যদি আপনি ভেবে থাকেন যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য জায়গায় সমুদ্রে তেল পড়া পরিবেশ আর মানুষের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে তাহলে আরো আঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকুন যেহেতু ভারতে সম্প্রতি আর একটা ক্ষতিকর তেল পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
চেন্নাই এর ট্রিপ্লিকেন থেকে শ্রীনিভাসন সম্পথকুমার জানিয়েছেন সাম্প্রতিক মুম্বাইয়ের নাভা সেভা বন্দরের কাছে তেল পড়ার ব্যাপারে:
গত ৭ই আগস্ট, ২০১০ মুম্বাই তীরের ৮ কিমি নিকটে কন্টেইনার বাহক এমএসসি চিত্রা ধাক্কা খায় এমভি খালিজিয়া-৩ এর সাথে।
যখন তীরের অদূরে সমুদ্রের পানিতে পড়া তেল বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে ফেলে কোস্ট গার্ড সতর্ক সংকেত পাঠান তেল পরার ব্যাপারে, আর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায় যখন এমএসসি চিত্রা ভয়ঙ্কর ভাবে কাত হয়ে যাওয়া এটি থেকে কন্টেইনার পড়তে থাকে। এমএসসি চিত্রাতে ১২০০টির মতো কন্টেইনার ছিল- যার মধ্যে ধারণা করা হচ্ছে ২০০টির মতো ইতোমধ্যে সমুদ্রে পড়ে গেছে- এবং তালিকা অনুসারে ৩২ টি কন্টেইনারে বিপদজনক বস্তু ছিল। এমভি খালিজিয়া ৩ এ প্রায় ২৩০০০ টন তেল ছিল যার মধ্যে ডিজেল আর অল্প পরিমানে লুব তেল ছিল। ধাক্কার কারণ হিসাবে এমএসসি চিত্রার প্রযুক্তিগত আর চালনার ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে যা জেএনপিটি পোর্টে ভেড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রিপোর্ট অনুসারে, এই জাহাজ নোঙ্গর ফেলার চেষ্টা করছিল যখন অন্য জাহাজটির সাথে ধাক্কা লাগে। এসওএস (সাবধানবাণী) পাওয়ার পরে, সকল নাবিককে নিরাপদে সরানো হয়। [..]
ভারতীয় কোস্ট গার্ড তেলের উপর স্প্রে করা শুরু করে। এলাকায় পাঁচটি জাহাজ পাঠানো হয়েছে। [..]
যদিও তেলের দূষণ বিরোধী পদক্ষেপ সাথে সাথে শুরু হয়, তেল পড়া আর ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পাথুরে মাটি, জোয়ার আর আবহাওয়ার কারনে।
মুম্বাই এর তীরে এই দূষণের প্রভাব এরই মধ্যে বোঝা যাচ্ছে, তেলে ঢাকা অবস্থায় মাছ আর জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। এনডিটিভি জানিয়েছে যে তেল স্পর্শকাতর ম্যানগ্রোভ (গরান) জঙ্গলে ঢুকেছে আর সেখানে গাছ আর প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। সবুজ গরানে ঢাকা তীর এরই মধ্যে কালো তেলে ঢাকা পড়ে গেছে।
দূষণের পরিমাণ দেখার জন্য নিতা যাদভ পানির নমুনা সংগ্রহ করছেন দক্ষিণ মুম্বাই এর বিভিন্ন এলাকা থেকে আর তিনি পেয়েছেন:
সুন্দর সমুদ্রতট এরই মধ্যে উচ্চ মাত্রার নৃতাত্ত্বিক চাপের মধ্যে আছে আর এখন, এমএসসি চিত্রা আর খালিজিয়া একে আরও খারাপ পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। তেল আর পানির মিশ্রণকে বলা হয় ‘মুস’, খুবই আঠালো এক বস্তু, যা এর সংস্পর্শে আসা যে কোন সামুদ্রিক জিনিষের সাথে লেগে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত:, অনেক সামুদ্রিক জীব এতে আটকিয়ে যায় এবং দূষণের কবলে পরে, যার মধ্যে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ আর পাখি আছে যারা সমুদ্রে বা এর কাছে থাকে।
প্রায় ৫০০ টন তেল ইতিমধ্যে পড়ে গেছে। টন টন তেল, লুব্রিকেন্ট তেল আর ডিজেল ছাড়াও, ৩১টি কন্টেইনারের মধ্যে কীটনাশক আছে। আমরা তেল পড়া নিয়ে চিন্তিত ছিলাম আর এখন কীটনাশক ভরা কন্টেইনার সমুদ্রে ভাসছে।
দেবলিনা রাজা গুপ্ত উরানের সৈকতে যেতেন এর সৌন্দর্য আর পরিষ্কার পানির জন্য। কিন্তু তেল পড়ার পরে তিনি দেখেছেন:
উরান সৈকত যেখানে পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানি ছিল এখন তার অবস্থা যাচ্ছেতাই – মূলত একটা জঞ্জাল ফেলার স্থান। কন্টেইনারগুলো যখন অন্য মহাদেশের জিনিষ এখানে ফেলে যাচ্ছে – চা, কফি, বিস্কুট আর অন্যান্য অনেক জিনিষ- স্থানীয়রা এক মিনিট সময় নষ্ট করেনি তা লুট করে নিতে। আর এখন যেসব মানুষ লুটের জিনিষ নিয়েছিল তারা অভিযোগ করছে বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তু থেকে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যার। [..]
এই তেল যখন ভূমির ভিতরের দিকে পথ করে নেবে, পরিবেশবিদরা বলছেন পুরো গরান বন পুরে শেষ হয়ে যাবে- আমি এটা কখনো হতে দিতে চাইনা। যেহেতু আমাদের বাড়ি আর সমুদ্রের মধ্যে আর কোন বাধা নেই, এই গরান বন ছাড়া, এর ফলে বিশাল বন্যা সৃষ্ট হবে সেইসব এলাকায় যেটা ঠিক গরানের পাশে অবস্থিত, যেখানে আমি এখন থাকি।
ভারতীয় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু আরও অনেক কিছু করার আছে। এনার্জি আর রিসোর্স ইন্সটিটিউট (টেরি) তেল পড়ার ফলে সৃষ্ট এই আবর্জনা পরিষ্কারের প্রস্তাব দিয়েছে তাদের প্যাটেন্ট করা গৃহে তৈরি ব্যাক্টেরিয়ার মিশ্রণ দিয়ে যার নাম ‘অয়েল জ্যাপার’। এই প্রক্রিয়া, যা ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে তেলের তৈলাক্ততা পরিষ্কারের জন্য, তেল পড়ার প্রভাবকে সহনীয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দেবজ্যোতি দত্ত-রায় কিছু সমাধানের কথা প্রস্তাব করেছেন বিপদ সীমিত করার লক্ষ্যে যার মধ্যে আছে:
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, ৬ থেকে ৮ মাস লাগবে জাহাজকে অগভীর এলাকা থেকে সরাতে যেখানে ওটা এখন আছে। সমাধান: পানির নীচের আরওভি স্থাপন করা যায় জাহাজের আশেপাশে আর ভিতরে কি ঘটছে তা দেখার জন্য।
তেল পড়ার দূষণ কিভাবে সমাধান করা যায়। সমাধান: কেন্দ্রে তৈলাক্ততা সব থেকে বেশী হয়। তাই দূষণের কেন্দ্রে মনোযোগ দেয়া সব থেকে ভালো পন্থা, যেখানে তেলের ঘনত্ব সব থেকে বেশী।
কয়েক মাস লাগতে পারে তেল পড়া জঞ্জাল পরিষ্কার করতে। কিন্তু এই দুর্ঘটনার সব থেকে খারাপ দিক হল যে এইসব বিষাক্ত জিনিষ সহজে মানুষের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে আর পরবর্তী প্রজন্মে তা পরিবাহিত হতে পারে। আরো এই রকম তেল পড়া রোধে জাহাজ শিল্পে কি কোন বাড়তি সাবধানতা আদৌ অবলম্বন করা হবে?