- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চিলি: বায়োডিজেল ট্রাকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চিলি পর্যন্ত ভ্রমণ

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, চিলি, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, ভ্রমণ, শিক্ষা

চিলির দুই ভ্রমণকারী [1]এডুকেশন উইদাউট বর্ডার্স (সীমানাহীন শিক্ষা) এর সহ-নির্বাহী পরিচালক কার্লোস হেরেরা আর পুরস্কারপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র নির্মাতা আর সাংবাদিক মারিয়া জোসে কালদেরোন, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চিলির পথে ৬ মাস মেয়াদী একটি যাত্রা করেন। তাদের বাহন ছিল এল চাক্সি [2], “৯৫ সালে তৈরি চেভি সাব আর্বান ৬.৫ লিটার টারবো ডিজেল জীপ (৪×৪) যাকে পরিবর্তিত করা হয়েছে পরিত্যক্ত ভোজ্য তেল (ডাব্লুভিও), সাধারণ ভোজ্য তেল (এসভিও) আর বায়োডিজেলে [3] চলার জন্য। এই গাড়িটি সাধারণ ডিজেলেও চলে।“

এল চাস্কির সামনে তেল পরিশোধন করছেন কার্লোস [4]

এল চাস্কির সামনে তেল পরিশোধন করছেন কার্লোস। ছবি মারিয়া জোসে এবং কার্লোস এর সৌজন্যে।

এই ভ্রমণের পিছনে যে প্রকল্প ছিল [5] তার মূল তিনটি বিষয় ছিল:

১) ভ্রমণ: ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চিলি ভ্রমণে তাদের বায়োডিজেল গাড়ি ‘এল চাস্কিতে’ পুনর্ব্যবহারযোগ্য বায়ো জ্বালানী ব্যবহার, যাকে পরিবর্তিত করা হয়েছে পরিত্যক্ত ভোজ্য তেলে চলার জন্য।

[…]

2. উদ্ভাবন: আমেরিকা ব্যাপী তরুণদের এর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য আকর্ষণীয় মাল্টিমিডিয়া কারিকুলাম তৈরি করা যাতে তারা পরিবেশ আর মানুষের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার কথোপকথনে সামিল হতে পারে।

[…]

3. তৈরি করা: তৃণমূল পর্যায়ের সমাজ, তরুণ, শিক্ষক আর অন্যদের মধ্যে অনলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করা- একসাথে একটি ভবিষ্যৎের দিকে যাওয়া যেটা এই গ্রহের টিকে থাকার মাধ্যমে আমরা ভোগ করতে পারি।

কার্লোস আর মারিয়া জোসে এই ভ্রমণ নথিভুক্ত করেছে আর তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ‘ডায়রি’ নামে সাইটের একটা অংশে ভিডিও, ছবি আর ব্লগিং এর মাধ্যমে। ব্লগের মূল পাতা বর্ণনা করে এই ডায়রির আসল ব্যাপার কি [6]:

আমরা জানতে চাই ল্যাটিন আমেরিকা যেসব সমস্যা আর বিষয়ের সম্মুখীন হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা কি করছে।

আমরা স্থায়িত্বের জন্য কাজ করছেন এমন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, সমবায় আর কর্মীদের কথা জানাব ডিজিটাল গল্প বলার মাধ্যমে (ছবি, শব্দ আর ভিডিও সংযোগে)। আর এইভাবে আমাদের সংস্কৃতি, সংগ্রাম আর ঐতিহ্যের মধ্যে যোগসূত্র জাগিয়ে তুলব।

[7]

পাক্সটোকায় গুয়াতেমালার যুবা। ছবি মারিয়া জোসে এবং কার্লোস।

গুগুল ম্যাপ [8] ব্যবহার করে ভ্রমণকারীরা তাদের ভ্রমণ পথ চিহ্নিত করেছেন যাতে পাঠকরা জানতে পারেন যে তারা ঠিক কোথায় আছেন। তাদের ভ্রমণ শুরু হয়েছে ১৭ই নভেম্বর ২০০৯ সালে আর এর এক মাসের কম সময়ে, ডিসেম্বরের ১১ তারিখে তারা ২,৯০৯ মাইল (৪,৬৮১ কিমি) ভ্রমণ করে ফেলেছেন। সেইদিন তারা লিখেছেন [9]:

ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়ার বিবরণ দিয়ে আমি আপনাদের বিরক্ত করবো না, কিন্তু রাষ্ট্রটির দক্ষিণের পুরোটা আমরা গিয়েছি আর সক্ষম হয়েছি তিজুয়ানার সীমানা অতিক্রম করতে। প্রথম ধাপ, সম্পন্ন। দ্বিতীয় ধাপ, হায়! হঠাৎ করে এই ভ্রমণটি আসলেই সফলভাবে ঘটছিল। সকল পরিকল্পনা, সকল সমর্থন, বিদায় জানান, শুভেচ্ছা জানান আর সব কিছু বাস্তবে ঠিকঠাক হচ্ছিল।

যদিও তারা চিলিতে ৪ঠা জুন ২০১০ সালে পৌঁছেছেন তাদের সর্বশেষ লেখা ৬ই এপ্রিলে ছিল। এল চাস্কিতে ৯,৮৩২ মাইল (১৫,৮২৩ কিমি) গিয়ে, কার্লোস লিখেছেন [10]:

মাজো [মারিয়া জোসে] আর আমি নতুন দেশের সীমান্ত পার হয়েছি ৫ মাসে ১০ম বারের মতো। অজানাতে পা রাখার বিশেষ এক অনুভূতি। আপনি জীবনের প্রয়োজনের মুখোমুখি হতে পারেন, বা আমাদের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের প্রযোজনীয়তা। ভেনেজুয়েলা কেস স্টাডি ছিল মজাদার উপাত্তসহ যা আপনার ধারণাগুলোকে ভালভাবে ভাঙ্গতে পারে। মূলত তিনটি এলাকা আছে যেটার গুরুত্ব দেয়া উচিত, কে, কি আর কোথায়? আপনি জানেন না রাস্তায় কার সাথে দেখা হবে, কি আপনি খাবেন আর কোথায় আপনি ঘুমাবেন।

[…]

আমাদের এই মহাদেশব্যাপী ভ্রমণের পরের অধ্যায় হচ্ছে ব্রাজিল।

এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এর শিক্ষামূলক ব্যাপার। ‘শিক্ষা’ নামে বিশেষ অংশে, শিক্ষক আর বাবা মা ভিডিও আর তথ্য পাবেন যার মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের পরিবেশ আর ল্যাটিন আমেরিকা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারবেন। মারিয়া জোসে আর কার্লোস ব্যাখ্যা করেছেন [11] যে এই প্রচেষ্টা শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারের একটা পরীক্ষা:

আমরা ক্লাসরুমে পড়ার জন্য যে কেবল ভালো শিক্ষার উপকরণ তৈরি করছি তাই না, আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার পর্যালোচনা করছি। নোকিয়া আর পিয়ারসন ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে প্রদত্ত সেলুলার ফোনের মাধ্যমে আমরা ল্যাটিন আমেরিকা ব্যাপী তরুণদের একত্র করছি জানার জন্য যে তারা কি ভাবছেন পরিবেশ আর অন্যান্য বিষয়ে। আমাদের মোবাইল ক্লাসরুম [12] দেখেন তরুণরা কি বলছে তা পড়তে।

মেক্সিকোর মোরেলিয়াতে রান্নার স্কুলে উপস্থাপনা। [13]

মেক্সিকোর মোরেলিয়াতে রান্নার স্কুলে উপস্থাপনা। ছবি তুলেছেন মারিয়া জোসে এবং কার্লোস

এইসব শিক্ষামূলক জিনিষের একটা বড় অংশ আসে প্রত্যেক দেশের নিবেদিত একটা অংশ থেকে [14] যেসব দেশে এরা দুইজন এই ভ্রমণে গিয়েছিলেন। দেশের সাইটগুলোতে এখনো কাজ হচ্ছে- বাকি সাইটের মতই, যা এন্ট্রি আর তথ্য যোগ করার মাধ্যমে বাড়ছে। কিন্তু তার মধ্যে দেশ সম্পর্কে কিছু উপাত্ত আর তথ্য আছে, আর কিছু সাইটে এরই মধ্যে ভিডিও দেয়া আছে বিশেষ করে পরিবেশ রক্ষার্থে তৃণমূল পদক্ষেপ গুলো সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। এই সেকশনের বর্ণনা পুরো প্রকল্পের ব্যাপারে ভালো সারসংক্ষেপ হিসাবে কাজ করে। তারা এর যে প্রভাব আশা করছেন তা হচ্ছে:

উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত, আমরা এইসব কমিউনিটি খুঁজেছি আর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তাদের কিছু গল্প নথিভুক্ত করতে আর প্রকাশ করতে এমনভাবে যাতে সেটা প্রচার করা যায়। এগুলো যাতে আমাদেরকে উপকারী তথ্য দেয়, শিক্ষা দেয় আর আশা করা যায় এগুলো আমাদের সকলকে উদ্বুদ্ধ করবে যাতে বিশ্বে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের ভুমিকা পালন করতে পারি।

আশা করা যায় যে আমাদের সন্তান আর নাতি-নাতনিরাও উপভোগ করতে পারবে বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উপহার যা আমরা এমনিতেই পাই।