মালয়েশিয়া: ঐতিহাসিক জেল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে

বিভিন্ন নাগরিক, শিল্পী আর ঐতিহাসিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও মালয়েশিয়া সরকার কুয়ালালামপুরের ঐতিহাসিক নিদর্শন ১১৫ বছর পুরোনো পুদু জেল ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে পুদু জেল কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা হয় রাস্তা চওড়া করা প্রকল্পের জন্য। এই এলাকায় অচিরেই একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মিত হবে।

বাদান ওয়ারিশন মালয়েশিয়া হতাশ হয়েছেন যে সরকার এই জেলকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রস্তাবনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে

এটা জানা দরকার যে একটা বাড়ি বা দালানের কি বৈশিষ্ট থাকা প্রযোজন যার ফলে সরকার সেটাকে ঐতিহাসিক বাড়ির স্বীকৃতি দিতে রাজি হবে।

নিশ্চয় এই জেল আমাদের শাস্তি-ব্যবস্থার ইতিহাসের একটি যা আমাদের বিচার ব্যবস্থার অংশ। আমার মনে হয় যে আমাদের এটাও ভোলা উচিত না যে এটি প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস, এটা কেবল একটা জেল না যেখানে অপরাধীদের বন্দী রাখা হতো। এখানেই, জাপানী দখলের সময়ে, আমাদের তীরবর্তী অঞ্চল রক্ষার্থে বিভিন্ন দেশের যে সব সেনা অফিসাররা যুদ্ধ করেছিলেন তাদেরকেও বন্দী রাখা হয়। এটা কি আমাদের জাতির ইতিহাসের একটা অংশ যা নিয়ে আমরা গর্বিত না?

যদিও পুদু জেল রক্ষা করতে এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, বাদান ওয়ারিশন আশা করছেন যে এর ফলে যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে তা জনগণের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করবে যে আমাদের ঐতিহ্য কেমন ভঙ্গুর আর এর সুরক্ষা, সংরক্ষণ আর চালু রাখার জন্য কথা বলার ব্যাপারে।

মিরেজ.স্টুডিও.৭ ব্লগ জেলের ঐতিহাসিক মূল্য নিয়ে লিখেছেন:

পুদু জেল ১০০ বছরের বেশী পুরানো, ভারত থেকে সস্তা শ্রম নিয়ে ব্রিটিশরা নির্মান করেছেন, জাপানিরা এটাকে জেল ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহার করেছে চীনাদের হত্যার জন্য আর বর্তমান সরকার কর্তৃক ৯০ এর দশকের শেষ পর্যন্ত ১০০০ অপরাধীকে ফাঁসি দেয়ার জন্য।

আমি পছন্দ করবো জেলটিকে যদি পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে ধরে রাখা যায় বা অন্তত এর গেটটাকে। কিন্তু বর্তমান নীতি হল ইতিহাসকে নতুন করে ধুয়ে মুছে লেখা।

সারাহ কুশায়রি বিশ্বাস করেন না যে শহরে আর একটি শপিং কমপ্লেক্স দরকার:

আমি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেয় ঐতিহাসিক পুদু জেলকে ভেঙ্গে ফেলার (যাতে ওই স্থানের উন্নতি করা যায়) এমন একটা স্থানে যেখানে ঐসব নতুন হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। যেন মালয়েশিয়াতে যথেষ্ট শপিং মল আর অ্যাপার্টমেন্ট নেই।

ফ্রম এ টু জি ক্ষুব্ধ যে এই জেলের দেয়ালের ম্যুরাল (বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ম্যুরাল) এখন আর নেই।

আমি নিশ্চিত যে আমি একা নই এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হওয়ার জন্য।

এই জেলে মালয়েশিয়ার দূর্ধর্ষ কিছু অপরাধী ছিল। তাই কতো স্থানীয় ইতিহাস আর গল্প হারিয়ে গেল- আর আমি মনে করি না একটা শপিং কমপ্লেক্স, ডিজাইন বা কাজের দিক থেকে এর সমৃদ্ধ ইতিহাসকে কোন সুবিচার করতে পারবে। (জেলের কামরায় লেখা, আঁকা, দেয়ালের রঙ ওঠা…আমরা গল্পকে কেন ধ্বংস করছি?)

কুয়ালালামপুরে আর একটা শপিং মলের কোনই প্রয়োজন নেই। আমাদের স্থানীয় ইতিহাস আর সংস্কৃতি কি সুন্দর আর খুবই আলাদা, কেন আপনারা সেটা দেখতে পাচ্ছেন না? আমরা এটা বিশ্বকে দেখাতে পারি, বাজারজাত করতে পারি।

স্বাগতম ২১ শতকের কুয়ালালামপুরে যেটা সাংস্কৃতিক অবনতির আসল সময়। আমাদের ভীষণভাবে সাংস্কৃতিক শিক্ষা দরকার, আমদানি করা ফ্যাশন চেইন স্টোর না।

ম্যুরাল

বিজে থটস মুরালের কথা মনে করেছেন:

এটা কুয়ালালাম্পুরের বিশাল একটি নির্দশন- আমার দাদির বাসা থেকে অনেক বছর আগে ফেরার সময় যখন জ্যামে আটকিয়ে থাকতাম তখন বাসে বসে আমি এর দেয়ালের ম্যুরাল দেখতাম।

উন্নয়নের জন্য কুখ্যাত পুদু জেলকে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, এখানে বড় কোন বিস্ময় নেই। আমি বলতে চাচ্ছি যদি লোভী কোন লোক কৌশলগতভাবে একটি সেনা বেইজকে ব্যবসায়িক লাভের জন্য চাইতে পারে, কুয়ালালাম্পুরের এর মধ্যিখানে পরিত্যক্ত একটা জেল নিয়ে এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে।

জেল ভাঙ্গার সময়ে শিল্পীরা একটা গণকবরের আয়োজন করেন। আর্টেরি এটা নিয়ে ব্লগে লিখেছেন। কিন্তু পাগারমেরাহ এটার পুরোপুরি সমর্থন করেননি

আমি কোন কিছু ভেঙ্গে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় মল বানানোর ব্যাপারে রাষ্ট্র আর কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যখন শহরের প্রতিটি কোনায় মল আছে অথচ মানুষ এখনো গৃহহীন অবস্থায় থাকে। তবে আমি মনে হয়না হতাশায় একটা মোমবাতি জ্বালাতে চাইব কারন সরকার পুদু জেলকে জাতীয় ঐতিহ্য বলে ঘোষণা করেনি।

পুদু জেলের ছবি মাইকেল ইপ আর রাবিয়াতুল আদাউইয়ার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ফ্যাট বিদিন মিডিয়া পুদু জেল ভেঙ্গে ফেলার একটি ভিডিও আপলোড করেছেন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .