কাজাখ ভাষী ব্লগে চীন সংক্রান্ত বেশ ঘন ঘন পোস্ট পড়ে। এখানে সাম্প্রতিকতম কিছু পোস্টের লেখা উপস্থাপন করা হল। কিছুদিন আগে আকজেরে একটি পোস্ট প্রকাশ করে যার শিরোনাম “চীন-বরদের দেশ” [কাজাখ ভাষায়]। এই পোস্ট এক চীনা নাগরিকের কৌতুহলজনক গল্প শোনাচ্ছে, যে এক পরিবারের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এক তরুণের সাথে সাক্ষাৎ-এর আশায় বিজ্ঞাপন দেয়। তবে সে আশা করেনি যে প্রায় ২০০০ জন পুরুষ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষের (ডর্মেটরি) সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। তার বিজ্ঞাপনের অন্যতম এক পাঠক মেইরজাহান মন্তব্য করেছে:
“আধুনিক চীনে পুরুষ এবং নারীর সংখ্যার ভারসাম্যহীনতা আমাদের সময়ে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে, যা নিয়ে কেউ আলোচনা করতে সাহস করছে না”।
মেইরজাহান তার নিউইউরোশিয়ায় লেখা পোস্টে [কাজাখ ভাষায়] চীন থেকে ফিরে আসা কাজাখদের কাজাখস্তানের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সে তার নিজের ব্লগে একই বিষয় নিয়ে আরেকটি লেখা পোস্ট করেছে, যার শিরোনাম “কাজাখস্তানে বাইরে থেকে আসা কাজাখদের কোন প্রযোজন নেই” [কাজাখ ভাষায়]:
““যদি আপনি এমন কোন শহর বা আঞ্চলিক অফিসে আসেন, যে সমস্ত শহরে ভিসা প্রদান বা বিদেশীদের নিবন্ধন করার কাজ করা হয়, তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন চীন থেকে আসা আমাদের ভ্রাতাদের, তারা সেখানে ভিড় করে আছে, তারা তাদের মাতৃভূমিতে (কাজাখস্তান) প্রবেশের ভিসা বা অনুমতিপত্র পাচ্ছে না। তাদের দিকে তাকান; চীনা এবং উইঘুর, উভয়ের একই রকমের কাগজ লাগছে, তারা লাল পাসপোর্ট জমা দিচ্ছে এবং প্রযোজনীয় ছাপ্পর পেয়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নীল কাগজ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে কাজাখস্তানের প্রতীক লাগানো রয়েছে। কিন্তু কাজাখরা এই সুবিধা পাচ্ছে না, কাজাখদের জন্য এইসব কাগজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের ‘অপেক্ষা করার জন্য’ বলা হচ্ছে”।
এই পরিস্থিতিতে মেইরজাহান বিদ্রোহ ঘোষণা করা তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উদ্ধৃতি নীচে প্রদান করেছে:
“যে সমস্ত কাজাখ বিদেশে বাস করে, তারা মনে করে যে সারা বিশ্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা কাজাখদের এক করা এক নম্বর সমস্যা, যার সমাধান করা উচিত। কাজাখস্তানে তাদের প্রয়োজন নেই এমন ধারণা কখনই তাদের মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে যায় না”।
বাস্তবতা হচ্ছে চীন থেকে আসা আমাদের ভ্রাতারা ভাষাগত সমস্যায় পড়ে (তারা রুশ ভাষায় কথা বলে না) এবং যখন তারা কাজাখস্তানে ফিরে আসে, তখন তারা প্রচণ্ড সংস্কৃতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়, যে বিষয়টি কাজনেটে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হচ্ছে। সৌভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে সেখানে এমন লোক রয়েছে, যারা তাদের সাহায্য করতে পারে। যেমন বাহটগুলা৬৫ নামক ব্লগার সম্প্রতি একটি পোস্ট করেছে (যিনি উসটাকামেনগোরাস্ক-এ বাস করেন) তার লেখার শিরোনাম “ নুরজাহান আমি তোমার সাফল্য কামনা করি” [কাজাখ ভাষায়]। এই পোস্টটি চীন থেকে আসা ২২ বছরের এক ছাত্রের”।
“…. আমি কাজ করছিলাম। একদল তরুণ তুর্কি ক্যাফেতে বসে খাচ্ছিল। যখন তারা চলে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে একজন আমার কাছে এসে তার পরিচয় দিল এবং জিজ্ঞেস করল: খালামণি, আপনার এখানে কি কোন চাকুরি আছে? আমার বোন একটি চাকুরি খুঁজছে”। যদি কখনো আমার কাউকে লাগে এই উদ্দেশ্য আমি তার নাম এবং ফোন নাম্বার লিখে নিলাম। আমরা কথা বলতে শুরু করলাম।
জানা গেল যে নুরজাহান ২২ বছর বয়স্ক এক ছাত্র যে চীন থেকে এখানে এসেছে। তার ভাইটি বলছে, যে সে আমার মত একটি ক্যাফে খুলতে আগ্রহী, কিন্তু সে কাগজপত্র তৈরির ব্যাপারে ততটা ভালো নয়। এবং সে রুশ ভাষা জানে না। সে মন্তব্য করে: এমনকি এখানকার কাজাখরা রুশ ভাষায় কথা বলে।
যখন নুরজাহানরা কাজাখস্তান থেকে ফিরে আসে, তখন তার বাবামা মারা যায়। নুরজাহানকে তার ছোট দুই বোনের দেখাশুনা করতে হয়”।
ব্লগার এরতাই, যে চীনে লেখাপড়া ও বসবাস করছে, সে সেখানকার সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে একটা কৌতুহলজনক পোস্ট লিখেছে। এই পোস্ট যার শিরোনাম “সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা” [কাজাখ], সেখানে সে লিখেছে, কি ভাবে চীনের সামরিক বাহিনী আমেরিকার সামরিক বাহিনীকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। এক চীনা কর্নেলের লেখা “চীনের স্বপ্ন” নামক বইয়ের সারসংক্ষেপ সে নীচে তুলে ধরেছে:
সামনের ১০-২০ বছর চীনের কোন না কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ চীন তার চারপাশে শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, যাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রয়েছে। ওয়াশিংটন হয়ত চীনের পেছনে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। এ রকম পরিস্থতিতে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎ ভূমিতে আগুন লাগতে পারে”।
এরতাইয়ের পরবর্তী পোস্টের [কাজাখ ভাষায়] শিরোনাম’: চীনের অস্ত্রহীন আক্রমণ” মূলত চীনের সংস্কৃতিক বিস্তৃতি সম্বন্ধে। সে লিখেছে:
সাম্প্রতিক সময় মধ্য এশিয়ার তরুণদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি পাঠের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় (রিজিওনাল ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন]-এর সূত্রমতে সেখানে প্রায় ৩২ হাজার (৩.২ থাউজ্যান্ড) বিদেশী ছাত্র পড়ালেখা করছে। সম্প্রতি কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে নতুন কনফুসিয়াস ইনিস্টিটিউট, চীনা ভাষা সংস্কৃতি শিক্ষা এবং বিশেষ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
লেখক এর সাখে উল্লেখ করেছেন, গত বছর চীন এবং কাজাখস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা পাঁচ বার মিলিত হন। কাজেই বলা যায় যতই কাজাখস্তানের সাথে চীনের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে ততই কাজাখ সমাজে চীনের প্রভাব তৈরি হবে যা কাজনেটে দেখা যাবে। সকলেই একসাথে থাকুন।
এছাড়াও লেখাটি নিউইরোশিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে।