ফিলিপাইন্স: জিম্মি নাটক সংঘর্ষের মাধ্যমে শেষ হয়েছে

ফিলিপাইন্স এর রাজধানী ম্যানিলাতে দশজন মানুষ মারা যান এক জিম্মি নাটকে যখন এক ভূতপূর্ব পুলিশ অফিসার সোমবার (২৩শে আগস্ট, ২০১০) সকালে একটি পর্যটক বাস ছিনতাই করে। তার শিকাররা মূলত: হংকং এর পর্যটক ছিলেন।

তারকা খচিত পুলিশ অফিসার ক্যাপ্টেন রোলান্ডো মেন্ডোজাকে ২০০৮ সালে দায়িত্ব থেকে বের করে দেয়া হয় চুরি- দুর্নীতি আর মাদক সংশ্লিষ্ট কেসে জড়িত থাকার কারনে। মেন্ডোজা বিশ্বাস করেন তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সঠিক না আর তার কেসের পুনর্বিবেচনা দাবি করেন। ১১ ঘন্টার এই জিম্মিদের বন্দী বিভীষিকা শেষ হয় যখন পুলিশের সোয়াট দল মেন্ডোজাকে গুলি করে মারে।

এখানে রয়েছে সেই ঘটনার বিবরণ যা ফিলিপাইন্স আর হংকংসহ বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। যেমন ধারণা করা হচ্ছিল, জিম্মি করার এই ঘটনা টুইটারের ট্রেন্ডে (বহুল প্রচারিত বিষয়) পরিণত হয় গতকাল যখন অনেক ফিলিপিনো টুইটারের মাধ্যমে ঘটনার বিবরণ দেয় আর এর প্রতিক্রিয়া জানায়।

টুইটারে বহুল প্রচারিত শব্দগুলোর ম্যাপ

এখানে রয়েছে কিছু টুইটার প্রতিক্রিয়া:

আং_মুঙ্গো: আমি কাউকে দোষ দিতে পারি না- প্রেসিডেন্ট, মিডিয়া, পুলিশ বা জিম্মি যারা করেছে তাদের। আমি এটা ঘটতে দেখে একই পরিমানে দোষী ভাবছি নিজেকে।

আইঅ্যামবাজুকা: @ড্যারিলমেকসমাইডে হ্যাঁ, আপনি ঠিক। আজকে দেশের জন্য খুব দু:খের সকাল। #বন্দীর ঘটনা খুব দু:খজনক আর হতাশাজনক ছিল।

রবাথার্নজুনিয়র: রাগ আর ঘৃণা নয় বরং ভালোবাসা, দোষ দেয়া আর বিচার না, বরং প্রার্থনা এই জিম্মি দূর্ঘটনায় আমাদের সব থেকে বেশী প্রয়োজন এখন।

অনেকেই হতাশ হয়েছে পুলিশ যেভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তা নিয়ে:

জ্যাকংকিং: এই জগাখিচুড়ি জিম্মি ঘটনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমাদের গ্রহন করা উচিত। আমাদের পুলিশের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করার জন্যে।

মার্ভ_আকা_শিয়া: শোন…গতকাল কি ঘটেছে সেই খবর চারিদিকে ছড়াচ্ছে এখনো। এটা খুবই হতাশাজনক কিভাবে পিএনপি (ফিলিপাইন্স জাতীয় পুলিশ) জিম্মিদের বন্দী পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেছে। দু:খজনক।

চকোলেট২০১০: প্রথমে পুলিশ কর্তৃক অত্যাচারের কেলেঙ্কারি, এর পরে বন্দী নাটক। পুলিশ পুলিশ, খারাপ তালিকায় আমাদের আর কে কে আছে?

বেনিভেরা: আসুন সমগ্র পুলিশ বাহিনী/পিএনপিকে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় পাঠাই। জিম্মি নেয়া বা কথিত উদ্ধারকারী হিসাবে তাদের কোথায় গন্ডগোল আছে।

আর মিডিয়া, বিশেষ করে টিভি আর রেডিও নেটওয়ার্কগুলোকে দায়ী করা হয়েছে পুলিশের অপারেশন/উদ্ধার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার জন্য।

কার্লোস্কন্ডে: টিভিতে জিম্মি নেয়া ব্যক্তির বাবার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গেছে আর একজন রিপোর্টার তাকে প্রশ্ন করছেন তার কেমন লাগছে। এই কারনে মানুষ মাঝেমাঝে টিভিকে ঘৃণা করেন।

বাইটসাইজডপিসেস: সংবাদের ব্লাকআউট কি কেবলমাত্র তখনি গ্রহণযোগ্য যখন কোন সাংবাদিকের জীবন বিপন্ন হয়? গতকাল রিয়ালিটি টিভি পাগল হয়ে গিয়েছিল।

টনিওক্রুজ: উচ্চ পর্যায়ের মিডিয়া এক্সিকিউটিভ, সম্পাদক আর রিপোর্টারদের তাদের কাজের মূল্যায়ন করা উচিত, তারা কি খুব বেশী করলো না কম করলো। আমাদের কাছে তাদের এই ঋণ আছে।

ওবাকেসান: মিডিয়া জঘন্যভাবে আজ সকালের ঘটনা সম্পর্কে বলছে: জিম্মি পরিস্থিতি। যেন তাদের অনুভূতিকে সুড়সুড়ি দেয়া, বিস্ফোরণ মূলক কভারেজ পুরো পরিস্থিতিকে সাহায্য করবে।

প্রেসিডেন্ট ননয় অ্যাকুইনো এরই মধ্যে একটি বাণী দিয়েছেন গতকালের ঘটনার ব্যাপারে দু:খ প্রকাশ করে। কিন্তু কিছু টুইটার ব্যবহারকারী আছেন যারা তার সাড়াতে অসন্তুষ্ট।

আরেসগুটিয়েরেজ: প্রেসিডেন্ট ননয় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন পাগাসা (আবহাওয়া ব্যুরো) এর সাথে আর এতে তার প্রধান চাকুরিচ্যুত হন; এখন তিনি এমপিডি (ম্যানিলা পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট) এর উপরে অসন্তুষ্ট, জেনারেল মাগতিবেইর কি শাস্তি হবে?

কারেন_দাভিলা: জিম্মিদের ব্যাপারটা যেভাবে নিস্পত্তি করা হয়েছে তাতে হং কং এর প্রধান এক্সিকিউটিভ ডোনাল্ড সাং হতাশ হয়েছেন। দাবী করা হয়েছে যে তিনি পিনয়কে ফোন করতে চেয়েছিলেন (ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট), কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

অনেকে অবাক হয়েছেন যে এই জিম্মি ঘটনা নিয়ে সাথে সাথে একটা ফ্লাশ খেলা তৈরি করে অনলাইনে তুলে দেয়া হয়েছে।

তরুণ ব্লগার রেইনো জোসে দিলাও এই খোলা চিঠি পাঠিয়েছে:

আমি নম্র ভাবে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। দয়া করে আজ রাতে যা ঘটেছে তার ভিত্তিতে আমাদের বিচার করবেন না বা খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমি নেটে খুঁজে আরো ভয়ঙ্কর জিনিষ পেয়েছি।

আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার জন্য আমি দোষ দিতে পারিনা কিন্তু আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন। আমাদের দেশ এখন সমস্যার সমুদ্রের মধ্যে আছে। আর আমি এটা নিশ্চিত জানি যে আপনাদের আমরা এক ভাবে না হয় আর একভাবে সাহায্য করেছি। শান্তি আর সমঝোতাকে এবারে বিজয়ী হতে দেখেন।

রেইজুনিয়র অন্যান্য ফিলিপিনোদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন

আমি দু:খিত যে আপনাদের জিম্মিদের মুক্ত করার আলোচনা দেখতে হয়েছে যেটা ক্ষমতায় থাকা মানুষদের ভুল ব্যবহারের কারনে হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে পড়ে।

আমি দু:খিত যে আমাদের অযোগ্যতার জঘন্য প্রদর্শনী আপনাদের দেখতে হয়েছে- বার বার ব্যর্থ প্রচেষ্টা বাসের দরজা খোলার, আর পুলিশরা কতোবার যে কুড়াল ফেলে দিয়েছে সামনার কাঁচ ভাঙ্গার প্রচেষ্টায়।

আমার আর কোন কথা নেই, আর যারা তাদের প্রিয়জনকে এখানে হারিয়েছেন তাদের সান্তনা দেয়ার কিছু নেই। তারা আমার দেশে ছুটি কাটাতে পর্যটক হিসাবে এসেছে- কিন্তু বাড়ি ফিরে গেছে কফিনে।

দুইবুকি, আমি দু:খিত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .