তিব্বতের পরিবেশবিদ কারমা সামড্রাপের মামলায় তথ্যের সেতুবন্ধন তৈরি করা

কারমা সামড্রাপ (ডানে) এবং তার স্ত্রী ডোলকার টাসো (বামে)

তিব্বতের অন্যতম পরিবেশবিদ, ব্যবসায়ী এবং মানবহিতৈষী কারমা সামড্রাপ এর বিরুদ্ধে আনীত মামলায় তাকে ১৫ বছরের কারাবাস প্রদান করা হয়, শিনজিয়াং-এর এক আদালত তার বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করে। যারা এই মামলার উপর নজর রাখছিল তাদের জন্য এটি ছিল প্রচণ্ড অনভিপ্রেত এক ঘটনা তারা এই ঘটনার রহস্য উন্মোচনের বিষয়টি প্রায় একই সময়ে জানতে সমর্থ হয়, এর জন্য কারমা সামড্রাপের স্ত্রী ডোলকার টাসো ও তার আইনজীবী, চিনের বিখ্যাত নাগরিক অধিকার আইনজীবী পু ঝিকিয়াং-এর ব্লগ ও টুইটারে সংবাদ প্রকাশকে ধন্যবাদ।

“কবর চুরির” অভিযোগে কারমা সামড্রাপ এর বিচার শুরু হয় ২২ জুন এবং তা ২৪ জুন শেষ হয়, যার রায় হয় কঠিন শাস্তি প্রদানের মধ্যে দিয়ে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা প্রকৃতপক্ষে সরকার ১২ বছর আগে খারিজ করে দিয়েছিলো। বিচার চলাকালীন সময়টাতে পু ঝিকিয়াং এই মামলার রহস্য উন্মোচনে এর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে টুইটার ব্যবহার করেছিলেন। এই বিচারের রায় যে ১৫ বছর শাস্তি, পু ঝিকিয়াং-এর টুইটার অনুসরণকারীরা জেনে যায়, যারা সংখ্যায় ১০,০০০ এর বেশি ছাড়িয়ে গেছে। রায় ঘোষণার এক ঘন্টার মধ্যে এই বার্তাটি ছড়িয়ে পড়ে। নীচে পু ঝিকিয়াং-এর টুইটের ছবি বা স্ক্রিনশট, যা বিচারের রায় ঘোষণার বার্তা:

একই সময়, কারমা সামড্রাপ এর স্ত্রী ডোলকার টাসো বিচার চলাকালীন অবস্থায় শিনজিয়াং-এর আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই মামলার তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তার চিন্তা এবং অনুভূতি নিজের ব্লগে প্রকাশ করেছেন। যা তিনি জনপ্রিয় চীনা ব্লগ পোর্টাল শোহু.কমে প্রকাশ করতেন। নীচে ডোলকার টাসোর শুরুর একটি ব্লগ পাতার ছবি বা স্ক্রিনশট।

সোহু.কম-এ ডোলকার টাসোর ব্লগের পাতার ছবি বা স্ক্রিনশট।

বেশ কয়েকবার তার ব্লগ বন্ধ করে দেওয়া হলেও ডোলকার টাসো ধারাবাহিক সোহু নামক ব্লগ হোস্টিং বা ব্লগ লেখার সাইটটিকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। ডোলকার টাসোর ব্লগিয় কর্মকাণ্ড তিব্বতের লেখিকা, কবি এবং ব্লগার ওয়েসার পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তার ব্লগে এই বিষয়ে সংবাদ প্রদান করেছেন। ওয়েসার অনেক সময় ডোলকার টাসো এবং পু ঝিকিয়াং এর ব্লগের লেখা মুছে ফেলার আগে তা দ্রুত পোস্ট করে ফেলতেন।

২১ জুন ডোলকারের দ্বিতীয় ব্লগ এইচটিটিপি://ড্রোলকার.ব্লগ.শোহু.কম/ চালু কর করা হয়, কিন্তু ৫ দিন পরই তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারমা সামড্রাপের বিচার শুরু ঘোষণার পরপরই এই ঘটনা ঘটে। তার দ্বিতীয় ব্লগে ডোলকার টাসো তার স্বামীকে নিজে নিজের চিন্তা ব্যক্ত করে লেখা পোস্ট করেছিলেন। এই পোস্টের শিরোনাম ছিল “প্রার্থনা” । হাই পিক পিওর আর্থ এটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে এবং পরবর্তীতে তা উদ্ধৃতি করা হয় টাইম পত্রিকার একটি প্রবন্ধে:

“সামড্রাপের স্ত্রী ডোলকার টাসো তার ব্লগে লিখেছে, যতটা ধারণা করেছিলাম রায় তার চেয়ে খারাপ হযেছে। এই পোস্টটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে হাই পিক পিওর আর্থ। এটি এমন এক ওয়েবসাইট যা তিব্বতের বিভিন্ন ঘটনার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। “আমরা শুনেছি এখানে যন্ত্রণা দেওয়ার শত শত নিষ্ঠুর পদ্ধতি রয়েছে, ঘড়ি ধরে খারাপ ব্যবহার করা হয়, অনেক অত্যাচার করার যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ প্রয়োগের বিষয় এখনো অজানা রয়ে গেছে, যার কিছু বেশ কঠিন এবং কিছু নমনীয় পদ্ধতি, এবং এমনকি সেখানকার বন্দীদের একসাথে করা হয় যাতে তাদের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়”।

ডোলকার-এর তৃতীয় ব্লগ এইচটিটিপি://ড্রোলকার৩.ব্লগ.সোহু.কম/ ২৭ জুন চালু করা হয় এবং এর ছয় দিন পর ৩ জুলাই, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চার নম্বর ব্লগ এইচটিটিপি:// ড্রোলকার৩.ব্লগ.সোহু.কম/ ৩ জুলাই চালু করা হয়, সেদিন কারমা সামড্রাপের ভাই পরিবেশবীদ রিনচেন সামড্রাপকে ৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। তিব্বতের চামাদোতে আলাদা ভাবে তার বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিন দিন পরেই এই ব্লগটিকে বন্ধ করে দেওযা হয়।

পঞ্চম ব্লগ এইচটিটিপি:// ড্রোলকার৫.ব্লগ.সোহু.কম/ যা ৬ জুলাই চালু করা হয় এবং এই লেখা চলার সময় পর্যন্ত এটিকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে, নীচে এই ব্লগের একটি স্ক্রিনশট বা পাতা প্রদর্শন করা হল:

ডোলকার টাসোর পঞ্চম ব্লগের পাতার ছবি বা স্ক্রিনশট।

ডোলকারের ব্লগে তার ছবির নীচে এই অনুচ্ছেদটি লেখা রয়েছে।

“জাতীয়তার উর্ধ্বে, ভৌগোলিকতার বাইরে, কেবল ক্ষমা এবং ন্যায্য বিচার চাইছি। কোন মিথ্যাচার নয়, কো্ন তোষামোদি নয়, কেবল সমাধান এবং শান্তি চাই। এই পোস্ট বা ব্লগ মুছে দিয়ে কি লাভ”?

আইনজীবী পু ঝিকিয়াং এর ব্যাক্তিগত ব্লগ এই বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় পর্যন্ত টিকে ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সে কারমা সামড্রাপের রায়ের দিন সন্ধ্যায় এর ছবি এবং রায়ের কপির দশটি পাতার সবকটি ব্লগে প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। এই সব তথ্য সাথে সাথে ওয়েসার এর ব্লগে পুনরায় পোস্ট করা হয়। তবে ১৫ জুলাই, তার ব্লগটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কেউ যদি এই ব্লগ: এইচটিটিপি://পুঝিকিয়াংলইয়অর.ব্লগ.সোহু.কম/ প্রবেশ করার চেষ্টা করে তাহলে নীচের ক্রটিপূর্ণ বার্তাটি চলে আসে।


এরপর থেকে পু ঝিকিয়াং এক সোহুতে এক নতুন ব্লগে ব্লগিং করছে: এইচটিটিপি://লইয়ারপুঝিকিয়াং,ব্লগ.সোহু.কম/, তিনি তার ব্লগের একেবারে উপরের বারে লিখেছেন, এটা তার ১৩ তম ব্লগ। কয়েকদিন আগে চায়নাগিক সংবাদ প্রদান করে যে সোহুতে তৈরি করা আইনজীবী ও ব্লগার লিউ শিয়াওইয়ান-এর ব্লগ ১২ জুলাই, ২০১০ এ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

যখন ইন্টারনেটে অভূতপূর্ব পরিমাণ তথ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মামলার মাধ্যমে, যে বিষয়টির প্রদর্শন হল তা হচ্ছে নিছক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে নাগরিক সমাজ কর্মী বা একটিভিস্টদের অনড় এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞা থাকা উচিত, যার ফলে তাদের কথা শোনা যাবে সামাজিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। একই সাথে কোন প্রবন্ধের পুনরায় প্রকাশ এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্লগের শব্দ ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে অনলাইন নেটওয়ার্কের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে পড়ে, কারণ বন্ধ হয়ে যাওয়া সাইট বা ব্লগের লেখা যা হয়ত অন্য কোথাও ছাপা বা প্রকাশ করা সম্ভব হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .