- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সিঙাপুরে সেন্সরশীপ

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, আইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার

এক মাসের মধ্যে সিঙাপুরের সরকার অন্যতম এক হাঙ্গামার কারণ ঘটায়, যখন তারা প্রাক্তন এক রাজনৈতিক বন্দির উপর তৈরি করা চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং সিঙাপুরের মৃত্যুদণ্ড প্রদান নিয়ে লেখা এক বইয়ের কারণে এক ব্রিটিশ লেখককে গ্রেফতার করে।

[1]

ছবি নেওয়া হয়েছে দি অনলাইন সিটিজেন থেকে

১২ জুলাই ২০১০-এ মিডিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি ( প্রচার মাধ্যম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা এমডিএ) ঘোষণা দেয়, তারা একটি চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে (এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৪ জুলাই, ২০১০, থেকে)। এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে ড: লিম হক সিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা জনতার সম্মুখে তুলে ধরছে। এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা মার্টিয়েন সি [2]। জনাব. সি-কে বলা হয়েছে, সে যেন ইউটিউব থেকে এই ছবিটি সরিয়ে ফেলে। এই চলচ্চিত্রের প্রতিলিপি বা ট্রান্সক্রিপ্ট এখানে [3] পড়তে পারেন।

সিঙাপুরের ব্লগার লাকি টান সত্যকে প্রকাশ করার আহ্বান [4] জানিয়েছেন:

এমআইসিএ আসলে যে কথাটি বলার চেষ্টা করছে তা হল তারা এই চলচ্চিত্রটিকে নিষিদ্ধ করেছে কারণ, তারা চায় কেবল সত্যি কথাটি বলা হউক এবং এই চলচ্চিত্রটি আগাগোড়া ভূয়া, মিথ্যা এবং বিকৃত তথ্যে তৈরি। ড: লিম হক সিয়েকে সিঙাপুরে বিনা বিচারে ২০ বছর বন্দি করে রাখা হয়। সে সময়ে পিএপি সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল তার অপরাধের প্রমাণ দেবার এবং সত্যকে তুলে ধরার, যাতে আমরা দেখতে পেতাম আইএসডি কতটা চমৎকার কাজ করেছে, আমাদের শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এর জন্য আমরা সকলে এখনো অপেক্ষা করে রয়েছি ।

[5]

ছবি জ্যাকব জর্জের

১৮ জুলাই , ব্রিটিশ লেখক এ্যালেন শ্যাডরেককে সিঙাপুরের পুলিশ তার হোটেল থেকে গ্রেফতার করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ “অপরাধমূলক নিন্দা করার”। তার বই ওয়ানস এ জলি হ্যাঙ্গম্যান; সিঙাপুর জাস্টিস ইন এ ডক, যে বইয়ে সিঙাপুরের বিচার পদ্ধতির সমালোচনা করা হয়েছে, সেই বইটি প্রকাশ করা হয়। সিঙাপুরের প্রধান প্রধান সব বইয়ের দোকান থেকে তার বই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তাকে দুদিন আটক রাখা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স তাকে মুক্ত করে দেবার আহ্বান জানায়।

সিঙাপুরের সামাজিক-রাজনৈতিক ব্লগ দি অনলাইন সিটিজেন [6] বিস্মিত কেন শ্যাডরেককের বিরুদ্ধে “অপরাধমূলক নিন্দা করার” অভিযোগ আনা হয়েছে:

এ্যালান শ্যাডরেক লিখিত, “ওয়ানস এ জলি হ্যাঙ্গম্যান” বইটি পড়তে গিয়ে অনেকে অস্বচ্ছন্দ বোধ করতে পারে। যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের জন্য এই বইটি এতটা অস্বচ্ছন্দ তৈরি করে যে তারা অনেক দুর্লভ আইনে (ড্রাকোনিয়ান অভিযোগ বা দুর্লভ আইন-এথেন্সের রাজনীতিবীদ ড্রাকোর তৈরি করা আইন) অপরাধমূলক নিন্দার অভিযোগ আনে।

সিঙাপুরের একটি ব্লগ কেমিকেল জেনারেশন সিঙাপুর লিখেছে [7]:

শ্যাডরেককে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে পুরো বিষয়টিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনার গুরুত্ব কমে গিয়ে তা সিঙাপুরে বিদেশী হস্তক্ষেপের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে তার উপর এসে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের উপর অভিযান চালানো, তারা যদি বিদেশ অর্থ এবং লজিস্টিক বা নানাবিধ সুবিধা পায় সেক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু এই অভিযান যদি কোন বিদেশির লেখা বই উদ্বোধন এর বেলায় ঘটে, এমনকি যদি বিদেশী প্রতারক অলিভার ফ্রিকারের ( সিঙাপুরের ট্রেনে লেখার কারণে ফ্রিকার শাস্তি পেয়েছিল) মত হয় এবং এ ধরনের ঘটনার জন্য আহ্বান জানায়, তাহলে তা আমার বইয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি, যতক্ষণ না এখানে চক্ষু তা প্রত্যক্ষ করে।

রাজনৈতিক একটিভিস্ট, চি সিওক চিন ‘নোংরাভাবে গোপনীয়তা’ তৈরির জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেছে [8]:

এখন, কোন কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠী তাদের “নোংরা ক্ষুদ্র রহস্য” এক বইয়ে উন্মুক্ত করে দিতে চায়?
এক্ই বিষয়টি ড.লিম হক সিয়ের বক্তৃতার ক্ষেত্রে খাটে, যা কিনা মার্টিয়েন সি ইউটিউবে উঠিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই মার্টিয়েনকে এমডিএ-এর শর্ত পূরণ করতে হয়েছে, যারা তাকে এটি ইউটিউব থেকে নামিয়ে দিতে বলেছিল। কারণ ড: লিম ১৯ বছর ধরে বিনা বিচারে আইএসডি বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অবৈধভাবে আটকে রাখার বিষয়ে মুখ খুলেছে।
আবার বলা উচিত, কোন নিপীড়ক শাসক চাইবে, সত্যি কথাটি বলা হউক, যে সত্যে উপস্থাপিত হয়েছে, শাসক তার ক্ষমতাকে দৃঢ় করতে চায়, যা কিনা এক ভিডিও দৃশ্যে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যে ভিডিও সকলেই দেখতে পারে?