভাব ফেলে। তবে, কিছু ইতিবাচক, সাংস্কৃতিক ছবি আমাদের ধাক্কা দিয়ে তাদের বিমুগ্ধ করাতেও পারে।

এই আঘাতজনিত কারণ ছাড়াও, আমার মতে ছবিটি যে ঘটনা ব্যক্ত করছে, ইতিবাচক-ই হোক বা নেতিবাচক, তাতে আমরা কতোটা গভীরভাবে প্রভাবিত, তার উপর নির্ভর করেও আমরা ছবি মনে রাখি। কখনো তা আঘাত এর চেয়েও বেশি। সেসব ছবি দেখে আমরা যথার্থভাবেই ব্যথা অনুভব করি, বিব্রত বোধ করি অথবা উদ্বুদ্ধ হই। আমি যখন নেলসন ম্যান্ডেলা-র একটি প্রতিকৃতি দেখি, আমার আশা ও সংকল্পের অনুভূতি জাগে। আমি এর পেছনে গল্পটি জানি।

যদিও ইতিবাচক ছবি অনেক সময় সাধারণ ঘটনাকেই ক্যামেরাবন্দী করে এবং আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। সঠিক ঘটনা প্রসঙ্গে রাখলে, গড়পড়তা ঘটনার ছবিও এমনভাবে প্রকাশ পায়, যে তা আরো অর্থপূর্ণ এবং তাই স্মরণীয় হয়ে ওঠে। অনেক বিখ্যাত ছবি নিজেই প্রায় পূর্ণদৈর্ঘ্যের গল্প বলতে পারে, কিন্তু অনেক ছবিই তা করে না। প্রায়ই অনেকগুলি ছবির সংকলন প্রয়োজন হয়। অথবা কখনো লেখা বা কথা তাদের সাথে সঙ্গত করাতে হয়।

সাধারণ ঘটনার লক্ষাধিক ছবি প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা সহ বর্তমান, অথচ সেই গল্প বলা হয়না, অথবা এমন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে দেখানো হয়না যেখানে দর্শকদের আরো মনযোগ সহকারে দেখতে বলা হয়েছে। আইজিভিপি-তে প্রতিটি ঐক্ষিক সঞ্চারক আশা, সাধারন মানবিকতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গী যা ক্ষতিকর পূর্বসংস্কার ভেঙে ফেলবে, এমন কাহিনী সৃষ্টিতে ব্যস্ত। কখনো কখনো শুধুমাত্র একটি ছবি লাগে এর জন্য।

সঙ্ঘ এবং আইজিভিপি প্রতিষ্ঠাতারা চান অসংখ্য ছোটগল্প একত্র করতে এবং তাদের একটি বৃহত্তর মেটা-ন্যারেটিভ-এ রুপান্তরিত করতে। দর্শকদের একটি “সামাজিক দূরত্ব হ্রাসের” অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে আকর্ষিত করার জন্য আইজিভিপি-র সমস্ত দৃষ্টিনির্ভর উপাদান-ই ব্যবহৃত হয়। অনুভূত দূরত্ব সাংস্কৃতিক, জাতীয়, ধর্মীয় অথবা সামাজিক, যাই হোক, তা হ্রাস করতে পারলে আটকানো যাবে এক ধরণের ভীতি, যা ভারাক্রান্ততা, মনোমালিন্য বা হিংস্রতায় পরিবর্তিত হতে পারে। অভীষ্ট লক্ষ্য শুধুমাত্র সমস্যা কমানো নয়, বরং মানবিকতা, সাক্ষাত হওয়া প্রতিটি মানুষ এবং তাদের অন্তর্নিহিত মূল্যের যথার্থ উপলব্ধি প্রসারিত করা।

জিভি: সাধারণ মানুষ কিভাবে আইজিভিপি-কে উন্নত করতে পারে? যে কেউ কি সদস্য হতে পারেন?

এম.এম: এমনিতে যে কেউ বিনামূল্যে ভিসুয়াল পিসমেকারস কমিউনিটি (ভিপিসি)-র সদস্য হতে পারেন। কিন্তু আমরা তাদের-ই চাই যারা দৃষ্টিনির্ভর শান্তিস্থাপনের বিষয়ে আন্তরিক, যারা অ্যাবাউট বিভাগ এবং এথিকাল কোড পড়েছেন এবং যারা বোঝেন যে আমরা একত্রে কি অর্জন করতে চাই। আমরা তাদেরই চাই যারা ছবি ও গল্প সৃষ্টি করায় জড়িত থাকতে চান এবং যারা ব্লগে আলাপ আলোচনায় ও সামাজিক সংবাদমাধ্যমে সক্রিয় থাকবেন। আইজিভিপি সমস্ত বিশ্বাস ও পটভূমির জন্য এবং পেশাদার ও উত্থান শীল চিত্রশিল্পী উভয়ের জন্যই উন্মুক্ত। সঙ্ঘটির নিজেরই প্রবেশদ্বার খুব ক্ষুদ্র, কারণ প্রত্যেকে যে ভূমিকা পালন করেন তা আলাদা, কৌশলগত এবং কিছু সহযোগিতা বর্তমান।

আমি [যে কেউ এটি পড়ছেন] উৎসাহিত করব চার্টার ফর ভিসুয়াল পিস-এ সাক্ষর করতে এবং সেই ফর্মটি ব্যবহার করে ইমেইল এর মাধ্যমে অন্যদের আমন্ত্রণ জানাতে। তারপর টুইটার এবং ফেসবুক-এ সেটি পোস্ট করুন। টু্ইটারে @আইজিভিপি অনুসরণ করুন এবং আইজিভিপি-র ফ্যান হোন। আমি টুইটারেও আছি @ভিসুয়ালপিস। প্রেম ছড়িয়ে দিন!

আমরা ওয়েবসাইটটির নকশা এমনভাবেই বানিয়েছিলাম যাতে প্রত্যেক চিত্রশিল্পী তাদের নিজেদের পিসমেকার প্রোফাইল রাখতে পারেন, যা তাদের সবাইকেই মানবহিতৈষী হতে সাহায্য করবে। আমাদের আপগ্রেডেড সদস্যপদের জন্য কিছু বেশী লাগে সঞ্চালনের ব্যয় সামলাতে, তাই আমরা সামান্য অর্থ দাবী করি। আমাদের এই আন্দোলন প্রসারিত করতে হবে। এর সুদূর প্রসারতা সম্পর্কে কোন সীমা দেখছি না।

আমাদের জগত এখন এর জন্য তৈরী। সংবাদমাধ্যম, ইন্টারনেট এবং ভৌগোলিক ভাবেও আমরা “কাছাকাছি” চলে আসছি আমরা সবাই। প্রতিভাবান, তৃণমূল সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সাধারণ মর্যাদা এবং আকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করার সময় এসেছে, যাতে আমরা যে ভয়ানক জিনিস শুনি, তাতে একটি সুষম মতামত যোগ করতে পারি। মন্দের থেকে ভালো জিনিসই বেশি আছে। আপনি যদি চিত্রশিল্পী হন, তাহলে আমদের প্রথম ব্লগ পোস্ট এবং ম্বাগতম হে নবীন পাতাগুলি দেখুন।

ভালো এবং খারাপ দুইই বা মর্মান্তিক এবং সুন্দর যাই হোক, ছবি সব সময় যেখানে মানুষ এবং ইতিহাসের উপর স্থায়ী প্রভাব রেখে চলবে, মারিও এবং সঙ্ঘটি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন: ছবি হাজার কথা বলতে পারে, তবুও পশ্চাদপট ব্যক্ত করিয়ে একটি ছবিকে জীবন্ত করে তুলতে কখনো কখনো ছবিটিতে শব্দের ব্যবহার প্রয়োজন। পরের বার যখন আপনি আপনার প্রধান মানবিক যোগাযোগ এবং ভাবপ্রকাশের চাহিদা পূরণ করতে চাইবেন, একটি বার্তা পাঠান, মনে করুন সেই শব্দ এবং ছবিগুলির কথা, যা আজ আমরা এতো সহজে অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়েছি। বার্তাটি ইতিবাচক রাখুন এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য-এর মাধ্যমে সৌহার্দ্য বিস্তার করুন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .