নাইজেরিয়া: রাষ্ট্রপতির মত কে বদলাল – ফেসবুক না ফিফা?

নাইজেরিয়া তার সংবেদনশীল শাষকদের জন্যে জনপ্রিয় নয়। উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদরা তাদের ভোটারদের সাথে কমই ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখেন, এবং বলা হয় যে সাধারণ মানুষের বক্তব্য অজানাই থেকে যায় তাদের কাছে। কিন্তু নবনিযুক্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি গুডলাক জোনাথান হয়ত এর পরিবর্তন ঘটাতে চাচ্ছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। আর তার একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রদানের দুইদিনের মধ্যেই তা ফিরিয়ে নিয়েছেন কারন হাজারো ভক্ত তার ফেসবুকের দেয়ালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মূলে রয়েছে সাম্প্রতিক সমাপ্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে নাইজেরিয়ার অনাকাঙ্খিত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন ও বাজে ফলাফল। টুর্নামেন্ট থেকে নাইজেরিয়া তাড়াতাড়ি বিদায় নেবার পরে জোনাথান ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ফুটবল দলটিকে দুই বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে এ ক্ষেত্রকে দুর্নীতি মুক্ত করার পরিকল্পনা চলছিল। “নাইজেরিয়ার ফুটবলের সমস্যা হচ্ছে কাঠামোগত,” এমনই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির যোগাযোগ উপদেষ্টা। “আমাদের সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকা উচিৎ যাতে আমরা নিজেদের ঘর গোছাতে পারি”। কিন্তু অনেক ভক্তই এই সিদ্ধান্তে খুশী হতে পারেন নি। পাঁচই জুলাই জোনাথান তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তার ফেসবুকের দেয়ালে এই কথাগুলো প্রকাশ করে:

আমি আপনাদের মন্তব্য গুলো পড়েছি এবং সেগুলোকে বিবেচনায় এনে নাইজেরিয়ার ফুটবল দলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত রদ করেছি। এন এফ এফ [নাইজেরিয়ার ফুটবল ফেডারেশন] এর সাথে আজ আমার মিটিং হয়েছে যেখানে আমি আমার এবং এই পাতায় মন্তব্যকারীদের অসন্তোষ জানিয়েছি এবং তারা আমাকে জানিয়েছে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে তারা।

তবে জোনাথানের এই মনোভাবের পরিবর্তন কি সত্যিই জনগণের প্রতিবাদের ফলে হয়েছে? ফুটবলের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফিফা এই নিষেধাজ্ঞায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিকে এক সপ্তাহের সময় সীমা বেধে দিয়েছিল তা পরিবর্তন করতে। জোনাথানের মতের পরিবর্তনের সময়টি ঠিক ফিফার ডেডলাইনের সাথে মিলে যায়। কাজেই বোঝা যাচ্ছে যে নাইজেরিয়ানদের মত নয়, ফিফাই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মূল কারণ।

সলোমনসিডেল লিখেছে:

এটি তো এমন ধারণা এনে দেয় যে জোনাথান একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার হুমকিতে নতি স্বীকার করেছেন। জোনাথানের জন্যে এই ভাবমূর্তি বিপদের কারণ হতে পারে যখন তার ক্ষমতার মেয়াদ আছে মাত্র কয় মাস.. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত। এছাড়াও ফিফার সাথে জোনাথানের বিবাদ এই প্রশ্ন তুলেছে যে একটি ফুটবল সংস্থা কিভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নেতার সিদ্ধান্তকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করার সাহস পেল।

জোনাথান একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান নয় যিনি সামাজিক নেটওয়ার্কিং এ যোগ দিয়েছেন। ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপ্রধান হুগো শাভেজ গত এপ্রিল মাসে টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন। চিলির রাষ্ট্রপ্রধান সেবাস্তিয়ান পিনেরা টুইট করেন – তার মন্ত্রীসভার সদস্যরাও করেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় যে এইসব নেতারা টুইটার আর ফেসবুকের মত প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের ভোটারদের সাথে কথোপকথন চালান কি না – না কি শুধুই পূর্বে তৈরি করা নীতিগুলো প্রচার করতে তা ব্যবহার করেন। নাইজেরিয়ার নির্বাচন সামনে আসছে এবং সেখানে আশা করা যাচ্ছে যে জোনাথান রাষ্ট্রপ্রধানের পদে দাঁড়াবেন। “এটি কি কথার কারসাজি নয়? নাইজেরিয়ান ভোটারদের তোষামোদ করার আরেকটি উপায়?” – লিখেছে মাই পেন এন্ড মাই পেপার

রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নিয়ে এই অজুহাতের ব্যাপারটি আমার কাছে মনে হয়েছে শুধু বক্তৃতা করার জন্যেই বলা।

হয়ত, তবে সময়ই বলবে যে জোনাথান তার রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে এসব করছেন কি না – বা সত্যিই জনগণের কথা শুনছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .