- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইকুয়েডর: আন্দেজ শকুনের জাতীয় দিবস

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, ইকুয়েডর, ছবি তোলা, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ

১৯৯১ সালে ইকুয়েডর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটা সিদ্ধান্ত অনুসারে সে দেশে গত ৭ই জুলাই শকুনের জাতীয় দিবস পালিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত প্রতিবছর পালিত হওয়া এই দিবস অনেক ইকুয়েডরবাসীর নজরে পড়ে না। ভ্যালেরিয়া সায়েঞ্জ (@vsteleamazonas [1]) টুইট করেছেন:

El 7 de julio fue el día nacional del ave símbolo del #ecuador [2] el cóndor andino alguien celebró?

গত ৭ই জুলাই জাতীয় দিবস ছিল আন্দেজের শকুন পাখির (কন্ডোর) যা ইকুয়েডরের প্রতিক, কেউ কি এটি উদযাপন করেছে?

তার প্রথম টুইটের কয়েক মিনিট পরে, ভ্যালেরিয়া এই শকুন দিবস পালনের গুরুত্ব জানিয়েছেন [3]:

La cacería indiscriminada y la alteración del hábitat del #cóndor [4] son las principales razones de su “casi” desaparición #ecuador [2]

এটা ‘হারিয়ে’ যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ শিকারের অভাব আর শকুনের বাসভূমি পালটানো।

পাঁচটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশের প্রতিক হচ্ছে আন্দেজের শকুন [5], আর ইকুয়েডরের কোট অফ আর্মসে [6] এর চিহ্ন অন্তর্ভুক্ত। ক্যাথারটিডা পরিবারের সদস্য এই শকুনকে পশ্চিম গোলার্ধে সব থেকে বড় উড়ন্ত পাখি বিবেচনা করা হয় [7]। এর আকার ১ মিটার ৩৫ সেমি লম্বায়, ডানা পুরো খুললে ৩ মিটার পর্যন্ত পৌঁছায় আর ওজন ১০ থেকে ১৫ কিলোগ্রামের মধ্যে। কন্ডোর নামে এই আন্দেজ শকুনের আয়ু ৫০ থেকে ৭৫ বছর। কন্ডোর শব্দটা এসেছে কিচোয়া ভাষার [8] ‘কন্ডুর‘ থেকে যার মানে আন্দেজের শকুন; বৈজ্ঞানিক নাম হল ভালচার গ্রাইফাস। নামেই বোঝা যায়, বিশাল এই পাখি আন্দেজ পর্বতমালার চূড়ায় থাকে।

ওতাভালোর কুরি লোমায় পাখির সংরক্ষণাগার পার্কে একটি কন্ডোর। [9]

ওতাভালোর কুরি লোমায় পাখির সংরক্ষণাগার পার্কে একটি কন্ডোর। ছবি এরিক শ্মাটেনমায়ার এর তোলা, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহৃত।

ধারণা করা হয় যে পৃথিবীতে মাত্র ৫০ থেকে ৭০টি কন্ডোর বেঁচে আছে [10], কিন্তু কৃষি বা পরিবেশ মন্ত্রণালয় কারো সাইটেই এই ব্যাপারে বিশেষ তথ্য নেই কন্ডোরের অবস্থান বা কিছু বেসরকারী সংস্থা একে রক্ষার জন্য যে প্রকল্প নিয়েছে সেই বিষয়ে।

আন্দেজ শকুনের জাতীয় দিবসের আগে, ইকুয়েডরের একজন সাংবাদিক এই বিষয়ে দীর্ঘ একটা প্রতিবেদন লিখেছিলেন। গঞ্জালো অরটিজ ব্যাখ্যা করেছেন [11] কিভাবে বেশ কয়েকটা বুলেট দেহে নিয়েও কন্ডোররা বেঁচে থাকে; তিনি সরকারকে দোষারোপও করেছেন কন্ডোরদের বাঁচানোর ব্যাপারে প্রচেষ্টা যথাযথ না করার:

এই রাজকীয় পাখিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে অতীতে নীতিমালা প্রনয়ণ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার জন্যে সরকারের অকার্যকরতা আর পরিবেশবাদী দলের নিজেদের মধ্যে শত্রুতাকে দায়ী করা হয়। এই শকুনদের মূল বাসভূমি হল আন্দেজ পাহাড়ের উঁচুতে পাথুরে স্থান।

গত ৭ ই জুলাই উদযাপনের একমাত্র সরকারী বার্তা ছিল পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় এই প্রতীককে রক্ষার জন্য চলতি একটা প্রকল্প: জাতীয় আন্দেজ শকুন রক্ষা দল [12] সম্পর্কে তথ্য দিয়ে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে কন্ডোরদের নির্দিষ্ট কিছু আবাসিক এলাকা সংরক্ষণ করা। এইসব এলাকার মধ্যে আছে: কায়াম্বে [13], কোকা [14], আন্তিসানা [15], পুলুলাহুয়া [16], কোটাকাচি [17], কায়াপাস আর কোটাপাক্সি [18]। এই প্রকল্প ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য স্থাপিত হয়েছে (নির্মীয়মাণ) একটি ওয়েবসাইট [19]

সরকারী হস্তক্ষেপের অভাবে, কিছু বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে বাচ্চা কন্ডোরের বাচ্চাকে সংরক্ষণ আর বড় করার ব্যাপারে সাহায্য করতে। যেহেতু কন্ডোররা বহুগামী নয় আর কন্ডোর স্ত্রীরা প্রতি দুই বছরে একবার ডিম পাড়ে, তাই পূর্ণবয়স্ক কন্ডোরকে আন্দেজ পাহাড়ে উড়তে দেখতে সময় লাগে। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে ইকুয়েডরের জুলজিকাল ফাউন্ডেশন [20], কন্ডোর ফাউন্ডেশন, সিম্বিও ফাউন্ডেশন, আগাতো কমিউনিটি [21] আর কন্ডোর হুয়াসি পূনর্বাসন প্রকল্প [22]

বিদেশী পর্যটকরা যারা ইকুয়েডরে বেড়াতে আসেন তারা কন্ডোর দেখে ঘাবড়িয়ে যান। বছরের প্রথম দিকে, পুলুলাহুয়া হোস্টেলের [23] মালিক তার বাড়ির কাছে পুলুলাহুয়া জিওবোটানিকাল সংরক্ষণাগারে [24] কন্ডোরদের আগমনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আর সিদ্ধান্ত নেন একটা ব্লগ শুরু করার। তিনি ছবির মাধ্যমে এই ভালচার গ্রাইফাসের মহত্ব দেখান, আর পুলুলাহুয়াতে তার অভিজ্ঞতার কথা লেখেন [25]:

আমরা প্রকৃতি প্রেমিক, পাখি বিশেষজ্ঞ, লজের মালিক হয়েছি, আর প্রতিদিন আমরা নতুন কিছু খুঁজে পাই। আমরা খুব সুন্দর ফুল, অর্কিড, পাখি, স্তন্যপায়ী আর মানুষ দেখে বিস্মিত হই. […]

গতকাল আমরা নতুন একটা আশীর্বাদ পেয়েছি আন্দেজের কোন্ডোরের আগমনের ফলে আর এটাকে আমাদের বাড়ির পিছন থেকে দেখতে আর ছবি তুলতে পারছি। এটা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে নতুন এই ব্লগ শুরু করার জণ্যে যেটা এই শকুনের প্রতি বিশেষভাবে নিবেদিত যাতে আমরা পুলুলাহুয়া আর ইকুয়েডরের সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারি।

আবে ইন ইকুয়েডর [26] ব্লগের লেখক কন্ডোর পার্কে [27] গিয়েছিলেন, যে সংরক্ষণাগারে কন্ডোররা থাকে আর বংশবৃদ্ধি করে, আর তাদের কিছু ছবি তুলে পোস্ট করেছেন। তিনি সাথে লিখেছেন:

আন্দেজের শকুনদের দেখা বিস্ময়কর ছিল …আমার দেখা সব থেকে বড় পাখি, যদিও তারা একটা স্থানে আটক ছিল। অন্য কয়েকটা শকুন পার্কে ছিল আর আমি তাদেরও ছবি অর্ন্তভুক্ত করেছি।

নীচে কিটোর গুয়াইল্লাবাম্বা চিড়িয়াখানার একটা ভিডিও আছে ইকুয়েডরের এই জাতীয় প্রতীককে রক্ষার প্রচারণাসহ: ”এই বিশাল পাখির মূল শত্রু হল মানুষের অজ্ঞতা। [28]