ক্যাম্বোডিয়ায় খেমাররুজ শাসনের [1] ইতি ঘটার প্রায় ৩০ বছর পার হয়ে গেছে, প্রথম অপরাধ প্রমাণ হওয়া ব্যক্তিকে ২৬ জুলাই ২০১০ -এ ট্রায়াল চেম্বার অফ এক্সট্রার্ডনারি চেম্বারস ইন দি কোর্ট অফ ক্যাম্বোডিয়া (ইসিসিসি) নামে পরিচিত যুদ্ধাপরাধ আদালতে সোপর্দ করা হয়, যেটি খেমাররুজের বিচার আদালত [2] বা খেমাররুজ ট্রাইবুন্যাল নামে পরিচিত। এখানে গুয়েক এভ ওরফে ডাচ নামে পরিচিত ব্যক্তির বিচার সাধিত হয়েছে। তিনি সেই চারজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম যারা বিচারের সম্মুখীন। তার সাথে রয়েছেন নুয়ান চেয়া ওরফে দ্বিতীয় ভ্রাতা (ব্রাদার নাম্বার টু) ইয়াং থ্রিতি (যিনি খেমাররুজের ফাস্ট লেডি নামে পরিচিত) এবং খিউ সাম্পান। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থিত করা হয়।
খেমাররুজ আমলে ডাচ [3] ছিলেন টুয়ল সেলাঙ বন্দিশালার প্রধান। তাকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে; যেহেতু তিনি গত ১৬ বছর ধরে জেলে বন্দি আছেন, তাই তার কারাবাসের মেয়াদ কমিয়ে ১৯ বছর করা হয়, যে কারাবাসের সাথে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে ১৯৯৯ সালে সামরিক আদালত কর্তৃক প্রদান কৃত অবৈধ আটকাদেশ। এই রায় [4] বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি, বিশেষ করে যারা খেমাররুজ শাসনামলে যন্ত্রণা ভোগ করে তাদের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
প্রথমত, একদল লোক অপেক্ষায় ছিল খেমাররুজদের অপরাধ আদালত বিচারে কি রায় প্রদান করে তার জন্য। তারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তারা একে ক্যাম্বোডিয়ার এবং বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য এই রায়কে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে অভিহিত করছে। শোভাচানা পোয়ু [5]একজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক এবং ব্লগার যিনি এই বিচার কার্য চলার সময় উপস্থিত ছিলনে। তিনি সাথে সাথে তার অনুভূতির কথা জানিয়ে একটি পোস্ট লিখেন:
আদালত কক্ষে আমি আরো ৫০০ জন ব্যক্তির সাথে সরাসরি উপস্থিত থেকে ব্যক্তিগতভাবে মিশ্র এই বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী ছিলাম, যে সমস্ত লোকের বেশির ভাগই খেমাররুজ শাসনের শিকার। এটা খেমাররুজ শাসনের শিকার সকল ব্যক্তির জন্য একটা গতিশীল অভিজ্ঞতা এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। এর জন্য এই সমস্ত ব্যক্তিরা ৩০ বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল, তাদের জন্য এটা এক ন্যায়বিচার।
অন্যদিকে সোপাহাল ইয়ার [6], যিনি গণহত্যা থেকে বেঁচে যান এবং ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে ক্যালিফোর্নিয়ার লং বীচ-এ টিইডিতে “খেমাররুজদের হাত থেকে পলায়ন [7]”-এর উপর অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রদান করেন, যখন ডাচের বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি তার মায়ের কথা স্মরণ করেন:
এই স্মরণীয় মূহূর্তে, আমি পিছে ফিরে যেতে চাই খেমাররুজের শিকার এক ব্যক্তির উপর দৃষ্টি প্রতিফলিত করতে এবং তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে চাই; তিনি আমার পরলোকগত মাতা, তার নাম কাম ইয়ুক লিম […]। এই দিনটি দেখার জন্য তিনি আর বেঁচে নেই, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। তার হিসেবে ন্যায়বিচার অনিবার্য, তবে তা বৌদ্ধ মতে সাধিত হয়েছে। অনেক আগেই তিনি সিদ্ধান্ত প্রদান করে দিয়েছেন যে খেমাররুজেরা কর্মে অসৎ যারা তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি পাবেই। যদি এ জীবনে তারা শাস্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী জীবনে পাবে।
অন্য এক দলের প্রতিক্রিয়া সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করছে, যারা এই রায়ে হতাশ। তারা দাবী করছে যে এই শাস্তি ১৪,০০০ ব্যক্তিকে হত্যা করা এক খুনীর জন্য অনেক সামান্য। “ইসিসিসি, ক্যাম্বোডিয়ার জনগণের ক্ষেত্রে কোন ন্যায় বিচার সাধন করেনি” শিরোনামে নমপেন পোস্টের সম্পাদকের কাছে পাঠানো চিঠিতে জেফরি সেরেই হোলা উল্লেখ করেন ক্যাম্বোডিয়ার মানবাধিকার সংস্থার (ক্যাম্বোডিয়ার সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস বা সিসি্এইচআর) সংবাদ বিবৃতিটি [8]। যখন সিসিএইচআর ডাচের কারাবাসের মেয়াদ কমিয়ে আনার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে যা স্বদেশী বিচারালায়ের জন্য একটি ভালো আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করছে। যাদের, বন্দী করে রাখার অনুশীলন সব সময় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ছিল। জেফরি সামান্য শাস্তি প্রদানের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, এই শাস্তি কি ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার প্রদানের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে দাবী ছিল ডাচের আজীবন কারাবাসের, কারণ ক্যাম্বোডিয়ায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান বৈধ নয়।
বিষয়টি বোধগম্য যে, অনেকে চায় ডাচের ফাঁসি হোক, এমনকি যদি বর্তমানে ক্যাম্বোডিয়ায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান অবৈধ। শাস্তি কমিয়ে ডাচকে ১৯ বছরের জন্য কারাদন্ড প্রদান করা তা এ রকম এক ভয়ঙ্কর গণহত্যার দায়ে দোষী ব্যক্তির জন্য অনেক বেশি দয়া প্রদর্শন করা। ডাচকে অন্তত আজীবন কারাবাস প্রদান করা উচিত […] এই কাজটি তাদের জন্য করা উচিত ছিল, যারা এ রকম ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে বেঁচে আছে। কি ভাবে এই শাস্তিকে ন্যায় বিচার বলে বিবেচনা করা যেতে পারে? এই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য, এটা যেন কব্জিতে একটা থাপ্পড় মারা। ক্যাম্বোডিয়ার জনগণ ন্যায়বিচার পেল না।
বার্নাড ক্রিশেরও [9] একই আবেগ প্রকাশ করেছে। তিনি ক্যাম্বোডিয়ার জন্য আমেরিকার সাহায্য প্রদানকারী সংস্থার চেয়ারম্যান। তিনি স্থানীয় বিদেশী দৈনিক পত্রিকা যার নাম ক্যাম্বোডিয়া ডেইলি, তার প্রকাশক। টোকিও থেকে লেখা এক বার্তায় তিনি বলেন যে এই শাস্তি খুবই নগণ্য এবং গণ দাবী ছিল ডাচকে ফাঁসিতে ঝোলানোর।
৩০ এর দশকে নাৎসি গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া অনেক ইহুদির মধ্যে অনেকে ছিল আমার আত্মীয়। এর মধ্যে আমার পিতার ভাইবোনো অর্ন্তভুক্ত ছিল। তারা হিটলারের গ্যাস চেম্বার থেকে ফিরে আসে। আমি খেমাররুজদের বিরুদ্ধে গঠিত যুদ্ধ অপরাধ আদালতের কর্মকাণ্ডকে অনুসরণ করেছি এবং তুলনামূলকভাবে জার্মানী ও জাপানী যুদ্ধপরাধীদের চেয়ে খেমাররুজ যুদ্ধপরাধীদের নগন্য শাস্তি প্রদানে হতাশ হয়েছি। আমি মনে করি ডাচের ফাঁসি হওয়া উচিত। […]
অন্যদিকে এমন একদল ব্যক্তি রয়েছে যারা খেমাররুজের বিচার অথবা ডাচের শাস্তি কোনটাকেই সমর্থন করে না। বিবিসিকে [10] প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ক্যাম্বোডিয়ার দুইজন নাগরিক জাতিসংঘ সমর্থিত ট্রাইবুনালের গ্রহণযোগ্যতার মত সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন। তারা এই বাস্তবতাকে তুলে ধরেন যে, এটা তৈরি করা হয়েছে কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি ভালো ধারণা তৈরি করার জন্য।
উভয়ে চান খেমাররুজদের প্রথম সারির নেতাদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হোক। তারা খেমাররুজের এক নিম্ন সারির কর্মকর্তা ডাচের শাস্তির ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন। যদি সেই সময় সে নেতাদের আদেশ পালন না করত, তাহলে সে নিজেই নিজেকে হত্যা করতে বাধ্য হত।
এমনকি কৌতুহলজনক বিষয় হচ্ছে সরকারের মন্ত্রীরা ডাচের রায়ে বৈপরীত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছেন। যেখানে ক্যাম্বোডিয়ার তথ্যমন্ত্রী খিয়ু কানহারিত এই রায়ে খুশি, অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হর নামহঙ ডাচের এই সামান্য শাস্তিতে হতাশ।
রেডিও ভোয়া খেমার সার্ভিসকে [11] দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খিয়ু কানহারিত বলেন:
«វាបានបង្ហាញថា ទីមួយគឺការប្តេជ្ញាចិត្តរបស់រាជរដ្ឋាភិបាលកម្ពុជា ក្នុងការស្វែងរកយុត្តិធម៌ជូនប្រជាពលរដ្ឋខ្មែរ និងទីពីរ វាបានបង្ហាញអំពីកម្រិតផ្នែកវិជ្ជាជីវៈរបស់អង្គចៅក្រមរបស់យើង ក្នុងការស្វែងរកយុត្តិធម៌ជូនប្រជាពលរដ្ឋខ្មែរ»។
অন্যদিকে রেডিও ফ্রি এশিয়াকে [12] প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে হর নাম হঙ্গ তার ব্যাক্তিগত বিবৃতি প্রদান করেছেন:
«ដោយសារនេះជាភារកិច្ចរបស់តុលាការខ្មែរក្រហម រាជរដ្ឋាភិបាលមិនមានជំហរអីទេ។ យោបល់ផ្ទាល់របស់ខ្ញុំ ខ្ញុំឃើញថា វាមិនសមរម្យ បើប្រៀបធៀបទៅនឹងប្រជាជនកម្ពុជាស្លាប់ជិត ៣លាននាក់។ ប្រជាជនកម្ពុជាដែលគេយកទៅធ្វើទារុណកម្មនៅទួលស្លែង ហើយសម្លាប់នៅជើងឯករាប់សែននាក់នេះ។ កាត់ទោសនេះហាក់ដូចជាស្រាល មិនសមនឹងចំនួនប្រជាជនកម្ពុជាដែលបានស្លាប់»