১৮ ডিসেম্বর ২০০৮-এ থাইল্যান্ডের লক্ষ লক্ষ মোবাইল ফোন গ্রাহক সদ্য প্রধানমন্ত্রী হওয়া অভিশিত ভিজাজিভার কাছ থেকে এই টেক্সট মেসেজ বা সংক্ষিপ্ত বার্তা পায়:
“ผมนายกรัฐมนตรีคนใหม่ ขอเชิญท่านร่วมนำประเทศไทยออกจากวิกฤติ สนใจได้รับการติดต่อจากผมกรุณาส่งรหัสไปรษณีย์ 5 หลักของท่านมาที่เบอร์ 9191 (3 บ.)”
যদি কোন গ্রাহক এই ক্ষেত্রে উত্তর পাঠায়, তাহলে তার মোবাইলে প্রধানমন্ত্রী অভিশিত-এর এক বক্তব্য চলে আসে, যেখানে তিনি বলছেন:
ডেমোক্রাটিক পার্টির কর্মকর্তার মতে, এই সংক্ষিপ্ত বার্তা বা এসএমএস পাঠানোর চিন্তা স্বয়ং অভিশিত-এর নিজের এবং এটির তত্ত্বাবধান করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী করন চাতিকাভানিজ। অভিযোগ রয়েছে করন থাইল্যান্ডের তিনটি প্রধান মোবাইল ফোন পরিচালনাকারী কোম্পানী এআইএস, ডিটিএসি, এবং ট্রুকে আহ্বান জানায়, তারা যেন তাদের গ্রাহকদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করে।এই সহযোগিতা চেয়ে যে আলোচনা সেটি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ ডিসেম্বর-এ, যেদিন অভিশিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ঠিক তার একদিন আগে। এবং পাঁচ সংখ্যার পোস্টকোড পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে যারা এই উত্তর প্রদান করবে তাদের জনসংখ্যাগত মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। এরপর যারা এই উত্তর প্রদান করবে তাদের একটি নাম একটি তথ্য তালিকা বা ডাটাবেজে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।““আমি, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিশিত ভিজাজিভা উপলব্ধি করেছে যে আপনারা, এ দেশের নাগরিকরা যন্ত্রণা এবং চাপের মধ্যে রয়েছেন। এ কারণে আমি আমার সকল জ্ঞান এবং যোগ্যতা দিয়ে দেশকে সাহায্য করার কাজে মনোনিবেশ করব। কিন্তু আমি কখনোই সফল হতে পারব না, যদি না থাইল্যান্ডের জনগণ একই সুরে একতাবদ্ধ থাকে”।
কারো অনুমতি ছাড়া তাকে সংক্ষিপ্ত বার্তা বা টেক্সট মেসেজ পাঠানো গ্রাহকের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতে পারে, এই কথাগুলো জানান ভোক্তা অধিকার প্রবক্তা সারি ওঙ্গসোমওয়াঙ্গ। ভদ্রমহিলা বলেন গ্রাহকদের অধিকার লঙ্ঘন না করে জনতার কাছে পৌঁছানোর জন্য অভিশিতকে টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করতে হবে।
সারি, যিনি টেলিযোগাযোগ ভোক্তা অধিকার রক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কমিটি (টেলিকমিউনিকেশন কনজিউমার প্রোটেকশন ইনিস্টিটিউট) তার সাথে সম্পৃক্ত, তিনি এর সাথে যোগ করেছেন যে, থাইল্যান্ডের টেলিযোগাযোগ আইনে মোবাইল কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের অনুমতি ব্যতিত তাদের তালিকা কাউকে দিতে পারে না। যখন এই তিনটি মোবাইল কোম্পানী তাদের গ্রাহকদের প্রধানমন্ত্রী বা তার দল ডেমোক্রাটিক পার্টির পক্ষ থেকে বিনে পয়সায় গ্রাহকদের কাছে এই বিতর্কিত সংক্ষিপ্ত বার্তা বা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছিল, তখন তা বেশ কিছু আইনী এবং রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করে।
১৯৯৯ সালের দুর্নীতি বিরোধী আইনে (যা ২০০৭ সালে সংশোধন করা হয়)বলা হয়েছে, কোন সরকারি কমকর্তা, যার মধ্যে মন্ত্রীসভার সদস্যরাও অর্ন্তভুক্ত, তারা কোনভাবে ৩,০০০ বাথ (থাই মুদ্রা)-এর বেশি কোন উপহার বা সুবিধা নিতে পারবে না। হিসেব করে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পাঠানোর কাজে ১০ মিলিয়ান বাথের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। এর জন্য অভিশিত আদালতে অভিযুক্ত হতে পারে, যেমনটা পিহুয়ু থাই দলের মুখপাত্র প্রমপং নোপপার্তি যুক্তি প্রদান করেছেন, যিনি জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (ন্যাশনাল এন্টি-করাপশন কমিশন বা এনএসিসি) এই ঘটনায় তদন্ত করার আহ্বান জানান।
যদি অভিশিত এবং করন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিসংশন জারী করা হতে পারে এবং এর পর তারা সংবিধান অনুসারে যে কোন ধরনের রাজনৈতিক পদ গ্রহণের অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
এই বিষয়ে ইন্টারনেটে যে সমস্ত মন্তব্য এসেছে তা অনেকটা মিশ্র। সাধারণ ভাবে অনেকে একমত যে এতে ব্যক্তির গোপনীয়তা ও ব্যাক্তিগত তথ্য লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, এবং প্রচার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি ব্যাক্তিগত বিষয় প্রচার (পারসোনাল রিলেশন বা পিআর) করেছেন। কিন্তু একই সময় তারা অনুভব করছে যে, যদি এটা একটা ভালো উদ্যোগ হয় তাহলে এটা ঠিক আছে, এবং দেশের জন্য তার কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ইয়াহু!এ্যানসার থেকে কিছু মন্তব্য:
Some comments from Yahoo! Answers:
নন নন: “আমি মনে করি এটা একটা জনপ্রিয় জরিপ মাধ্যম, কারণ এতে পোস্ট কোড পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।যার ফলে তারা জানতে পারবে যে কোন জেলায় কোন প্রদেশে এর উত্তর পাঠাতে হবে এবং এর মাধ্যমে তারা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে পারবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা ভালো উদ্যোগ এবং থাইল্যান্ডের সকল ক্ষেত্রে এক ঐক্যতান দেখতে চাই।”
নিকি: “কেন বার্তা পাঠাতে তিন বাথ লাগবে? আমি কি এতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকব? আমার মেমরি (সংক্ষিপ্ত বার্তা রাখার জায়গা) একেবারে পূর্ণ হয়ে রয়েছে। পুরোনো ধারাতে কাজ হচ্ছে।”
‘এ-মেই': “আমি মনে করি এই বিষয় নিয়ে অনেক বেশি বিপণন করা হচ্ছে”
তানাপোন “হ্যাঁ, এটা বাড়াবাড়ি, তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত যাতে সে নিজেকে প্রমাণ করতে পার। নিজেদের মধ্যে লড়াই করার চেয়ে এটা ভালো।”
এনএইচ: “আমি মনে করি এটা অনেক ভালো চিন্তা, এর ফলাফল ভালো হবে।”
১৬ জুলাই, ২০১০-এ, এনএসিসি এই ঘটনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের সময় এখনো নির্ধারণ করেনি।