সারা মধ্য রাশিয়া জুড়ে শত শত বন এবং পিট ফায়ার বা বিনষ্ট হয়ে যাওয়া উদ্ভিজ্জ পদার্থে লাগা আগুন বাড়ছে; আক্রান্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার লোককে সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে মানুষ নিহত হবার মত ঘটনা ঘটেছে (এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন মারা গেছে)
নীচের ভিডিওটি ২৬ জুলাই নিঝনি নভগরদ এলাকার কুলেবেকি শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরের উলিশিচি গ্রামে তোলা হয়। সেখানে একটি মহিলা জিজ্ঞেস করছে: এটা কি পৃথিবী ধ্বংসের লক্ষণ? নাকি এটি কেবলই একটি অগ্নিকাণ্ড?
অনেক ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপণ সংগঠনের প্রচেষ্টাই কেবল যথেষ্ট ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই একত্রিত হয়েছে এবং স্থানীয় শহর বা গ্রাম রক্ষার চেষ্টা করেছে। হাতের কাছে যাই ছিল তাই নিয়ে তারা এই কাজটি করেছে।
লাইফ জার্নাল (এল জে) ব্লগিং প্লাটফর্ম ব্যবহারকারী ভলোভে এই বিষয়ে লিখেছে এবং ছবি পোস্ট করেছ (রুশ ভাষায়) এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিকাণ্ডের এলাকা থেকে। সে দুর্ধর্ষ, নিষ্ফল এবং বিপজ্জনক অগ্নিকাণ্ডের ছবি পোস্ট করেছে যা ২৯ জুলাই সেই নিঝনি নভগরদ এলাকার ভাইয়াকসা শহরের কাছে ভেরখানইয়াইয়া ভেরাইয়া এলাকায় সংঘটিত হয়:
ভাইয়াকসা [ইন্টারনেট ফোরাম]এর লোকদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেবার ফলে, অগ্নি নির্বাপণ প্রচেষ্টায় অংশ নেবার জন্য, ফোরামে একটি বার্তা রেখে ছিলাম। লোকজন এ ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে। আমি তাদের পরবর্তী কাজের জন্য বেছে নিলাম, একজন পুরুষ ও দুজন নারীকে। আমরা একটা দোকানের সামনে থামলাম। সেখান থেকে কোদাল নিলাম। ভেরখানইয়াইয়া ভেরাইয়ায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।[…] এলাকাটিতে উপস্থিত হলাম। বনের দিকে হেঁটে গেলাম, অপেক্ষা করলাম। সেখানে অনেক লোক ছিল। একটি ফায়ার ট্রাক উপস্থিত, সকলে পানির বোতল হাতে নিয়ে ছিল এবং তাদের সাথে কোদাল ছিল। সকলেই অপেক্ষা করে ছিল। বনের ভেতর থেকে ঘন ধোঁয়া বেরিয়ে আসছিল। ২০-৩০ মিনিট এ রকম চলল।
[ছবি]
এরপর ধোঁয়া আরো কালো এবং ঘন হতে শুরু হল। […] ক্রমেই চারপাশের সবকিছু সত্যিকার অর্থে অন্ধকারে পরিণত হল, যেমনটা অনেক সূর্য গ্রহণের সময় ঘটে থাকে।বনের ভেতর লাল আলো দেখা দিল যেন সকাল হতে শুরু করেছে। আওয়াজ বাড়তে শুরু করল এবং সামনে এগুতে করতে শুরু করল। এরপর বনের ভেতরে অগ্নিশিখা দেখা গেল, যা গাছেদের উপরে উঠে এসেছে। বাতাস ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, ক্রমেই তা ঘূর্ণিঝড়ের মত রূপ নিতে থাকল। সকল ধুলা উড়তে শুরু করল, তা আমাদের চোখে এসে লাগল, এবং সাধারণ চোখে ভালোভাবে কোনো কিছু দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ল। এরপর যে কোন ভাবে আগুন সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল…উপর থেকে। দেখে মনে হচ্ছিল আগুনের ধোঁয়া ১০ তলা ভবন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যদিও আমরা বন থেকে ৫০ মিটার দুরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তারপরেও আমরা আগুনের উত্তাপ টের পাচ্ছিলাম।[…] ২০ মিটার লম্বা আগুনের শিখার সামনে এই সমস্ত কোদাল, হাইড্রেন্ট বা নল থেকে আসা পানি এবং জলের পাইপ যেন হাতির সামনে টুথপিকের মত লাগছিল। লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারল এবং তারা দৌড়ানো শুরু করল। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে গর্জন করে উঠল, “দৌড়ান”! আমরা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়িগুলোর দিকে দৌড়াতে শুরু করলাম […]। মেয়ে দুটি সেখানেই ছিল, কিন্তু লোকটা সেখানে উপস্থিত ছিল না। আমি তাকে ডাকতে শুরু করলাম এবং গাড়িতে ফিরে আসার জন্য তাকে জোরে চিৎকার করে ডাকলাম। বাতাসের গর্জন-এর সাথে সে জোরে আওয়াজ করে উঠল, সে নীচের দিকের এক আগুনে নির্বাপণ করার চেষ্টা করলো। নীচের আগুন যখন অনেক গাছ জ্বলছে […] সেগুলো বাড়ির উপর পড়ছিল কারণ উন্মত্ত আগুন উপরে জ্বলছিল। সর্বোপরি পুরো এলাকাটিকে দেখে মনে হচ্ছিল এটা একটা নরককুণ্ড।আমরা বুঝতে পারলাম যদি আমরা লোকটার জন্য অপেক্ষা করি তাহলে আমরা মারা যাব এবং সিদ্ধান্ত নিলাম যতটা পারি দুরে সরে যাব [গ্রাম থেকে]। আমরা গাড়ি ছাড়া বন্ধ রাখলাম-আবার তাকে ডাকলাম। সে লাফ দিয়ে একটা গাড়িতে উঠতে সমর্থ হল। গ্রামে একটা বাস ছিল এবং সকলে গ্রাম ছেড়ে দেবার জন্য বলা হচ্ছিল। যখন আমরা এলাকাটি ত্যাগ করছিলাম, তখন আমাদের বাম দিকের একটি ক্ষেত এবং বেড়ায় আগুন ধরে গিয়েছিল, যা রাস্তার ডান পাশে অবস্থিত ছিল। আমরা বুঝতে পারলাম এর এখানে সব শেষ [ভেরখানইয়াইয়া ভেরাইয়া]।[…] যখন আমরা এলাকাটি ছেড়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের বাম দিকের ক্ষেত এবং বেড়ায় ইতোমধ্যে আগুন ধরে গেছে ঠিক রাস্তার পাশে। আমরা বুঝতে পারলাম এটাই [ভেরখানইয়াইয়া ভেরইয়ার] ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। […]
[ছবি]
এল জে ব্যবহারকারী ভলোভে অন্য এক গ্রাম বরকোভকায় ঘটা একই ধরনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার ঘটনাগুলো ক্রমাগত পোস্ট করে গেছে।
[…]আমরা গাড়ির দিকে দৌড়াতে লাগলাম। শ্বাস নিতে অবিশ্বাস্য রকম কষ্ট হচ্ছিল। পড়ে যাওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করলাম। অক্সিজেনের অভাবের কারণে আমাকে এক ধরনের মূর্খতা পেয়ে বসল। আমি নিজেকে গাড়ির দিকে দৌড়াতে বাধ্য করলাম। চারপাশে এক অদ্ভূত পরিবেশ বজায় ছিল। কোন জিনিষ দেখতে পাচ্ছিলাম না। ধূসর এক অন্ধকার এবং পাগলা বাতাস যা আপনার উপর বয়ে যাচ্ছিল; তা আপনার পায়ের চলাকে থামিয়ে দিচ্ছিল। উপর থেকে জ্বলন্ত গাছের শাখা এবং পোড়া শাখাগুলো মাটিতে পড়ছিল […]। বাইরের থেকে গাড়ির ভেতরে অনেক বেশি অক্সিজেন ছিল এবং সেখানে আমি শ্বাস নিতে সমর্থ হলাম […]।
অন্য এক পোস্টে এল জে ব্যবহারকারী ভলোভে নিঝনি নভগোরাদ অঞ্চলের ভাইয়াকসার কাছে টামবোলে গ্রামের গাড়ির ভেতর থেকে তোলা অন্য একজনের ভিডিও পুনরায় পোস্ট করেছে। ইতোমধ্যে ১৭০,৬৫০ জন এই ভিডিওটি দেখেছে। গাড়ির ভেতর থাকা লোকগুলো বার বার শপথ নিচ্ছিল, যেমনটা তারা আগুন থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। এবং এলজে ব্যবহারকারী ভলোভে মন্তব্য করেছে (রুশ ভাষায়) যে বরকোভকা থেকে আসার সময় তারও একই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে-এবং সে সময় তিনি একই ভাষা ব্যবহার করেছিলেন:
জ্বলতে থাকা এবং জ্বলে যাওয়া দৃশ্যের ছবি, ভিডিও দৃশ্য এবং লিখিত সংবাদ একটি বিষয়কে তুলে ধরছে যা যুদ্ধকালীন বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসের দৃশ্যকে প্রতীয়মান করে। এলজে ব্যবহারকারী ভলোভে ছবি পোস্ট করেছে এবং এটি লিখেছে (রুশ ভাষায়) টামবোলে গ্রাম পরিদর্শন সম্বন্ধে, যে গ্রামটি উপরের ভিডিওতে তুলে ধরা হয়েছে, এবং এখানে এক স্বেচ্ছাসেবীর এর মুখোমুখি হবার ঘটনা:
এই মানুষটি এক প্রাক্তন কর্মকর্তা। তিনি বলেন তিনি এ রকমটা আগে কখনো দেখেননি, [নর্গনো কারাবাখের যুদ্ধের সময়, কেবল [চেচনিয়ায়] এ রকমটা দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেন, সেখানে লক্ষ্য বস্তুকে কেন্দ্র করে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে, অন্যদিকে এখানে…তারা দ্রুত এগিয়ে আসছিল এবং রাস্তার দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এখানকার ও ওখানকার আগুন কমিয়ে আনছিল[…]। […] আগুন বাড়ি এবং রাস্তা পার হচ্ছিল, ঠিক বেছে আঘাত করছিল। এ কারণে, আমরা আগুনে ঝলসে যাওয়া পাথরের এক বাড়ী দেখলাম, এর পাশে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া কাঠের পোড়া ঘর। তিনি সেখানে থেকে যাওয়া কয়েকজন অগ্নি নির্বাপক কর্মীর প্রশংসা করছেন। তিনি আমাদের জানালেন কি ভাবে তিনি [স্থানীয়] প্রশাসনকে ডেকেছিলেন, তাদের অনুরোধ করলেন যেন তারা অগ্নিনির্বাপক দলের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসে, এবং তারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকল, তাকে বলল যেন তারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেয়। তিনি আমাদের বললেন আশেপাশে যেতে, ছবি নিতে এবং সেগুলোকে ওয়েবে পোস্ট করতে। […] এই দৃশ্যটি পরাবাস্তব মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সেখানে যেন বোমা ফেলা হয়েছে।
এভাবে এল জে ব্যবহারকারী ইগোরোপডগ্রানী ব্যাখ্যা করেন (রুশ ভাষায়) অগ্নি বিপর্যয়ে বাজে ভাবে সারা দেওয়ার বিষয়টি।
[…] সাম্প্রতিক বছরগুলোতে [কেন্দ্রীয় নয়, আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ] অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এ কারণে [অঞ্চলগুলোর মধ্যে দ্রুত উপাদান বা যন্ত্রের বিনিময় ঘটানো আর সম্ভব নয় (এমনকি যদি আগুন কোথায় লেগেছে তার প্রশাসনিক এলাকাকে চিহ্নিত করা সম্ভব না হয়)। সংগঠনের বিশৃঙ্খলার কারণে এবং সামান্য অর্থ বরাদ্দের কারণে, যে সমস্ত এলাকায় আগুন লাগে, ক্রমেই তা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই রাষ্ট্র এক হেক্টর বনের জন্য মাত্র ১ রুবল [০.০৩ ডলার] ব্যয় করেছে। একই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এদেশের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ব্যয় করেছে- তারা প্রতি বছর হেক্টর প্রতি বনের ক্ষেত্রে ব্যয় করেছে ৪ ডলার।
বোরকভকা গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞের পর কি অবস্থা হয়েছে তার এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও রয়েছে যা পোস্ট করেছে ইউটিউব ব্যবহারকারী বেলিইয়ুপ:
মিরনইয়ি গ্রামের জ্বলে যাওয়া বারাকের কিছু দৃশ্য তুলে দিয়েছে একই ইউটিউব ব্যবহারকারী বেলিইয়ুপ:
এলজে ব্যবহারকারী ডক্টর জয় লিখেছে যে রায়াজান এলাকার কুরিশা গ্রাম থেকে কেবল তার উর্ধ্বতন কমকর্তা ফিরে এসেছে, যেখানে তার আত্মীয়রা বাস করত, এবং সেখানকার আগুন নিভানোর বিষয়টি সম্বন্ধে তিনি জানান:
[…]প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুসারে, অগ্নিনির্বাপক দল সেখানে পানি ছাড়াই উপস্থিত হয়, তারা জিজ্ঞেস করতে শুরু করে পানি কোথায় পাওয়া যাবে। যেখানে পানি ছিল সেখানে যাবার রাস্তা আগুনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সকল কিছু বারুদ বা গান পাউডারের মত পুড়ছিল। মাত্র কয়েকটি ভবন অক্ষত ছিল এবং বনের ভেতরে দিয়ে আগুন তাদের অতিক্রম করে চলে গেল।
এলজে ব্যবহারকারী ডক্টর জয় এছাড়াও এই ইউটিউব ভিডিও পোস্ট করেছ (ইউটিউব ব্যবহারকারী পোজারনেট হিসেবে) যেখানে একটি গাড়ি কুরিয়ুশা গ্রামে আগুনের ভেতর দিয়ে চলে এসেছে। তিনি মন্তব্য করেন: টিভি এবং ইন্টারনেটে তারা বলছে যে আগুন নিভানো হয়েছে। কিন্তু এটা হচ্ছে তাই যা বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে। লোকজন কোন সাহায্য পাচ্ছে না।
এল জে ব্যবহারকারী ইগরোকোমারোভ একটি ছবি সংবাদ পোস্ট করেছে, সেটি বেলগোরদ এলাকার অগ্নিনির্বাপক দল ও গ্রামবাসীর যৌথ প্রচেষ্টার সংবাদ। তিনি যা লিখেছেন এখান তার কিছু অংশ (রুশ ভাষায়):
[…]এই ঘটনায় একটি নেতিবাচক উপাদান ছিল, একই দিনে এক সারি ফায়ারট্রাক বা অগ্নি নির্বাপক ট্রাক বের হয়ে আসে [বেলগরাড, এলাকার রাজধানী} থেকে মস্কো অঞ্চলে প্রবেশ করে[…]।
[…]
আমাদের পানি ফুরিয়ে গেল এবং আমরা দ্রুত নদীর দিকে গেলাম। কিন্তু এই সময় স্থানীয় এক মহিলা রাস্তায় একপাল গরু নিয়ে রাস্তার উপর এসে পড়ে, গ্রামের অবস্থায় উপেক্ষা করা সহজ ছিল না [স্বার্থপরতা]-আমার বাড়ী একে বারে প্রান্তে অবস্থিত ছিল, প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো জ্বলতে দাও [অন্যদের বাড়ির কি হল তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আমি শুধু আমার বাড়িটার কথা ভাবছি]
স্থানীয় ইন্টারনেট ফোরাম আগুন নিয়ে এবং যারা এই আগুনে তাদের বাড়ী ও অন্যান্য সম্পত্তি হারিয়েছে তাদের কি ভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছে। লাইভজার্নালে সম্প্রতি দুটি সম্প্রদায় তৈরি করা হয়েছে: পোজার_রু ও এমার কমিউনিটি।