ইন্টারনেটের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করা আজকাল অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয় কিন্তু দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সরকার এই কাজের যথার্থতা বের করতে পেরেছেন তরুণদের অশ্লীল যৌন কার্যকলাপের হাত থেকে রক্ষার কথা বলে।
একটি মাল্টিমিডিয়া বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ দলের মাধ্যমে ওয়েবকে ছেঁকে ‘খারাপ’ জিনিষ বাদ রাখা সংক্রান্ত ইন্দোনেশিয়ার পরিকল্পনা গত ফেব্রুয়ারীতে থামান হয় যখন জনগণ এর বিরোধিতা করে। এখন এই প্রস্তাব আবার সামনে এসেছে যখন বিশ্বের সব থেকে ঘন এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একজন তারকার যৌন টেপ কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে যেটা তরুণ-তরুণী আর বৃদ্ধকে বিব্রত করেছে। দুই বছর আগের অশ্লীলতা বিরোধী আইন পাশের পরে, ইন্দোনেশিয়া এখন তাদের ইন্টারনেট কালো তালিকা শুরু করতে চায় রক্ষণশীলদের দাবির মুখে যাতে তরুণদের মূল্যবোধ সংরক্ষিত হয়।
একই ধরনের তারকার যৌন স্ক্যান্ডাল গত বছর ফিলিপাইন্সে হয়েছিল যার ফলে গোপনে যৌনকর্ম দেখা বিরোধী আইন পাশ হয়। ইন্টারনেটকে দোষ দেয়া হয় যৌন টেপ দ্রুত ছড়ানোর জন্য যা ঠেকাতেই যেন আইন প্রণয়নকারীরা সাইবার অপরাধ আইন তৈরি করেছে।
ক্যাম্বোডিয়াতে, সরকার প্রস্তাব করেছে যে সরকার পরিচালিত একটি নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট স্থাপনের মাধ্যমে সকল স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের নিয়ন্ত্রণের করতে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে যৌনতা, চুরি আর অন্যান্য সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট নিরাপত্তা জোরদার করা। এ সংক্রান্ত খসড়া আইন এখনো চুড়ান্ত হয়নি কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে যে সরকার জোরালোভাবে এটাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করবে বিশেষ করে সম্প্রতি যখন তারা বৌদ্ধমন্দিরে নারীদের বিবস্ত্র অবস্থায় গোসলের ছবি মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটে ছড়ান বন্ধ করতে একেবারে অসমর্থ ছিল।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সরকারদের সব সময়ে যৌন কেলেঙ্কারির অজুহাত দরকার পরে না ইন্টারনেটের বিষয়বস্তু নিষিদ্ধ করার জন্যে জন্য যেহেতু তারা সব সময়ে অন্যান্য নানা কারণ উল্লেখ করতে পারে ইন্টারনেটের বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য, যেমন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। উদাহরণস্বরূপ, থাইল্যান্ড বিশ্বের প্রথম দেশ ছিল যেটি ‘বিপদজনক’ বিষয় থাকার অভিযোগে ১০০,০০০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে। তারা ব্লগার, লেখক আর ওয়েবসাইট পরিচালকদের শাস্তি দেয় লেস ম্যাজেস্টি আইন ভঙ্গের জন্য। গুগুল আর ম্যাকাফি ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কিছু ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ শুরু করার ব্যাপারে। এইসব ওয়েবসাইট বক্সাইট মাইনিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল যা ওই দেশে বিতর্কিত বিষয়।
কিন্তু রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বমূলক ইন্টারনেট আইনগুলো প্রায়শই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রচন্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হয় আর বিশ্বব্যাপী নিন্দার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে প্রচার মাধ্যম আর মানবাধিকার সংস্থা থেকে। সরকার এইসব সমালোচকদের অগ্রাহ্য করতে পারে কিন্তু একই সাথে তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। গণতান্ত্রিক ফাঁদে থাকা সরকার অনলাইন মিডিয়া সেন্সর করতে পারেন না দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু যৌনতা আর অন্যান্য খারাপ কাজ থামাতে ওয়েব নিয়ন্ত্রণ অল্প বিরোধিতাই তৈরি করে। ‘ক্ষতিকর’ ওয়েবসাইট বন্ধের এটা সব থেকে কার্যকর পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ানমারের ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নীতি শাসক জান্তার সব থেকে ভয়ঙ্কর আরোপিত নিয়ম হিসাবে গণ্য হয়েছে কিন্তু ছোট প্যান্ট পরা নারী মডেলদের ছবি পোস্ট করার কারনে দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক দল থেকে স্বাভাবিক স্তরের প্রতিবাদ জাগায় নি।
অনলাইন ডোমেইনে যৌনতা বিশেষ করে যৌনতায় ভরা চিত্র বন্ধ করার বাড়তে থাকা পদক্ষেপ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে রক্ষণশীলতার বাড়ন্ত মনোযোগের কারণে হতে পারে। এই নৈতিকতার কার্ডে খেলা হচ্ছে জনগণের মধ্যে চাহিদা মতো মনোভাব, চিন্তা আর আচরণ পাওয়ার জন্য যদিও এই কৌশল এলাকার বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিকে অসম্মান জানায়। ইন্দোনেশিয়া যখন যৌন বিষয়বস্তু বিরোধী আইন পাশ করে, বালির গভর্নর এর বিরোধিতা করেন যেহেতু এটা স্থানীয় ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যেখানে ঐতিহাসিক উলঙ্গ মূর্তি আর উত্তেজনাকর নৃত্য আছে যা মাঝেমাঝে এখনো জনপ্রিয়। যখন ক্যাম্বোডিয়া যৌনতা সম্বলিত ওয়েবসাইট ব্লক করে তার মধ্যে পরে গিয়েছিল রিয়াহু.নেট যার মধ্যে প্রাচীন ঊর্ধ্বাঙ্গে বস্ত্রবিহীন অপ্সরা নর্তকীদের চিত্র ছিল একজন খেমার রুজ সেনার সাথে।
আর একটা সমস্যা হল যে অশ্লীল, অনৈতিক আর খারাপ হিসাবে কি ধরনের ছবি আর কাজ হতে পারে তার অস্পষ্ট সংজ্ঞা। ফিলিপাইন্সের কর্মীরা চিন্তিত যে সাইবার ক্রাইম বিল এখন বেআইনি করবে কোন বিষয় আপলোড করা যা সরকারের মনে হবে না ভালো, শালীন বা ঠিক।
বিভিন্ন সরকার এতদিনে ঐতিহ্যবাহী মিডিয়াতে সেন্সরশিপের খুটিনাটি রপ্ত করে ফেলেছে। এখন তারা অনলাইন নিয়ন্ত্রণের সীমা পরীক্ষা করছে। ইন্দোনেশিয়ার একটি ইন্টারনেট কালোতালিকা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা কাছে থেকে দেখা উচিত অঞ্চলে এর কি প্রভাব হয় তা দেখার জন্য। ইন্দোনেশিয়াতে ৪ কোটির বেশী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে আর এটাকে এশিয়ার টুইটার রাজধানী বলা হয়। যদি ইন্দোনেশিয়া সমর্থ হয় ওয়েবের বিষয়বস্তু ফিল্টার করতে, অঞ্চলের অন্যান্য দেশও হয়ত এই মডেল অনুসরণ করবে।
ওয়েব সেন্সরশিপ কেবলমাত্র তথ্য প্রাপ্তিকে সীমিত করেনা, এটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনলাইনে একাত্মতা গঠনের ক্ষমতা খর্ব করে। আসলেই তরুণদের রক্ষার জন্য সব থেকে ভালো সমাধান হবে তাদেরকে, তাদের বাবা মাকে আর সমাজকে ওয়েব সার্ফ করার সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সাধারণ সঠিক শিক্ষা আর প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা।