- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পাকিস্তান: বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম
ইসলামাবাদের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার চিত্র [1]

#ইসলামাবাদের যে স্থানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, ছাদের উপর থেকে তোলা সে স্থানের দৃশ্য। রেজ হাসান-এর টুইটপিক থেকে নেওয়া

গত ২৮শে জুলাই, ২০১০ সকালে এয়ারব্লু [2] ফ্লাইট ইডি ২০২ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদের পথে যখন আসছিল, সেটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের মারগালা নামক পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয় [3]। দুর্ঘটনায় বিমানের ১৫০ জনের বেশী আরোহীর কেউ রক্ষা পায়নি। এই বেদনাদায়ক ঘটনা অনেককে তীব্র মানসিক আঘাত প্রদান করেছে এবং অনেকে গভীর শোকে নিমজ্জিত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। একদিকে অনেক ব্লগার এই বিয়োগান্তক ঘটনায় এখনো শোক প্রকাশ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে অন্যরা এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে কঠিন সব প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

চুপ-চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান- ব্লগের কালসুম লাখানি এই বিয়োগান্তক ঘটনার [4] ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেছে:

আজকের বিয়োগান্তক ঘটনায় শোকের প্রকাশ ঘটেছে দুর্ঘটনার শিকার পরিবারের ব্যক্তিবর্গ ও তাদের বন্ধুদের ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে। যারা সবাই আজ সকালে একযোগে তাদের প্রিয়জনদের বিষয়ে তথ্য পাবার জন্য ইসলামাবাদের হাসপাতালগুলোয় এবং বিমান বন্দরের টিকেট কাউন্টারে উপস্থিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ এয়ারব্লু ফ্লাইট এইডি ২০২ বিমানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজকের দিনটিকে “জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে”। আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা সেই সমস্ত ব্যক্তির পরিবার ও বন্ধুদের জন্য, যারা এই বিমান দুর্ঘটনায় তাদের জীবন হারিয়েছে।

যখন তদন্ত চলছে, তখন দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ কি হতে পারে সে ব্যাপারে এত আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সাম্প্রতিক পাওয়া তথ্য ধারণা দিচ্ছে, যে বিমানের ব্লাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে, যা কি না তদন্ত কাজকে সহজ করে ফেলবে। কালসুম লাখানি এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন যা তদন্ত বিঘ্নিত হবার ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করে:

আপনার প্রশ্ন হয়ত “ব্লাক বক্স” জিনিসটা আসলে কি? হাউস্টাফওয়ার্কস [5]-এর সূত্রানুসারে তদন্তকারীরা সাধারণত কি ভাবে বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে তা বোঝার জন্য বিমানের উড্ডয়ন এর তথ্য ধারক বা ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা বিমান চালানোর স্থানের কথোপকথনের স্বর ধারক (সিভিআর) এর তথ্য রেকর্ড করে থাকে। এই সব যন্ত্রের দাম ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ ডলারের মধ্যে (ঠিক নিশ্চিত নই পাকিস্তানের বিমানগুলোতে একই দামের জিনিষ রয়েছে কি না)। বিমান দুর্ঘটনার পরপরই এই ব্লাক বক্সগুলো দুর্ঘটনার কারণ বিস্তারিত ভাবে উন্মোচন করে। ডন পত্রিকা অনুসারে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বা সিএএ) সাংবাদিকদের বলছে যে, দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটির ব্লাক বক্স উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, কাজেই দুর্ঘটনার বিস্তারিত কারণ শীঘ্রই প্রকাশিত হবে (যদিও জিও [6] সংবাদ প্রকাশ করেছে যে পাকিস্তানে এই সমস্ত যন্ত্রের তথ্য উদ্ধারের “সুবিধা” নেই)।

দুর্ঘটনায় শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ করে মারিয়াম পিরাচা নামক ভদ্রমহিলা তার শোক প্রকাশ করছে [7]:

কারণ এবং বিশ্বাসের মাঝখানে আমি ক্ষতবিক্ষত, আমি এর যৌক্তিকতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি এবং দুর্ঘটনাটিকে মেনে নেবার এবং এর কারণকে বোঝার আর বিষয়টিকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি। ঘটনাকে অতিক্রম করার কোন সহজ পন্থা নেই, মৃত মানুষদের আত্মার জন্য প্রার্থনা করা ব্যতিত কিছু করার নেই এবং যারা পেছনে রয়ে গেছে তাদের সংযত থাকার এবং ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করছি।

এই বেদনাদায়ক ঘটনার উপর প্রচার মাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তার প্রচণ্ড সমালোচনা হয়েছে। ফাইভ রুপিজ [8]-ব্লগের এহসান বাট এই দুর্ঘটনার উপর প্রচার মাধ্যমের দায়িত্বহীন সংবাদ প্রচারে সমালোচনামুখর:

ইন্টারনেটের বিস্ময়কে ধন্যবাদ। এমনকি শিকাগোতে বসেও আমি পাকিস্তানের বেশির ভাগ সংবাদ চ্যানেলগুলোকে বেশিরভাগ সময় দেখতে পেয়েছি, কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য যে সকাল বেলায় চালু করার ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে আমি সবগুলো পাল্টে দিতে বাধ্য হলাম। “সংবেদনহীন” বিষয়, এমনকি তারা তখনও এটি প্রচার করা শুরু করেনি। প্রচার মাধ্যম সংগঠনগুলোকে স্মারক প্রদান: সদ্য নিহতদের আত্মীয়দের পেছনে কেবল মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ানো এবং তাদের কিছু বলার জন্য ঘ্যানঘ্যান করা আমি মনে করি একটা যন্ত্রণাদায়ক কাজ। স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসার খাতিরে বলতে হয়, এসব বন্ধ করুন। সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং বোমা হামলার পরে আপনারা এসব করেছেন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর আপনারা এসব করেছেন এবং এখন বিমান দুর্ঘটনার পর এসব করছেন, আপনাদের সমস্যা কোথায়?

দুর্ঘটনার সময় প্রচার মাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনার সময় এটা দৃশ্যমান হয় যে বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল দায়িত্ব প্রদর্শনের বদলে সংবাদ বিপণনের দিকে মনোযোগ প্রদান করে। আমার নিজের ব্লগে [9], আমি প্রচার মাধ্যমের দায়িত্বহীনতার কথা এবং অসংবেদনশীল সংবাদ প্রদানের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি:

সাংবাদিকরা নিহতদের পরিবারগুলোকে কিছু বলার জন্য যন্ত্রণা দিতে থাকে, তাদের অনুসরণ করতে তাকে এবং সেই সমস্ত লোকেদের চেহারা ক্যামেরায় বড় করে তুলে ধরে, যারা তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকাহত। এমনকি তার চেয়ে খারাপ যেটি হয়েছে তা হল দুর্ঘটনা এলাকার ছবি প্রদর্শন, কাছ থেকে তোলা রক্তের দাগের ছবি এবং ক্ষত সহ বিচ্ছিন্ন ভাবে পড়ে থাকা মৃতদেহের শরীরের অংশ, এদিকে এক সাংবাদিক …দুর্ঘটনাস্থল থেকে আত্মতৃপ্তির সাথে দেখাতে থাকে ভ্রমণের কাগজপত্র এবং পরিচয়পত্রগুলো। এই সমস্ত প্রচার মাধ্যমে কোনটি এই দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা প্রয়োগের বিষয়ে চিন্তা করে নি। সম্ভবত একটি বিষয় তাদের মাথায় ছিল তা হচ্ছে এই সংবাদকে সংবেদনশীল করা এবং একটি ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে দাঁড় করানো। এ ধরনের অভিযোগ করার জন্য সংবাদ উপস্থাপকরা কয়েক ঘন্টাও অপেক্ষা করতে পারেনি, এমনকি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সংবাদ প্রদানের ধারা পাল্টে গিয়ে তা বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে [10] পরিণত হয়। পুরো বিষয়টিকে আরো বাজে করার জন্য, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এক ধাপ এগিয়ে যায় এবং এমনকি কোন সরকারি বিবৃতি প্রকাশ হবার আগেই তারা বিমান চালকের সাথে টাওয়ার [11] বা অবতরণ এলাকার নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কথপোকথন প্রকাশিত হয়ে যাবার দাবী করে। […] পাকিস্তানের অন্যতম এক বেদনাদায়ক দুর্ঘটনার সংবাদ প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক কোন বিচার্য রূপ ছিল না। ভয়াবহ সংবাদ প্রকাশ কেবল প্রচার মাধ্যমে নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তার প্রতি মনোযোগ প্রদান এবং একটি কমিটি তৈরির বিষয়কে তুলে ধরে যারা এই ধরনের সংবাদের নীতিমালা লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করবে।

এই শোকাবহ ঘটনা একটি ভালো বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি তৈরির দিকে মনোযোগ প্রদান করে। এ ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সংবাদ প্রদান ও বিশেষজ্ঞ সুবিধা সম্বলিত বিষয়ের অতি জরুরী প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে, যা কিনা তদন্ত কাজকে গতিশীল করবে। এই বেদনাদায়ক ঘটনার পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আমি এভাবে উপসংহার টানতে চাই [12]:

যেহেতু দুর্ঘটনা বিষয়ক সংবাদ প্রদান এখনো চলছে, সে কারণে আমি এই দুর্ঘটনার কারণ প্রদান করা থেকে বিরত থাকলাম। কিন্তু আমি যা জানি যে এই বেদনাদায়ক দুর্ঘটনায় ১৫২ জন লোক তাদের জীবন হারিয়েছে, একটি জাতি এখন শোকাচ্ছন্ন, যে সমস্ত লোকেরা এই ঘটনায় তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, আমরা তাদের শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি, আমরা ধারণা করাকে এড়িয়ে যাব এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উপেক্ষা করব। যে বিষয়টি থাকবে সেটি হচ্ছে এই ঘটনায় সাধারণ মানুষেরা যে সাহসিকতা প্রদর্শন করেছে সেই বিষয়টি, যারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং উদ্ধারকারী দলকে স্বেচ্ছায় সাহায্য এবং সমর্থন প্রদান করে।