এলটিটিইর সাথে গৃহযুদ্ধের সময়ে শ্রীলংকার সরকার কর্তৃক সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য গঠিত জাতিসংঘের প্যানেল গঠনের প্রতিবাদে শ্রীলংকার গৃহায়ন মন্ত্রী ও ন্যাশনাল ফ্রিডম ফ্রন্টের (এনএফএফ) নেতা ভিমল ভিরাওয়ানশা কলম্বোর জাতিসংঘের অফিসের বাইরে অনশন শুরু করেছেন (চিত্র এখানে)।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন এই প্রতিবাদের কেন্দ্রে ছিলেন যেহেতু গত ২২শে জুন ২০১০ তারিখে তিনি বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল নিয়োগ করেন যার মধ্যে আছেন ইন্দোনেশিয়ার মারজুকি দারুসমান, দক্ষিণ আফ্রিকার ইয়াসমিন সোকা আর যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন র্যাটনার। এই বিশেষজ্ঞরা সরকার আর এলটিটিই এর মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সময়ে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এর জবাবদিহিতা বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেবেন। পরামর্শক প্যানেলের ম্যান্ডেট সেক্রেটারি জেনারেলকে পরামর্শ দেয়া পর্যন্ত সীমিত আর এটা তথ্য সংগ্রহ বা তদন্ত পর্যন্ত গড়াবে না।
শ্রীলংকার সরকার এই প্যানেলের বিরুদ্ধে জোরালো লবিং করছেন এটা বলে যে এটা ‘অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ’ আর এটা জাতিসংঘের চার্টারকে ভঙ্গ করে। ৬ই জুলাই, ২০১০ সকালে এনএফএফ কলোম্বোতে জাতিসংঘের চত্বর ঘেরাও করে যার ফলে কিছু জাতিসংঘের কর্মী অফিস না গিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করতে বাধ্য হয় আর আজকে অবরোধের তৃতীয় দিন।
শ্রীলঙ্কার নাগরিক মিডিয়া পোর্টাল গ্রাউন্ডভিউজ জানিয়েছে:
গত ৩০শে জুন সিনিয়র সরকারী মন্ত্রী ভিমল ভিরাওয়ানশা কলম্বোতে জাতিসংঘের অফিসকে ঘেরাও করে এর কর্মীদের আবদ্ধ রাখার জন্য জনগনের প্রতি আহ্বান জানান যতক্ষণ না জাতিসংঘের শ্রীলংকার ব্যাপারে একটা প্যানেল নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। এর ফলে শ্রীলঙ্কাতে জাতিসংঘের কর্মীরা সাবধান হয়ে যায়। একই দিনে, জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন যে জাতিসংঘ যখন শ্রীলংকার সরকারের সাথে যোগাযোগ করে এই বক্তব্যের ব্যাপারে, সরকার আশ্বস্ত করেছে যে এটা মন্ত্রী ভিরাওয়ানসার ‘নিজস্ব মতামত’।
এনএফএফ এর অবরোধ শুরু হয় ৬ই জুলাই সকালে আর বিক্ষোভের সময়ে যে গোলযোগ সৃষ্টি হয় তা ধারন করে ইউটিউবে আপলোড করে শ্রীলঙ্কাতে অবস্থিত নাগরিক সাংবাদিকতা প্রচেষ্টা বিকল্প।
জাতিসংঘ শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে প্রতিবাদ করেছে বিক্ষোভকারী দ্বারা জাতিসংঘের অফিসে প্রবেশ বাধাদানের ব্যাপারে আর সরকার আশ্বস্ত করেছে জাতিসংঘের কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে।
তবে, ইন্ডি.কা ব্লগের লেখক ইন্দ্রজিত সামারাজিভা তে মনে করেন যে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভে সরকারের সমর্থন আছে।
গ্রাউন্ডভিউজ যোগ করেছে:
এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, দ্যা লংকা ট্রুথ ওয়েবসাইট প্রেসিডেন্টের ভাই গটাবায়া রাজাপাকশার সাথে ফোনালাপ নিয়ে একটি ঘটনা জানিয়েছে, যেখানে তিনি পুলিশদের সরাসরি আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের চত্বর থেকে সরে আসতে। লঙ্কা ট্রুথের বিবরণ অনুযায়ী:
“কলম্বোতে জাতিসংঘের চত্বরে যে বিক্ষোভ হয়েছে তা সরকারকে জানিয়েই হয়েছিল। এটা জানা যায় যখন একজন পুলিশ অফিসারকে প্রতিরক্ষা সচিব দ্বারা ফোনে ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারটি একজন সাংবাদিক রেকর্ড করেন।“
এই ধরনের বিক্ষোভের পিছনে যে রাজনীতি চলছে তা বর্ণনা করেছে দ্যা এন্ড ব্লগের লেখক:
যারা ভিরাওয়ানশাকে চেনেন, আর যারা জানেন যে কি পরিমানে জনপ্রিয় রাজনীতির খেলা হয়। তারা আপনাকে জানাবে যে এটা পুকুরে একটা পাথর ছোড়ার মত নীরিহ ছিল। এতে উপরে মাত্র কয়েকটা হালকা ঢেউ দেখা যায় কিন্তু মাছ পরে ঠিকই মারা যায়। ভিরাওয়ানসা ভোটারদের কাছ থেকে নম্বর পান আর তার মুখ রক্ষা হয় লজ্জার হাত থেকে। সরকার মানুষকে বলবে যে বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা একত্রে রুখে দাঁড়িয়েছে, এনজিওর ব্যাবসায়ী যারা রিপোর্টিং এর মাধ্যমে বেঁচে আছে তারা তাদের সাহায্যকারীদের বলবে যে পরিস্থিতি গুরুতর আর তাদের আরো অর্থের দরকার। এটা সব সময়ে অর্থের ব্যাপার।
তিসারানি গুনাসেকারা শ্রীলঙ্কা গার্জিয়ান পত্রিকায় তর্ক করেছেন যে এলটিটিই এর পরের সময়ে সরকারের নতুন শত্রু দরকার রাজাপাকশার ভালো শাসনকে তুলে ধরতে: “তাদের হুমকি আর শত্রু দরকার তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক অক্ষমতা আর রাজনৈতিক- কূটনৈতিক ব্যর্থতা যেমন মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে জিএএসপি+ সুবিধা হারানো ইত্যাদি ঢাকতে।“
রিপোর্ট অনুসারে, কলম্বোতে প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রশ্নের মুখোমুখী হওয়া থাকা তিন সদস্যের প্যানেল কাজ শুরুর আগে শীঘ্র একত্র হবেন তাদের ম্যান্ডেট আলোচনা করতে। এখন দেখার বিষয় এই বিরোধ কিভাবে নিষ্পত্তি হয়।