- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

উগান্ডা: বোমা বিস্ফোরণে ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, উগান্ডা, তাজা খবর, নাগরিক মাধ্যম

গত রাতে সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য বিভিন্ন শুঁড়িখানা এবং রেস্তরাঁয় জড়ো হয়েছিল। উগান্ডায় এই অনুষ্ঠান উদযাপন বাধাগ্রস্ত হয় যখন দেশটির রাজধানী কাম্পালায় বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখার সময় রাতের বেলায় জড় হওয়ার দুটি জনপ্রিয় স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।

উগান্ডার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে [1] বিস্ফোরণে ৪০ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং ডজন খানেক লোক আহত হয়েছে। উগান্ডার পুলিশ ধারণা করছে [2], এই বিস্ফোরণের পেছনে সোমালি বিদ্রোহী দল আল শাবাবের হাত থাকতে পারে। এই দলের অন্যতম এক কমান্ডার বা সেনাপতি সম্প্রতি উগান্ডায় হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছিল [3]। সোমালিয়ায়, আফ্রিকান ইউনিয়নের যে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয়েছে তাতে উগান্ডার সেনা রয়েছে। এই বিদ্রোহী দলটি এই হামলার প্রশংসা করেছে, তবে তারা এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি।

Victims of two deadly bomb blasts in Kampala wait for treatment at Mulago Hospital. [4]

কাম্পালার ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে আহত দুই ব্যক্তি মুলাগো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। ছবি ট্রেভর স্নাপ [5]-এর এবং অনুমতিক্রমে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

উগান্ডার ব্লগার গে উগান্ডা লিখেছে [6]:

উগান্ডায় হামলা চালান হয়েছে। সত্যি, এটা মানবতার উপর আক্রমণ। কে এ রকম নৃশংস কাজ করে খুশি হতে পারে? দৃশ্যত, সোমালীয় বিদ্রোহীরা এতে খুশি। কারণ তারা সোমালিয়া আফ্রিকান ইউনিয়ন-এর সেনাদের সাথে লড়াই করছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনারা বিদ্রোহীদের ইসলামিক শাসনের অধীনে শরিয়া আইন চালু করা প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছে।

…..আমি যা দেখতে পাচ্ছি, আমার স্বদেশবাদী, যে সমস্ত মানুষেরা কিছু করেনি তাদের, যে টুকু খারাপ কাজ তারা করছিল তা হচ্ছে ফুটবল খেলা দেখা, তাদের হত্যা এবং আহত করা হয়েছে, এক আদর্শের নামে, যার এ কাজ করছে সেই আদর্শের ব্যাপারে এদের সত্যিকারের কোন চিন্তা নেই, এমন কর্মকাণ্ড তারা করে, যা তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

কে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে আর্নেস্ট বাজানাইয়ে [7]বেশ সতর্ক:

এত তাড়াতাড়ি বলা উচিত নয় কে এই ঘটনার জন্য দায়ী এবং কেন। যদিও দেশের বাইরে কানা ঘুষা শোনা যাচ্ছে এই জোড়া বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আল শাহাব নামের দলটি, এটি সোমালিয়ার এক সন্ত্রাসী সংগঠন। এখন আমরা জানি যে এত তাড়াতাড়ি সঠিক খবর পাওয়া সম্ভব নয় এবং এত দ্রুত কোন সিদ্ধান্তে আসাটা আর্বাচীনের মত কাজ হবে।

ট্রেভর স্নাপ এক তথ্যচিত্র ভিত্তিক ফোটোগ্রাফার যিনি কাম্পালায় বাস করেন, তিনি এই ঘটনার পর মুলাগো হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে বোমা বিস্ফোরণের পর অনেক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। তিনি লিখেছেন [8]:

পরিবারের সদস্যরা অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এদিকে ডাক্তার ও আহতদের দেহ রক্তে লাল হয়ে রয়েছে, তারা সার্জারি বা শল্য চিকিৎসা কক্ষে যাচ্ছে আর আসছে। শল্য চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবার কক্ষের রাস্তায় একটি মানুষের দেহ মেঝেতে পড়ে আছে যার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছিল। সে কি জীবিত নাকি মৃত তা বোঝা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। হাসপাতালের কর্মচারীরা একটি অস্থায়ী মর্গ বা মৃতদেহ রাখার এলাকা তৈরি করেছিল যেখানকার মেঝেতে ৬টি দেহ পড়েছিল, যাদের কারো কারো কাপড় বোমায় উড়ে গিয়েছিল। এরা সকলেই বয়সে তরুণ।

অনেক ব্লগার এক ধাক্কা খেয়েছে যে কাম্পালায় বোমা বিস্ফোরণের মত ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো আফ্রিকার সবচেয়ে নিরাপদ রাজধানী শহর বলে বিবেচিত। গ্লোবাল ভয়েসেস-এর এক প্রাক্তন লেখক [9] জোশুয়া গোল্ডস্টাইন [10]এখন কাম্পালায় বাস করেন। তিনি যে দুটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে তার বর্ণনা প্রদান করছেন:

কাম্পালার রাগবি ক্লাব এক মুখরিত শুঁড়িখানা, যা মাঠের নিকটেই অবস্থিত, যেখানে কাম্পালার অনেক কলেজ ছাত্র তাদের বন্ধুদের সাথে এসে মিলিত হয়। যদি উগান্ডায় পুরুষ ছাত্রদের জন্য কোন সংগঠন থাকে তাহলে সেটি এখানে এসে পার্টি বা নিজেদের জন্য অনুষ্ঠান করতে পারে। এখানে নাইল স্পেশাল নামে বিশেষ আকর্ষণীয় কয়েক রকম মদের এক সেট পাওয়া যায়, যার পেছনে বাজতে থাকে রেগি এবং হৈ হুল্লোড় মার্কা গান। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে একই ব্যক্তিরা রাগবি খেলা দেখে, শার্টের কলার গুলো উঁকি দেয় সুর্যের আলোকে আটকে দেবার জন্য

এখনো শহর না হয়ে ওঠা ইথিওপিয়ান ভিলেজ নামের এলাকার পাশে, আমেরিকার দূতাবাস যে রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়, তার ঢালে, কালাবালার শেষ প্রান্তে রয়েছে কাম্পালার লাস ভেগাস বা বিনোদনের আড্ডাখানা। যার আশেপাশে ৫০০ মিটারের মধ্যে আধা ডজন ইথিওপিয়ার রেস্তোরা রয়েছে, যা গাগাবা ও টাঙ্ক হিল রাস্তার মাঝে অবস্থিত। সেদিন সন্ধ্যায় ইথিওপিয়ার অধিবাসী সাংবাদিকরা মিরা (এক ধরনের পাতা বা ছাল, যার মধ্যে মাদকতা রয়েছে) চিবোতে চিবোতে তাদের নির্বাসিত জীবন অতিক্রান্ত করছিল এবং সেদিনের সংবাদ নিয়ে আলোচনা করছিল। রাতের বেলা আশেপাশের এলাকার শুঁড়িখানায় আলো জ্বলে উঠল এবং নাচ পার্টি শুরু হল।

স্লীক [11] লিখেছে:

এইখানে সামান্য এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করা যাক। আমি যুক্তি প্রদান করব যে এখন পর্যন্ত কাম্পালা সেই সমস্ত শহরের মধ্যে অন্যতম যেখানে রাত তিনটায় একজন শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেটে বেড়াতে পারে। এবং আমরা সেই সমস্ত জনতা যারা তেলের দাম বাড়ার জন্য অভিযোগ করতে পারি, উচ্চমাত্রার আয়কর প্রদান নিয়ে, মোবাইলে ফোনে কথা বলার জন্য অসম্ভব রকম টাকা প্রদান করা.. বলা যায় জীবনযাত্রার মান অনেক ব্যায়বহুল। তারপরে আমরা নতুন এ রকম এক এলাকায় যাই যেখানে বার বার যেতে ইচ্ছে করে এবং ৫০০০ উগান্ডার মুদ্রা (উগান্ডা শিলিং বা ইউজিএক্স) দিয়ে বিয়ার কিনি। আমরা সেই সমস্ত এলাকাকে আমরা এমনভাবে পূর্ণ করি, তাতে শুঁড়িখানার মদ পেতে আপনাকে আক্ষরিক অর্থে লড়াই করতে হবে। এবং এখানকার প্রায় জায়গাসমূহ এরকম ।
আর এরপর আপনি শুনতে পাবেন বোমা বিস্ফোরণের শব্দ……